১২টি শস্যের একটি তালিকা উল্লেখ করে, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমতি নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছিলেন যে “লিগ্যাল মেট্রোলজি আইনের বিধানগুলির ওপর ভিত্তি করে “পূর্বে-প্যাকেজ করা এবং লেবেলযুক্ত” পণ্যগুলি সরবরাহ করা হলে এই পণ্যগুলির উপর জিএসটি প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, ডাল, শস্য যেমন চাল, গম এবং আটা ইত্যাদির মতো পণ্যগুলি আগে ব্র্যান্ডেড এবং এককভাবে প্যাকেটবন্দী করার সময় ৫% হারে জিএসটি আকর্ষণ করত। ১৮ জুলাই ২০২২ থেকে, এই পণ্যগুলি “প্রি-প্যাকেজ করা এবং লেবেল করা” হলে জিএসটি যুক্ত করা হবে”।
ব্র্যান্ড ও ব্র্যান্ডবিহীন
আমাদের এই ক্লান্তিহীন বক্তব্যগুলো সম্পর্কে বোঝাপড়া স্পষ্ট করা যাক। এক,যখন বিস্তারিত আলোচনার পরে জিএসটি-এর বিষয়টা ঠিক হয় তখন খাদ্যশস্য ও জরুরি পণ্যের ওপর কোন জিএসটি না বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জিএসটি কাউন্সিল। এটাও বলা হয় যে নথীভুক্ত ব্র্যান্ডের অধীনে বিক্রি হলে কেবল তখনই কর দিতে হবে।এইভাবে, খুচরা ব্যবসায়ী বা ছোট কোম্পানি যারা শস্য বা আটা আলগা, প্যাকেজ বা লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করত তাদের কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। তাদের ক্রেতারা বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ যাদের পক্ষে বেশি দাম দিয়ে ব্র্যান্ডেড পণ্য কেনার ক্ষমতা নেই। এইভাবে, বিদ্যমান জিএসটি করকাঠামো সাধারণ গ্রাহকদের এবং ছোট কোম্পানিগুলিকে করের বোঝা থেকে রেহাই দিয়েছিল যখন বড় ব্র্যান্ডগুলির ওপর করের চাপ ছিল।
প্রাক-প্যাকেজ ও প্যাকেজবিহীন
দুই, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছে। তিনি ব্র্যান্ডেড এবং ব্র্যান্ডবিহীন পণ্যের মধ্যে পার্থক্য দূর করেছেন। ১৮.০৭.২০২২ থেকে, “পূর্বে-প্যাকেজ এবং লেবেল করা” হলে সমস্ত পণ্যের ওপর জিএসটি আরোপ হবে। নতুন ব্যবস্থায় ব্র্যান্ডিংয়ের কোনও উল্লেখ নেই। একটি উচ্চ মূল্যের ব্র্যান্ড এবং একটি পণ্যের “প্রাক-প্যাকেজ এবং লেবেল” সমানভাবে করভুক্ত হবে।
লিগ্যাল মেট্রোলজি আইন ‘পূর্বে-প্যাকেজ করা পণ্য’কে এমন একটি পণ্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে যা ক্রেতার অনুপস্থিতিতেই প্যাকেটজাত করা হয়, তা সিল করা হোক বা না হোক, যাতে এতে থাকা পণ্যটির একটি পূর্ব-নির্ধারিত পরিমাণ থাকে।এখন এইসব পণ্য এভাবেই বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এগুলির প্রত্যেকটিতেই ৫% হারে কর চাপবে।
কর ফাঁকির সমাধান
এই পদক্ষেপের যৌক্তিকতা কি? আবারও, আমরা অর্থমন্ত্রীর ট্যুইটগুলি থেকে উদ্ধৃত করছি: “সমস্ত দিক বিবেচনায় নিয়ে, যখন জিএসটি চালু করা হয়েছিল, তখন ব্র্যান্ডেড শস্য, ডাল, ময়দার উপর ৫% হারে জিএসটি প্রযোজ্য হয়েছিল। পরবর্তীতে কর সংশোধন করা হয় এবং কেবলমাত্র নিবন্ধিত ব্র্যান্ড বা ব্র্যান্ডের অধীনে বিক্রি হওয়া পণ্য যার উপর সরবরাহকারীর দ্বারা প্রয়োগযোগ্য অধিকার বাতিল করা হয়নি তাদের ওপর কর বসানো হয়। যাইহোক, শীঘ্রই বিভিন্ন স্বনামধন্য নির্মাতা এবং ব্র্যান্ড মালিকরা এই নিয়মের ব্যাপক অপব্যবহার করতে থাকেন এবং ধীরে ধীরে এই পণ্যগুলি থেকে জিএসটি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।”
এটি একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির জন্য খুব বিরল যেটি ব্র্যান্ড তৈরিতে বিপুল সম্পদ বিনিয়োগ করেছে তারা এটি ছেড়ে দেবে এবং তারা ৫ শতাংশ ট্যাক্সের জন্য আটকে যাবে। তাদের জন্য একটি বাঁচার যুক্তি জিএসটি-এর পরবর্তী সংশোধনীর সাথে এসেছে যেখানে ব্র্যান্ডটিকে “নিবন্ধিত ব্র্যান্ড বা ব্র্যান্ড যার উপর প্রয়োগযোগ্য অধিকার সরবরাহকারীর দ্বারা অগ্রাহ্য করা হয়নি” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল।
বড় কোম্পানিগুলি কেবল প্যাকেট বা পাত্রগুলিতে একটি ব্যাখ্যামূলক নোট ছাপিয়েছিল যে তারা “প্রয়োগযোগ্য অধিকার” ছেড়ে দিচ্ছে। এটি স্পষ্টতই কর এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা। অতএব,উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া হত সংশোধনীতে পরিবর্তন করা,সহজ পথ নেওয়ার পরিবর্তে ব্র্যান্ডেড এবং ব্র্যান্ডহীণ শ্রেণীবিভাগ করে দেওয়া একটি উজ্জ্বল ধারণা নিয়ে কেউ হাজির হয়েছিল। কর্পোরেটদের সাহায্য করার জন্য এটি একটি চতুর চক্রান্ত ছিল।
২৫ কেজির বেশি প্যাকেজ
কর্পোরেট তুষ্টির সম্পূর্ণ মাত্রাটা বোঝা যাবে যখন এটি নির্দেশের অন্য একটি ধারার সাথে পড়া হবে। ২৫ কেজির বেশি প্যাকেজগুলিকে প্যাকেজড কমোডিটিস (PC) নিয়মের অধীনে ঘোষণা করা থেকে বিশেষভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে, এবং তাই এটা ধরে নেওয়া যুক্তিসঙ্গত যে এগুলির ওপর কোন জিএসটি বসবে না। এইভাবে, ব্র্যান্ডেড সরবরাহকারীকে ট্যাক্সের জাল এড়াতে প্যাকেজের ওজন ২৬ কেজি পর্যন্ত বাড়ালেই হবে। এই কর ফাঁকি ইতিমধ্যেই ব্যাপক হারে ঘটছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ট্যুইটগুলিতে বড় প্যাকেজগুলিতে দেওয়া এই ছাড়ের কোনও উল্লেখ নেই।
নতুন সংশোধনীগুলি স্পষ্টতই কর্পোরেট স্বার্থের পক্ষে যাতে তারা করের বোঝা অনেকাংশে এড়াতে পারে৷ এ ব্যাপারে তিনি কার্যত দোষ স্বীকার করেছেন।“সরবরাহকারী এবং শিল্পমহল যারা ব্র্যান্ডেড পণ্যের ওপর কর দিয়েছিল তারা অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছিল। তারা এই ধরনের অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য সমস্ত প্যাকেজযুক্ত পণ্যগুলিতে সমানভাবে জিএসটি আরোপ করার জন্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে। কর ফাঁকির এই ব্যাপক হার রাজ্যগুলিও লক্ষ্য করেছে৷
বিলাস পণ্যের উপর করের হার হ্রাস
প্রাথমিকভাবে করের হারগুলি নির্ধারণ করার সময় কাউন্সিলে বিস্তৃত আলোচনার মধ্যে ছিল প্রাক-জিএসটি কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য করের বিস্তারিত পরীক্ষা এবং প্রতিটি পণ্যের উপর মোট বিদ্যমান মিলিত কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য করের বোঝার থেকে নতুন জিএসটি হারগুলি যেন কম হয় তা নিশ্চিত করা।
এই প্রয়োগের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী ছিল টেকসই পণ্যগুলির সাথে যুক্তরা যাদের বিদ্যমান করের বোঝা ৩০ থেকে ৪৫ শতাংশের মধ্যে ছিল।তাদের কর হ্রাস করে অভিন্ন ২৮% শতাংশ করা হয়েছিল যা জিএসটি-এর অধীনে সর্বোচ্চ করের হার হিসাবে নির্ধারিত হয়েছিল।
জিএসটি-এর মুখ্য হারগুলি হল ৫,১২,১৮ এবং ২৮শতাংশ। এছাড়া জিএসটি নেই এমন পণ্য রয়েছে, সোনার জন্য ৩ শতাংশ এবং মূল্যবান ধাতুগুলির জন্য ০.২৫ শতাংশ ধার্য হয়েছে।একটি বিস্তৃত পর্যালোচনা নিশ্চিত করেছে যে হারের কাঠামো রাজস্ব নিরপেক্ষ হবে অর্থাৎ নতুন জিএসটি হারে প্রাক-জিএসটি পরিস্থিতির তুলনায় রাজস্ব প্রাপ্তির কোনো হ্রাস ঘটবে না।
ওয়েবডেস্কের পক্ষে অনুবাদঃ সরিৎ মজুমদার