Fight against Corona, Fight against Discrimination_SurjaKanta Mishra.

Fri Day 3, April 2020

করোনা ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী সংক্রমণ আমাদের দেশ ও রাজ্যসহ দুনিয়াজুড়ে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যা আমরা জীবদ্দশায় কেউ কখনো দেখিনি। এ এমন এক বিপদ যার মোকাবিলা আমাদের কখনো করতে হয়নি। এর আগে ১৯১৮ সালে স্প্যানিস ফ্লু’তে এমন মহামারী হয়েছিল যাতে মোট ৫ কোটি মানুষ মারা গেছিল, তারপরে কখনো এমন ভয়ানক প্যানডেমিক দেখা যায়নি। পরিস্থিতি হয়তো আরও খারাপ হবে এমন আশঙ্কা রয়েছে, সরকারিভাবে আমাদের দেশ কোভিড-১৯ সংক্রমণের দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে বলা হলেও হয় আমরা ইতিমধ্যেই তৃতীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছি অথবা যে কোনও সময়ে তাতে প্রবেশ করতে চলেছি যেখানে শুধু বাইরে থেকে সংক্রামিত ব্যক্তির থেকে সংক্রমণ নয়, মানুষের মধ্যে কমিউনিটি সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কিন্তু পরিস্থিতি যাই হোক প্যানিক বা আতঙ্ক ছড়ানো কোনও কাজের কথা নয়। আতঙ্কিত হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে, এবং সচেতনতা ও সতর্কতা নিয়ে করোনার বিরুদ্ধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতো সবাই সম্মিলিতভাবে লড়াই করলে এই বিপদকে রুখে দেওয়া সম্ভব।
পুঁজিবাদ এই পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশেই দায়ী। চীনে যখন করোনা সংক্রমণ শুরু হয় তখন ট্রাম্প থেকে মোদী পুঁজিবাদের অনেক মুখই এই বিপদকে অবহেলা করেছিল, উপহাস করেছিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ উপেক্ষা করেছিল। বিপদকে গুরুত্ব না দিয়ে চীনবিরোধী কুৎসা চলছিল। এখন আমেরিকা করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর হারে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে, ট্রাম্প তাঁর আগের কথা বদলে ফেলেছেন। সারা দুনিয়ার মতো আমাদের দেশও গভীর সঙ্কটে। বিপদ কেবল একটা নয়, বিপদ দু’দিক থেকেই।

করোনা সংক্রমণ যখন তীব্র হচ্ছে, তখন একইসঙ্গে তীব্র হচ্ছে অর্থনৈতিক সঙ্কট। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা যা শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে তার থেকে বিশ্ব মুক্ত হতে পারেনি। আমাদের দেশে নোটবন্দি এবং জিএসটি’র ফলে ব্যাপক উৎপাদন হ্রাস, ছাঁটাই, অর্থনৈতিক সঙ্কট গভীরতর হয়েছিল। করোনা সংক্রমণের সঙ্কট শেষ হলেও সেই সঙ্কট মিটবে এমন কোনও লক্ষ্মণ নেই, বরং করোনা সংক্রমণ রোখার জন্য লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে বিরাট বিপর্যয় দেখা দেবে। তাই আমাদের আসলে লড়াই করতে হবে দুটি ফ্রন্টেই। করোনা সংক্রমণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে, অর্থনৈতিক সঙ্কটে মানুষের মৃত্যুও ঠেকাতে হবে। মনে রাখতে হবে, ১৯১৮ সালের প্যানডেমিক স্প্যানিস ফ্লু’তে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল মন্দাজনিত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে।
এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য দরকার ছিল সরকারের একটা বিকল্প নীতিনিষ্ঠ অবস্থান। কিন্তু আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার অথবা এরাজ্যের সরকার যারা কেবল ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনেই স্বচ্ছন্দ তাঁদের পক্ষে এমন অবস্থান নেওয়া সম্ভব নয়, আর সেই অবস্থানের পিছনে মানুষকে সমবেত করে সফলভাবে এই দ্বিমুখী সঙ্কটের মোকাবিলাও সম্ভব নয়। ব্যক্তিনির্ভর নীতিহীন কোনও সরকার এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে পারে না। না কেন্দ্রের, না রাজ্যের। পরিস্থিতি মোকাবিলার উপযোগী নীতি কার্যকর করার বদলে যে নিজেই নীতিহীন হয়ে কেবল ব্যক্তিপ্রচারের জন্য কাজ করছে সে কী করে অন্য পক্ষের সমালোচনা করবে! এরা দু’পক্ষই এক, কেউ মোদী কেয়ার করছে, কেউ নিজে হাতে খাবারের প্যাকেট দিচ্ছে, খাবারের প্যাকেটের গায়ে নিজের ছবি দিচ্ছে।

কোনও আগাম প্রস্তুতি ছাড়া কেবল লকডাউন করে এরা বিপর্যয় এনেছে। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের বাইরে আলাদা করে যে ত্রাণ তহবিলের কথা কেন্দ্রীয় সরকার বলেছে আমরা তাকে অস্বচ্ছ বলে মনে করি ও তার বিরোধিতা করি।

করোনা মোকাবিলার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দিল্লিতে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে তবলিঘি জামাতের একটি জমায়েত কেন্দ্রীয় সরকারের জ্ঞানত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। একই সময়কালে কেন্দ্রের সরকার ও শাসকদলের মদতেও দেশে বিভিন্ন জমায়েত করা হয়েছে দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে। এখন তবলিঘি জামাতের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রচার চালানো হচ্ছে, আমরা এর তীব্র নিন্দা করি। সাম্প্রদায়িক উপাদান করোনার বিরুদ্ধে লড়াইকে দুর্বল করে দিতে পারে।


ভারতের আর্থ-সামাজিক অবস্থা চীন বা ইউরোপের মতো নয়। আমাদের এখানে আমাদের দেশের মানুষের অবস্থার কথা বিবেচনা করেই করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুত হওয়ার দরকার ছিল। এই কারণেই সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে লকডাউনের আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় ১১ দফা দাবি জানানো হয়েছিল। এরাজ্যে সর্বদলীয় সভায় আমাদের পার্টির পক্ষ থেকেও আমরা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ার পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের জন্য স্বাস্থ্যক্ষেত্রের এবং আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন করণীয় দিক সম্পর্কে বলেছিলাম। কিন্তু সেগুলি উপেক্ষিত রয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও আমরা সরকারকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করছি। কিন্তু সমালোচনা ও প্রতিবাদ করার অধিকার আমরা কোনও অবস্থাতেই ছেড়ে দিতে পারি না।


পরিস্থিতি প্রতিদিন বদলাচ্ছে, সঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, নতুন নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শুধু সরকারকে সহযোগিতা করাই নয়, আমরা নিজস্ব উদ্যোগেও মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করছি। বামপন্থী কর্মীরা সরকারি আচরণবিধি মেনে মানুষের পাশে থাকছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন স্থানীয়ভাবে মানুষের সমস্যা কতটা মেটানো যায়। আমরা খালি সরকার নির্ভর হয়ে রয়েছি, এমন নয়। যেমন বহু জায়গায় স্থানীয়ভাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে বিলি করা হয়েছে, সাবান দেওয়া হয়েছে, সচেতনতা প্রচার করা হচ্ছে।

এই সময়ে রক্তের চাহিদা মেটাতে জমায়েত না করেও রক্তদানের দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন অনেকে। সোশ‌্যাল ডিসটেনসিং কথাটার আমরা বিপক্ষে, আমরা সামাজিক বৈষম্য ভাঙার পক্ষে। এখানে সোশ‌্যাল ডিসটেনসিং বা সামাজিক দূরত্বের যে কথা বলা হচ্ছে সেটা আসলে ফিজিক্যাল ডিসটেনসিং বা দৈহিক দূরত্ব। সেটা বজায় রেখেই এই সময়ে মানুষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখতে হবে। মানুষকে বলতে হবে, সুস্থ মানুষের মাস্ক প্রয়োজন নেই, দৈহিক দূরত্ব রাখলেই হবে যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার না পেলেও ক্ষতি নেই, সাবান অনেক বেশি কার্যকর, তা দিয়ে হাত ধুলেও কাজ হবে।
লড়াইটা যেহেতু দুই ফ্রন্টে তাই আমাদের সমাজে যে অর্থনৈতিক বৈষম্য আছে তার থেকে উদ্ভূত সঙ্কটের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। যারা আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে এই পরিস্থিতিতে তাঁদের সমস্যাই বেশি। তাঁরা সংক্রামিত হলে গোটা সমাজে ভাইরাসের সংক্রমণও হবে অনেক দ্রুত এবং ব্যাপক। সেই বিপদ থেকে তখন কিন্তু কেউ রেহাই পাবে না। চারতলা বাড়িতে যিনি সতর্ক সচেতন হয়ে বসে রয়েছেন তিনিও নিরাপদ নন যদি তাঁর বাড়ির পাশের বস্তিতে সংক্রমণ ঘটে যায়। ভাইরাস কাউকে চিনে আক্রমণ করে না, গ্রাম, পাড়া, শহরাঞ্চলের ওয়ার্ড সব জায়গায় তাই দলমত নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে লড়াইটা করতে হবে। এটা বাঁচার লড়াই। তাই করোনা মোকাবিলায় যতটা সম্ভব বৃহত্তম ফ্রন্ট গড়ে লড়াইটা করতে হবে।


এই সময়ে খাদ্যের সমস্যা গুরুতর হয়ে যাচ্ছে। রেশন কার্ড যাদের আছে তারা ছাড়াও কেউ যাতে অনাহারে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সকলের জন্য বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষ যদি লকডাউনকে না খেতে পেয়ে মরার ব্যবস্থা বলে ভেবে বসে তাহলে লকডাউন ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে। খাদ্য, ওষুধ, ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মজুতদারি ও কালোবাজারি বাড়ছে, গ্রামের সমস্যা শহরের চেয়েও বেশি। সেখানে একশো দিনের কাজ পাচ্ছেন না গরিব, সবজি ও ফসলের দাম পাচ্ছে না কৃষক, কিন্তু বাজারে সেগুলোর দাম চড়া। আর শিল্পাঞ্চল ও শহরে কারখানা ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ। চা ও চটকল এই দুটি বড় শিল্পে এখনও শ্রমিকদের লকডাউন পর্বে মজুরি যাতে না কাটা হয় সরকার তার নির্দেশিকা কার্যকর করেনি। অসংগঠিত ক্ষেত্রের দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমজীবীদের সমস্যাও বিরাট।

পরিযায়ী শ্রমিক যারা অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে আটকে পড়েছেন তাঁদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে একটি আলাদা হেল্প লাইন করতে বলেছিলাম আমরা। কিন্তু তা করা হয়নি। পরিযায়ী শ্রমিকদের এখন কাজ নেই, টাকা নেই, খাবার নেই, তাঁরা চরম বিপদে পড়েছেন। আমরা বিভিন্ন রাজ্যে বামপন্থী নেতা ও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। কিন্তু রাজ্য সরকারের উচিত ছিল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় রেখে বিষয়টি দেখা। একেবারে স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তর থেকে করোনা উপসর্গ সহ রোগীদের চিহ্নিতকরণ থেকে শুরু করে রোগীর শারীরিক অবস্থার মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, করোনা পরীক্ষার কিটের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, হাসপাতালে চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি বিষয়ে আমরা আমাদের পার্টির বক্তব্যও সরকারকে জানিয়েছিলাম।


মুখ্যমন্ত্রীর নিজে রাস্তায় ঘুরলেন কিনা তার চেয়েও অনেক বড় হলো এই বিষয়গুলি নিশ্চিত করা। সমস্যাগুলোর কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যালোচনা করে সমাধানের চেষ্টাই তাঁর আসল কাজ। সরকারের অন্যান্য দপ্তরগুলির মধ্যে যেমন খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর কিংবা পরিবহণ দপ্তর ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয় রেখে কাজ করানো দরকার। প্রতি জেলায় ব্লক ও পৌরসভা স্তরে স্বাস্থ্য প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ প্রশাসন ও পুলিশের সমন্বয়ও করতে হবে নিয়মিতভাবে। সকলের সহযোগিতায় এসব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য জেলায় জেলায় ব্লক ও পৌরসভা স্তর পর্যন্ত সর্বদলীয় বৈঠক করা দরকার।


মহামারীটা আসলে কেবল করোনা ভাইরাসের নয়, মহামারীটা বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক সঙ্কটের। বিশ্বায়ন ও উদারনীতির সঙ্কটের ফলে পুঁজিবাদের ব্যবস্থাটাই টলমল করছে। শিল্প বাণিজ্যে মন্দা, কৃষিতে সঙ্কট, শিক্ষা স্বাস্থ্য সহ সব সরকারি কল্যাণমূলক কর্মসূচি ছাঁটাই, এই পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির যে বিশ্বায়ন ও উদারনীতি ১৯৭৩ সালে শুরু হয়েছিল তা ২০০৮ সালের পর ভেঙে পড়েছে। সমস্ত ক্ষেত্রে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান কমছে, বৈষম্য বাড়ছে। উপরতলার ১শতাংশ ব্যক্তির হাতে বিপুল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এটাই হচ্ছে বর্তমান ধান্দার ধনতন্ত্রের চেহারা। পুঁজিবাদী শিল্পোৎপাদনের ও মুনাফার বদলে এখন সম্পদ কেন্দ্রীভূত হচ্ছে লুটের মাধ্যমে, পুঁজির আদিম সঞ্চয়ের মতো।

সরকার প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে শুরু করে লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা সব কিছু বেসরকারী কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিচ্ছে। সরকারের যাবতীয় প্রক্রিয়া যখন নাগরিকদের স্বার্থের বদলে কর্পোরেট স্বার্থের দিকে তাকিয়ে চালানো হয় তখন পরিবেশ, বিজ্ঞান প্রযুক্তির গবেষণাও সেই উদ্দেশ্যেই চালিত হয়। তাই মহামারীতে হাজারে হাজারে মানুষ মরলেও বিজ্ঞানীদের হাতে কোনও ওষুধ নেই, মানুষকে রক্ষার জন্য বিস্তৃত কোনও চিকিৎসা পরিকাঠামোও নেই। এমনকি এগুলি পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় অগ্রাধিকারের মধ্যেও নেই। বরং আমরা এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছি যেখানে মন্দার মধ্যে দাঁড়িয়েও লুট মুনাফা নিশ্চিত করার তাগিদে পুঁজিবাদ মানুষকেই উদ্বৃত্ত বলে মনে করছে। তারা মনে করছে, ব্যবস্থাকে চালু রাখার জন্য এত মানুষের আর কোনও প্রয়োজন নেই।

রোবট দিয়েই এখন উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব। বিশ্বায়ন ও উদারনীতির সঙ্কটে জর্জরিত পুঁজিবাদের জাহাজটাই যখন ডুবতে বসেছে তখন সেটাকে আরও কিছুদিন টিকিয়ে রেখে পুঁজির আরও কেন্দ্রীভবনের লোভে তারা মানুষকেই জলে ফেলে দিচ্ছে। এদের হাতে বিজ্ঞান প্রযুক্তি সবই কর্পোরেট স্বার্থরক্ষায় ব্যবহৃত, মানুষের স্বার্থরক্ষায় নয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিপুল উন্নতি মানুষকে রোগ সহ নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারত, কিন্তু পুঁজিবাদ সেই সম্ভাবনাকে ধংস করেছে। পুঁজিবাদ চাইছে, রোগ মহামারী, যুদ্ধ, দাঙ্গায় উদ্বৃত্ত মানুষ মরে যাক। কেবল ‘যোগ্যতম’রা টিকে থাকুক ব্যবস্থাটাকে টিকিয়ে রাখতে। এটাই হচ্ছে সময়, যখন বিপ্লব আর প্রতিবিপ্লব মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে।


একথা ঠিকই যে করোনা সংক্রমণের এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কেটে যাবে। কিন্তু তখন আমাদের মধ্যে কে থাকবে, আর কে থাকবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে আমাদের হয়তো অনেককেই হারাতে হতে পারে। কিন্তু এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে নতুন প্রজন্ম থাকবে। আর্থ -সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইতে এবং এখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইতে, সমস্ত লড়াইতে তারাই রাস্তায় থেকে লড়ছে। শাসক ও শোষকের আক্রমণ এবং ভাইরাসের সংক্রমণ, দুটোকেই প্রতিরোধের ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি আছে নতুন প্রজন্মেরই। তাদেরকেই লড়াইয়ের সামনের সারিতে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে আমরা আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারব, আজকের নতুন প্রজন্ম আগামী দিনে থাকবেই, বর্তমান লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতের চালিকা শক্তি হবে তারাই। করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমরা জিতবোই, এবং আমাদের ভবিষ্যৎ আরও সুরক্ষিত হবে।

Spread the word

Leave a Reply