General Strike

General Strike: Peoples’ Struggle(Part II)

২৮-২৯ মার্চ,২০২২ – দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট

নতুন উচ্চতায় সংগ্রামের স্থাপনা

২য় পর্ব

 তপন সেন

ক্রমবর্ধমান আর্থিক বৈষম্য ও মানুষের দুর্দশা

উপরোক্ত এই প্রক্রিয়ায় একদিকে যেমন “ইজ অফ ডুইং বিজনেস” (আদতে জনগণ ও দেশের সম্পদ লুঠের সুবিধা) এর সূচকে ভারতবর্ষ বিশ্বব্যাপী তালিকায় উপরে উঠে আসছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ক্ষুধা ও জীবনযাপনের মানের নিরিখে ক্রমাগত নীচে নেমে যাচ্ছে। ভারতবর্ষ আজ আয়ের বৈষম্যের প্রসঙ্গে এক ভয়ঙ্কর জায়গায় দাঁড়িয়ে যা কিনা যে কোনো সভ্য সমাজব্যবস্থায় মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিবিধ বিশ্বাসযোগ্য সমীক্ষায় প্রকাশিত যে এ দেশের সর্বোচ্চ ১% মানুষের হাতে দেশের তাবৎ সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ কুক্ষিগত রয়েছে যেখানে তলার ৫০% মানুষের হাতে ৬% এর-ও কম সম্পদ রয়েছে। ২০২০ সাল অবধি জাতীয় আয়ের ৫৭% দেশের ১০% মানুষের হাতে রয়েছে যেখানে তলার ৫০% মানুষের ভাগ জাতীয় আয়ের ১৩% এর বেশি নয়। এর মধ্যেও ওপরের মাত্র ১% এর হাতেই জাতীয় আয়ের ২২% রয়েছে। সে বছরেই ভারতবর্ষ গড় আভ্যন্তরীণ উৎপাদনে নেগেটিভ হারে চলে যায় যার মানে দাঁড়ায় দেশের সম্পদ সৃষ্টির হার নেমে আসে। অথচ এই সময়কালেই মুষ্ঠিমেয় পুঁজিপতির সম্পদ গড়ে প্রায় ৪০% হারে বৃদ্ধি পায় এবং তাদের মধ্যে আবার কিছু পুঁজিপতির সম্পদ ৮-১০ গুণ অবধি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের এই উল্কার গতিতে সম্পত্তির বৃদ্ধি কোনো সম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে ঘটেনি বরং সরকারী নীতির কল্যাণে জনগণ তথা দেশের সম্পদ লুন্ঠনের মাধ্যমে ঘটেছে। মোদি সরকারের আমলে এই ধান্দার পুঁজিবাদকে সর্বোচ্চ স্তর থেকে মদত দেওয়া চলছে দেশ এবং দেশের মানুষের লাগামহীন লুন্ঠনের ক্ষেত্রে।

আন্দোলনের বৃদ্ধি, বিস্তার এবং বিকেন্দ্রীকরণ 

এখানেই কিন্তু শেষ নয়। এই সময়কালেই শ্রমজীবি জনতার সকল অংশের ক্রমবর্ধমান লড়াই আন্দোলন এক নতুন মাত্রায় পৌঁছচ্ছে। এই সময়কালেই ২৬শে নভেম্বর ২০২০ তে ভয়াবহ অতিমারি এবং দেশ জুড়ে লকডাউনের সময়কালেও, যখন চলাফেরা, সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলন সংগ্রাম সবই প্রায় নিষিদ্ধ ঘোষিত করা হয়, তখনই দেশব্যাপী বিংশতিতম সাধারণ ধর্মঘট পালন করেন এ দেশের শ্রমজীবি জনতা যা কিনা ১৯৯১ পরবর্তী সময়ের সর্ববৃহৎ ধর্মঘট হয়। এই দেশব্যাপী ধর্মঘট অত্যন্ত সুকৌশলে অতিমারি’র নামে লাগু করা বিবিধ প্রতিবন্ধকতা কে অতিক্রম করেই অনুষ্ঠিত হয় একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে বিকেন্দ্রীকৃত ভাবে, শ্রমজীবি মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনায় ভর করে সহস্রাধিক কল-কারখানা ও অন্যান্য সংগঠিত এবং অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রে। এই ধর্মঘটে অভূতপূর্ব মাত্রার উৎসাহ এবং দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত হয় বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে যা কিনা এক অন্য স্তরের চেতনা ও উদ্দীপনার পরিচায়ক।

সেই দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের দিন থেকেই ঐতিহাসিক ঐক্যবদ্ধ কিসান আন্দোলনের তরফে দেশের রাজধানী ঘিরে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয় জনবিরোধী কৃষি আইনের প্রতিবাদে। এই কিসান আন্দোলনের পাশে প্রত্যক্ষভাবে ও দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায় শ্রমিক আন্দোলন যা কিনা শুধুমাত্র দেশের রাজধানীর চারিপাশেই সীমাবদ্ধ না থেকে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী অবধি গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে কিসান আন্দোলনের প্রতি দেশজোড়া এই সমর্থন এক শক্তিশালী সেতু গড়ে দেয় সংযুক্ত কিসান মোর্চার সাথে ট্রেড ইউনিয়নগুলির যৌথ মঞ্চের, একে অপরের সকল দাবিদাওয়ার প্রতি পুর্ণ সমর্থন জ্ঞাপনের মাধ্যমে।  শ্রমিক ও কৃষকের লড়াইয়ের ক্ষেত্রে এই ঐক্য এক নতুন স্তরে পৌছেছে যা কিনা মানুষমারা কেন্দ্রীয় সরকারী নীতির বিরোধীতার স্তর থেকে উন্নীত হয়ে সেই সকল নীতির রাজনৈতিক নির্ধারকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে।

যৌথ লড়াইয়ে রূপান্তর

শ্রমিক ও কৃষকের একে অপরের লড়াইয়ের প্রতি এই সক্রিয় সমর্থন এক অভিন্ন বিন্দুতে এসে মিলিত হচ্ছে। বৃহৎ বুর্জোয়া পরিচালিত সরকারের আক্রমণের প্রতিরোধে এই দুই পক্ষই তাদের অভিন্ন শত্রুকে চিহ্নিত করতে পারছে। এই রাজনৈতিক বোধ-ই আগামী দিনে শ্রমজীবি জনতার যৌথ সংগ্রামের উল্লম্ফনের স্থান তৈরি করছে যা রূপ পেতে চলেছে ২৮-২৯ মার্চ, ২০২২ এর শ্রমিক বিরোধী, জনবিরোধী, দেশবিরোধী এই ধ্বংসাত্মক সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘটের মাধ্যমে।  সেই কারণেই এই শ্রেণীযুদ্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে জাতীয় সম্পদের কর্পোরেট লুঠের বিরুদ্ধে, মানুষের জীবন জীবিকার উপর নেমে আসা আক্রমণের বিরুদ্ধে। ডাক দেওয়া হয়েছে “মানুষ বাঁচাও দেশ বাঁচাও” যার রাজনৈতিক অভিমুখ হতে চলেছে শুধুমাত্র শ্রমিক শ্রেণীর অধিকার ও জীবিকা রক্ষা নয়, বরং গোটা দেশকে এই ভয়াবহ আক্রমণ ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। আগামী ২৮-২৯ মার্চ ২০২২ এর এই সাধারণ ধর্মঘটকে গুণগতভাবে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে এই স্বৈরাচারী ও ধ্বংসাত্মক সরকার কে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য, দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে যেতে হবে আরো উন্নত চেতনার দিকে যার মাধ্যমে এই নয়া উদারবাদের রাজনীতিকেই সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করে পরাজিত করা সম্ভব হয় দেশ এবং দেশের মানুষকে বাঁচানোর স্বার্থে।

Spread the word

Leave a Reply