Did Muslim Invasions Subjugate Hindu Women? – Ram Puniyani

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) উত্থানের সাথে সাথেই তারা স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় বর্ণ ও লিঙ্গভিত্তিক যে সমতার দাবি উত্থাপিত হয়েছিল তার বিরোধিতা করে। ভারত যখন ‘রাষ্ট্র নির্মাণ’ এর স্তরে ছিল, তখন এটি সকলকে সমতা প্রদান করতে চেয়েছিল, যা পুরোনো সামন্ততান্ত্রিক শ্রেণিবিন্যাসকে ক্ষুন্ন করেছিল। যদিও ভারতীয় জাতীয়তাবাদ জাতি, শ্রেণী এবং লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমতা চেয়েছিল। বিভিন্ন রক্ষণশীল গোষ্ঠীরাও এই সুযোগকে ব্যবহার করে নিজেদের মনোভাব চাপিয়ে দেওয়ার দাবি করেছিল। মুসলমান ও হিন্দু রক্ষণশীলরা প্রায়শই ধর্মের আছিলায় নানা পশ্চাদপদতাকে চাপিয়ে দেয় সমাজের উপর।

হিন্দু-জাতীয়তাবাদী আরএসএস সোনালী অতীত সম্পর্কে একটি গাথা তৈরী করে, আগে এমন একটি যুগ ছিল যখন মনু এবং তার সংহিতাই আইন বলে মান্য হত। তারা আরও দাবি করেছে যে “হিন্দু মূল্যবোধ” মানে সমস্ত বর্ণের জন্য সমান মর্যাদা, এবং হিন্দু সমাজে মহিলাদের একটি সম্মানীয় অবস্থান ছিল। তারা দাবি করে যে মুসলমান আক্রমণকারী এবং লুণ্ঠনকারীরা এই মহিমান্বিত মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়েছে এবং এই নৃশংস আক্রমণকারীরা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা এই হিন্দু মহিলাদের অসম্মান করেছে । এমনকি তারা সতীদাহ প্রথার জন্য মুসলমান আক্রমণকেই দায়ী করে। এই জাতীয় ধারণা এবং দাবিগুলির দ্বারা হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা “মিথ সৃষ্টি” করে হিন্দু মহিলাদের কেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল তার পক্ষে যুক্তি দিতে চায়।

Image Courtesy : Google

আরএসএস এর সহকার্যবাহী বা সাধারণ সম্পাদক, কৃষ্ণ গোপাল, ৪ঠা সেপ্টেম্বর যখন “নারী শক্তি সঙ্গম” নামে একটি সংগঠনের দ্বারা আয়োজিত নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত এক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন তখন তিনিও একই দাবির পুনরাবৃত্তি করেছিলেন। তিনি বলেন, “দ্বাদশ শতাব্দীর আগে নারীরা যুক্তিসঙ্গতভাবে অনেকাংশে স্বাধীন ছিল, কিন্তু মধ্যযুগে [ভারতের মধ্যযুগীয় পর্বে] খুব কঠিন সময় এসেছিল। গোটা দেশ পরাধীনতার সঙ্গে লড়াই করছিল। মহিলারা বিপদে পড়েছিলেন। লাখ লাখ নারীকে অপহরণ করে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। আহমদ শাহ আবদালি, মোহাম্মদ ঘোরি এবং মাহমুদ গজনী এখান থেকে নারীদের নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। এটা ছিল চরম অপমানের যুগ। সুতরাং, আমাদের নারীদের সুরক্ষার জন্য, আমাদের সমাজ তাদের উপর একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ।”

গোপাল তার শ্রোতাদের শুধুমাত্র নারী নির্যাতনের ন্যায্যতা বিশ্বাস করাননি এবং তার পাশাপাশি যে কেবল মুসলমান আক্রমণকারীরাই প্রতিবেশী রাজ্যের সম্পদ লুন্ঠন করতেন ও বিজিতদের দাসে পরিণত করতেন তাও বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যাইহোক, রাজত্ব এবং ইতিহাস উভয়কেই বিকৃত করেছে এরা। চোল রাজারা শ্রীলঙ্কা থেকে অসংখ্য ক্রীতদাস নিয়ে আসেন। ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের সেনাবাহিনী কল্যাণ লুণ্ঠন করে এবং কল্যাণের গভর্নরের মুসলমান পুত্রবধূকে বন্দী করা হয়।

গোপাল যে হিন্দু মহিলাদের উপর বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করেছেন তা দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলমান রাজাদের আক্রমণের অনেক আগে থেকেই ছিল- যার মধ্যে রয়েছে সতীদাহ-স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় তার সদ্যবিধবা স্ত্রীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে ফেলার প্রথা।

প্রথম দিকে ভারতে প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতির কারণে নারীরা সম্পত্তি ও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। মহাভারতে, পান্ডুর স্ত্রী মাদ্রী এবং ভগবান কৃষ্ণের পিতা বাসুদেবের চার স্ত্রী তাদের স্বামীর মৃত্যুর পর নিজেরা পুড়ে মৃত্যুবরণ করেছে এমন বিবরণ রয়েছে।

নারীদের অধস্তন অবস্থান ছিল পুরুষতন্ত্রের কারণে।বংশের শ্রেষ্ঠ আসলে পুরুষ- এই ধারণাই সতীদাহের কারণ হিসাবে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ঐতিহাসিক রোমিলা থাপারের মতে, সতীদাহ প্রথার উত্থানের উল্লেখযোগ্য কারণগুলি ছিল পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের অধীনতা, পরিবর্তিত “আত্মীয়তার ব্যবস্থা”(system of kinship) এবং ” নারী যৌনতার উপর নিয়ন্ত্রণ” করার ইচ্ছা। অধিকাংশ খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদদের মতে, সতীদাহের উৎপত্তি ক্ষত্রিয় আভিজাত্যের মধ্যে এবং প্রধানত হিন্দুদের মধ্যে এবং মুখ্যত কেবল যোদ্ধা শ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

ভারতীয় ইতিহাসে গুপ্ত-পরবর্তী সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবনতি নারীর মর্যাদা হ্রাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নিষিদ্ধ হয়েছিল; বাল্যবিবাহ ক্রমশ স্বাভাবিক ব্যবস্থা হয়ে উঠেছিল; বিধবা পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল; সতীদাহ প্রথার ঘটনাও বেড়েছে। এই সময়ের আগে, সতীদাহ প্রথা একটি অনিয়মিত ঘটনা ছিল।

আরএসএস কীভাবে সমস্যাটির মোকাবিলা করে ? এটি একটি একচেটিয়াভাবে পুরুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সংগঠন, তারা রাষ্ট্র সেবিকা সমিতিকে প্রচার করে তাদের অধস্তন একটি সংগঠন হিসেবে । এই নামটির দ্বারাই লিঙ্গ সম্পর্কে হিন্দু জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়, কারণ এর নাম থেকে স্বয়ম (সত্তা, স্বয়ং) শব্দটি অনুপস্থিত, এবং এর পরিবর্তে সেবিকা বা সেবা শব্দটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Image Courtesy: Google

রাষ্ট্র সেবিকা সমিতি তার নারী কর্মী বা অনুসারীদের কাছে নারীদের অধস্তন অবস্থানের পক্ষে সম্পূর্ণ সহনতের প্রচার করে আসছে। আরএসএস-এর রাজনৈতিক শাখা, ভারতীয় জনতা পার্টির সহ-সভানেত্রী বিজয়া রাজে সিন্ধিয়া, রূপকাওয়ার সতী মামলার পরে সতীদাহকে সমর্থন করে সংসদে একটি মিছিল করেছিলেন। সেই সময় সংসদে এই প্রথা বন্ধ করার জন্য একটি নতুন আইন নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। সিন্ধিয়া বিশ্বাস করতেন সতীদাহ প্রথা একটি “গৌরবময়” ঐতিহ্য এবং হিন্দু মহিলাদের অধিকার। ১৯৯৪ সালের এপ্রিল মাসে , সমিতির একজন শীর্ষ নেতা মৃদুলা সিনহা, যিনি পরে গোয়ার রাজ্যপাল হয়েছিলেন, স্যাভি ম্যাগাজিনের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে হিন্দু মহিলাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন যদি তার স্বামী তাকে মারধর করেন তবে সেটা সহ্য করে নিতে বা মানিয়ে নিতে, কারণ হয়ত ঐ মহিলাই তার স্বামীকে কোনভাবে ‘প্ররোচিত’ করেছিলেন। এইভাবে মৃদুলা সিনহা নারী নির্যাতনকে প্রশয় দিয়েছেন। তিনি যৌতুকের পক্ষেও বলেছিলেন-“আমার বাবা আমাকে মাত্র ৫,০০০ টাকায় স্বামী কিনে দিয়েছেন”- এবং বলেছিলেন যে খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নারীদের বাইরে কাজ করা উচিত না।

আমরা প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক প্রমোদ মুথালিককেও স্মরণ করতে পারি,যার নেতৃত্বে শ্রী রাম সেনে নামক আরএসএস-এর একটি শাখা সংগঠনের হয়ে, ২০০৯ সালে কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালোরে একটি পানশালায় মহিলাদের মারধর করার ঘটনা ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছিল। পরে দলটিকে বেকসুর খালাস করা হয়েছিল, এবং গোটা ঘটনায় পুলিশী তদন্ত নিয়ে গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে কমবয়সী যুগলদের বা দম্পতিদের মারধর করা আরএসএস এর অন্য আরেকটি সংগঠন বজরং দলের নিয়মিত কাজ। ২০২০ সালের ১০ ই নভেম্বর , গোয়া পুলিশ একটি আইন কলেজের সহকারী অধ্যাপক শিল্পা সিং-এর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করে। বিবাহিত মহিলাদের মঙ্গলসূত্রকে তিনি কুকুরের শিকলের সাথে তুলনা করে “ধর্মীয় অনুভূতি ক্ষুণ্ন” করেছেন এমন অভিযোগে। আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে এই অভিযোগ করেছিল।

বিজেপি সরকার সম্প্রতি গীতা প্রেসকে “গান্ধী শান্তি পুরস্কার” দিয়ে সম্মানিত করেছে, কিন্তু এটি আসলে আরএসএস-এর সমতুল্য মূল্যবোধকেই প্রাধান্য দিয়ে প্রচার করে আসছে। গীতা প্রেস কয়েক দশক ধরে জাতি ও লিঙ্গ বিষয়ক মনুস্মৃতির মূল্যবোধকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে আসছে। এই প্রেসের অনেক বই হিন্দু নারীদের পুরুষের অধীনে থাকার পরামর্শ এবং উপদেশ দেয় । এই বইগুলির মধ্যে কয়েকটি হল হনুমান প্রসাদ পোদ্দারের নারী শিক্ষা, স্বামী রামসুখদাসের ‘গৃহস্থ মে কায়সে রাহেন’ (হাউ টু লিড এ হাউসহোল্ড লাইফ), জয় দয়াল গোয়ান্দকা’র লেখা ‘স্ত্রীয় কে লিয়ে কর্তব্য শিক্ষা’ (নারীর কর্তব্য বিষয়ে শিক্ষা) এবং নারী ধর্ম (নারীর কর্তব্য) এর মধ্যে কয়েকটি।

সর্বোপরি, আরএসএস এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলি তাদের নিজস্ব ধারণা ‘লাভ জিহাদ’-এর নামে আক্রমণাত্মক প্রচার চালায়। এটা মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করে হিন্দু নারীদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। লাভ জিহাদের অজুহাতে, এই সংগঠনগুলি ঘরে ঘরে গিয়ে হিন্দু পিতামাতা এবং পুরুষ আত্মীয়দের “মেয়েদের প্রতি নজর রাখতে” পরামর্শ দেয়। ঐতিহাসিক চারু গুপ্ত ২০০৯ সালে লিখেছেন, “১৯২০ হোক বা ২০০৯, হিন্দু পিতৃতান্ত্রিক ধারণাগুলি সমাজের গভীরে প্রোথিত। পরোক্ষভাবে, মুসলমানদের হাতে হিন্দু মহিলারা আক্রান্ত হন এই ধারণাই প্রচার করা হয় এবং মহিলাদের তাদের ভালবাসা এবং তাদের পছন্দের সকল অধিকারকে উপেক্ষা করা হয় উভয় ক্ষেত্রেই।”

আরএসএস নেতৃত্বের সর্বশেষ ঘটনাটি পিতৃতন্ত্রের প্রতি তাদের অটল বিশ্বাসের আরেকটি পুনরাবৃত্তি। এই কারণেই তারা সামাজিক কাঠামো এবং ধর্মগ্রন্থগুলির পিছনে লুকিয়ে থাকা হিন্দু সমাজের নানা ব্যাধির জন্য বাহ্যিক কারণগুলির উপর দোষ চাপিয়ে দেয় এবং তা প্রচার করে।

ভাষান্তর: দীধিতি রায়

Spread the word

Leave a Reply