সুপ্রিম কোর্টে করোনা মহামারি সংক্রান্ত সংবাদ নিয়ন্ত্রণের আর্জি কেন্দ্রের

আইসিএমআর ইতিমধ্যেই জানিয়েছে তারা সারাদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে 'করোন' সংক্রান্ত কোন তথ্য আর জানাবে না । আইসিএমআর তাদের সমস্ত করোনা সংক্রান্ত তথ্য স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রককে দেবে এবং তার ভিত্তিতে দিনে দুবার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রক সাংবাদিক সম্মেলন করে তথ্য জানাবে । হঠাৎ করে এই ধরণের সিদ্ধান্ত দেখে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য গোপন করার একটা প্রবণতা থাকতে পারে।

এই আবহেই মঙ্গলবার পরিযায়ী শ্রমিকদের পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সর্বশেষ পরিস্থিতির রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময় আবেদন জানানো হয় আদালতের পক্ষ থেকে সমস্ত মুদ্রিত, বৈদ্যুতিন ও সামাজিক মাধ্যমের ক্ষেত্রে নির্দেশিকার জারির করার, যাতে যেকোন গণ মাধ্যমে করোনা সংক্রান্ত কোন তথ্য দেওয়ার আগে তা সরকারি তথ্যের সাথে মিলিয়ে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকে ।

সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা , স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লার লিখিত রিপোর্টটি কোর্টে পেশ করেন । মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট সেই রিপোর্টের ভিত্তি সুনির্দিষ্ট কিছু মন্তব্য করে।

রাস্তা থেকে তুলে শুধুমাত্র নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে গেলেই হবে না, সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত খাবার জোগাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যাতে সবরকম চিকিৎসা  পরিষেবা পান তাঁরা। তাঁদের মনোবল বাড়াতে প্রয়োজনে কাউন্সেলিংও করা হবে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় সরকারকে এমনই নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।

করোনার প্রকোপে গোটা দেশে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। গত কয়েক দিনে তাঁদের মধ্যে থেকে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। কর্মস্থলে দু’বেলার খাবার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ানোয়, কেউ পায়ে হেঁটে কেউ বা সরকারের ব্যবস্থা করে দেওয়া গাড়িতে চাপাচাপি করে নিজ নিজ বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। প্রচণ্ড রোদে, অনাহারে এক জনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়।

এমনটা চললে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে এবং সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দেয়। ওই সমস্ত শ্রমিকদের কাছে যাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যায়, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। তার শুনানিতেই চলাকালীন এ দিন সলিশিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় কোনও পরিযায়ী শ্রমিক নেই। তাঁদের মাধ্যমে সংক্রমণ যাতে না ছড়া, তাই সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  

এর পরই প্রধানবিচারপতি এসএ বোবডে বলেন, ‘‘যাঁদের মাঝপথে আটকেছেন আপনারা, তাঁরা যাতে নিরাপদে থাকেন, ঠিক মতো খাবার, ওষুধ এবং চিকিৎসা পরিষেবা পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।’’ ২১ দিনব্যাপী লকডাউনের জেরে আচমকাই অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। নিরাপদ আশ্রয় চলে গিয়েছে। নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের মন থেকে এই ভয় দূর করতে হবে বলেও জানান প্রধান বিচারপতি।

গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের দাবি নাকচ করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলে যে "মহামারী সম্পর্কে অবাধ আলোচনায় হস্তক্ষেপ করতে আমরা ইচ্ছুক নই , তবে গণমাধ্যমকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সরকারী বক্তব্য প্রকাশ করুন । " এর সাথে সুপ্রিম কোর্ট আরো বলে যে এই পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যাতে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তার জন্য সরকারকেই সংবাদমাধ্যমে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করা হবে বলে আদালতে জানান তুষার মেহতা।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন