মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি চুপ করে থাকলেও দিল্লিতে গণহত্যার রক্তে মাখা হাত নিয়ে অমিত শাহ কলকাতায় এলেই তীব্র বিক্ষোভ প্রতিবাদে সরব হবে এরাজ্যের ছাত্রযুব ও গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন সমস্ত মানুষ। বৃহস্পতিবার সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম কলকাতায় একটি সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী আসা মাত্র কলকাতা সহ সারা রাজ্য ‘মোদী গো ব্যাক’ স্লোগানে সোচ্চার হয়েছিলো। এবারও দিল্লিতে গণহত্যাকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ কলকাতায় আসা মাত্র ছাত্রযুব ও সব গণতান্ত্রিক মানুষকে আমরা প্রতিবাদে সোচ্চার হতে আবেদন করছি।
তিনি জানিয়েছেন, কোনো একটা রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের প্রতিবাদ নয়। এরাজ্যের ছাত্র সংগঠনগুলি নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে ছক ভাঙা আন্দোলনে প্রতিবাদ করবে। আমাদের কোনো নির্দেশের প্রয়োজন তাঁদের নেই, তাঁরা যেভাবে স্বতঃস্ফূর্ত ও সৃজনশীল নানা পথে প্রতিবাদ করছে, সেরকমভাবেই করবে। দিল্লিকান্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী চুপ করে থেকে নিস্তবদ্ধতা নামিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সরব প্রতিবাদ হবে রাজ্যে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ভূবনেশ্বরে অমিত শাহের ডাকা বৈঠকে যোগ দিতে রওনা হওয়ার আগে আগামী ১ মার্চ কলকাতায় শহীদ মিনার ময়দানে অমিত শাহের জনসভার অনুমতি দিয়ে গেছেন। সেলিমের প্রশ্ন, বিজেপি’কে জনসভার অনুমতিই যদি দেবেন তাহলে এর আগে অমিত শাহের সভা নিয়ে নাটক করেছিলেন কেন? আমরা সভা করতে গেলে, মিছিল করতে গেলে মাইকের অনুমতি পাচ্ছি না, অথচ রক্ত মাখা হাত নিয়ে অমিত শাহ এসে সভা করার অনুমতি পেয়ে গেলেন! আগে সবাই ভাবতো এরাজ্যে কর্ত্রীর ইচ্ছাই শেষ কথা। এখন দেখা যাচ্ছে তাঁর ওপরেও কর্তা রয়েছেন। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম হচ্ছে!
সেলিম বলেন, দিল্লিতে গুন্ডা কন্ট্রোল করে আসা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এরাজ্যের গুন্ডা কন্ট্রোল করা মুখ্যমন্ত্রী স্বাগত জানাচ্ছেন। কারণ তাঁদের মধ্যে সমঝোতা রয়েছে। রাজীব কুমারকে বাঁচাতে, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে যুক্তদের বাঁচাতে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রী অমিত শাহকে সভার অনুমতি দিতে পারেন, কিন্তু রাজ্যের ছাত্রযুব এবং গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন মানুষ প্রতিবাদ করবেন। আমরা সকলের উদ্দেশ্যে বলছি, দিদি বাঁচাবে ভেবে চুপ করে বসে থাকবেন না। সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদে সামিল হন। এটা রাজ্যকে বাঁচানোর লড়াই। গুজরাতের পরে দিল্লিতে যা ঘটেছে এরপরে বিহার এবং বাংলায় নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এখানেও সেগুলো ঘটনার চেষ্টা করবে। ধর্মীয় বিভাজন আর হিংসার শক্তির কাছে দিদি বশ্যতা স্বীকার করে বসে আছে, তিনি প্রতিবাদ করবেন না। বাংলাকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এরাজ্যের তৃণমূল সরকার কীভাবে আরএসএস-বিজেপি’কে পথ করে দিচ্ছে তার উল্লেখ করে সেলিম বলেন, এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত থাকায় অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে পুলিশ। তৃণমূল হুমকি দিয়েছে, জলঙ্গীতে খুন করেছে। মুখ্যমন্ত্রী একা প্রতিবাদ করবে, আর কেউ প্রতিবাদ করতে পারবে না, এটাই হলো এরাজ্যের সরকারের অবস্থান। কিছুদিন মুখ্যমন্ত্রীর ‘ক্যাক্যা ছিছি’ চললো। এখন দিল্লিতে ভয়াবহ হিংসার পরে মুখ্যমন্ত্রীও চুপ, তাঁর দলের অন্যরাও চুপ। কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই। দিল্লির ঘটনা এতটাই ভয়ানক যে এখন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান নেওয়ার সময়। অথচ কেলেঙ্কারিতে ফেঁসে থাকা মুখ্যমন্ত্রী নিজের অবস্থান নিয়েই এত শঙ্কিত যে কর্তাভজা অবস্থান ছাড়া কোনো অবস্থান নিতে পারছেন না।
দিল্লিতে বামপন্থীরা কীভাবে প্রতিবাদে নেমেছে, বৃন্দা কারাত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন, সীতারাম ইয়েচুরি অন্য রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়েছেন, সেনা নামানোর দাবি করেছেন, ইত্যাদি উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, বামপন্থীরা প্রতিবাদে আছে। এই সময়ে প্রতিবাদ করাই আমাদের কর্তব্য। নইলে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য রক্ষা করবো কী করে!