Leftists’ are the Resort In The Time of Lockdown

অনেকদিন আগে এক দরিদ্র দেশে ফ্লু এর মহামারী দেখা দিয়েছিল। সেই দেশটি বহু বছর লুটেরাদের দখলে ছিল। মাত্র কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছিল। তাদের না ছিল ডাক্তার, না ছিল হাসপাতাল,পর্যাপ্ত কিছুই ছিল না। প্রতিদিন মানুষ মরছে।প্রবীণ,তরুণ, শিশু কেউ বাদ যাচ্ছেনা।
সেই দেশের রাষ্ট্রনেতা ইউরোপ আর আমেরিকার সব দেশের কাছে ডাক্তার নার্স সহ ওষুধ সাহায্য চাইলেন। ইউরোপের কোনও দেশ সাড়াই দেয় নি।লাতিন আমেরিকার দুএকটা দেশ সাধ্যমত সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল।
সেই মহা দুর্যোগের কালে সেই দরিদ্র দেশটির তরুণ রাষ্ট্রনেতা সিদ্ধান্ত নিলেন – দেশের প্রতি ২৫ জনের বিপরীতে ১ জন ডাক্তার থাকতে হবে নইলে স্বাস্থ্যসেবা উপযুক্ত হবে না, দেশও বিপদে থাকবে।

তারপর মহা পরাক্রমশালী প্রতিবেশী দেশের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে সেই দেশ এগিয়ে চললো। শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে সর্ব্বোচ্চ বিনিয়োগ, দেশটা খুবই দ্রুত নিরক্ষরতার অভিশাপ মুক্ত হলো।শত শত ডাক্তার নার্স দেশ সেবায় ঝাঁপিয়ে পড়লো।

তারপর সেই দেশের রাষ্ট্র প্রধান ঠিক করলেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আয়ত্ত্বে আনতে হবে – মানুষ বাঁচানোর প্রযুক্তি, মানুষ মারার প্রযুক্তি নয়।

সব বাধা উপেক্ষা করে দেশটা বায়োটেকনোলজি আর জেনেটিক্সে দুর্দান্ত অগ্রগতি ঘটিয়েছে। মেনিনজাইটিস এর টীকা উদ্ভাবন করলো তারা। ফুসফুস ক্যান্সার এর চিকিৎসাতেও দারুণ সফল এই ছোট্ট দেশটি ভাইরোলজি ও ইন্টারফেরন আল্ফা ২বি পৃথিবীর সামনে এনেছে তারা।

তারপর কিছুদিন আগে সেই দেশের সেই তরুণ নেতা যিনি এতদিনে বৃদ্ধ হয়েছেন,তিনি প্রয়াত হলেন।তারপর নতুন নেতারা দেশের হাল ধরেছেন কিন্তু নীতির পরিবর্তন হয়নি।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোরোনা ভাইরাসের মহামারি। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী আর ধনী দেশগুলি যখন বাঁচার উপায় খুঁজে বেড়াচ্ছে তখন সেই ছোট্ট দেশটি এগিয়ে এসেছে ডাক্তার নার্স ওষুধ নিয়ে।
যে ইউরোপ একদিন তাদের মহা বিপদে ফিরেও তাকায় নি সেই ইউরোপ আজ এই ছোট্ট দেশটির থেকে ডাক্তার, নার্স ও ওষুধ পাওয়ার আশায় দিন গুনছে।

এই ছোট্ট দেশটা ওষুধের পেটেন্ট নিয়েই বিশাল ব্যবসা করতে পারতো – করে নি। মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবসার ক্ষেত্র নয় – এটাই সেই দেশের নীতি।
দেশটির নাম কিউবা।সমাজতান্ত্রিক কিউবা। সেই নেতার নাম কমরেড ফিদেল কাস্ত্রো।
এই ছোট্ট কাহিনীর মূল মন্ত্র সঠিক নীতি আদর্শ,সদিচ্ছা থাকলে সব সম্ভব। আজ গোটা দেশ নোভেল করোনা ভাইরাসে ত্রস্ত। গোটা দেশ আজ নিজেকে বাঁচতে লক ডাউনের আওতায়। আমাদের রাজ্যেও ২৩শে মার্চ থেকে লক ডাউনের আওতায়। এছাড়া কোনও উপায় নেই। আবার উল্টো দিকে এই লক ডাউনের ফলে গোটা রাজ্যের একটা বড় অংশের মানুষ খুবই অসহায় অবস্থায় পড়েছেন। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত,গরিব খেটে খাওয়া প্রান্তিক মানুষ খুবই বিপদ। একদিকে করোনা সংক্রমনের ভয় আরেকদিকে অর্থনৈতিক অভাবের চিন্তা। গোটা দেশের সাথে সাথে আমাদের রাজ্যেও সিপিআই(এম) সহ বামপন্থীরা এই সকল মানুষের কথা চিন্তা করে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সরকারের কাছে।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের ৩২ জন বাম বিধায়ক তাদের পক্ষথেকে করোনা চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতাল গুলিকে নূন্যতম ১০লক্ষ টাকা অনুধান দেওয়ার ঘোষণা করেছেন। এগিয়ে এসেছেন অনেক প্রাক্তন বাম বিধায়ক ও সাংসদগন।
তার সাথে সাথে সরকারে না থেকেও আদর্শ আর মানসিকতা ঠিক থাকলে মানুষের পাশে থাকা যায় এই উদাহরন তৈরি করলো রাজ্যের বাম ছাত্র-যুব সংগঠন SFI ও DYFI।

প্রায় প্রতিটি জেলাতেই পঞ্চায়েত ও পৌর ওয়ার্ডে গড়ে তুলেছে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। তারা এলাকায় এলাকায় বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীর ফোন নম্বর দিয়ে তৈরী করেছে ডেডিকেটেট হেল্প লাইন ডেক্স। যা কিনা প্রশংসিত হয়েছে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম গুলিতেও।

বামপন্থী যুব সংগঠন DYFI এর করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় হেল্প লাইন নম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে দক্ষিণ২৪ পরগনার সোনারপুরের প্রবীর বাবু ফোন করেন DYFI নেতৃত্বকে, বাড়িতে ওনার অসুস্থ স্ত্রীর প্রয়োজনীয় ওষুধ লাগবে।আধঘন্টার মধ্যে, প্রবীর বাবুর বাড়িতে ওষুধ পৌঁছে দিল, DYFI এর জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য।
একই রকমের অভিজ্ঞতা যাদবপুর মহেশতলা সহ সমগ্র জেলা জুড়ে।
নিউটাউনের বাসিন্দা অনন্যা ব্যানার্জী, বাড়িতে অসুস্থ শিশু পুত্র,নিউটাউন এলাকার বামপন্থী ছাত্র-যুব সংগঠনের হেল্প লাইন নম্বর সংগ্রহ করে, ফোন করলেন। ১৫ -২০ মিটিনের মধ্যে SFI এর দুজন কর্মী শিশু পুত্রে জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দিয়ে গেলেন অনন্যা দেবীর কাছে।
হুগলীর বাসিন্দা অনিমেষ থাকেন বিদেশে, হঠাৎ খবর পান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওনার বাবা প্রয়াত হয়েছেন। দু -তিন দিন ধরে লক্ষ করছিলেন হুগলীর বামপন্থী ছাত্র যুব কর্মীরা মানুষের সাহায্যের জন্য হেল্প লাইন নম্বর পোস্ট করেছেন ফেসবুকে। ওই নম্বরে ফোন করে বাবার দেহ সৎকারের জন্য অনুরোধ করেন। ছাত্র-যুব কর্মীরা তার বাবার সৎকারের ব্যবস্থা করেন। নদীয়ার অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, হঠাৎ করে প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে ওনার স্বামী সুমিত বাবু পাড়ার DYFI কর্মীদের ফোন করে সাহায্য চান, ১০ মিনিটের মধ্যে পার্টি কর্মীরা তার বাড়িতে হাজির হন এবং হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। খুব আনন্দের খবর সেইদিনই অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্মদেন, এখন দুজনেই ভালো আছেন। হাওড়ার কদমতলা’র দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী পিয়াসা রায় বাবা মার একমাত্র কন্যা ,তার মা হাই ব্লাড প্রেসারের রুগী , তার মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনো গাড়ি বা এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না পিয়াসা ও তার বাবা। পিয়াস ফোন করেন করোনা মোকাবিলায় খোলা SFI-DYFI এর হেল্প লাইন নম্বরে, DYFI কর্মীরা একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে দেন, পিয়াসার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
কলকাতার লেকমলের কাছে থাকেন, বৃদ্ধ সুকান্ত বাবু গৃহপরিচারিক না আসায় বাজার- হাট করতে পারছেন না, পাশের ফ্ল্যাটের গৃহবধূ ঈশিতার থেকে হেল্প লাইন নম্বরে ফোন করে সাহায্য চাইলে এগিয়ে আসেন SFI- DYFI কর্মীরা।
গোটা রাজ্যে এইরকম শয়ে শয়ে ঘটনার মধ্যে এখানে কয়েকটি মাত্র ঘটনা উল্লেখ করা হলো। দিনরাত এককরে দেশ বাঁচানোর এই লড়াই লড়ছেন SFI-DYFI এর সংগ্রামী সৈনিকরা।

একই সাথে একদিকে যেমন গরিব প্রান্তিক মানুষের সাহায্য সীমিত ক্ষমতা নিয়ে চাল ও আলু তুলে দিচ্ছেন দক্ষিণ২৪পরগনার : যাদবপুরের সিপিআই(এম) কর্মীরা অন্যদিকে গরীব মানুষ যাতে ন্যায্য মূল্যে দ্রব্য কিনতে পারেন তার জন্য জনতা রেশনের নাম দিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন মহেশতলার ২৪নং ওয়ার্ডের কর্মীরা। এর বাইরেও সোনারপুর সুভাষগ্রামের বাম কর্মীরা নিজেদের পরিবার সহ মানুষের বাড়ি বাড়ি চাল ডাল আলু সংগ্রহ করছেন একদম গরিব প্রান্তিক মানুষদের হাতে সেই দ্রব্য তুলে দেওয়ার জন্য। এই চিত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বেশ কয়েকটি এলাকা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে দেখা যাচ্ছে।
মালদা জেলা : বাম কর্মী, ছাত্র যুবরা, হাসপাতালে গিয়ে, অসুস্থ মানুষদের স্যানিটাইজার বিতরণ করলেন।
উত্তর দিনাজপুর: SFI-DYFI কর্মীরা এখনো যারা জরুরী ভিত্তিক কাজের সাথে যুক্ত তাদের হাতে স্যানিটাইজার তুলে দিলো।
নদীয়া: লকডাউন ঘোষণার আগে সচেতনতা কর্মসূচি গ্রহণ করে স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিলি করেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর : বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে একজন মারা গেলে, পরিবারের পক্ষ থেকে শববাহী গাড়ির জন্য হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে, আধঘণ্টার মধ্যে, সৎকারের সমস্ত কাজেট দায়িত্ব ছাত্র যুবরা কাঁধে তুলে নেন।
পূর্ব বর্ধমান: প্রয়োজন ছিল রক্তের,আসানসোল হাসপাতালে ঝাঁপিয়ে পড়লো SFI আঞ্চলিক কমিটি। একে একে হাসপাতালেই রক্ত দিল, ছাত্র- ছাত্রীরা।

আজ এক কঠিন সন্ধিক্ষনে দাঁড়িয়ে গোটা দেশ। এই মারন ভাইরাসের বিরুদ্ধে গোমূত্র খেয়ে বা ঘন্টা বাজিয়ে লড়াই করা যাবে না। এই লড়াইটা জিততে হবে বিজ্ঞানের ওপর ভরসা রেখেই। এই লড়াইটা আমরা জিতবই এই ভরসা আমাদের আছে। তবে এই কঠিন সময়ে মানুষের পাশে থেকে আদর্শ আর মহৎ মানসিকতার যে নজির গড়লো এ রাজ্যের সংগ্রামী বাম ছাত্র-যুবরা নিশ্চিত ভাবেই বাংলার রাজনীতিতে তা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই আশা আমরা রাখি।

Album Gallery

Spread the word

Leave a Reply