সহকর্মীর চোখে - পার্থ দে

৮ জুলাই ২০২২, শুক্রবার

সহকর্মীর চোখে - পার্থ দে


জ্যোতি বাবু ছিলেন বিশাল ব্যক্তিত্ব, কিন্তু উনি কখনই আমাদেরকে ওনার অনুগত কর্মচারী হিসাবে দেখেননি, উনি সবাইকে তার প্রাপ্য সম্মানটা দিতেন। আমরাও ওনাকে মন্ত্রীসভার নায়ক হিসাবে নয় একজন সহকর্মী হিসাবেই দেখতাম। কোন বিষয়ে কথা বলতে গেলে উনি নিজে সরাসরি এ্যাপয়েন্টমেন্ট দিতেন এই নিয়ে কখনই কোন ব্যতিক্রম হয়নি। হ্যাঁ একথা ঠিক যে উনি খুব কম কথা বলতেন। ওনার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা যেত,তর্ক করা যেত। প্রথম বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভা ছিল তরুণ,মাঝ বয়সী ও প্রবীণদের মিশেলে তৈরি একটা অসামান্য মন্ত্রীসভা যার মধ্যমণি ছিলেন জ্যোতিবাবু। এই মন্ত্রীসভায় কোথাও কোন অনৈক্য ছিল না,ছিল না বোঝাপড়ার অভাব। বামফ্রন্ট ছিল শক্তিশালী,সংগ্রামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের একটা জোট, এই জোটের একটা দূরদৃষ্টি ছিল। এই বামফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ রেখে চালিয়ে নিয়ে যাওয়াও ছিল একটা দুরূহ কাজ। এই সময়ে প্রায় প্রতিদিন পার্টির পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছিল একইসাথে বামফ্রন্টের পরিধিও বাড়ছিল। এইসময় বামফ্রন্ট ও মন্ত্রীসভার মধ্যে যে সমন্বয় সাধন ঘটেছিল তার প্রধান কারণ সকলের কাছেই আমরা কী করতে চাইছি এই বিষয়টা স্পষ্ট ছিল। পার্টি,বামফ্রন্ট,সরকার এই তিনটে স্তরে আলোচনার ভিত্তিতেই সরকারের নীতি নির্ধারণ হত যার ফলে এটা একটা সামগ্রিক সিদ্ধান্ত হিসাবেই উঠে আসত, কোন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত হিসাবে নয়। সরকারে আসার আগে বামফ্রন্টের সুবিধা ছিল এটাই যে এর আগে যে কংগ্রেস দল দীর্ঘ সময় সরকার চালিয়েছিল তাদের জনপ্রিয়তা কমছিল। এর পাশাপাশি কিছু আশ্চর্য ধরণের সামাজিক সংগঠন, যাকে আমরা গণসংগঠন বলে চিহ্নিত করি সেগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী ও সক্রিয় হয়ে ওঠে । গণসংগঠনগুলোর সাথে মানুষের একটা জৈবিক যোগাযোগ স্থাপিত হয় ও তার থেকে স্বাভাবিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠে।একটা নতুন ধরণের সরকার গড়ে উঠেছে মানুষ এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল।


অনেকে শুনলে আশ্চর্য হবেন যে, মানুষ প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের কাছে চেয়েছিল শিক্ষা,পানীয় জল, তারা কিন্তু চাকরি চায়নি প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের কাছে। এই মনোভাব একটা প্রভাব বিস্তার করেছিল সমাজের ওপর তলা থেকে নীচ তলা অবধি।সেই সময়ে বামফ্রন্ট বিরোধী শক্তি, রাষ্ট্র ব্যবস্থা,সমাজ বিরোধীদের একটা অংশ মিলিত হয়ে আমাদের সরকারের ওপর সর্বাত্মক আক্রমণ নামিয়ে আনে। এই বাম বিরোধীতায় বিভিন্ন প্রতিথযশা বুদ্ধিজীবিরাও সরাসরি নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু এই সামগ্রিক বিরোধীতার মধ্যে দাঁড়িয়েও বামফ্রন্ট সরকার ও তার প্রধান হিসাবে জ্যোতি বসু দৃঢ় ভাবে অবস্থান গ্রহণ করেন। অনেকের জানা নেই সেই সময়ে বিরাট একটা বিতর্ক হয়েছিল আমাদের শিক্ষানীতি নিয়ে, ট্রেড ইউনিয়ান,ভূমি সংস্কার নিয়ে তো হয়েইছিল কিন্তু শিক্ষা নিয়ে এই বিতর্কটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলার প্রায় সমস্ত শিক্ষাবিদ কোন না কোন পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন।

