মহম্মদ সেলিম
এত সন্ত্রাস, প্রশাসনের অপদার্থতা, নিরাপত্তাহীনতার পরেও বামফ্রন্টের প্রার্থী, কর্মী-সমর্থকরা, এক অর্থে বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী সব অংশের সাধারণ সমর্থক, নির্বাচকমণ্ডলীর একটি বড় অংশ বাংলার রাজনীতির ইতিহাসে নিজের অধিকার রক্ষার যে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রয়েছে, এদিন তার যথার্থ উত্তরসূরীর ভূমিকা পালন করেছেন। সেজন্য তাঁদের কুর্নিশ।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ, সুষ্ঠুভাবে ভোট পরিচালনা, নিরাপত্তা বিধানের জন্য যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এবং করে চলেছেন, তাঁদের প্রতি জানাই আমাদের কৃতজ্ঞতা।
বারংবার বলা সত্ত্বেও, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশন, সাধারণ প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এখনও পর্যন্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে শাসক দলের বশংবদের ভূমিকা পালন করে চলেছে। দেশের মানুষ দেখেছেন নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে নির্বাচন কেন্দ্র দখল। ছাপ্পা ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স বোঝাই করতে শুরু করে দিয়েছে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শাসকদলের দুর্বৃত্তরা রাজ্যজুড়ে দৌরাত্ম চালালেও তারা দেখেছে মানুষের প্রতিবাদী মেজাজ। বুঝে গিয়েছে লুটেরাদের নয়, মানুষ তাঁর নিজের পঞ্চায়েত গড়তে প্রত্যয়ী।
সেজন্য শুরু থেকেই নানা অজুহাতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে ছিল অপরাগ। হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের যোগসাজশে মোতায়েন করেনি কেন্দ্রীয় বাহিনী। নিরাপত্তার অভাবে নির্বাচন কর্মীরা ভোটের কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন। এ ঘটনা অতীতে কখনও ঘটেনি। নজিরবিহীন।
যাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ছাপ্পা ভোট দেওয়া হয়েছে, ভোটাধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া হয়েছে, এদিন তাঁরা ক্ষোভে ফেটে পড়লেও, তাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের টনক নড়েনি। বিপরীতে গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য নির্ভীক লড়াইয়ের বার্তা এদিন রাজ্য প্রশাসনের কাছে স্পষ্টভাবে নিয়েছেন গ্রামবাংলার মানুষ। মিথ্যা মামলা, শাসানি, হুমকি, জেল-জরিমানা, দৈহিক নির্যাতন, এমনকি খুন করেও এ রাজ্যের মানুষকে আর দমানো যাবে না।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও প্রশাসন যদি ন্যূনতম দায়িত্ববোধ ও মানবিকতার লেশমাত্র দেখাতে পারতেন, তাহলে এতগুলি প্রাণ এভাবে ঝরে যেত না। সেকারণে প্রতিটি মৃত্যুর জন্য দায়ী মুখ্যমন্ত্রী নিজে। এমনকি তৃণমুলের যে দুষ্কৃতীদের ভোট লুট করতে পাঠিয়েছিলেন, তাদের মৃত্যুর জন্যও তিনি ন্যূনতম শোক জ্ঞাপন করলেন না।
মাঝরাত থেকে প্রচারমাধ্যমে শুধু রক্ত, হানাহানি, গুলিগোলা আর হত্যালীলা। যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়েই প্রচারমাধ্যমের কর্মীরা তা মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। কিন্তু যে জন্য এত কাণ্ড, সেই ভোটদানের হার এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
আমাদের দাবি, শাসকদলের হয়ে যাতে তথ্যের কারচুপি না হয়, নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে ভোটের হার প্রকাশ করুক। সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত হোক। সুরক্ষিত হোক ব্যালট বাক্স, স্ট্রংরুম। প্রতিটি মৃত্যুর জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন। দায় স্বীকার করে ঘোষণা করুক ক্ষতিপূরণ। যেখানে ভোট লুট হলো, সেখানে অবিলম্বে পুনর্নির্বাচনের কথা ঘোষণা করুক। নির্বাচন-পরবর্তীতে আর একটি প্রাণও যাতে না যায়, রাজা প্রশাসন ও পুলিশ তা সুনিশ্চিত করুক।