Need to fight together in hands-Samik Lahiri

Monday,30 March 2020

সমগ্র পৃথিবী লড়ছে বাঁচবার জন্য। উত্তর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধ – মানুষ ঐক্যবদ্ধ জাতি, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে। কারণ করোনা এইসব মানে না। মক্কা-ভ্যাটিকান-তিরুপতি কাউকেই ছাড়েনি মারণ ভাইরাস।

পৃথিবীর সবাই এখন বিজ্ঞানের গবেষণাগারগুলোর দিকে তাকিয়ে। এমনকি গোমূত্র পানকারীরাও মুখে মুখোশ বেঁধে দরজায় ছিটকিনি তুলে বসে খবরে খুঁজছে – বিজ্ঞান কোনও ওষুধ আবিষ্কার করতে পারলো কি না! অন্যান্য সময়ে নানাবিধ কেরামতি দেখানো স্বঘোষিত বাবার দলও ঘাবড়ে গিয়ে স্পিকটি নট হয়ে বসে পড়েছে।

এই লড়াইটা একা কোনো দেশ, জাতি, কোম্পানি, ব্যক্তি লড়তে পারবে না। প্রবল পরাক্রমশালী ট্রাম্প যিনি ৮ই মার্চ পর্যন্ত চীনের বিরুদ্ধে হুংকার ছাড়তে ব্যস্ত ছিলেন, এখন রোজ পৃথিবীবাসীকে জানাচ্ছেন – চীনের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে তাঁর কথোপকথন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ট্রেডস আধানম ঘেবরেয়েসাস জানিয়েছেন পৃথিবীজুড়ে এখন ওষুধ আবিষ্কারের কাজে নিয়োজিত আছেন কয়েক শত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা। তবে ১৮ মাসের আগে নাকি পাওয়া যাবে না ইপ্সিত ফল। বিশ্বজোড়া এই প্রয়াসের নাম WHO দিয়েছে ‘Solidarity’ অর্থাৎ ‘সংহতি’।

যা বোঝা যাচ্ছে লড়াইটা অনেকদিন চলবে আর একা কোনও অরণ্যদেব/দেবীর সাধ্য নেই কিছু করার। সবাইকে জড়িয়ে নিতে হবে এই লড়াইয়ে। টিভির পর্দায় কেউ ঘন ঘন উপস্থিত হতে পারেন নির্বাচনের কাজ আগাম গোছানোর জন্য, কিন্তু করোনা আটকানোর কাজে তা বিশেষ সহায়ক হবে না।
সরকার একা কি করবে, যদি না সাধারণ মানুষ এগিয়ে না আসে! অনেকে বলছেন social distancing চাই- কাছাকাছি আসা যাবে না। social distancing না বলে physical distancing অর্থাৎ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা জরুরী। এর দৃষ্টান্ত প্রশাসনিক প্রধানদেরই স্থাপন করতে হবে। ঘরে বসে প্রশাসনিক প্রধানরা রামায়ণ/মহাভারত সিরিয়ালে যেমন ব্যস্ত থাকতে পারেন না, তেমনই দলবল- ক্যামেরা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোটাও এই যুদ্ধের প্রধান সেনাপতির কাজ হতে পারে না।

আমাদের সাধারণ মানুষকেও বুঝতে হবে, সময়টা স্বাভাবিক নয়। এটা পাড়ার মোড়ে জটলা পাকানো, দলবেঁধে তাস খেলা বা ক্লাব খুলে ক্যারাম খেলার সময় নয়। দয়া করে বুঝুন – করোনা আমার আপনার বাড়ি নিজে থেকে আসবে না, আপনি যদি একে বয়ে বাড়িতে না আনেন।

এখন লড়াইটা তো শুধু করোনার বিরুদ্ধেই সীমিত নেই। আমাদের দেশে ৮০ কোটি লোকের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। রোজ খাটে, পয়সা পায়, তাই দিয়ে চাল ডাল কিনে বাড়ি ফিরলে ভাতের হাঁড়ি চাপে। এদের সপ্তাহের বাজার একদিনে করার অভ্যাস বা অর্থনৈতিক ক্ষমতা কোনটাই নেই। এরা খাবে কি!

সরকার যদি না দেখে তাহলে করোনার হাত থেকে বাঁচলেও চিরমুক্তির দেশে চলে যাবে খিদের জ্বালায়। এখনও সরকার রেশন কার্ডের রং দেখবে? অস্থায়ী রেশন কার্ড দেওয়া যায় না এই ৮০/৯০ কোটি মানুষকে? সবাইকে চাল-ডাল-গম-তেল-নুন দেওয়া যায় না এই ৩/৪ মাস? সারা বছর ধরেই তো আম্বানি-আদানি-ক্লাব গুলোকে অনুদানে ভরিয়ে দেয় সরকার। এই ৩/৪ মাস নিঃশর্তে খাবার, একটু খাবারের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ করতে পারে না? ১লক্ষ ৭০ হাজার কোটি শুনতে ভালো, কিন্তু মাস গেলে ৫০০/১০০০ টাকার অনুদানে ডালে নুন দেওয়া যাবে? এই দুঃসময়ে স্টান্টবাজি করে কি লাভ? মোদিজি খাবার দিন, না হলে লাশ গোনাটাই সরকারের একমাত্র কাজ হবে কিছুদিন বাদেই। আপনি আপনার মন কি বাত বলেন, কিন্তু কোটি কোটি মানুষের মনের কথা শুনবেন আর কবে!!!

একটু পরিকল্পনা করে লকডাউন ঘোষণা করলে আজ পরিযায়ী শ্রমিকদের এই দুরাবস্থার মুখোমুখি হতে হত না, আর দেশবাসীও শারীরিক সংক্রমণের বিপজ্জনক সম্ভাবনার সামনে পড়ত না। যেদিন(২০শে মার্চ) ঘোষণা করলেন রবিবার(২২শে মার্চ) ২৪ ঘন্টার জনতা কার্ফু আর বিকালে ঘন্টা পেটাতে হবে, সেদিন যদি বলতেন ২৫ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের লক ডাউনের কথা, তাহলে সবাই তো কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারতো। কে জানে আজ দেশের কোন কোনায় কত দিনমজুরের লাশ পড়ছে প্রতি ঘন্টায়! এরা তো করোনায় মরছে না, তাই হিসাবের খাতায় এই সংখ্যাও থাকে না লেখা। এখনো সময় আছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে ১ সপ্তাহের মধ্যে খাবার যাতে মানুষের হাতে যায় তার ব্যবস্থা করুন – প্লিজ কাগজ দেখতে চাইবেন না।

এখনও আমাদের রাজ্যে বাজার দর আকাশ ছোঁয় নি। কিন্তু টান পড়ছে। রিক্সাচালক-মুটে মজদুর-কারখানার অস্থায়ী শ্রমিক লজ্জা কাটিয়ে ভিক্ষের ঝুলি নিয়ে বেরোয় নি। কিন্তু বন্ধু স্বজনদের কাছে হাত পাততে হচ্ছে বাড়ন্ত চালের হাল দেখে। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শুধু আপনার নির্বাচনী এলাকা নয়, সারা রাজ্যের সব দিন মজুর আপনার সরকারের কাছ থেকে চাল-ডাল- আলুর প্যাকেট রেশনে পেতে চায়। এই ৩/৪ মাসের জন্য অস্থায়ী রেশন কার্ড দিন, যা দেখিয়ে সবাই রেশন পাবে। রাজনৈতিক রং না দেখে এই কার্ড বিলির ব্যবস্থা অবিলম্বে করা হোক। রাস্তায় দাগ কাটার চাইতে অনেক অনেক জরুরী কাজ এটা, আপনিও নিশ্চয়ই মানবেন।

ওষুধের সাপ্লাই লাইন কেটে গেছে কারণ স্টকিস্ট- ডিলারদের ঝাঁপ বন্ধ। তাদের কর্মচারীদের অনেকেই ষন্ডাগন্ডা সিভিক পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়ে নিজেদের বাড়ি ঢুকে গেছে। একই কারণে রাজ্যের বহু ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডায়ালিসিস ইউনিট বন্ধ। এমনিতেই হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ। সাধারণ চিকিৎসা প্রায় বন্ধ। রোগ নির্ণয় বন্ধ। বিনা চিকিৎসায় কত মানুষ মরছে কেউ হিসাব রাখছে না, কার‍ণ এরা কেউ করোনায় মারা যায় নি। তাই হিসাবের খাতা বন্ধ। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, এগুলো খোলার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরী করতে বলুন প্রশাসনকে, না হলে বিনা চিকিৎসায় বেঘোরে অনেক মানুষের প্রাণ যাবে।