জ্যোতিবাবুর বৈশিষ্ট ছিল তিনি অন্যদের কথা শুনতেন। বিধানসভায় বিরোধীদের যুক্তি, বক্তব্য এগুলো মন দিয়ে শুনতেন,বিধানসভায় তাঁর ঘরে বসেও তাদের কথা মন দিয়ে শুনতেন। এমনকি বামফ্রন্টের মন্ত্রী,বিধায়কদের বক্তব্যও শুনতেন, ঠিক-ভুল বোঝার চেষ্টা করতেন। তখন বড় বড় কনভেনশন হত। আমার মনে আছে ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে এবিটিএ সহ বিভিন্ন সংগঠনের ডাকে দুদিনের একটা কনভেনশন হয়েছিল। জ্যোতি বাবু সেখানে বক্তা হিসাবে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন, তিনি কিন্তু শুধু তাঁর বক্তব্য রেখেই চলে আসেননি। বসে শুনেছিলেন আমাদের বক্তব্য। নেতা হওয়ার যোগ্যতা তাঁর ছিল,নেতা হওয়ার নিজস্ব একটা স্টাইল তাঁর ছিল। কখনও কোন কাজের জন্য কাউকে ধমক দেওয়া ভর্ৎসনা করতে কোনদিন তাঁকে দেখিনি। বহু ব্যাপারে তাঁর সাথে মতবিরোধ হয়েছে কিন্তু তিনি কখনও তা প্রকাশ করেননি। আমাদের মনে হয়েছে পরেরদিন কী করে গিয়ে তাঁর সাথে কথা বলব, কিন্তু উনি কোনদিন বুঝতে দেননি। ওনার সাথে একত্রে কাজ করা এক বিরল অভিজ্ঞতা। তখনও অনেক মানুষই তাঁকে সরাসরি দেখেনি, কিন্তু ঘরে ঘরে ওঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। মানুষ বলত : উনি আমাদের লোক, আমাদের পার্টি করা লোক,উনি আমাদের জন্য কিছু করবেন। এই বিশ্বাস মানুষের মনের মধ্যে গেঁথে গিয়েছিল-এমনই ছিল ওনার প্রভাব।


বহু প্রতিকূলতার মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও বামফ্রন্ট সরকার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেছিল,এর পেছনে কিছু গণসংগঠনের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। সবথেকে বড় অগ্নিপরীক্ষা ছিল ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যা। এই বন্যায় আমরা মন্ত্রীসভার সদস্যরা বিভিন্ন বন্যা দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শনে যেতাম,সন্ধ্যা নাগাদ রাইটার্সে ফিরে জ্যোতি বসু ও মুখ্যসচিবের সাথে মিটিং করে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করতাম। আমরা অনেকেই অবাক হতাম কেন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে সরকার এত দ্রুততার সাথে এগোচ্ছে! এই বন্যার কিছুদিন আগেই পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বন্যার সময় দেখলাম সদ্য নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্য, গ্রামের বুদ্ধিজীবি অংশ অর্থাৎ শিক্ষকরা, এমনকি অগণিত সরকারি কর্মচারি যারা তাদের কাজের জন্য কখনই বিশেষ স্বীকৃত হন না তারাও জীবনপণ করে বন্যাত্রাণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পাঁশকুড়া,ঘাটাল অঞ্চলে বন্যায় সাধারণ মানুষও ব্যাপকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ভয়াবহ বন্যা সত্ত্বেও ব্যাপক প্রাণহানি আটকানো গিয়েছিল। এই বন্যা মোকাবিলা বামফ্রন্টের নেতা কর্মীদের সরকার পরিচালনা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস দিল এবং বাংলার জনগণও আমাদের ওপর ভরসা রাখতে শুরু করল। ভূমিসংস্কারের ক্ষেত্রেও আমরা দেখেছিলাম যে সমস্ত পরিবার এর বিরোধী ছিল পরবর্তীতে তাদের প্রায় ৯০ ভাগ এটা মেনে নিয়েছিল যে ভূমিসংস্কারটা ন্যায়সঙ্গত ও এটা করা উচিৎ।

জ্যোতি বসু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই শিক্ষাক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিবর্তন আসে । গণটোকাটুকি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলে উনি একটা কথা চালু করেছিলেন যে -ছাত্ররা পরীক্ষার হলে কী করছে না করছে এটা মাস্টারমশাইদের দেখার বিষয় নয় ,এটা সার্কুলার! আমরা তো সেই সময়ে শিক্ষকতা করেছি, আমাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে । আমাদের ছাত্রছাত্রী যারা আদর্শগত ভাবে টোকাটুকির বিরুদ্ধে তাদের ওপরে ব্যাপক আক্রমণ নেমে এসেছে এমনকি কয়েকজনকে হত্যাও করা হয় । এতেও তাদেরকে টলানো যায় নি তখন তাদের পরীক্ষার খাতাগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয় । জ্যোতিবাবু মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসে বললেন ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিন,কোন রকম টোকাটুকি বরদাস্ত করা হবে না । এটা নিয়ে কোন সমীক্ষা হয়েছেী কি না জানি,প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের শিক্ষানীতি নিয়ে সেই সময়ে প্রচুর আক্রমণ করা হয়েছিল, তবে আমার মতে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছিল । এবং আজকে যে প্রজন্মটা , যারা প্রবীন হয়ে গেছে সমাজে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বিজ্ঞান,প্রযুক্তি থেকে সমস্ত দিকে , তারা বামফ্রন্টের ভাষা শিক্ষা সহ সার্বিক শিক্ষানীতির সুফল পেয়েছিলেন – তারা অমানুষ হয়ে যায়নি । তারা নতুন প্রজন্মকে গর্ব করে বলতে পারে তাদের পড়াশুনা ,বিদ্যালয়,শিক্ষক কোন কিছুর অভাব হয়নি। আমরা নিজেদের অজান্তেই এই সমাজের একটা পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছিলাম এই শিক্ষার জোরে। আমাদের Schooling, language policy এগুলোর ভিত্তিতেই আজকের মধ্যবিত্ত সমাজের একটা ব্যাপক অংশ প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে । এর পরে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে সেটা আলাদা বিষয় ।

গ্রাম থেকে শহরের বস্তি সর্বত্র স্নাতক,স্নাতকোত্তর এমনকি ডক্টরেট পাওয়া যাবে, এই বিস্তার লাভটা আমরা ঘটাতে পেরেছিলাম।
পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর ক্ষেত্রে প্রথম বাম সরকারের সময় থেকেই আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বামফ্রন্টের যে ঘোষিত কর্মসূচী ছিল তার ভিত্তিতেই সরকারের বিভিন্ন দপ্তর বিভিন্ন পরিকল্পনা নিত তারাই প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীকে দিত। উনি সবটা আগে নিজে বোঝার চেষ্টা করতেন কোন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছেন মানেই সেটা ঠিক এমনটা নয়। উনি পরিবর্তন বা সংযোজনের কথাও বলতেন। উনি বিষয়টা সম্পর্কে নিজে সেই পর্যায় অবধি বুঝতেন যাতে উনি শুধু জানলেন এতেই বিষয়টা আটকে না থাকে, উনি যাতে জনগণের সামনে বক্তৃতা করে সেই বিষয়টা সম্পর্কে বোঝাতে পারেন এটা বিবেচনা করতেন । উনি এই যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন কারণ উনি ছিলেন অসাধারণ মেধাবী । অল্প সময় কথা বলতেন এবং to the point কথা বলতেন। অসংখ্যবার ওনার সাথে দেখা করেছি কোনদিন বিরক্ত হননি কিন্তু নিজেও কোন বাড়তি কথা বলতেন না যিনি দেখা করতে এসেছেন তার থেকেও সংক্ষেপে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করতেন। বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী আমরা যারা ছিলাম নিজেদের দপ্তরের বিভিন্ন প্রস্তাব নিজেরাই অনুশীলন করে তৈরি করে ওনাকে দিতাম, যে কোন কারণেই হোক আমরা আমলাততন্ত্রের ওপরে খুব একটা নির্ভর করতাম না । ওনার সেই প্রস্তাব গ্রহণ বা বর্জন যাই করার হোক সামনাসামনিই করতেন। উনি আমলাদের থেকে ওনার সহকর্মীদের ওপর বেশি আস্থাশীল ছিলেন । এবং ভূমিসংস্কারটা যে একটা নতুন ধরণের কাজ এটা উনি ভালো করে বুঝেছিলেন, এ বিষয়ে উনি যথেষ্ট অধ্যয়ন করেছিলেন বাম সরকার হওয়ার আগেই । উনি জেলাগুলোতে যাওয়ার আগে আমলাদের সাথে কথার বলার থেকেও বেশি জোর দিতেন স্থানীয় পার্টিকর্মীদের মতামতকে , উনি পার্টি কমরেডদের ওপর আস্থাশীল ছিলেন, তার মানে আমলাদের উনি অসম্মান করতেন এমনটা নয়। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে এলাকার কমরেডদের মতামতকে উনি গুরুত্ব দিতেন। । যেখানে যেখানে উনি প্রার্থী হতেন সেখানে উনি পছন্দ করতেন বড় বড় জনসভা করা যাতে একসাথে অনেক মানুষের সামনে বাম সরকারের ভূমিসংস্কার নীতি,শিক্ষানীতি এইগুলো সম্পর্কে মানুষকে বোঝানো যায়,সচেতন করা যায়। এখনকার মত ব্যক্তিগত কুৎসা, গালিগালাজের রাজনীতি তখন আলোচিত হত না , বড় বড় সভায় সরকারের , পার্টির নীতির প্রশ্ন আলোচনা করা হত।


গণতন্ত্রকে একদম নীচতলা অবধি নিয়ে যাওয়াই ছিল সরকারের লক্ষ্য যেখানে মানুষ নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নেবে। কিন্তু এই প্রশ্নে আমাদের কিছু ঘাটতি থেকে গিয়েছিল, শিক্ষানীতির প্রশ্নে যেমন আমরা নিজেদের অজান্তেই একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে পেরেছিলাম , সেটা সর্বত্র একইভাবে সঞ্চালিত হয়নি। প্রথম মন্ত্রী সভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্কুলের বাচ্চাদের খাবার দেওয়া হবে সীমিত সাধ্যের মধ্যেই । জ্যোতিবাবু, অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র আর আমি মিলে এই বিষয়ে আলোচনা করে সীমিত পরিসরে এই প্রকল্প শুরু করি পরে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পরে । কংগ্রেসী আমলে মেয়েদের ক্ষেত্রে অষ্ট শ্রেণী অবধি অবৈতনিক শিক্ষা চালু ছিল , আমাদের ইস্তেহারের কথা মত আমরা ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে ধাপে ধাপে দ্বাদশ শ্রেণী অবধি অবৈতনিক শিক্ষা চালু করেছিলাম। আমরা কয়েকমাসের মধ্যে সমস্ত সিলেবাস, কারিক্যুলাম পাল্টালাম, আগে প্রাথমিকে বই দেওয়া হত,সেই প্রকল্পকে আমরা মাধ্যমিক স্তর অবধি উত্তীর্ণ করলাম।। আমরা বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রেও যে কাজ করেছিলাম তার স্বীকৃতি বিরোধীরাও দিতে বাধ্য হয়েছিল । এমনকি একসময় কিছু জেলায় আমরা কংগ্রেস সহ সমস্ত রাজনৈতিক দল মিলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলাম যে সন্ধ্যার দিকে কোন ধরণের রাজনৈতিক কাজ করবে না কোন দল, ঐ সময়টা বয়স্ক শিক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় । অথচ এখন এই সরকার যত প্রচার করেছে তার বিন্দুমাত্র কোন কাজ করেনি । সেইসময়ে আমরা সাক্ষরতা অভিযানে অনেকেই স্বেচ্ছাসেবকের ভূমিকা পালন করেছিলাম । মানুষের মধ্যে চেতনার বিকাশ এক অন্যরকম পর্যায়ে গিয়েছিল। মহিষাদলে এইরকম এক অভিযানে গিয়ে তখনকার সংখ্যালঘু মহিলাদের মধ্যে শিক্ষালাভের যে আগ্রহ দেখেছিলাম তা কোনদিন ভোলার নয় ।


জ্যোতিবাবুকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই যা দেখেছি উনি ভয়ানক পরিশ্রমী ছিলেন এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন। সেইসময় আমরা সরকারের আসার পরে ভয়ানক আক্রমণ শুরু হয় বিদ্যতের ঘাটতি নিয়ে । উনি এইসবে বিন্দুমাত্র বিচলিত হতেন না, নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন। ধীরে ধীরে আমরা ঘাটতি মেটালাম, তারপরে অতিরিক্ত বিদ্যুত উৎপাদন করা শুরু হল যা পরবর্তীতে আমরা শিল্পায়নে ব্যবহার করেছিলাম । অথচ বর্তমানে নতুন কোন বিদ্যুত কেন্দ্র এই সরকার তৈরি করতে পারলনা।
সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়, সেইসময় প্রমোদ দাশগুপ্তর ভূমিকা ব্যতিরেকে এই ইতিহাসের কোন মূল্যায়ন হয় না। প্রমোদ দাশগুপ্ত পার্টি আর বামফ্রন্ট দেখতেন , জ্যোতিবাবু সরকার । এই অনন্যসাধারণ জুটি আমাদেরকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন