cpi(m) state committee

সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভার প্রেস বিবৃতি

কলকাতা, ৩০ শে মে – ২০২১


সিপিআইএম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভা ২৯ শে মে ২০২১ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন বিমান বসু। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এই সভা হয়েছে। সভায় বিধানসভা নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যালোচনা হয়েছে। মোট ৪ জন রাজ্য কমিটি সদস্য আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। জেলাগুলির তরফে প্রাথমিক পর্যালোচনা পেশ করা হয়েছে। স্থির হয়েছে, বুথ ও শাখাস্তর পর্যন্ত এবং সমস্ত অংশের মানুষের মতামত নিয়েই এই পর্যালোচনা চূড়ান্ত করা হবে। বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে কর্মসূচি নিয়ে জনগণের জীবন-জীবিকার প্রশ্নে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।


প্রাথমিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বামপন্থীদের এবং সংযুক্ত মোর্চার ফলাফল বিপর্যয়কর হয়েছে। ২০১৬ সালে বামফ্রন্ট ৩২ টি আসনে জয়ী হয়েছিল, তার ৯টি এবারে পেয়েছে বিজেপি, ২৩টি তৃণমূল। কংগ্রেসের ২০১৬ সালের ৪৪ আসনের ১৫ টি পেয়েছে বিজেপি, ২৯ টি তৃণমূল। বিজেপি যে ৭৭ আসন পেয়েছে গতবারে তার ৪৭ টি পেয়েছিল তৃণমূল। তৃণমূল গতবারের জেতা ২০৯ আসনের ১৬০ টি ধরে রাখতে পেরেছে। তাদের সাফল্য মূলত এসেছে গতবারে নাম জোটের জেতা ৫২ টি আসনে জয়লাভ করায়। সিপিআই(এম) যে ১৩৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে তার ৯৪ টিতে ২০১৯ এর তুলনায় ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে।


প্রাথমিকভাবে নজরে এসেছে, দ্বিদলীয় রাজনীতি জোরদার করার প্রক্রিয়ার মধ্যে নির্বাচন ঘোষণার সময় তৃণমূল বিরোধী অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানবিরোধী মানসিকতা ছিলো। কিন্তু বিজেপির আক্রমনাত্মক, আগ্রাসী প্রচারে ক্রমান্বয়ে বিজেপি বিরোধী মানসিকতা গড়ে ওঠে। বিজেপির এই আগ্রাসী আস্ফালনের মধ্যে তৃণমূলের ভোট লুঠ, দুর্নীতি, সর্বক্ষেত্রে নৈরাজ্য, গণতন্ত্রহীনতা মানুষের মধ্যে নির্বাচনী বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। জনগণ তৃণমূলকে বিজেপি বিরোধী প্রধান শক্তি হিসেবে বেছে নেন। সাথে সাথে বিভিন্ন সহায়তা প্রকল্পকে জনগণের সমর্থন পাবার জন্য তৃণমূল ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে তীব্র মেরুকরণ হয়ে যায়। নির্বাচনী ফলাফলের এটিই সম্ভবত মূল কারণ। নীতি, আদর্শ, গণতন্ত্র, রুটি রুজির মত বিষয়গুলি পিছনে চলে যায়। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে এই ফলের প্রধান কারণ হিসাবে দেখা ভুল হবে। পরিচিতি সত্তার রাজনীতিকে বিজেপি তৃণমূল উভয়ই ব্যবহার করেছে, তার মোকাবিলা করা সম্ভব হয় নি। বিজেপির আগ্রাসী প্রচারের ফলে বাংলা ও বাঙালির স্বাতন্ত্র্যবোধও একটি উপাদান হিসেবে কাজ করেছে।


প্রাথমিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের মূল কারণ রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক। সংযুক্ত মোর্চা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা যায়নি। আমাদের রাজনৈতিক প্রচার জনগণের মধ্যে দাগ কাটতে পারেনি। বিকল্প সরকার গঠনে স্লোগান প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। পার্টি পরিধির বাইরে বিশাল জনসমষ্টির সঙ্গে বাম শক্তির বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক বক্তব্য পৌঁছে দেবার ক্ষেত্রে সাংগঠনিক কার্যালয় গুরুতর ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে।


রাজ্য কমিটির সভায় বলা হয়েছে, প্রাথমিক পর্যালোচনাকে পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনার রূপ দিতে বুথ ও শাখা স্তর পর্যন্ত আলোচনা ও অভিমত সংগ্রহ করতে হবে। শাখা থেকে জেলা কমিটির নিয়মিত কার্যধারা সুনিশ্চিত করতে হবে। সমস্ত গণফ্রন্ট গুলির কার্যধারা নতুন উদ্যমে পরিচালিত করতে হবে। গণ সংগঠনগুলির স্বাধীন কর্মধারা ও যুক্ত আন্দোলনকে প্রসারিত করতে হবে। রেড ভলেন্টিয়ার্স এর কার্যধারা পার্টি ও বামপন্থীদের ভাবমূর্তিকে নতুন স্তরে উন্নীত করেছে। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে গণফ্রন্ট গুলিকে পরিস্থিতি উপযোগী কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। রেড ভলেন্টিয়ার্স এর কাজকে উৎসাহিত ও সুষ্ঠভাবে পরিচাল নায় সাহায্য করতে হবে। কোভিদ আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর কাজ করতে হবে। বিনামূল্যে সর্বজনীন ভ্যাকসিন ও অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্রতর অংশের জন্য খাদ্য ও আর্থিক সহায়তার দাবিতে প্রচার আন্দোলন গড়ে তুলে মানুষের মধ্যে তা পৌঁছে দিতে হবে। ইয়াস ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, তাদের ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণের দাবি উত্থাপন করতে হবে।

Spread the word

Leave a Reply