আপনাকেই সব বলতে বাধ্য হচ্ছি, কারণ আর তো কাউকে দেখছি না। বাকি ৪১ জন মন্ত্রী, ২০৯জন সরকারি বিধায়ক (দলবদলু আরও কিছু আছেন), ২০ জন জেলা সভাধিপতি, কলকাতা সহ ৭টা বড় শহরের মেয়র, ১২৭টা পুরসভার প্রধান, হাজার হাজার পঞ্চায়েত প্রধান – কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না, হয়তো বা আপনার ভোটকুশলী কোচের অঙ্গুলি হেলনেই।তাই আপনাকেই সব জানাতে হচ্ছে। অবশ্য কিছু দায়িত্ব কয়েকজন IAS/IPS কে দিয়েছেন। তবে তাঁদের কাছে পৌঁছানো খুবই কঠিন, কারণ জনান্তিকে তাঁরা বলেন, নবান্নের নির্দেশ ছাড়া বিরোধী দলের সাথে দেখা করা নিষেধ। তাই বাধ্য হয়ে সব আপনাকেই বলতে হচ্ছে। আর দেখছিও – এই আপনি প্রেসে, এই আবার রাজারহাট, এই আবার দাগ কেটে চাল-ডাল বিলোচ্ছেন। তাই আশাও বেড়ে যাচ্ছে মানুষের। পিকের কোচিং-এ মিডিয়া তুলছে বটে মগডালে, বিপদে পড়লে মই নিয়ে সর্বাগ্রে পালাবে কিন্তু এরাই।

যাইহোক সেসব ভোটের কথা থাক, এখন মানুষ বাঁচাতে আপনি ভরসা – যা বলছে সংবাদমাধ্যম।
আপনি ২০০ কোটি বরাদ্দ করছেন করোনা মোকাবিলায়। যদিও অনেকে বলছেন কেরালার সরকার ৩.৫ কোটির জন্য ২০ হাজার কোটি বরাদ্দ করেছে, আর বাংলার ৯.৫ কোটির জন্য ২০০ কোটি কেন? সে যাইহোক কিছু টাকা হয়ত বিজ্ঞাপনে (করোনা নাকি আপনার) খরচ হবে, বাকিটা অর্থাৎ সিংহভাগ নিশ্চয়ই খরচ হবে চিকিৎসার জন্য। কিন্তু যে স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবন মৃত্যু পায়ের ভৃত্য বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন রোগাক্রান্ত মানুষকে বাঁচানোর জন্য, তাঁদের গায়ে কাঠফাটা রোদ্দুরে রেইনকোট চাপিয়ে দিলেন কোন আক্কেলে!!! WHO বারবার বলছে – চিকিৎসার কাজে যুক্ত সবার জন্য PPE & N95 Mask ব্যবহার বাধ্যতামূলক। এই রেইনকোট পড়িয়ে যুদ্ধে নামানোর বুদ্ধিটা কার মস্তিষ্কপ্রসূত? সৈনিকের বর্ম যদি ফাটা হয়, তরোয়াল যদি ভোঁতা হয়, তাহলে যুদ্ধে জয় কি সম্ভব? সৈনিকের প্রতি যদি এই যত্ন হয়, তাহলে প্রজার হাল কি – ভেবেই তো সবাই ভয় পেয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছে। তাই বাথরুমের হাল দেখে, রেইন কোট দেখে স্বাস্থ্যকর্মী দের বিক্ষোভ প্রদর্শন কি খুব অন্যায়? স্বাস্থ্যবীমা করছেন, খুব ভালো। মরে গেলে টাকা নিয়ে কি হবে? জ্যান্ত অবস্থায় বিজ্ঞাপনের কিছু অর্থ বাঁচিয়ে কিছুটা দিন, এদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার জন্য।

রাজ্যের কয়েক লক্ষ মানুষ কাজ করতে গিয়ে ভিন রাজ্যে আটকে পড়েছে। প্রথম সপ্তাহ কোনক্রমে চলেছে, এখন টাকাও নেই খাবারও নেই। অসহায় এই পরিযায়ী শ্রমিকদের কি হবে? শুধু একটা চিঠি দিলে কাজ হবে? হচ্ছে না। একমাত্র কেরালা রাজ্য এদের জন্য হাজার চারেক অস্থায়ী ক্যাম্প করেছে। আপনার শ্রম দপ্তর নীরব দর্শক। একটা Help Line তৈরী করুন। শ্রম দপ্তর রাজ্য সরকারগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে অস্থায়ী আস্তানা আর খাবার-জলের ব্যবস্থা করুক। কারণ এরা তো ফিরতে পারছে না। পৌরসভা/পঞ্চায়েত গুলোতে বিশেষ সেল খুলতে বলুন। এরা পরিযায়ী শ্রমিকদের উদ্বিগ্ন পরিবারগুলো কাছে নিয়মিত খোঁজ নিক আর শ্রমদপ্তরে রিপোর্ট দিক। এই কাজে বিভিন্ন শ্রমিক সংঘগঠনগুলোর সাহায্য নিক স্থানীয় প্রশাসন।

রক্তের ঘোর আকাল দেখা দেবে শীঘ্রই। যে ক্লাবগুলোকে টাকা দিলেন, তাদের বলুন এই দুঃসময়ে অন্তত ১০ বোতল করে রক্তদান করুক।

কিন্তু নীরবে কাজ করে চলেছেন অনেকে। কেউ বৃদ্ধ পরিবারের ওষুধ-বাজার করে এনে দিচ্ছে। কেউ বিনি পয়সায় মাস্ক-সবান-স্যানিটাইসার বিলি করছে। কেউ বাজারে গিয়ে খালি গলায় চেঁচিয়ে বলছে – তফাতে থাকুন। জেলায় জেলায় বামপন্থীরা এই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ‘রেড ভলান্টিয়ার’ তৈরী করে নেমে পড়েছে। এরা রক্ত দিচ্ছেন, কোথাও কালোবাজারি ঠেকাতে ন্যায্য মূল্যের দোকান খুলেছেন, কোথাও দিন মজুরের হাঁড়িতে চড়াবার চাল ডাল আলু দিচ্ছেন। একা রেড ভলান্টিয়াররাই এই কাজ করছেন তা নয়। অনেক ব্যক্তি, সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন নীরবে নিঃশব্দে নেমে পড়েছে ঘরবন্দী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এরা কেউ সরকারি স্বীকৃতি চায় না, সরকারের সহযোগিতা চায়। স্থানীয় পুলিশ- সাধারণ প্রশাসনকে বলে দিন এদের কাজে সহযোগিতা করতে।

এই যুদ্ধ একা কেউ লড়ে জিততে পারবে না। চাই ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মী, চাই সক্রিয় সংবেদনশীল প্রশাসন, চাই সমগ্র মন্ত্রীসভার টীম ফাংশানিং, চাই পঞ্চায়েত/ পৌরসভার নিরপেক্ষ সক্রিয়তা। যারা স্বেচ্ছায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে এই লড়াইতে তাদের সবাইকেও সমান গুরুত্ব দিয়ে এই কাজে নেতৃত্ব দিন আপনি।

গুটি কয়েক সংবাদ মাধ্যমকে বগলে নিয়ে আত্মপ্রচারে কাজ হবে না, আপনিও বোঝেন। ভোট প্রচারের অনেক সময় পাওয়া যাবে যদি মানুষ বেঁচে থাকে। বছরভর তো আপনার কাট আউট হোর্ডিং রাস্তা জুড়ে থাকে। করোনা মিটলে আবার না হয় সেই সব হবে।

এখন এই দুঃসময়ে সবাইকে নিয়ে চলুন। আপনি প্রধান এই রাজ্যের। আপনাকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দিয়েছে সব বিরোধী দল। সবাইকে নিয়ে চলুন। পারবোই আমরা এই যুদ্ধে জিততে।

Spread the word

Leave a Reply