মানবেশ চৌধুরি
১
স্বাধীনতা সংগ্রামের কমিউনিস্ট ধারার মূলকথা ছিল, তাবৎ শ্রমজীবী মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির সঙ্গে স্বাধীনতা সংগ্রামকে যুক্ত করা । সেপথে চলতে চলতে পার্টিকে বাংলার মহামন্বস্তরকে মোকাবিলার দুরূহ কাজে ব্রতি হতে হয়।
ব্রিটিশরাজের মদতে ১৯৪২ সালের শেষেও ৪৩ সালের প্রথমে ওঠা আমন ধান মজুতদারদের দখলে চলে যায়।
১৯৪৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টির বাংলা কমিটি দাবি তুললেন- ‘খাদ্য কমিটির তত্ত্বাবধানে ক্রয়-বিক্রয় হোক। ঘাটতি এলাকায় রেশনিংয়ের জন্য সরকারকেই সরবরাহের ভার লইতে হইবে’। ডাক দেওয়া হয় – ‘মিলিত খাদ্য কমিটি গড়ুন। কৃষক সমিতিকে জোরালো করুন। ধর্মগোলা ও সমবায় সমিতি গড়ুন’।
নিজেরাও অনাহার-অর্ধাহারে থেকে, সাম্যব্রতী-প্রগতিবাদীরা নিজ ক্লেশকে তোয়াক্কা না করে বিপুল উদ্যোগ, উদ্যমসহ যে মন্বন্তর প্রতিরোধ সংগ্রাম করলেন, ইতিহাসে তা স্বর্নাক্ষরে লেখা আছে। মজুন-উদ্ধার, কালোবাজারি রোধ, নিরন্নদের মুখে খাদ্য তুলে দেওয়া, অসুস্থদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা, ধান উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান, মানুষকে সক্রিয় করতে এলাকায় একাকায় গণনাট্যের প্রোগ্রাম আরও কত কি কৃত্য।
কমরেড মুজফ্ফর আহমদ তখন বলেছিলেন- ‘এদের সেবার কাজের সাথে সাথে অর্থনৈতিক সংগ্রামের স্তর থেকে দুর্ভিক্ষ, দৈন্য, শোষণযুক্ত সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে স্থায়ী সমাধান যে এইভাবে সম্ভব তা ক্রমে ক্রমে অবস্থা অনুযায়ী এঁদের বুঝিয়ে চেতনার স্তরকে আরো উন্নত করার সাথে সাথে সংগঠিতও করতে হবে, এঁদের মিত্র কারা, এঁদের শত্রু কারা এটাও বুঝিয়ে দিয়ে সাধারন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে এঁদের যুক্ত করতে হবে’।
তাই এই উদ্যোগগুলি যেন রাজনীতি বর্জিত না হয় সেবিষয়ে সচেতন ছিলেন নেতা কর্মীরা। কী সেই রাজনীতি? কমিউনিস্ট মানবিকতা। ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর বিষয়ে অল্প কিছু কথা এজন্য বলা হলো, কারণ আবার দুর্ভিক্ষের দুর্লক্ষ্যণ দেখা যাচ্ছে।
২
হিটলারের পতন আর সোভিয়েত রাশিয়ার জয়ের উৎসাহে লড়াইয়ের মাত্রা ও সংখ্যা অনেক বেড়ে গেল। স্বাধীনতার সন্ধিক্ষণের সে সমস্ত লড়াই ও অভ্যুত্থানের মূল সংগঠক ছিল কমিউনিস্ট পার্টি।
দিকে দিকে লড়াই-অভ্যুত্থান তখনও চলছে। তারমধ্যেই ১৯৪৭ সালের ১৪ আর ১৫ই আগস্ট, কমিউনিস্ট রাজ কায়েম হবার ভয়ে আতংকিত বৃটিশরাজ ও কংগ্রস-মুসলিম লিগ আলোচনাক্রমে দেশভাগের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্ব সমাধা করে নিলো।
না হলে অখণ্ড ভারতের চেহারা ভিন্নতর হতো। মানব কল্যানে রত একটি রাষ্ট্র পেতো ভারত এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
৩
১৯৪৮-দ্বিতীয় পার্টি কংগ্রেস থেকে আওয়াজ উঠল ইয়ে আজাদি ঝুঠা হায় লাখো ইনসান ভুখা হ্যায় – ভুলো মৎ ভুলো মৎ।
সব কথা ঠিক ছিল না, পরে পার্টিই আত্মসমালোচনা করেছে। কিন্তু লাাখো ইনসান যে ভূখা থেকে গেল এ বিষয়ে তো কোন সন্দেহ নেই।
খাদ্য সংকটের স্থায়ী সমাধান হতো যদি জমিদার জোতদারের সমস্ত জমি বাজেয়াপ্ত করে, গরিব ভূমিহীনদের মধ্যে বিলি করা হতো এবং মানুষের কাছে খাদ্য ও অন্যান্য কৃষিজাত সামগ্রী সাবলিল ভাবে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হতো।
খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি মূল শর্ত এরকম প্রথমত, কৃষক যাতে ভালো ভাবে ফসল ফলাতে পারে তার জন্য বীজ, সার, কীট নায়ক, সেচ, বিদ্যুৎ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, ন্যায্য দামে সরকারী ব্যবস্থায় কৃষকের কাছ থেকে নগতে ফসল কেনা। তৃতীয়ত, সেই ফসল ও ফসল থেকে উৎপাদিত জিনিসগুলি সাধারণ মানুষ যাতে তার নাগালের মধ্যে থাকা দামে কিনতে পারেন, সেজন্য রেশন দোকান খোলা।
কংগ্রেসী সরকার নামকে ওয়াস্তে ১৯৫৩-তে জমিদারি অধিগ্রহণ আইন আর ১৯৫৫-তে ভূমি সংস্কার আইন তৈরি করেই, সেসবকে দেরাজ বন্দি করে রেখেছিল।
কারণ, দেশ স্বাধীন হবার পরে কায়েম হলো পুঁজিপতি আর জমিদার রাজা। এদের সবার মাথায় গান্ধীটুপি শোভা পেতে থাকলো। কারণ তাদের ও তাদের পার্টি কংগ্রেসের হাত পা বাঁধা ছিল বড় ব্যবসায়ী, কালোবাজারী ও মজুতদারদের কাছে।
তাই গরিবের পাতে ভাত পৌঁছে দেবার প্রাথমিক কাজেও কি কেন্দ্রীয় সরকার, কি রাজ্য সরকারগুলো, কেউই হাঁটে নি। যেমন, পশ্চিম বাংলার বিধান রায়, প্রফুল্ল সেন, অজয় মুখার্জী, কালীপদ মুখার্জীরা হাঁটেন নি।
নানা কিসিমের জমিদাররা নতুন সরকারের গ্রামীণ খুঁটি। শ্রেণি স্বার্থে কৃষক-খেতমজুর-মজুর-মেহনতি মানুষের কল্যানের বেবাক প্রতিশ্রুতি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুলে গেল তারা।
৪
না হলে বাংলায় ১৯৫৯ সালের ৩১শে আগস্ট ঐ ঘটনা ঘটে!
সে বছরের আগের কয়েক বছর থেকেই তো খাদ্য সংকট চরম। ১৯৫৮ সালেও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ আন্দোলন করেছেন। দু’টি ঘটনার কথা লিখি। আদিবাসী নারীবাহিনী টেষ্ট রিলিফের গম ভর্তি গোরুর গাড়ি আটকে, তা গ্রামের মানুষের মধ্যে বিলি করার উদ্যোগ নিতেই, পাশের বর্ডার আউট পোস্ট থেকে পুলিশ এসে গুলি করে কালিয়াগঞ্জের মুদাফত কৈপুকুরের রাঁধুনি হেমরমকে হত্যা করে। ইনিই খাদ্য আন্দোলনের প্রথম শহীদ। আর কালিয়াগঞ্জ শহরে ট্রেনের বগি ভেঙে মূলত নারী বাহিনী চাল বের করে ফেলল। কয়েকটা গ্রামের গরিব মানুষের কয়েকদিনের অন্ন সংস্থান হলো।
কিন্তু খাদ্য সংকট ১৯৫৯ সালে চরমতম হয়ে উঠলো। মজুতদার- কালোবাজারী, পাইকার, আড়ৎদারদের রমরমা। চাল, গম উধাও করে দিলো তারা। রাজ্যে দুর্ভিক্ষের অবস্থা সৃষ্টি হলো। খাদ্যের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠলেন, শহর গ্রামের মেহনতি মানুষ।
৩রা ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় বামপন্থীরা দাবি উত্থাপন করলেন। ২৫১ জনের বিধানসভায় তখন তাঁদের সংখ্যা ৭২ জন।
কানে জল ঢুকলো না সরকারের। ১৫ই জুন কংগ্রেস সরকারের খাদ্যনীতির প্রতিবাদে কলকাতায় কেন্দ্রীয় সমাবেশের সঙ্গে সঙ্গে জেলায় মহকুমা সদরে, থানা সদরে চললো বিক্ষোভ মিছিল। ২৫শে জুন পালন করা হলো। রাজ্যব্যাপী ধর্মঘট ও হরতাল। প্রায় এক মাস চলে গেল। সরকার অনড় অচল। ১৩ই জুলাই শুরু হলো জেল ভরো আন্দোলন। একমাসের মধ্যে ১৬৩৪ জন গ্রেপ্তার হলেন। ৮ই আগস্ট হলো খাদ্য কনভেশন। এতোগুলি পর্বে আন্দোলন করেও বধির সরকারের কপট নিদ্রা ভাঙানো গেল না।
২৩শে আগস্ট থেকে সারা পশ্চিমবাংলায় খাদ্যের দাবিতে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম শুরু হলো।
এবার সরকার খুব তৎপর! ২৬শে আগস্ট মাঝরাতে বামপন্থী নেতা ও কর্মীদের ধরপাকড় ও বাড়িতে বাড়িতে থানা তল্লাসী শুরু হলো। ২৭শে আগস্ট পর্যন্ত ৭০০০ নর-নারী গ্রেপ্তার হলেন।
‘মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটি’ ৩১শে আগস্ট কলকাতায় শহীদ মিনার ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত ও মিছিলের ডাক দিলেন। দাবি খাদ্যমন্ত্রীর অপসারণ, সবার জন্য খাদ্য চাই, পুলিশী দমন-পীড়ণ চলবে না।
সরকার সদস্তে ঘোষণা করলো, ৩১ আগস্ট কোনো মিছিল কলকাতায় ঢুকতে দেওয়া হবে না।
কে শোনে সে কথা! মরিয়া ক্ষুধাতুর মানুষ বিভিন্ন ভাবে কলকাতায় এসে গেলেন। কলকাতার গণতান্ত্রিক মানুষ তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। মিছিলে সঙ্গ দিলেন।
আন্দাজ সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটের দিকে প্রথম দফার বারোজন বুভুক্ষু মানুষের একটি স্কোয়াড পুলিশের বেষ্টনীর ফাঁক দিয়ে সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে আসে। এই সুযোগে পুলিশ কর্ডনের ভিতরে, যেখানে সাংবাদিকরা ছিলেন, সেখান থেকে পুলিশ লাঠি উচিয়ে, অপেক্ষামান মানুষ যাঁরা আইন অমান্য করবেন তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। জনতাকে তারা হটিয়ে নিয়ে যেতে থাকলো। ঐ বাহিনীর পেছনে জালের মুখোশ পড়া লাঠিধারি পুলিশবাহিনী প্রবলভাবে লাঠি চালাতে চালাতে এগিয়ে যেতে থাকলো। এযেন জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড। কত মানুষ যে শহীদ ও নিখোজ হলেন – তা ঐ রাত্রীই শুধু জানে!
সেদিন বর্ধমান, বহরমপুর, মেদিনীপুর, ঘাটাল, গংগারামপুর ইত্যাদি স্থানেও পুলিশ মিছিলকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে ও সত্যাগ্রহীদের গ্রেপ্তার করে।
শান্তিপূর্ণ সত্যাগ্রহীদের ওপর এই অমানুষিক আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ১লা সেপ্টেম্বর ছাত্ররা ধর্মঘট ডাকলেন। সেদিনও আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ ও গুলি চালিয়ে কয়েকজনকে হত্যা করলো সরকার। ৩রা সেপ্টেম্বর হলো সাধারন ধর্মঘট। ৮ই সেপ্টেম্বর ছাত্ররা কালোব্যাজ ধারণ করলেন। ১০ ই ও ১৩ই সেপ্টেম্বর মৌন মিছিল হলো। ২৬শে সেপ্টেম্বর সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে স্থায়ী শহীদবেদী নির্মিত হলো।
স্বাধীনতা পত্রিকার সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারদের ঝুঁকিপূর্ণ প্রচেষ্টায়, এই মহান খাদ্য আন্দোলনের কতগুলি তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তা এরকম মোট গ্রেপ্তার ২১০০০ জন, মোট আহত ৩০০০ জন, মোট নিহত ৮০ জন (অসম্পূর্ণ), মোট নিখোঁজ ১০০ জন।
এতো হিংস্রতা কেন?
আগেই বলা হয়েছে, শ্রেণী স্বার্থই মূল কারণ এবং তা থেকে উৎপন্ন শ্রেণী ঘৃণা। আবার সেই শ্রেণী ঘৃণা থেকে উৎপন্ন হয় উৎকট হিংস্রতা, অমানবিকতা।
কংগ্রেসী সরকারের আমলে পশ্চিম বাংলায় শুধু ১৯৫০ এর দশকই নয়, ১৯৬০ এর দশকের প্রায় তিনভাগ জুড়ে ঐ একই রকম অবস্থা বিরাজ করেছে। ১৯৬৬ তে আবার খাদ্য আন্দোলন, তার সঙ্গে ছাত্রদের পড়ার কেরোসিনের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে নুরুল ইসলাম, আনন্দ হাইত প্রমুখ ১৮ জন সাথি শহীদ হয়েছেন। দুই দশক ব্যাপী এই আন্দোলন ও আত্মবলিদানের শীর্ষে স্থাপিত হয় ১৯৬৭’এর যুক্তফ্রন্ট সরকার।
৫
অর্গল কিছুটা খুলল ১৯৬৭ ও ১৯৬৯’এর স্বল্পস্থায়ী দুটি যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমলে আর ১৯৭৭ এ বামফ্রন্ট সরকার হবার পরে অনেকটা।
গরিবদেরকে ভূমি উদ্ধারের আন্দোলনে সহযোগীতা করে, বর্গাদারদের জন্য লাগসই আইন তৈরি করে, পঞ্চায়েতে বাস্তুঘুঘুর বাসা ভেঙে দিয়ে জনতার পঞ্চায়েত তৈরি করে, কৃষির বিকাশে সহায়তা করে সাধারণ মানুষকে মুখ্যমণি করে এরকম হাজারটা কাজের মধ্যবর্তিতায় গ্রাম বাংলার চেহারাই পালটে গিয়েছিল বাম সরকারের আমলে। এক ফসলি জমি ৩ ফসলি, কোথাও ৪ ফসলি হলো, জমির উৎপাদনশীলতা ও উৎপাদন বাড়লো, কৃষি ফসলে বৈচিত্র এল। খাদ্যশস্য, সবজি উৎপাদনে দেশের মধ্যে সেরার শিরোপা পেল রাজ্য। সমস্ত সূচকেই এগিয়ে গেল বাংলা।
কিন্তু ধনীকদের তা সইবে কেন? এক পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ মদতে এই সরকার হটিয়ে দেবার চক্রান্তে তা হটেও গেল। যে চক্রান্তের কিছু কিছু পরবর্তিকালে জানা গিয়েছে। আগামী দিনে আরও জানা যাবে।
৬
এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে ও রাজ্যে এমন সরকার চলছে, যার কৃতকর্মের দুর্গন্ধে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু কেরালার বাম-গণতান্ত্রিক সরকার।
সারা দেশে ও এ রাজ্যে এ সময় পর্বে ধারাবাহিকভাবে চলছে ঐ পুঁজিপতি জমিদার শাসন। যাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা আছে সাম্রাজ্যাবাদীদের। দেশের মূল ক্ষমতায় যে শাসক শক্তি, তাদের এজেণ্ডা একটা সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদে পূর্ণ অসহিষ্ণু, হিংস্র, জিঘাংসু, পশ্চাৎপদ চিন্তাধারার এক কূপমণ্ডুক হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র কায়েম করা। যেখানে মুসলমান, খ্রিস্টান, তথাকথিত নিম্ন বর্ণের মানুষ ও নারীদের কোন অধিকার থাকবে না। যার নাম হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র। কিন্তু তা করতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থের জোগান ঠিক রাখার জন্য তারা কিছু বৃহৎ পুঁজিপতিকে বিশেষ রকম মদত দেয়। বেপরোয়া দুর্নীতি করে ওদের সঙ্গে মিলে যায়। সেই জন্য ওদের এজেণ্ডার নাম দেওয়া হয়েছে, কর্পোরেট ও সাম্প্রদায়িকতার আঁতাত। তাই ষাট বছর আগের সময়ের তুলনায় এখনকার শোষণ আরও তীব্র, আরও বেয়াব্রু, আরও অনেকগুণ বেশি ধ্বংসাত্মক। এই ওয়েব সাইটেই অন্যরা এসব নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ বাংলায় সর্বার্থেই তাদের দোসর শক্তি শাসন করছে। প্রতিদিনের অভিজ্ঞতায় দেখছি তাদের কুৎসিত চেহারা।
আমরা এখানে কৃষক ও চাষবাস নিয়ে যা হচ্ছে তার কিছু কথা বলবো।
কৃষক ও কৃষিকাজ সংশ্লিষ্ট মানুষ রীতিমত নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছেন। বীজ, সার, ডিজেল, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, এক কথায় বাড়ছে, চাষের খরচ। অন্যদিকে ফসল কেনার কেউ নেই। এই যেমন, কষ্ট করে আবাদ করা পাট কে কিনবে? জেসিআই (জুট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া) দিল্লির। তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। রাজ্যের কোন হেলদোল নেই। এরকম আলুর দামে রাজ্যের বিস্তৃত এলাকার চাষি মার খাচ্ছেন প্রতি বছর। ধানের দামে কী যে হয়, তা সবার জানা।
দেশজুড়ে ও এ রাজ্যে কৃষি-সংশ্লিষ্ট মানুষকে আত্মঘাতি হতে দেখছি আমরা প্রতিদিন অন্নদাতারা ধ্বংস হলে সারা দেশে বিধ্বংস নেমে আসে – এটা স্বতঃসিদ্ধ বিষয়।
সাম্যব্রতি-প্রগতিবাদীদের লড়াইয়ে কখনও ছেদ থাকে না। তবুও বলা যায়, কয়েক মাস আগেও যা ভাবা যায় নি, সেই আন্দোলন এখন হচ্ছে। বেশ জবরদস্তভাবে হচ্ছে। তার গতিবেগ, তেজ অনেক বাড়ানোর রূপরেখা তৈরি হয়েছে। সেই অনুযায়ী আমাদের লড়াইও তীব্র হবে। হবে ‘মরেঙ্গে ইয়া জিতেঙ্গে’- এই জেদ নিয়ে লড়াই।
এবার খাদ্য আন্দোলনের শহীদ সহ সকল শহীদের স্মৃতি তর্পণের দিন ৩১শে আগস্ট, আমাদের কাছে এই বড় কর্তব্য নিয়ে হাজির হয়েছে।