ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন
পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির গ্রাহকেরা গত ত্রৈমাসিক থেকে বিলের পরিমাণ দেখে হতচকিত হয়েছেন। এমনও অভিযোগ জানা গেছে যে বিগত ছয় মাস ধরে নিজ ফ্ল্যাট বাড়ির মালিক দশ হাজার বা ততোধিক টাকার বিল পেয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে যখন লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, মজুরি হারাচ্ছেন, তখন তাঁদের উপর সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই আর্থিকভার চাপানো উদ্দেশ্যমূলক। রাজ্যের প্রধান আর্থিক কর্মকাণ্ডের সিংহভাগ জুড়ে বিদ্যুৎ ব্যবসায় নিয়োজিত WBSEDCL'র চড়া বিলের অপকর্ম চাপা দিতেই কি এই অতিরিক্ত বিল? বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা উত্তর চান।
এই অসৎ প্রাইভেট কোম্পানি আরও একটা চাতুরি করছে। তারা প্রচার করছে - তিনমাসের বিল একসাথে করলে বিলের পরিমাণ হয় বেশি ; আর আলাদা আলাদা করলে কম হয়। এই প্রচারও হচ্ছে যে, অতিরিক্ত মুনাফার লোভে বাড়তি বিল ধরা পড়ে যাওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দিতে এই কোম্পানি এই অসততা করছে। কিছু অসাধু শিল্প, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ক্ষতি বাড়িয়েছে, নবান্নের নির্দেশে সেই অতিরিক্ত মাসুলের বোঝা অন্য গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছেএই বেসরকারি সংস্থা। তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেই।
লক্ষ্যণীয়,রাজ্য সরকার কিন্তু কোন লিখিত নির্দেশ দেয় নি। মগরাহাটে গুলি চালিয়ে তিনজন গরীব মানুষকে মেরে ফেলার পরে বিদ্যুৎ চুরি আর এই রাজ্যে অপরাধ বলে গণ্য হয় না।
সারা দেশে বিদ্যুৎ ক্ষতি কমানোর জন্য ২/৩টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেই প্রকল্পের মাধ্যমে নিম্ন চাপের লাইন দৈর্ঘ্য কমিয়ে উচ্চচাপের লাইন দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নিম্ন চাপের লাইন গুলিতে প্রতিরোধ কেবল্ ব্যবহার করে সমষ্টিগত কারিগরি ও বাণিজ্যিক AT&C ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার ফলে যেহারে ক্ষতির পরিমাণ কমে যাওয়া উচিৎ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঔদাসিন্যে তা হচ্ছে না। সাধারণ গ্রাহকদের বাড়তি মাসুলের বোঝা বইতে হচ্ছে।
এরাজ্যে শিল্প বাণিজ্যের প্রসার প্রায় বন্ধ। বামপন্থীদের চাপে এখনো বিদ্যুতে পারস্পরিক ভর্তুকি চালু আছে। যে রাজ্যে শিল্প-বাণিজ্য যত বেশি, সেই রাজ্যের গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা তত সুবিধা পান; অর্থাৎ মাসুলের খানিকটা উচ্চচাপের গ্রাহক বহন করলে গার্হস্থ্য গ্রাহকেরা কম মাসুলে বিদ্যুৎ পেতে পারেন।
সাধারণ আর্থিক বৃদ্ধিহারে বার্ষিক বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়ে ৫-৬ শতাংশ। আর এরাজ্যে এই বার্ষিক বৃদ্ধির হার ১ শতাংশেরও কম।
বর্তমানে যে মাসুল গ্রাহকরা দেন, তার হার নির্ধারিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ এই দু'বছরে এই বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি যথাক্রমে ২৬৫১ কোটি এবং ২৭৭০ কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশের কম ; যার মধ্যে শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকের বৃদ্ধি যৎসামান্য। এর ফলে বর্ধিত মাসুলের দায় বহন করতে হচ্ছে গার্হস্থ্য গ্রাহকদের।
দাবি সমূহঃ-
১- গার্হস্থ্য বিদ্যুৎ পরিষেবাকে বাজার নির্ভর না করে মানবিক ও জনস্বার্থবাহী পরিষেবা বলে গন্য করতে হবে।
২- কারচুপি করে গ্রাহকদের উপর বাড়তি মাসুলের বোঝা চাপানো চলবে না।
৩- বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে যথাযথ নির্দেশ দিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের বহনসাধ্য কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হবে।
৪- শিল্প -বাণিজ্যসহ সমস্ত অসাধু গ্রাহকদের চুরি করা বিদ্যুতের মাসুল সাধারণ গ্রাহকদের উপর চাপানো চলবে না।
৫- আত্মনির্ভরতার ভাঁওতা দিয়ে কয়লা ও বিদ্যুৎক্ষেত্রের সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।
৬- বিদ্যুৎ (সংশোধনী) বিল-২০২০ প্রত্যাহার করতে হবে।