Liberalism

লিবারাল রাজনীতি কি? এদের স্বার্থ কি?

ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের উত্তরাধিকারী আব্বাসকে কারা সাম্প্রদায়িক বলছে?

Gautam-Roy

গৌতম রায়

গত কয়েকবছর ধরে গোটা দেশে আরএসএস যা শেখাচ্ছিল, সেটাকেই রপ্ত করা একটা বড় অংশের লোকেদের রেওয়াজ হয়ে গিয়েছিল। সেই অভ্যাস অনুসারেই পশ্চিমবঙ্গে আরএসএস , বিজেপি আর তৃণমূল যেটা বোঝাচ্ছিল, শেখাচ্ছিল , সেটাকেই বুঝে, শিখে নিতে শুরু করেছিলেন একটা বড় অংশের মানুষ।তাই ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট বা আইএসএফ মানেই তাঁরা করছিলেন মুসলমান, আর মুসলমানেই মৌলবাদী, এই সরলীকৃত ব্যাখ্যাতেই তাঁরা সবথেকে বেশি অভ্যস্থ হয়ে উঠছিলেন।কতো গুলি প্রান্তিক সংগঠন মিলে, আই এস এফ তৈরি হয়েছে, সেই সংগঠনগুলি কিভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের অধিকারের প্রশ্নে আজ সোচ্চার হয়েছে- এইসব বিষয়গুলিকে চেপে দেওয়ার জন্যেই আই এস এফের গায়ে সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী তকমা দেগে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।আর যেহেতু বাম- কংগ্রেসের সঙ্গে এই আই এস এফের নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে, তাই সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে হাত মেলাচ্ছে বামেরা- এই ঢপের দলের সখের কীর্তনিয়ারা ইতিমধ্যেই আকাশ- বাতাস ভরিয়ে দিতে শুরু করেছেন।মজার কথা হল, গরিব, পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা যদি মোদি- অমিত শাহ বলেন, মমতা বলেন, সে ক্ষেত্রে সেই বিষয়টিকে সোশাল ইঞ্জিনিয়ারিং বলে ইতিবাচক ভাবে তুলে ধরা হলেও, বামপন্থীরা এই কাজ করলে, পিছিয়ে পড়া মানুষদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হলে, সেই কন্ঠকে সাম্প্রদায়িক স্বর, মৌলবাদী উচ্চারণ - এই অপবাদ দিয়ে চেপে দেওয়া হচ্ছে।

Muslims in Bengal

                 আই এস এফের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আব্বাস সিদ্দিকি। দলের অন্যতম প্রধান মুখ শিমুল সোরেনের সঙ্গেই আছেন নওশাদ সিদ্দিকি। আব্বাস এবং নওশাদ ঐতিহ্যমন্ডিত ফুরফরা শরীফের উত্তরাধিকারী।যে ফুরফুরা শরিফ ধর্মীয় আচার আচরণের সঙ্গেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিল। গান্ধীজীর অসহযোগ খিলাফত আন্দোলন হুগলী জেলায় বিশেষ ব্যাপ্তি পেয়েছিল। আর অসহযোগ - খিলাফত, যে আন্দোলনের মূল সুর ছিল বিদেশি শাসক ব্রিটিশকে এই দেশ থেকে বিতাড়িত করে, ভারতের মানুষদের হাতে ভারত শাসনের অধিকার তুলে দেওয়া, সেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনার উন্মেষে হুগলী জেলায় ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে ফুরফুরা শরীফ। ফুরফুরার এই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা গোটা বাংলা তথা ভারতে, ভারতবাসীকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে জীবনপণ করে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে অনেকখানি সাহায্য করেছিল।আর এস এস কখনো ভারতের স্বাধীনতায় অংশ নেয় নি।ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির যাতে সুবিধা হয়, ব্রিটিশের অর্থনৈতিক শোষণ যাতে বজায় থাকে সেই কাজেই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতিটি পর্বে নিজেদেরকে ব্যস্ত রেখেছিল আর এস এস আর তাদের রাজনৈতিক সঙ্গীসাথীরা।তাই ব্রিটিশের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম থেকে উঠে আসা ফুরফুরার মানুষদের সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী বলে আর এস এস, তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি, ছুপারুস্তম বন্ধু তৃণমূল কংগ্রেসের আর তাদের স্বাভাবিক মিত্র লিবারালেরা করবে না তো কে করবে?

                যে আর এস এস , বিজেপি কখনো ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে অংশই নেয় নি, ব্রিটিশের কাছে আন্দামানের সেলুলার জেলে বসে মুচলেকা দেওয়া সাভারকর যাদের নেতা, উত্তরপ্রদেশের বটেশ্বর থানাতে বিয়াল্লিশের আন্দোলনে মুচলেকা দেওয়া অটলবিহারী বাজপেয়ী যাদের নেতা, তারা তো ভারতের জাতীয় আন্দোলনে ঐতিহাসিক অবদান রাখা ফুরফুরার আবু বকর সিদ্দিকির তরিকার মানুষদের সাম্প্রদায়িক বলবেনই, মৌলবাদী বলবেন ই।

বাংলার বুকে ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইতে আলেমদের সংগঠিত করবার ক্ষেত্রে ফুরফুরার আবু বকর সিদ্দিকির ঐতিহাসিক অবদানকে অস্বীকার করা মানে, ভারতের জাতীয় আন্দোলনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণদিককে অস্বীকার করা।বাংলার বুকে আলেমদের ব্রিশ বিরোধী লড়াইতে সমবেত করবার উদ্দেশে ফুরফুরার আবু বকর সিদ্দিকি ১৯১১ সালে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন ' আঞ্জুমান এ ওয়ায়েযীন'। আবু বকর সিদ্দিকি আমৃত্যু এই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ছিলেন। মণিরুজ্ছামান ইসলামাবাদী ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক( হকিকতে ইনসানিয়াত- দেওয়ান মুহাম্মদ ইব্রাহিম তর্কবাগীশ, পৃষ্ঠা-১৭১  এবং ফূরফুরার হজরত পীর ছাহেব- রুহুল আমীন, পৃষ্ঠা- ৭১)। এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল আরো একটি প্রতিষ্ঠান। যৌথ ভাবে তাঁদের নাম ছিল' আঞ্জুমান এ উলেমা এ বাঙলা'। ভাষা বিজ্ঞানী ডঃ শহিদুল্লাহ এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯১৩ সালে এই যৌথ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় অবিভক্ত দিনাজপুরের বানিয়াপাড়াতে। ১৯২০ সাল থেকে পরবর্তী প্রায় আট বছর গোটা বাংলায় এই প্রতিষ্ঠানগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল। খিলাফত অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলি এবং সেগুলির অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্ব হিশেবে ফুরফুরার আবু বকর সিদ্দিকি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। সেই মহান ইতিহাসপুরুষ আবু বকর সিদ্দিকির উত্তরসূরী আব্বাস সিদ্দিকি, নওশাদ সিদ্দিকিকে ব্রিটিশের ক্রীড়নাক আর এস এস, তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি আর তাদের  বাইরে কুস্তি, ভিতরে দোস্তির লোক তৃণমূল কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বলবে না তো কে বলবে? এঁদের সঙ্গে নির্বাচনী বোঝাপড়া করে বিজেপি- তৃণমূলকে হারাতে কৃতসংকল্প বাম- কংগ্রেসকে সাম্প্রদায়িকদের বন্ধু, মৌলবাদীদের বন্ধু বলা হবে না তো, কাদের বলা হবে?

                    আফু বকর সিদ্দিকির ঐতিহাসিক অবদান সম্পর্কে সেযুগে ' ছোলতান' পত্রিকায় লেখা হচ্ছে; ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দের শেষ ভাগ হইতে ১৯২০ সাল পর্যন্ত আনজুমানে - ওলামা- এ- বাংলা  বঙ্গদেশে ধর্মপ্রচার, শিক্ষা বিস্তার, সমাজ সংস্কার ও বিভিন্ন মোছলেম সম্প্রদায়ের মধ্যে একতা ও সম্প্রীতি স্থাপনের যে চেষ্টা করিয়াছে এবং আনজুমানের মাসিক পত্র ' আল - এছলাম' ধর্ম ও সমাজের যে সেবা করিয়াছে ,তাহা কাহারো অবিদিত নাই।আনজুমানে ওলামার সহরোগী সেক্রেটারী জনাব মওলানা এছলামাবাদী সাহেব বর্তমান ' জমাইতে ওলামায়ে বাঙ্গালা' র সেক্রেটারীরূপে কার্য পরিচালনা করিতেছেন।ফুরফুরার প্রসিদ্ধ পীর জনাব পীর মওলানা শাহ সূফী আবুবকর ছাহেব এই জমাইতের সভাপতিরূপে তাহার উন্নতি সাধনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করিতেছেন।"( ছোলতান, ২১ শে নভেম্বর ,১৯২৪,পৃষ্ঠা- ১৮৯)। এইরকম একটি উত্তরাধিকার বহনকারী আব্বাস সিদ্দিকিকে সাম্প্রদায়িক বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে কেবলমাত্র তিনি ফেজ টুপি পড়েন আর নূর দাড়ি রাখেন বলে।

                   আরএসএস দীর্ঘদিন ধরে ভারতের রাজনীতিকে, সামাজিক বিন্যাস কে পোষাক, খাদ্যভ্যাস, আচার আচরণ, ভাষার সঙ্কীর্ণ গন্ডিতে আবদ্ধ করে নিজেদের স্বার্থবাহী রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।এই চাওয়াটা তাদের বাজপেয়ীর আমলেও ছিল।সেই থাকা থেকেই তারা নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল অস্ট্রিলিয় মিশনারী ফাদার গ্রাহাম স্টুয়ার্স স্টেইনসকে তাঁর দুই শিশুপুত্র সহ। তবে সেদিন সন্মিলিত বিরোধী কন্ঠ, বিশেষ করে সংসদের ভিতরে আর বাইরে বামপন্থীদের জাগ্রত উপস্থিতির দরুণ খুব বেশিদূর এগোনো হিন্দু সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তির পক্ষে সম্ভবপর হয় নি।

                 দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময়কালের পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থান্বেষী শক্তি আর ধর্মান্ধ স্বার্থান্বেষী কায়েমী শক্তির ভিতরে যখন অশুভ আঁতাত ভারতে ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের সময় থেকে গড়ে উঠতে শুরু করে, তখন থেকেই নগ্নভাবে ছাতির জানটা ভাতের হাড়ির আর হুঁকোর জলে এসে নামতে শুরু করে। তখন থেকেই মুসলমান বিদ্বেষ কে তীব্র থেকে একটা ভয়ঙ্কর পর্যায়ে নিয়ে যেতে আর এস এসের মুখপত্র ' পাঞ্চজন্যে'র সম্পাদক তরুণ বিজয় বর্ণিত দেবী দুর্গা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  অতি বড়ো মুসলমান হয়ে উঠতে শুরু করেন।গোটা দেশে যে পোষাক জনিত ঘৃণা আর এস এস মুসলমানদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেছে, যার ঢেউতে এখন উত্তাল ভোটমুখী পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আব্বাস সিদ্দিকিকে ঘিরে, সেই পোষাক বিদ্বেষ তৈরির পিছনে হাজিবিবি সেজে মমতার মোনাজাতের ভুল ভঙ্গিমার ছবির যে একটা বড় রকমের ভূমিকা আছে, তা কোনো অবস্থাতেই অস্বীকার করতে পারা যায় না।

মুসলমান আর সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী এই তকমাটাকে একাকার করে আব্বাস সিদ্দিকি বা তাঁর দল আইএসএফ কে যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু একটি বারের জন্যেও বলছেন না যে, আইএসএফ , এই পর্যন্ত আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের জন্যে যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, সেই তালিকায় কিন্তু কেবলমাত্র মুসলমান প্রাধান্য নেই। আই এস এফ মন্দিরবাজার( তপশিলি সংরক্ষিত) আসনে প্রার্থী করেছে ডঃ সঞ্জয় সরকারকে। জগৎবল্লভপুরে করেছে আইনজীবীশেখ সাবির আহমেদকে। চাপড়া তে করেছে কাঞ্চন মৈত্রকে।  উত্তর চব্বিশ পরগণার অশোকনগরে প্রার্থী করেছে নাট্য ব্যক্তিত্ব তাপস ব্যানার্জীকে।তাপস পশ্চিমবঙ্গের মফসসলে সাড়া জাগানো একজন নাট্য ব্যক্তিত্ব।গত দশ বছরে পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা নাট্যচর্চা করতে গিয়ে রাজ্যের শাসক তৃণমূল কংগ্রেস বা কেন্দ্রের শাসক বিজেপির কাছে মৃরুদন্ড বিক্রি করে নি বা অতীতে বামফ্রন্ট সরকারের কাছ থেকেও বিশেষ সুযোগ,সুবিধা আদায় করে নি, তেমন একটি নাম তাপস। বাংলাদেশের প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের নাট্যধারার সঙ্গে অন্তরঙ্গতার ভিত্তিতে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনে তাপস ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। এইরকম মানুষজনদের দলীয় প্রার্থী করে আই এস এফ তাঁদের পিছিয়ে পড়া মানুষদের, ধর্ম, জাতপাত, ভাষা, লিঙ্গগত ক্ষেত্রে যাঁরা সংখ্যালঘু ,তাঁদের হকের লড়াই টিকে যে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে, তা যে রাজনৈতিক কায়েমী স্বার্থান্বেষীদের কপালে বেশ বড়োসড়ো চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে, তা আইএসএফ কে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক বলে দেগে দেওয়ার মানসিকতা থেকে দিনের আলোর মতো পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে।

                       সামাজিক আয়মাদারি ভাঙতে ফুরফুরা শরীফের যে ঐতিহাসিক সংগ্রাম, সেটি সংখ্যাগুরু আধিপত্যবাদীদের আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি বড়ো বাঁধা। আবু বকর সিদ্দিকের কনিষ্ঠ পুত্রের জীবনের একটি ঘটনার ভিতর দিয়ে আমরা বুঝতে পারব, কেবল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামই নয়, স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারে ঐতিহাসিক অবদান স্থাপনের (বহু ইতিহাসবিদের স্বাভাবিক প্রবণতা হল, স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারে মুসলমান সমাজের ঐতিহাসিক অবদানকে একদম চেপে যাওয়া। বিদ্যাসাগরের পাশাপাশি আজ বেগম রোকেয়ার নাম উচ্চারণের ক্ষেত্রে বহু বাঁধার সন্মুখীন হতে হয়। বিদ্যাসাগরের নারী শিক্ষা বিস্তারে অবদান ঘিরে এপার বাংলায় যতো আলোচনা হয়, যতোটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ পায়, তার কিন্তু সিকিভাগ ও হয় না রোকেয়াকে ঘিরে। প্রত্যন্ত গ্রামে বসে মেয়েদের জন্যে ইস্কুল প্রতিষ্ঠার ভিতর দিয়ে বাংলার সামাজিক অচলায়তন ভাঙতে আবু বকর সিদ্দিকি এবং তাঁর উত্তরসূরিরা এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছিলেন।

                  হুগলীর খানাকুলের রাধানগরে রামমোহনের জন্ম। সেই রাধানগরেরই ঘন্টেশ্বর শিবমন্দির লাগোয়া শ্মশানে মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রেও ছিল ভয়ঙ্কর জাতপাতের বিচার। ঘন্টেশ্বর শিবের শ্মশানে একই কুয়োতে( মাটিতে গর্ত করে মৃতদেহ সৎকারের উদ্দেশে কাঠ সাজিয়ে যেখানে চিতা তৈরি করা হয়, হুগলীর স্থানীয় ভাষায় সেটি ' কুয়ো' নামে পরিচিত) ব্রাহ্মণ আর অব্রাহ্মণদের শবদেহ পোড়ানো হয় না। ভিন্ন কুয়োতে পোড়ানো হয়।

              হিন্দু সমাজের এই চরম জাতপাতের বিভাজনের বিপরীতে আমরা দেখি আবু বকর সিদ্দিকির কনিষ্ঠ পুত্র একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। মুরুব্বি হিশেবে তাঁকে খেতে দেওয়া হয়েছে টেবিলে। বাকি আতরাফদের মাটিতে। উনি তৎক্ষণাৎ টেবিল , চেয়ার ছেড়ে মাটিতে সকলের সঙ্গে বসে খাবার খেলেন।এই যে আশরাফি আয়মাদারি ভাঙার ভিতর দিয়ে পবিত্র ইসলাম যে সাম্যের কথা বলেছে, তার প্রতি ফুরফুরার সন্তদের যে শ্রদ্ধা, সেটি তো কোনো অবস্থাতেই সাম্প্রদায়িক শিবিরের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই তারা আইএসএফকে সাম্প্রদায়িক বলবেই। মৌলবাদী বলবেই। তাঁদের সঙ্গে ভোট রাজনীতিতে বোঝাপড়া করে বিজেমূলের বুকে ভয় ধরিয়ে দেওয়া বামেদের ও সাম্প্রদায়িকদের বন্ধু, মৌলবাদীদের বন্ধু বলবেই, এতে আর বিশেষ আশ্চর্য হওয়ার মতো কিছু থাকতে পারে না।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন