মুখ্যমন্ত্রী কে লাল কার্ড দেখানোর নবান্ন অভিযান - কলতান দাশগুপ্ত

টাইম ট্রাভেল করে যদি পিছিয়ে যাওয়া যেত কয়েক বছর! জাতীয় সড়কের পাশে আদিগন্তবিস্তৃত ফাঁকা জমি। যেখানে আর কয়েকদিন পর কারখানার পিলার উঠবে। পিলার শুধু কারখানার নয় অবশ্য, বেকার ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যতের পিলার তৈরি হচ্ছিল সেখানে। আরো ক'দিন পর হবে গন্ডগোল। পরিত্যক্ত কঙ্কালের মতো পড়ে থাকবে কারখানার শেড।বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে বেকার যুবর স্বপ্নকে। সিঙ্গুরে সর্ষে চাষের স্বপ্ন দেখাবেন মাননীয়া। মানুষ নয়, সিঙ্গুর, শালবনী, রঘুনাথপুর, চকচকায় সেদিন আসলে ষড়যন্ত্র জিতেছিল।

জাম্প কাট ২০২১। ষড়যন্ত্রকে হারিয়ে মানুষের জেতার জন্য নবান্ন অভিযান। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তার দিল্লির দাদা দুজনেই দ্বিতীয় ইনিংস খেলছেন। কি খেলা হচ্ছে? গোটা দেশে ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বেকারত্ব। মহামারী পরবর্তী পরিস্থিতিতে তিনটে কৃষি আইন কৃষকের সর্বনাশ ডেকে আনছে। ব্যাংক, বীমা, রেল, কয়লাখনি, বন্দর, স্টিল প্লান্ট একের পর এক বিক্রির ব্যবস্থা করছে মোদি সরকার। বি এস এন এলের কর্মীরা মাইনে পাচ্ছেন না মাসের পর মাস। দেশ ভক্তির নাম করে যারা এত প্রচার করছে তারা দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পকেও বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে। এই বাংলায় চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস, ব্রিজ অ্যান্ড রুফ, অ্যলয় স্টিল প্লান্ট, বেঙ্গল কেমিক্যাল এর মত বহু সংস্থাকে বন্ধ করার ফতোয়া দিয়েছে মোদি সরকার। এই রাজ্যের দিদি ও কাজ দেওয়ার ব্যাপারে তার দিল্লির দাদা কে অনুসরণ করছেন। গত ১০ বছরে বহু মেলা, খেলা, উৎসবের ফিতে কেটে উদ্বোধন করেছেন মাননীয়া। কিন্তু কেউ তাকে একটা কারখানার ফিতে কেটে উদ্বোধন করতে দেখেনি। যেমন ঘুষ না দিয়ে গত বছর গুলিতে কেউ এসএসসি বা টেটে চাকরি পায়নি। দিদি একের পর এক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন আর তার দলের নেতারা গরিবের পয়সা লুট করে পকেট ভারি করেছেন। তৃণমূলের শাসনের এই দশ বছরে মানুষের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। গণতন্ত্রকে ক্ষতবিক্ষত করে প্রতিদিন মানুষের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া চলছে। স্বচ্ছভাবে স্থায়ী চাকরির দাবিতে শিক্ষক এর চাকরির স্বপ্ন দেখা প্রতারিত যুবর পাশাপাশি নার্স, প্যারা টিচার, গ্রুপ ডি, এসএসকে, এমএসকে শিক্ষকরা রোজ মিছিল করছেন, অবস্থান করছেন এই বাংলার বুকে। পড়াশোনার পরিবেশ কলুষিত হয়েছে বাংলায়। তোলাবাজদের দাপাদাপিতে কলেজ ক্যাম্পাস থরহরি কম্প।স্কুল কলেজে পড়াশোনার খরচ লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, কোন সরকারি নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ নেই। ঠিক যেমন সিন্ডিকেট, তোলাবাজি, সমাজবিরোধীদের দাপটের কাছে সরকারি নিয়ন্ত্রণ হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। একটা গোটা প্রজন্মের জীবনবোধ কে পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করছেন দিদি মোদি। কাজের নিশ্চয়তা না থাকায় যে নিরাপত্তাহীনতা, তাকে ব্যবহার করে স্বার্থপরতা ও অপরাধপ্রবণতা বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে এ রাজ্যের যুবদের মধ্যে। গণতান্ত্রিক অধিকার লুঠ হচ্ছে সর্বত্র। পঞ্চায়েত থেকে নবান্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে কাট মানি খাওয়ার নোডাল অফিস।

অসততা, হিংস্রতা, ধর্ম জাতের নামে উস্কানি দিয়ে আরএসএস বিজেপির জন্য একটা সুন্দর ভিত তৈরি করে দিল তৃণমূল। আর এই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আরএসএস আজ তার ডালপালা মেলছে। প্রকাশ্যে দাঙ্গা লাগানোর হুমকি দিচ্ছে। দিদিমণি নির্বিকার, কারণ ভোট ভাগের সুযোগ তার ও চাই। গত দশ বছরে মমতা ব্যানার্জি নিজে হাতে করে বাংলায় আর এস এস কে জমি তৈরি করে দিয়েছেন। ৩৪ বছরের বাংলায় কখনো জাতের নামে, ধর্মের নামে, খাবারের নামে দাঙ্গা হয়নি। এখন এই উস্কানি চলছে প্রকাশ্যে।আমরা বামপন্থী ছাত্র যুব দের পক্ষ থেকে এই নবান্ন অভিযান কে সামনে রেখে আবার এই ঘোষণা করতে চাই যে দাঙ্গাবাজদের মাথা আমরা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেব।

মিডিয়ার একাংশ এসব নিয়ে আলোচনায় গররাজী। ঘন্টাখানেক বা চব্বিশ ঘন্টাই তাদের আলোচনার বিষয় রগরগে চর্চা। কে কার বউ নিয়ে চলে গেলো, কে তার বান্ধবীর পায়ে ব্যাথা বলে মিছিলে গেলেন না…এইসব চর্চা চলছে সারাদিন। আর সবচেয়ে বড় ব্রেকিং নিউজ হচ্ছে দলবদল। দলবদল নয়, আমরা দিনবদলের পক্ষে।

দলবদলু নেতারা এখন বিবেকের অবতার হয়েছেন! গত দশ বছর ধরে ৭৫ - ২৫ কাটমানি তে অভ্যস্ত নেতারা এখন তৃণমূলের ব্রাঞ্চ অফিস ছেড়ে বিজেপির হেড অফিসে গিয়ে উঠলেন। তাতে সাধারণ মানুষের কি এসে গেল? এই শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়, শোভন চ্যাটার্জি, সব্যসাচী দত্ত রা গত দশ বছর আগে আমার আপনার পাড়ায় এসে বলেছিলেন, তৃনমূল কে ভোট দিন, লাখ লাখ বেকারের চাকরি হবে, সোনার বাংলা হবে। দশ বছর পর এই শুভেন্দু অধিকারী, মুকুল রায়, শোভন চ্যাটার্জি, সব্যসাচী দত্ত রা আমার আপনার পাড়ায় এসে বলছেন, বিজেপি কে ভোট দিন, লাখ লাখ বেকারের চাকরি হবে, সোনার বাংলা হবে!!! এদের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা আছে কি?? একটু ভাববেন।

এই বাংলায় সাময়িকভাবে যে চাকাটা ঘুরছিল পিছনের দিকে তাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজটা আমাদেরই করতে হবে।

গত কয়েকদিন আগে সেই সিঙ্গুরে প্রতীকী শিলান্যাস হয়েছে। আমরা বলছি নির্বাচনের পর বাম- গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ সরকার তৈরি হলে কৃষির ভিতের উপরে দাঁড়িয়ে রাজ্যে কর্মসংস্থান মুখী শিল্পায়ন গড়ে তুলতে হবে। মাথা তুলবে সিঙ্গুর, মাথা তুলবে শালবনি, কাটোয়া, রঘুনাথপুর, চকচকা সহ আরো বহু স্বপ্নের উড়ান। আমরা এও বলছি যে নেতারা তৃণমূলের ঝাণ্ডা ধরে গত ১০ বছর লুট চালিয়ে চালিয়ে আজ দল বদলে বিজেপির শোভাযাত্রায় হাঁটছেন, ওই বিকল্প সরকার তৈরি হলে সেই সব চোর চিটিংবাজ দের জেলে প্যারেড করানো হবে। নবান্ন মানে এখন সবার কাছে একটা ১৪ তলা বাড়ি যেখান থেকে ঠিক হয় যাবতীয় দুর্নীতির ব্লু প্রিন্ট। যেখান থেকে ঠিক হয় কোথায় কিভাবে কোন সুড়সুড়ি দিয়ে ভাগের অংক খেলা হবে। আমরা এ রাজ্যের বেকার যৌবন গত ১০ বছরের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে এখন রাস্তায়। খেলা হবে আমাদের নিয়মে। মুখ্যমন্ত্রীকে লাল কার্ড দেখিয়ে এই খেলায় গোটা মাঠ জুড়ে আমাদের দখল নিতে হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন