Site icon CPI(M)

About the district- Maldah

Maldah, Jelar kotha 24

অম্বর মিত্র

মালদহ জেলার ১২টি বিধানসভা আসন ও মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কা ও সামশেরগঞ্জ বিধানসভা আসন নিয়ে মালদহ জেলার দুটি লোকসভা আসন যথাক্রমে ৭. উত্তর মালদহ ও ৮. দক্ষিণ মালদহ গঠিত হয়েছে।

দুটি জেলার মানুষের জনবিন্যাস, প্রকৃতি, পরিবেশ, মানুষের পেশা, সমস্যা ও সম্ভাবনা প্রচুর মিল রয়েছে বা এক কথায় বলা যায় প্রায় একই রকম সব কিছু।

গঙ্গা ভাঙ্গনের সমস্য নিয়ে বহু আন্দোলনের পরেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। ঘরবাড়ী, চাষের জমি হারিয়ে বহু পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকার তার দায়িত্ব পালন করেনি। রাজ্য সরকারেরও কোনো প্রচেষ্টা উদ্যোগ কিছু নেই। সব হারানো মানুষের পুনর্বাসন বলে কিছু নেই রতুয়া ভাঙ্গছে, মানিকচক ভাঙ্গছে, কালিয়াচক-৩নং ব্লক ভাঙ্গছে, ধুলিয়ান ভাঙ্গছে। গঙ্গা নদীর ভয়ঙ্কর গ্রাসে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে।

বাম আমলে অনেক আন্দোলনের ফলে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী এইচ.ডি.দেবেগৌড়া মালদহে এসে গঙ্গা ভাঙ্গন সরেজমিনে দেখে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেন। মালদহ-মুর্শিদাবাদ বাসীর দুর্ভাগ্য কিছু কাজ শুরু হওয়ার আগে দেবগৌড়া সরকারটাই চলে যায়।

জেলার বর্তমান কংগ্রেস সাংসদ সহ বামপন্থীরা অনেক আন্দোলন করেন, সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহ: সেলিমও বারবার মালদা-মুর্শিদাবাদ ছুটে আসেন, লড়াই-আন্দোলনে থাকেন, কিন্তু সংসদে জেলার সাংসদরা কোনো কথাই বলেন না। করোনার সময় মৃতদেহ গঙ্গা জলে ভাসে ‘নমামী গঙ্গে’ কোনো কাজে আসে না।

মালদহ জেলায় প্রায় পাঁচ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক। তিন লক্ষ পাঁচ হাজার নাম লিখিয়েছে সরকারী খাতায়। লকডাউনের সময় বাড়ী ফেরার পথে ২২জন পরিযায়ী শ্রমিক পথে নানাভাবে মারা যান। পরিযায়ী শ্রমিক নাতি’র মৃত্যুতে পারলৌকিক কাজ দাদু করেছে আর কাঁদতে কাঁদতে বলেছে আমার কাজ নাতি করবে, আর আমি আজ নাতির কাজ করছি। এসবই আমাদের চোখে দেখা। জেলায় ২২জন পরিযায়ী শ্রমিকের নাম ঠিকানা তালিকা করে জেলা প্রশাসনকে দিলেও আজ পর্য্যন্ত সেই পরিবারগুলি কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি।

মিজোরামের সাইরাং জেলায় রেলের ব্রীজের কাজ করতে গিয়ে মালদহ জেলায় ২৩জন শ্রমিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন। একই গ্রামের ১৩জন শ্রমিক মারা গেলেন। কারও দুই বছরের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে স্ত্রী বসে আছে শূণ্য দৃষ্টিতে, কারও বা ছয় মাস আগে বিয়ে হয়েছে – সে বিধবা হয়ে অকুল পাথারে ভাসলো। রতুয়ার চৌদুয়ার গ্রাম সহ জেলার অধিকাংশ গ্রামগুলির চেহারা একই। গ্রামে কাজ নেই। তাই ঐ চৌদুয়ার গ্রাম থেকেই আবার মিজোরামে ঐ রেল ব্রীজেই কাজ করতে রতুয়া থেকে শ্রমিক যায়। প্রতি মাসেই কফিন বন্দী মরদেহ জেলায় আসে। ৩০-এর নীচে সব বয়স। রাজস্থানে কালিয়াচকের আফরাজুল খুন হয়। বিচার হয় না। এভাবেই প্রতিদিন লেবার এক্সপ্রেসে (ফারাক্কা এক্সপ্রেসে) চেপে জেলার যুবক যুবতীরা ভিন রাজ্যে এমনকি ভিন দেশেও চলে যাচ্ছে। ফিরছে লাশ হয়ে। কবে এই মৃত্যু মিছিল শেষ হবে? কবে নিজেদের রাজ্যেই কাজ পাবে রাজ্যের ছেলে মেয়েরা?

বাম আমলে পঞ্চায়েতের কাজ এলাকার উন্নয়ন, ভূমিসংস্কারের মধ্য দিয়ে যে কাজের জোয়ার তৈরী হয়েছিল, তা আজ ধ্বংস হয়ে গেছে।

সীমান্ত সমস্যা জেলার অন্যতম সমস্যা। জেলার পাঁচটি ব্লকের প্রায় ১৭০ কিলোমিটার অংশ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া আছে। বেড়ার ওপারে জেলার চাষীদের জমি আছে। সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৬টা পর্য্যন্ত কাঁটাতারের বেড়ার গেট খোলা থাকার কথা, যা সব সময় থাকে না। অযথা মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়। নিরাপত্তার অজুহাতে বেড়ার বাইরেও নতুন বেড়া লাগিয়ে গ্রামকে অবরুদ্ধ করে রাখা আছে কালিয়াচক-৩নং ব্লকের আকন্দাবাড়িয়া অঞ্চলে। মহ: সেলিম সেখানে গিয়েও গ্রামবাসীদের সাথে ও বি.এস.এফ. আধিকারিকগণের সাথে কথা বলেছেন। গণশক্তি সহ বিভিন্ন পত্রিকায় এ বিষয়ে লেখালিখিও হয়েছে। অবস্থার কোনও হেরফের হয়নি। ভোটার কার্ড দেখিয়ে বেড়ার ওপারে চাষ করতে যেতে হয়। ১৮ বছরের কম বয়সীদের ভোটার কার্ড নেই। তাদের আরও সমস্যা। সীমান্তে চোরাচালান, মাদকের কারবার থেমে নেই। একে বন্ধ করতে আরও নজরদারী বাড়ানো দরকার।

জমি হাঙ্গর, জমি মাফিয়াদের নজর পড়ায় জেলার আম বাগানগুলি ধ্বংস হচ্ছে। নির্বিচারে আম গাছ কাটা পড়ছে। বাগানের পর বাগান ধ্বংস করে প্লট হিসাবে কাঠা দরে সেই জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। নতুন করে গাছ লাগানো হচ্ছে না। পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসনের কোনো নজর নেই। বিল, জলা অবরুদ্ধ করে মাছ চাষ হচ্ছে। ফলে বৃষ্টিচর জল বেরোতে না পেরে কৃত্রিম বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে। মালদহ-মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রচুর বিড়ি শ্রমিক আছেন। মালদা জেলাতেই প্রায় তিন লক্ষ বিড়ি শ্রমিক আছেন, যাদের প্রায় সবাই মহিলা। মূলত: সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও তপশীল জাতির (ঝঈ) মহিলারা বিড়ি বেঁধে উপার্জন করেন। এক হাজার বিড়ি বাঁধলে ২৭২ টাকা সরকারী মজুরী মেলার কথা। কিন্তু মালিকেরা ১২৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকার বেশি মজুরী কিছুতেই দেয় না। দু-একটি বড় বিড়ি কোম্পানী ১৭৮ টাকা মজুরী দিচ্ছে। বিড়ি বেঁধে বুকে যক্ষা রোগ বাসা বাঁধলেও উপযুক্ত চিকিৎসাও মেলে না, মজুরীও মেলে না। বামপন্থীদের লড়াই জারী আছে তাই কিছুটা হলেও মজুরী বেড়েছে।

বাম আমলে মালদহ জেলায় প্রচুর কাজ হয়। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে জেলার উন্নয়ন হয়। প্রচুর শ্রম দিবস তৈরী হয়। আর্সেনিক মুক্ত জল সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে জেলার চারটে ব্লক ও পৌরসভায় মানুষকে বাড়ী বাড়ী দেওয়া হয়। ইংরেজ বাজার পৌরসভা (তৃণমূল পরিচালিত) একাজ করেনি।

নয়টি বড় বড় সেতু তৈরী হয় বাম আমলে। জেলার রাস্তার ভূগোল পাল্টে গেছে এর ফলে। মানুষ অনেক কম সময়ে যাতায়াত করতে পারছেন এক জায়গা থেকে আর জায়গায়। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ পাঁচটি নতুন কলেজ, অজস্র মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক স্কুল, ছোট ব্রীজ, কালভার্ট, পাকা রাস্তা, মোরামের রাস্তা, ফুডপার্ক অনেক পরিবর্তন এনেছে মানুষের জীবনে। রেশম ও তসর চাষের উন্নতি হয়েছিল। এখন কিছু নীল সাদা কৃষক বাজার তৈরী হয়েছে যা জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। কৃষক সেখানে যায় না।

মালদার মানুষ সম্প্রীতির মধ্যে বসবাস করেন। জেলার সংখ্যালঘু, তপশীল জাতি, আদিবাসী সব অংশের মানুষ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চান, কোনো বিভেদের রাজনীতি তাঁরা চান না। তবুও বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলে যা আগামী দিনে মানুষই প্রতিহত করবেন।

শেয়ার করুন