Sitaram Yechury On 23rd Congress

23rd Party Congress: Secretary States

প্রিয় কমরেড এবং বন্ধুরা,

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর ২৩ তম কংগ্রেসের অধিবেশনে আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের সকলকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। এই অধিবেশনে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ববর্গ সহ কমিউনিস্ট আন্দোলন ও জনগণের বিবিধ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন প্রবীণ নেতৃত্বদের উপস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।

এই অধিবেশনে উপস্থিত থাকার জন্য সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডি. রাজাকে আমি বিশেষরূপে ধন্যবাদ জানাতে চাইছি। সারা ভারত ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক কমরেড দেবব্রত বিশ্বাস, আরএসপি’র সাধারণ সম্পাদক কমরেড মনোজ ভট্টাচার্য এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্ কিছু বাধ্যবাধকতার কারনে আমাদের সাথে এই মঞ্চে উপস্থিত হতে পারেননি। সিপিআই(এম)’র ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসকে তারা শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। সেইসব শুভেচ্ছা বার্তা সকলের জন্যই সম্মেলন মঞ্চ থেকে পাঠ করা হবে, প্রচারিত হবে।

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে শ্রমজীবী জনগণ যে সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন তার মোকাবিলায় এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং অভিন্ন সাংবিধানিক অধিকারসমুহের বিরুদ্ধে উদ্ভূত বাধাসমুহের প্রতিরোধে সারা দেশেই বাম ঐক্যকে শক্তিশালী করার জন্য বামপন্থী দলগুলির একসাথে কাজের ঐক্য গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন বাম দলগুলির তরফে সিপিআই(এম)-র ২৩ তম কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তায় বামপন্থীদের ঐক্যকে শক্তিশালী করতে আমাদের সংকল্পের প্রতি সমর্থনকেই প্রতিফলিত করছে।

প্রিয় কমরেড এবং বন্ধুরা,

আমরা আজ কেরালার কান্নুর অঞ্চলে পার্টির কংগ্রেস উপলক্ষ্যে মিলিত হয়েছি। ঐতিহাসিকরূপে ভারতীয় সভ্যতার মন্থন এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির সঙ্গমস্থল হল এই কান্নুর। কেরালায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্মই হয় এই প্রদেশে।

ধর্মপ্রাণ মানুষজন ‘তীর্থ যাত্রা’ করতে গিয়ে বিভিন্ন মন্দিরে আশীর্বাদের প্রত্যাশী থাকেন। বীর কায়ুর ও করিভেল্লুর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন না করে, এই কান্নুরের বিপ্লবী আন্দোলনের ঐতিহ্যের শক্তি থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ ব্যাতিত ভারতে বিপ্লবীদের ‘তীর্থযাত্রা’ অসম্পূর্ণ রয়ে যায়।

কেরালায় কমিউনিস্ট পার্টির প্রথম সম্মেলন আয়োজিত হয় পিনারাই গ্রামে। পি কৃষ্ণ পিল্লাই, ইএমএস নাম্বুদিরিপাদ, এ কে গোপালান সহ কমিউনিস্ট আন্দোলনের একাধিক কিংবদন্তি ব্যাক্তিত্ব সেই সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

কমরেড পি কৃষ্ণ পিল্লাইকে সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত করে কমিউনিস্ট পার্টি শুরুর দিকে তীব্র দমন-পীড়নের মোকাবিলা করেছিল, সেই সময় কান্নুর অঞ্চলের চিরাক্কল এলাকায় কেন্দ্র স্থাপন করে পার্টির কাজ শুরু হয়। একটা সময় কমরেডদের আত্মগোপন অবস্থাতেই কাজ করতে হয় কারন পার্টি তখন নিষিদ্ধ ছিল। এই সকল নিবেদিত প্রাণ কমরেডরা কেরালায় কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন, তাদের নেতৃত্বেই একের পর এক বিপ্লবী সংগ্রামগুলি এগিয়ে চলে, কেরালায় কমিউনিস্টরা অগ্রণী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। কমিউনিস্টদের সুদুরপ্রসারিত দৃষ্টিভঙ্গি ও জনগণের স্বার্থে নিবেদিত সংগ্রামগুলি কেরালার কমিউনিস্ট আন্দোলনকে ভারতে বিপ্লবী আন্দোলনের এক শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত করে। জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমেই সেই কাজে সাফল্য আসে।

‘কান্নুর: দ্য রেড ল্যান্ড’ বইটি প্রকাশ করে ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের আয়োজক কমিটি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সেই সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সংকলিত করেছে। শুধু কেরালাতেই নয়, সারা ভারতে কমিউনিস্টদের শক্ত ঘাঁটি হিসাবে এই রাজ্যে কমিউনিস্টদের উত্থানের অসাধারণ বিবরণ রয়েছে এই বইটিতে। সমাজতন্ত্রের দিকে এগোনোর লক্ষ্যে স্বাধীনতা, সাম্য, মর্যাদা এবং গণতন্ত্রের জন্য মানুষের সংগ্রামেরই প্রতীক কান্নুরের এই ভূমি।

দেশ ও দেশের জনগণ বর্তমানে যেধরণের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছেন তার প্রেক্ষিতেই সিপিআই(এম)-র ২৩তম পার্টি কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কমরেড এবং বন্ধুদের পক্ষ হতে যে আন্তরিকতায় আমাদের অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে তার প্রতি আমি সেলাম জানাচ্ছি।

প্রিয় কমরেড এবং বন্ধুরা,

২২তম কংগ্রেসের পরে চার বছরের এই সময়কালে সারা বিশ্ব কোভিড-১৯ মহামারীর প্রাদুর্ভাবে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বিপর্যস্ত ছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন এর প্রভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।

মহামারী আঘাত হানার আগে থেকেই বিশ্ব অর্থনীতির সাথেই ভারতের অর্থনীতিও মন্দাবস্থার দিকে ধীরগতিতে চলনশীল ছিল। মহামারীর প্রকোপে সেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সর্বোচ্চ মুনাফার উদ্দেশ্যে সক্রিয় পুঁজিবাদের লালসার শিকার হয়েছেন জনগণ, অত্যন্ত জরুরী অবস্থাতেও সার্বজনীন স্বাস্থ্যপরিষেবার ক্ষেত্রে পুঁজিবাদ নিজের নির্লজ্জ অক্ষমতা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। এরই বিপরীতে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি মহামারী মোকাবিলা সহ নিজেদের অর্থনীতিকে বৃদ্ধির পথে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের কেরালায় এলডিএফ সরকার যেভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে তা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই প্রশংসা অর্জন করেছে।

একদিকে কোভিড মহামারী আরেকদিকে অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চনা সহ শ্রমজীবী মানুষের উপরে শোষণের তীব্র মাত্রা উদ্বেগজনকরূপে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে সারা পৃথিবীজূড়ে বিলিয়নেয়ারদের মোট সম্পদ ১০.২ ট্রিলিয়ন ডলারের নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। ২০২১ সালে বিশ্বের ১০জন সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তির মোট সম্পদ বেড়েছে ৪১৩ বিলিয়ন ডলার। ভারতের শীর্ষতম ধনী ১০জন ব্যক্তির মালিকানায় চলে গেছে দেশের মোট সম্পদের ৫৭ শতাংশ; অর্থনৈতিক বৈষম্যের নীচের দিকে থাকা জনগণের অর্ধেক অংশের হাতে রয়েছে মোট সম্পদের মাত্র ১৩ শতাংশ।

দক্ষিনপন্থী রাজনীতির পুনরুত্থান

মুনাফা সর্বাধিকীকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলি দেউলিয়া নয়া উদারবাদী নীতিকেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে আঁকড়ে রয়েছে। একের পর এক দেশে রাজনৈতিক দক্ষিনপন্থার উত্থানের সাক্ষী থেকেছে সাম্প্রতিক ইতিহাস। এই রাজনীতি কার্যত জনমানসে বিভাজন প্রতিষ্ঠায় উত্সাহ দেয়। বর্ণসংকীর্ণতাবাদ, জেনোফোবিয়া, ধর্মীয় গোঁড়ামি, মৌলবাদী সংকীর্ণতার প্রচার চালায় রাজনৈতিক দক্ষিনপন্থা। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এই রাজনীতি নির্লজ্জ কায়দায় সাম্প্রদায়িকতার প্রচার করে আসলে শ্রমজীবী মানুষের ক্রমবর্ধমান ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামকেই ব্যাহত করতে চায়।

সারা পৃথিবীতেই দক্ষিনপন্থী রাজনীতি ক্রমবর্ধমান প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকায় বাম, প্রগতিশীল শক্তির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ঘটনা সহ সারা বিশ্বের সর্বত্র এর বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ ও সংগ্রাম সংগঠিত হচ্ছে।  

সারা বিশ্বে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ

কোভিড-পরবর্তী বিশ্বে নিজেদের একচেটিয়া আধিপত্যকে জোরদার করতে আগ্রাসী চেহারা নিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ। ‘ঘেরাও করার’ লক্ষ্যে নিজেদের পূর্বের প্রচেষ্টা থেকে এগিয়ে তারা এখন সারা পৃথিবী থেকে চীনকে ‘বিচ্ছিন্ন’ করতে চাইছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নিজেদের সকল জোটসঙ্গীকেই এহেন প্রচেষ্টায় একত্রিত করছে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

আজ ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ৪২তম দিন। এই ঘটনা আসলে রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র/ন্যাটোর মধ্যে যুদ্ধ। ১,৭৫,০০০ সৈন্যসহ রাশিয়া সীমান্তের দিকে অগ্রসর হওয়ার উদ্দেশ্য আসলে ন্যাটোর পূর্ব গোলার্ধমুখী নিরবিচ্ছিন্ন সম্প্রসারণ। ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ প্রস্তাব হল এই সংঘর্ষের প্রেক্ষাপট। অবিলম্বে এই যুদ্ধ শেষ হতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সম্ভাব্য নতুন গতিমুখ তৈরি করেছে এই যুদ্ধ। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের প্রস্তাবে সায় দিতে বিরত থাকায় ভারতের ধারাবাহিকতা আজকের বিশ্বে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অধস্তন মিত্র হিসেবে ভারতকে তুলে ধরতে মোদী সরকারের বহুকথিত প্রচেষ্টার অসারতাকেই স্পষ্ট করছে। ভারতকে অবশ্যই স্বাধীন বৈদেশিক নীতি বজায় রেখে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। QUAD-এর মতো মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বাধীন জোট হতে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে এখনই আমাদের গুরুত্ব সহকারে পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

প্রিয় কমরেড এবং বন্ধুরা,

এই চার বছরে, বিশেষত ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপি সরকারের প্রত্যাবর্তনের পর থেকে, আমরা ভারতে বিজেপি সরকার দ্বারা ফ্যাসিবাদী আরএসএসের হিন্দুত্বের আগ্রাসী পরিকল্পনা মাফিক আক্রমণের শিকার হয়েছি। ফ্যাসিবাদী কর্মসূচী উন্মোচনের সাথেই আরএসএস বহুমুখী আক্রমণ চালাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি ও কর্পোরেটদের আঁতাতকে আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে ধান্দাবাজ পুঁজিবাদকে নির্লজ্জভাবে প্রশ্যয় দেওয়া, জাতীয় সম্পদের আগাগোড়া লুট, রাজনৈতিক দুর্নীতিকে সার্বিক বৈধতা প্রদান সহ দেশের উপরে কর্তৃত্ববাদী রাজনীতিকে চাপিয়ে দিতে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে তারা।

দেশের সংবিধানের অবমূল্যায়ন

ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্র পরিবর্তনের জন্য সম্ভাব্য সমস্ত প্রচেষ্টা চলছে। আমাদের সংবিধানের চারটি মৌলিক স্তম্ভ ─ ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব-কে গুরুতরভাবে লাঞ্ছিত এবং ক্ষুন্ন করা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী আরএসএস-এর হিন্দুত্বের কর্মসূচী প্রণয়নের উদ্দেশ্যেই দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অস্বীকার করে একক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার নামে প্রচার চলছে। দেশের সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত সমস্ত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলি দেশ পরিচালনায়  ভারসাম্যের নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে – সংসদ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, সিবিআই, ইডি জাতীয় সংস্থাসমুহের স্বাধীন কর্তৃত্বকে ক্ষুন্ন করা হচ্ছে সেই কারনেই। কেন্দ্রীয় সরকার মহামারী মোকাবিলায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে এবং জনগণের উপর অভূতপূর্ব দুর্দশা চাপিয়ে দিয়েছে যার ফলে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি ঘটেছে। সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলিকে মারাত্মকভাবে আড়াল করার উদ্দেশ্যে তথ্য এবং পরিসংখ্যানে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে।

কমরেড এবং বন্ধুরা, দুর্দশাগ্রস্ত সকল মানুষের জন্য ত্রানের উপযুক্ত বন্দোবস্ত তো দূরের কথা, বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিদিন পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধির সাথে জনগণের উপরে আরও বেশি করে অর্থনৈতিক বোঝা চাপিয়ে চলেছে যার ফলে পরিস্থিতি ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে চলেছে। ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, দারিদ্র্য ও ক্ষুধার কারনে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে। আরএসএস এবং বিজেপি জনমানসে সংখাগুরু হিন্দুত্বের পরিচয়ের নির্মাণে সফল হয়েছে। ঘৃণা, বিষাক্ত মনোভাব ও হিংসা বিস্তারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের তীক্ষ্ণতা আজকের ভারতীয় সমাজকে মেরুকৃত করছে। মেরুকরণের এহেন তীক্ষ্ণতাই আরএসএস-বিজেপি রাজনৈতিক/নির্বাচনী পরিকল্পনার মূল ভিত্তি।

প্রিয় কমরেড এবং বন্ধুরা,

এই পরিস্থিতিতে বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন এবং পরাজিত করা অপরিহার্য কর্তব্য, যাতে একটি উন্নত জীবনের জন্য জনগণের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করা যায়। ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্র এবং দেশের সংবিধান রক্ষা করা যায়। আরএসএস-বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করার কাজ কেবলমাত্র নির্বাচনী কর্মসূচির মাধ্যমে অর্জন করা যায় না, রাজনৈতিক, মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক এবং সকল সামাজিক ক্ষেত্রেই সেই লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। হিন্দুত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে শক্তিশালী করার জন্য যে দৃঢ় পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা দরকার তা নিয়ে আলোচনা করবে ২৩ তম পার্টি কংগ্রেস৷

সর্বাগ্রে যে কাজে গুরুত্ব আরোপ করা দরকার তা হল সিপিআই(এম)-র স্বাধীন শক্তি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা।

এর ভিত্তিতে শ্রেণী ও গণসংগ্রামকে শাণিত করে বাম শক্তির ঐক্যকে শক্তিশালী করা।

ভারতের শাসক শ্রেণীর নীতির বিকল্প কর্মসূচির ভিত্তিতে বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য গড়ে তোলা।

বিজেপিকে পরাজিত করতে হলে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সর্বোচ্চ সম্ভাবনাময় বিস্তৃত ফ্রন্ট গড়ে তুলতে হবে।

বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন ও পরাজিত করার জন্য সমস্ত বাম, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিকে একত্রিত হতে আবেদন জানাচ্ছে সিপিআই(এম)। ধর্মনিরপেক্ষতার ঘোষিত নীতি রয়েছে এমন সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই আজকের পরিস্থিতিতে দেশপ্রেমের দায়িত্ব পালনের জন্য মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষার জন্য নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে কংগ্রেস এবং অন্যান্য কিছু আঞ্চলিক দলকে স্পস্টভাবেই নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আপোষমূলক মনোভাবের কারনে এই সকল দলগুলিকে সাম্প্রদায়িক শক্তির আক্রমনের সামনে পিছু হটতে হতে পারে, এক্ষেত্রে আমাদের পূর্বের অভিজ্ঞতা এমনই। হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার প্রতিরোধে আপোষহীন ধর্মনিরপেক্ষতাকে পাথেয় করেই আক্রমনের মোকাবিলা করা যায়, অন্য পথ নেই।

প্রিয় কমরেড এবং বন্ধুরা,

আজ সিপিআই(এম) এবং বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট আপোষহীনভাবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে সমুন্নত রাখার পথ দেখিয়েছে। জাতি, ধর্ম বা লিঙ্গ নির্বিশেষে সমতাকে সম্মান জানিয়ে একই সাথে নয়া-উদারবাদী নীতির বিকল্প হিসাবে জনস্বার্থে নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। মানব উন্নয়ন সূচকের ভিত্তিতে কেরালার উচ্চাবস্থানের প্রশংসা করেছে বিশ্বের প্রায় সবকটি দেশ। একটি শক্তিশালী কমিউনিস্ট পার্টি, শক্তিশালী বাম ঐক্য এবং বাম-গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠনের প্রচেষ্টাকে জোরদার করার সংকল্প নিয়েছে সিপিআই(এম)। আমরা আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি এবং দেশপ্রেমিকদের কাছে আমাদের সাংবিধানিক সাধারণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য ও হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বিস্তৃততম ফ্রন্ট গড়ে তুলে বিকল্প জনস্বার্থবাহী নীতি রুপায়নের সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সমবেত সংকল্পের আবেদন করছি।

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া

ওয়েবডেস্কের পক্ষে অনুবাদঃ সৌভিক ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply