Creaky Health Of Nation: Indian Perspective

এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসাবে ভারত হল সেই দেশ যেখানে স্বাস্থ্যখাতে জিডিপি’র ৩.৫% মাত্র ব্যায়বরাদ্দ করে সরকার। বিশ্বব্যাংকের পেশ করা তথ্যানুযায়ী এই খাতে ব্যায়বরাদ্দের তালিকায় সারা পৃথিবীতে একেবারে নিচের দিকে থাকা দেশগুলির মধ্যে অন্যতম আমাদের দেশ। এই অবস্থায় কোভিড মহামারির আক্রমনে শেষ চল্লিশ বছরে এই প্রথম ভারতে গোটা একটি বছর ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে ক্রমসংকোচন (contraction) চলছে।

দেশের অর্থনীতির এই সংকটে সবার জন্য ডিজিটাল হেলথ আইডি গঠন করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশনের অধীনে এই কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি’র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ইন্দু ভূষণ। তার আশা এই প্রকল্পের সাফল্যে সরকারের খরচ কমবে (Cost Optimization) ফলে দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনৈতিক অবস্থায় তার প্রভাব কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে। তিনি বলেছেন এর ফলে আগামী ১০ বছরে দেশের জিডিপি’তে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের সমান অর্থমূল্যের সংযুক্তি হবে।

Pic Source: Social Media

দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্ত তথ্যকেই ডিজিটাইজড করতে চাইছে সরকার। গত আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রকল্পের ঘোষণার করেন। দেশের বেশিরভাগ গ্রামীণ এলাকাগুলিতে পানীয় জল, বিদ্যুৎ সরবরাহের আকাল আজ প্রধান সমস্যা এবং সেইসব এলাকায় ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যাবস্থাও যথেষ্ট দুর্বল। সারা পৃথিবীতে অনলাইন পরিকাঠামোকে সর্বত্র ব্যাবহার করতে চাওয়ার মনোভাবে সবচেয়ে ব্যাগ্রতা দেখাচ্ছে ভারতের সরকার। যদিও করোনা মহামারির সময়ে অনলাইন ব্যাবস্থায় শিক্ষার কাজ চালাতে গিয়ে গোটা দেশেই বহু ছাত্র-ছাত্রী সমস্যায় পড়েছেন – ইন্টারনেট, উন্নত মোবাইল ফোন কিংবা ল্যাপটপ ব্যাবহার না করতে পেরে অনেক পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই পঠন-পাঠন এবং পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায় নি।

সরকারের আশা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ডিজিটাইজড ডেটাবেস তৈরি করা গেলে তার ফলে উন্নত পরিষেবা পাবে মানুষ। ইতিমধ্যেই জনগণের পরিচিতি সংক্রান্ত ডিজিটাইজড তথ্যের (আধার কার্ড) সুরক্ষা নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা সতর্ক হবার আশংকা প্রকাশ করেছেন। এই প্রসঙ্গে ইন্দু ভূষণের বক্তব্য তথ্য (ডেটা) সুরুক্ষার ব্যাপারে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল সংশ্লিষ্ট দপ্তর। যদিও আগামীদিনে স্বাস্থ্যপরিষেবা ক্ষেত্রে কাজ হারাতে পারেন অনেক কর্মী যাদের ইন্দু ভূষণ অযোগ্য (unqualified) বলে উল্লেখ করে বলেছেন ডিজিটাল হেলথ আইডি সফলভাবে রুপায়িত হলে অনেক দ্রুত রোগের চিহ্নিতকরনের কাজ করা যাবে এবং একইসাথে অযোগ্যদের সরিয়ে দেওয়া সহজ হবে।

প্রসঙ্গ এই নয় যে সরকার ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশন চালু করতে চলেছে – আসল প্রসঙ্গ হল এই যে অতিমারি মোকাবিলায় এখনও অবধি কাজ হারানো, আয়ের সুযোগ হারানো পরিবারগুলির হাতে নগদ অর্থ কিংবা বিনামূল্যে রেশন কোনটাই পৌঁছাতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যগুলির জিএসটি বাবদ বকেয়া মেটান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে অথচ কোভিড সংক্রমন রোধে রাজ্যগুলিই প্রথম সারিতে থেকে লড়াই করছে। এই অবস্থায় বুনিয়াদী প্রয়োজনগুলিকে না মিটিয়ে এধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের ব্যাবহার সম্পর্কে একের পর এক নতুন ঘোষণা কার্যত মহামারী মোকাবিলায় সরকারের পলায়নকারী মনোবৃত্তিই প্রকাশ হয়ে পড়ছে।

গোটা দেশ শুধু মহামারির কবলে রয়েছে তাই নয় – দেশের অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার গোটাটাই গভীর সংকটে পড়ায় আগামিদিনে জনগণের উপরে আরও বেশী দুর্দশার বোঝা চাপতে চলেছে। এই সময়ে দরকার বাজারে চাহিদা বাড়িয়ে তোলা, আর তা তখনই সম্ভব যদি মানুষের হাতে খরচ করার মত টাকা থাকে। অথচ চাহিদা বৃদ্ধি না করে সরকারি নীতির ফলে যোগান নির্ভর অর্থনীতির ঢাক বাজানো চলছে – মনে রাখতে হবে এই যোগান নির্ভর অর্থনীতির ফলেই আজকের এই ভয়াবহ অবস্থা। সরকারের দায়বদ্ধতা রয়েছে জনগণের সমস্যা মেটানোর – অনলাইনই হোক আর অফলাইনই হোক, আসল কথাটি হল সেই দায়বদ্ধতার সুচকে সরকার কতটা সফল।

এখনও অবধি দ্বিতীয় দফার মোদী সরকার সেই সাফল্যের বিচারে বহু পুরানো বাড়ির জরাজীর্ণ জানালার মতোই এক কর্কশ ক্যাঁচক্যাঁচে আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই তুলছে না!

Pic Source: Social Media
Spread the word

Leave a Reply