Logo oF Communism

পলিট ব্যুরো - ইয়েস ব্যাঙ্কের বিপর্যয় কুৎসিত ধান্দার ধনতন্ত্র

নয়া দিল্লি, ৭ মার্চ— ইয়েস ব্যাঙ্কের ঘটনা ধান্দার ধনতন্ত্রের কুৎসিত উদাহরণ। ইয়েস ব্যাঙ্কের সঙ্কটকে এইভাবেই অভিহিত করেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। ইয়েস ব্যাঙ্কের শোচনীয় আর্থিক পরিস্থিতির কারণে ব্যাঙ্কের বোর্ড ভেঙে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এখন মূলত স্টেট ব্যাঙ্কের অংশীদারিত্বে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এই বেসরকারি ব্যাঙ্ককে। সাধারণ গ্রাহকদের টাকা তোলার পরিমাণ সীমিত করে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, ইয়েস ব্যাঙ্কের বিপর্যয় বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির পরিচালনা ও সময়মতো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগজনক প্রশ্ন সামনে এনেছে। তথ্যে দেখা যাচ্ছে ব্যাঙ্কের ঋণ দেবার পরিমাণ গত পাঁচ বছরে চোখ ধাঁধানো রকমের বেড়েছে। ২০১৪-র মার্চে ৫৫৬৩৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তা ২০১৯-র মার্চে হয়েছে ২,৪১,৯৯৯কোটি টাকা। শাসক গোষ্ঠীর পছন্দের কর্পোরেটদের বিপুল ঋণ দিয়ে জর্জরিত হয়ে গেছে ব্যাঙ্ক। অনিল আম্বানির মতো কোনো কোনো ঋণগ্রহীতাকে মোদী সরকার যথাসাধ্য সাহায্য করছে। যদিও তাদের শোচনীয় আর্থিক পরিস্থিতির কথা কারোরই অজানা না।

পলিট ব্যুরো বলেছে, ব্যাঙ্কের প্রমোটার ও বোর্ডের যা খুশি করার ঘটনা বেশ কিছুদিন ধরেই নজরে এসেছে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সময়মত হস্তক্ষেপ করেনি, আমানতকারীদের স্বার্থ বিপর্যস্ত হয়েছে। ধান্দার কর্পোরেটের ওপরে ভিত্তি করে বর্তমান শাসকদের নীতির ধ্বংসাত্মক প্রভাব পড়ছে ভারতীয় অর্থনীতিতে। তা আর গোপন রাখা যাচ্ছে না।

পলিট ব্যুরো বলেছে, এখন স্টেট ব্যাঙ্ককে ৪৯শতাংশ শেয়ার কিনে নিতে বলা হয়েছে। তাহলে ইয়েস ব্যাঙ্ককে সরকারি মালিকানায় আনতে হবে। মুনাফার বেসরকারিকরণ আর ক্ষতির জাতীয়করণ হতে দেওয়া চলে না। আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা তোলার যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

ইতিমধ্যেই ইয়েস ব্যাঙ্কের ‘পুনর্গঠনের’ জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক একটি খসড়া প্রকল্প তৈরি করেছে। ইয়েস ব্যাঙ্কে বিনিয়োগ করবে স্টেট ব্যাঙ্ক। এসবিআই চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার জানিয়েছেন, ১০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ রাখা হবে। আমাদের প্রস্তাব আরবিআই-কে জানানো হবে। তাদের অনুমতির পরে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কুমার দাবি করেন, বেসরকারি সংস্থায় স্টেট ব্যাঙ্কের এভাবে বিনিয়োগে কোনো স্বার্থের সংঘাত হবে না।

ব্যাঙ্কিং শিল্পের পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, ইয়েস ব্যাঙ্কের কাহিনি আরো একবার বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির ব্যর্থতা ও অর্থ নয়ছয়ের ঘটনাকে উন্মোচিত করেছে। এর আগেও আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, গ্লোবাল ট্রাস্ট ব্যাঙ্কে বিপর্যয় ঘটেছে। তার দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঘাড়ে। এক্ষেত্রেও এসবিআই এবং সম্ভবত এলআইসি-কে বিপর্যয়ের দায় বহন করতে হবে। ইয়েস ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে কেবল ওই ব্যাঙ্কের আমানতকারী এবং ২০ হাজার কর্মচারীর ভবিষ্যতকেই বিপন্ন করছে না, ৩২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের টাকা এখানে জড়িত রয়েছে। কিছু রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের আমানতও রয়েছে। সামগ্রিক পরিণাম ধীরে ধীরে সামনে আসবে।

ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের তরফে বলা হয়েছে, ইয়েস ব্যাঙ্কের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকার বেসরকারিকরণের রাস্তায় হাঁটা বন্ধ করুক। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি হাতে দেবার পথে এগনো বন্ধ করা হোক।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন