Gandhi Assassination

Gandhi Assassination: Why Evacuees were Alleged!

গান্ধী খুনের রিভলবারটি ইতালিতে বানানো ছিল। সিরিয়াল নম্বর ছিল ৬০৬৮২৪।

‘ফ্যাসিস্ট স্পেশাল’ হিসাবে রিভলবারটি পরিচিত। কারন মুসোলিনির আমলে ইতালিতে ফ্যাসিস্টরা এই অস্ত্রটি ব্যবহার করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র শক্তি জয়ী হয়। মিত্র শক্তির অংশ ছিল ব্রিটিশরা। ব্রিটিশদের হয়ে যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন চতুর্থ গোয়ালিয়র ইনফ্যান্ট্রির কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ভিভি যোশী। এই যোশী মুসোলিনির সেনা অফিসারের আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসাবে স্বীকৃত ওয়ার ট্রফি হিসাবে ওই বন্দুকটি পেয়েছিলেন। যুদ্ধের পর যোশী সেই ‘ওয়ার ট্রফি’ ফ্যাসিস্ট স্পেশাল রিভলবারটি গোয়ালিয়ারে নিয়ে আসেন। যোশীকে গোয়ালিয়রের মহারাজা জিয়াজিরাও সিন্ধিয়ার এডিসি(নিরাপত্তা প্রধান) হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

গোয়ালিয়রের মহারাজার এডিসি-র সেই আগ্নেয়াস্ত্র গডসে আর আপ্তের হাতে পড়েছিল বেআইনি অস্ত্র কারবারিদের মাধ্যমে। যদিও গান্ধীর নাতির ছেলে তুষার গান্ধী তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘‘গোয়ালিয়র কোর্টে কর্মরত একজন শীর্ষ আধিকারিকের কাছে থাকা একটা যুদ্ধের স্মারক ট্রফি কীভাবে বন্দুককারবারির হাতে পড়েছিল আর তার কাছ থেকে বাপুর খুনীদের কীভাবে কাছে পৌঁছেছিল তা কখনও তদন্ত করে দেখা হয়নি।’’

গান্ধীকে যে তিনটি বুলেট বিদ্ধ করেছিল তা ছোঁড়া হয়েছিল সেই ‘ফ্যাসিস্ট স্পেশাল’ থেকেই।
আর নাথুরাম গডসে সেই অস্ত্র সরবরাহের দায় কার ঘাড়ে চাপিয়েছিল?
গডসে আদালতে জানান,‘‘চরম হতাশা নিয়ে দিল্লি পৌঁছে আমি দিল্লির উদ্বাস্তু কলোনীতে গেলাম। উদ্বাস্তু শিবিরে ঘুরতে ঘুরতে আমার চিন্তাভাবনা একটা স্পষ্ট চূড়ান্ত মোড় নিল। আকস্মিকভাবেই আমার এক উদ্বাস্তুর সঙ্গে দেখা হল — সে অস্ত্রাদির লেনদেন করত এবং আমাকে একটি পিস্তল দেখাল। এটা পাওয়ার জন্য আমি প্রলুব্ধ হলাম এবং তারপর তার থেকে কিনে ফেললাম। এই পিস্তলটাই পরে আমি যে গুলি ছুঁড়েছিলাম তাতে ব্যবহার করেছিলাম।’’

গোয়ালিয়র, মুম্বাই, পুনে — কোথাও অস্ত্র না পাওয়া নাথুরাম গডসে পিস্তল পেলেন ‘আকস্মিকভাবে’ দিল্লির এক উদ্বাস্তু কলোনীতে। একজন উদ্বাস্তু তার মত অচেনা লোককে কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিয়ে দিল যে, সে সর্বস্ব হারিয়ে পাকিস্তান থেকে এসে ছ’ মাসের মধ্যে ভারতে অস্ত্রের কারবারী হয়ে উঠেছে। অচেনা এলাকার কয়েক মাসের বাসিন্দা এক উদ্বাস্তু অচেনা গডসেকে একটি পিস্তলও দেখাল!

আদালত এমন কোনও উদ্বাস্তুর সন্ধান পায়নি। কিন্তু গান্ধীহত্যার সঙ্গে উদ্বাস্তু এবং উদ্বাস্তু কলোনীকে জড়িয়ে দেওয়ার এই চেষ্টা সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।

এই অস্ত্রটি কীভাবে গডসের হাতে পড়েছিল?
১৯৪৮-র ২৮শে জানুয়ারি পর্যন্ত গডসে-আপ্তে গ্যাংয়ের কাছে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকে খুন করার জন্য কোনো অস্ত্র ছিল না। তিনটি রিভলবার হাতে ছিল তাদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও ২০ শে জানুয়ারি ওদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ ২০শে জানুয়ারি দুপুরবেলা তারা বুঝতে পারে যে দুটো বন্দুকের জন্য ভুল ক্যালিবারের গুলি ওদের হাতে রয়েছে। আর তাই সেগুলি কোনো কাজের নয়। আর গোপাল গডসের কাছে আরেকটা যে রিভলবার ছিল, সেই রিভলবারটি জ্যাম হয়ে গিয়েছিল। তাই সেটাও অকেজো। ২১ থেকে ২৮শে জানুয়ারি — নাথুরামরা বন্দুকের খোঁজে অনেক জায়গায় গিয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছিল।

কাপুর কমিশনের তদন্তে প্রকাশ হয়েছে যে গোয়ালিয়রে দত্তাত্রেয় পার্চুরের কাছে যাওয়ার পরামর্শ নাথুরামরা কার থেকে পেয়েছিল? পার্চুরে কার উপর আস্থা থেকে নাথুরাম এবং আপ্তের মত দুই প্রায় অচেনা যুবককে অস্ত্রের ব্যবস্থা করে দিতে সম্মত হয়েছিলেন? উত্তর একজনের দিকেই ইঙ্গিত করে। তিনি ‘বীর’ সাভারকর। পার্চুর ছিলেন সাভারকারের অতি অনুগত হিন্দু মহাসভার নেতা। ২৮তারিখ খুব ভোরেই গডসেরা গিয়েছিল পার্চুরের বাড়িতে। পার্চুরের কাছে নিজের একটি ভালো বন্দুক ছিল। গডসেরা সেটাই চেয়েছিল। কিন্তু পার্চুরে সেটা দিতে অস্বীকার করেন। তবে সাভারকর-ভক্তির কারনে সে রাজি হয়ে যায় একটা পিস্তল জোগাড় করে দিতে। ২৮শে জানুয়ারি বিকেলে দণ্ডবতে জানায় যে সে একটা ভালো অস্ত্র পেয়ে গেছে। সেটা জোগাড় করা হয়েছিল এক পরিচিত বন্দুক কারবারি জগদীশ প্রসাদ গোয়েলের কাছ থেকে। গডসে আর আপ্তে গোয়েলকে ৫০০টাকা দিয়ে বন্দুকটা নিয়েছিল। এভাবেই একটা গোটা ম্যাগাজিন আর বাড়তি ৭রাউন্ড কার্তুজসহ খুনের অস্ত্রটা খুনীদের হাতে চলে আসে।
সেসময় ক্লোজ রেঞ্জ থেকে খুন করার অন্যতম জনপ্রিয় অস্ত্র ছিলো সিরিয়াল নম্বর ৬০৬৮২৪-এর এই বেরেট্টা ৯এমএম সেমি অটোমেটিক পিস্তলটি। বিশ্বজুড়েই তখন ঘাতকদের পছন্দের অস্ত্র ছিল এটাই। ইতালির বেরেট্টা কোম্পানির তৈরি একটা লিমিটেড এডিশন গান হিসেবে এই বন্দুকটা বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল মুসোলিনির সেনাবাহিনীতে কর্মরত অফিসারদের জন্য এবং আজও এটাকে ‘ফ্যাসিস্ত স্পেশাল’ বলা হয়ে থাকে। উত্তর আফ্রিকার অ্যাবসিনিয়ায় আক্রমণকারী মুসোলিনির সেনাবাহিনীর একজন অফিসার এই বন্দুকটি ব্যবহার করত।

গান্ধী হত্যায় দত্তাত্রেয় পার্চুরে ছিল সহ-অভিযুক্ত। গ্রেপ্তারের সময় সে একজন ব্রিটিশ নাগরিক ছিল, এই টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে আবেদনের ভিত্তিতে তাকে খালাস করে দিয়েছিল পাঞ্জাব হাইকোর্ট। এবং যেহেতু গ্রেপ্তারের সময় প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়নি তাই গ্রেপ্তারিটাই অবৈধ হয়ে যায় এবং তাই অকাট্য প্রমাণ এবং তার নিজের স্বেচ্ছা জবানবন্দী থাকা সত্ত্বেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি।

অস্ত্রের মূল বন্দোবস্তকারী ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক। আর গডসে দোষ চাপিয়ে দেয় ‘উদ্বাস্তু’ দের উপর!
এই হলো সঙ্ঘ এবং ‘সাভারকারাইট’ রা।

Spread the word

Leave a Reply