Site icon CPI(M)

The Winner Takes It All: Trump, Musk or Crony Capital?

সুকুমার আচার্য

আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছেন। এটাই দৃশ্যমান। কিন্তু এটাই কি সর্বসত্য? নাকি আরো কিছু কথা রাজনৈতিক অর্থনীতির কানাগলিতে থেকে গেল?

প্রথম থেকেই সমস্ত পত্র-পত্রিকা লিখে যাচ্ছিল কমলা হ্যারিস জিতবেন। তারপর মধ্য সময়ে বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্র হয়ে গেল জোর টক্করের গল্প। ৫ অক্টোবর’ ২০২৪ তারিখে পেন্সিলভেনিয়ায় ট্রাম্পের নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখতে উঠলেন ইলন মাস্ক। পরপর নির্বাচনী বক্তৃতা চালিয়ে গেলেন ২৭ অক্টোবর’ ২০২৪ অবধি, কিম্বা হয়তো তারও পরে। ভালো ভালো কথা বলায় ইলন মাস্কের জুড়ি মেলা ভার। ট্রাম্পের গায়ে লেগে থাকা চির চর্চিত উগ্র দক্ষিণপন্থার কটু গন্ধ, বর্ণবিদ্বেষের হিংস্রতার ভয়াল রূপ, নারীকে পণ্য ও ভোগের বিষয়বস্তু হিসাবে ভাবার কু-কীর্তিগুলো, এবং ভাড়াটে গুন্ডা ও বিকৃতমনস্ক লোকদের দিয়ে `সংসদ ভবন আক্রমন করার জঘন্য প্রচেষ্টা- সব যেন মাস্কের বাক্ জালের সুগন্ধি সাবানে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল। অবশেষে ট্রাম্প জিতলেন।

ট্রাম্পকে বুদ্ধি দেবার অনেক লোকই আছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হল মাস্কের বুদ্ধি। অর্থনীতিতে জর্জর অবস্থা বহন করে চলেছে আমেরিকা। দিনে দিনে দেনা বাড়তে বাড়তে পরিমানটা এখন প্রায় ৩৫ লক্ষ কোটি ডলার। কয়েক বছরে ৮ লক্ষ কোটি ডলার খরচ হয়েছে যুদ্ধ করতে। ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা, ইজরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা, যুদ্ধ জোট NATO-কে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা -এসব তো চলেই আসছে। রাজা বদলাচ্ছে, কিন্তু এইগুলো বদলাচ্ছে না। যুদ্ধবাজ ট্রাম্প যুদ্ধই চাইবেন এটা স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতিই তাকে যেন বালিয়ে দিল একটু বেসুরো কথা- এত সাহায্য কাউকে করার দরকার নেই। পারলে অস্ত্র কিনে যুদ্ধ করবে। NATO-তে সবাইকে অর্থ দিতে হবে। শুধু আমেরিকাই দেবে -এই সব হবে না। আর অতীতের সব ভুলে সেটাই গিলে নিল আমেরিকার মানুষ। অন্তরে কিন্তু থেকে গেল আসল কথাটি- যা এতকাল ধরে বলে এসেছেন। যুদ্ধ – যুদ্ধই দরকার।

সমরাস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরাট জোট আছে আমেরিকায়। তারা কি তবে কমলা হ্যারিসের দিকে গিয়েছিল? আদপেই তা নয়। ট্রাম্প ইউক্রেন আর ইজরায়েলের কাছে যে শান্তির বার্তা শুনিয়েছিলেন, তার মধ্যে ছিল প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার মধ্য দিয়ে শান্তি অর্জনের বার্তা। অর্থাৎ যুদ্ধ হবে। অস্ত্রের ব্যবহার আগের চেয়ে আরো বেশি করে হবে। তবে সেই অস্ত্র আমেরিকার সমরাস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আরো বেশি করে কিনতে হবে। বার্তা গেল আমেরিকার মানুষদের কাছেও। যুদ্ধ তাহলে শেষ হবে, তা সে যেভাবেই হোক না কেন। আমাদের ঘরের ছেলেরা যারা যুদ্ধ করতে গেছে, তারা ঘরে ফিরে আসবে। সমরাস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে যুদ্ধের এই বার্তার ফলে ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলের দান আসতে থাকল। বোয়িং- ৮২,৭৬১ ডলার, লকহিড মার্টিন- ৬৯,৫৫২ ডলার, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স- ৬৭,৭৪২ ডলার, নরথ্রপ গ্রুম্মান- ৫২,০৩২ ডলার, রেথিয়ন- ৪৩,৩৮৩ ডলার, জেনারেল মোটরস- ৩২,৭০৭ ডলার ইত্যাদি একইভাবে অর্থ দিয়ে যেতে লাগল।  তবে বোয়িং, হ্যারিসকে এর থেকে বেশি অর্থ দিয়েছিল- ১,৩৭,৫২১ ডলার; সমরাস্ত্র ব্যবসায়ীদের বড় অংশটাই কিন্তু অর্থ দিয়েছে ট্রাম্পের তহবিলে। কেউ কেউ হ্যারিসকে আদৌ দেয়নি, কেউ বা আবার দুপক্ষকেই দিয়েছে।

সূত্র- AP/PTI

সেপ্টেম্বর’ ২০২৪ -এ AP ও PTI -এর একটি পরিবেশিত তথ্যে দেখা যায় হ্যারিসকে যে পাঁচটি সংস্থা সর্বোচ্চ দান করেছে, তার প্রথম তিনটি হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। তারা হল- গুগল- ১৪,৬৪,২৯২ ডলার, মাইক্রোসফট- ৭,৪৩,০৪৫ ডলার, অ্যাপল- ২,২৫,৩৯০ ডলার। এছাড়া ইন্সুরেন্সের দালাল ব্রাউন এন্ড ব্রাউন- ৩,২৪,৫২৮ ডলার এবং জনসন এন্ড জনসন (বড় অংশের শেয়ার আছে তিনটি হেড ফান্ডের- ভ্যানগার্ড, ব্ল্যাকরক, স্টেট স্ট্রিট)- ২,৩৯,৩৯৪ ডলার।

সুত্র- হিন্দুস্তান টাইমস

তথ্য প্রযুক্তির কর্পোরেটদের মধ্যে একমাত্র ইলন মাস্কই দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন ট্রাম্পের পাশে। এই জগতের অন্য কোনো কর্পোরেট এত দৃঢ়তার সাথে দাঁড়ায়নি ট্রাম্প কিংবা হ্যারিসের পাশে। যদিও তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইলন মাস্কের চেয়ে অনেক বেশি অর্থই দিয়েছেন তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে। কিন্তু কেন? এর দু’টি উত্তর আছে। একটি হল- ইলন মাস্কের পুঁজির চরিত্র, আর একটি হল বাইডেন প্রশাসনের দ্বারা তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবার প্রশ্নে বাধা পাবার প্রশ্নটি।

ইলন মাস্ক ক্রিপ্টো কারেন্সীর লোক। তিনি যেন এই ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ মানতে চান না এবং এর মাধ্যমেই তিনি তাঁর পুঁজির কলেবর বৃদ্ধি করতে চান। তিনি নিজে একটি ক্রিপ্টো কারেন্সী চালু করেছেন, তার নাম ‘ডোজ’ (DOGE) কয়েন। তিনি এর সীমাহীন – বাধাহীন গতি চান। মজার ব্যাপার দেখুন, ট্রাম্প একটা নতুন দপ্তর খুলেছেন তাঁর মন্ত্রিসভায়। তার নামও ‘ডোজ’ (DOGE)- ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্মেন্ট এফিসিয়েন্সি। এর কাজ হল সরকারি কাজে দক্ষতা বাড়ানো। আর এই দপ্তরের মন্ত্রী করা হয়েছে ইলন মাস্ককে। তিনি মোটামুটি পরিকল্পনা করে ফেলেছেন- সরকারি দপ্তরে গতি আনার জন্য আপাতত লক্ষাধিক পদ বিলুপ্ত করার। এই ভাবে মন্ত্রিসভায় ‘ডোজ’, আবার ক্রিপ্টো কারেন্সীতেও ডোজ। কিন্তু ডোজ কয়েন এখন রকেটের গতিতে ছুটতে শুরু করবে। কত দ্রুত ইলন মাস্কের সম্পদ বাড়বে ভাবতে পারছেন? বিট কয়েনের কথা ভাবুন। বাইডেন আসার আগের বছর একটি বিট কয়েনের দাম ছিল ৮০০০ ডলার। গত বছর ছিল ৪২ হাজার ডলার। আর ট্রাম্প জেতার সাথে সাথেই একটি বিট কয়েনের দাম ৯০,০০০ ডলার (১৫/১১/২০২৪ তারিখে)। অবস্থা এমন, এল সালভাদরে ট্রাম্পের বিজয়ে ক্রিপ্টো কারেন্সীতে বিনিয়োগকারীরা বিজয় মিছিল বের করে দিয়েছে। তারা ঠিকই চিনেছে। ট্রাম্প তো দৃশ্যমান, পিছনের লোকটি তো ইলন মাস্ক- ক্রিপ্টো কারেন্সীর আসল লোক।

সূত্র- দ্য সানডে এক্সপ্রেস

এ গেল একদিক। অপর দিকটি হল ব্যক্তিগতভাবে বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চলে আসছিল। নিউরালিংক আবিষ্কার করার ক্ষেত্রে মাস্ক বহু প্রাণীহত্যা করেছিলেন। তার জন্য তাঁর জরিমানা হয়েছিল। নিউরালিংক চর্চার উপর বাইডেন প্রশাসন একবার নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরে অবশ্য সেটা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। বহু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা আছে। তার মধ্যে একমাত্র গুগল-কে বাইডেন প্রশাসন নাসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ করেছিল। গুগলের প্রায় চিরশত্রু মাইক্রোসফট সেটা মেনে নিয়ে নির্বাচনের সময় হ্যারিসের পশে দাঁড়ালেও মাস্ক দৃঢ়ভাবেই দূরে সরে গেলেন। আরো একটি ঘটনা ছিল, সেটা হল- ক্রমশঃ ব্যাংকগুলি যখন একের পর এক দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছিল, তখন একটি ব্যাংক তিনি কিনে নিতে চেয়েছিলেন। FDIC রাজি হয়নি, কারণ FDIC দেখেছিল ব্যাংকটিকে পাঁচ বছর বন্ধ করে দিলে তারপর সে তার স্বাস্থ্য ফিরে পেতে পারে। এইসব নিয়ে বিরোধ এবং এখান থেকে ট্রাম্পের পাশে দৃঢ়ভাবে থাকা।

আরো একটি ভাববার বিষয় আছে। সেটি হল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে নিয়ে তাঁর উদ্দাম স্বপ্ন। তিনি চান স্পেস এক্স-কে নিয়ে মহাশূন্যে পর্যটন কেন্দ্র খুলতে, মিলিটারিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স পরিচালিত রোবট সৈন্য নিয়োগ করতে, তিনি চান গৃহকর্ত্রী-স্ত্রী ইত্যাদিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রয়োগ করতে- এমন নারী হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা গর্ভধারণ এবং সন্তানের জন্ম দেবে। ভাবুন কী ভাবনা! সমাজ, দেশ, বিশ্ব যদি রসাতলে যায় যাক, তবু এটাই তাঁর চাই। আর্টিফিশিয়াল প্রযুক্তির সৈন্য যদি নরমেধ যজ্ঞ করে তো করুক, স্বামী-স্ত্রীর প্রেমের সুসম্পর্ক যদি সমাজ থেকে উধাও হয়ে যায় তো যাক, তবু এটার জন্যই তিনি উন্মাদ। আর তাঁর সাঙাৎ ট্রাম্প ও ক্ষমতার জন্য ঠিক এতখানি উন্মাদনার পরিচয় আগে দিয়েছেন। কিন্তু মাস্কের সামনে কখনো কখনো বাধা হিসেবে দাঁড়িয়েছিল বাইডেনের প্রশাসন এবং একই সাথে রাষ্ট্রসংঘ। রাষ্ট্রসংঘ ইতিমধ্যেই কিছু নিয়ম তৈরি করেছে। ইলন মাস্কের এখন দরকার সেই নিষেধাজ্ঞার দস্তাবেজে আগুন লাগানো। আর তার জন্যই তার দরকার ক্ষমতার অলিন্দ। বিশেষ করে বিশ্বের তথাকথিত বৃহত্তর শক্তিধর দেশ আমেরিকার ক্ষমতার অলিন্দ। সেই জন্যই তাঁর বেপরোয়া ভাবে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়া এবং অবশেষে মন্ত্রিসভায় আসন পাওয়া। এখন দেখা যাক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়!

ইলন মাস্ক ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলে যা দিয়েছেন, তার চেয়েও ঢের বেশি দিয়েছেন আরো কেউ কেউ। ইলন মাস্ক দিয়েছেন প্রায় ১৩ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার, সেখানে বড় ব্যবসায়ী টিমোথি মেলন দিয়েছেন প্রায় ১৭ কোটি কুড়ি লক্ষ ডলার। এইরকম আরো কেউ কেউ আছেন। আমেরিকায় ক্রোনি ক্যাপিটালের রমরমা। নির্বাচনী তহবিলের দান আর পরবর্তী সময়ে তাদের সম্পদ বৃদ্ধির বহর দেখলেই সবটা বুঝতে পারা যায়। ২০২৪ এর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কর্পোরেটরা সবাই মিলে নির্বাচনী তহবিলের দান করেছে প্রায় ২০০০ কোটি ডলার। কেউ কেউ কেবল একপক্ষকে, আবার কেউবা দুপক্ষকেই দিয়েছে। যেমন ধরা যাক ট্রাম্পের ক্ষেত্রে উল্লেখিত দু’জন ছাড়াও দিয়েছেন সিটাডেল হেজফান্ডের কেনেথ গ্রিফিন প্রায় ১০ কোটি ১৪ লক্ষ ডলার, টিকটকের পেরেন্ট কোম্পানি বাইট ডান্স-এর কেনেথ গ্রিফিন প্রায় ৯ কোটি ৬১ লক্ষ ডলার, ব্ল্যাকস্টোনের স্টিফেন সোয়ার্জম্যান প্রায় ৩ কোটি ৯১ লক্ষ ডলার -এই রকম বহু ব্যক্তি বা সংস্থা আছে।

সূত্র- USnews

অপরদিকে কমলা হ্যারিসের নির্বাচনী তহবিলে দিয়েছেন ব্লুমবার্গ সংস্থার মাইকেল ব্লুমবার্গ দিয়েছেন প্রায় ৪ কোটি ৩৪ লক্ষ ডলার, ফেসবুকের মস্কোভিৎজ ডাস্টিন ৩ কোটি ৮৭ লক্ষ ডলার, রেনেসাঁ টেকনোলজিস (হেজফান্ড)-র সাইমন জেমস প্রায় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ ডলার- এরকম এখানেও বহু ব্যক্তি বা সংস্থা আছে।

এরা সবাই নির্বাচনে অর্থ ঢালেন, আর তারপরেই সুদে আসলে উসুল করে নেন। এখনই ইলন মাস্ক আর অন্যান্যদের অবস্থা দেখুন। এই ক’দিনে (৭ নভেম্বর’ ২০২৪) কয়েকজনের সম্পত্তি কেমন বেড়েছে লক্ষ্য করুন। ইলন মাস্ক- ১০.১%, লরি এলিসন- ৫.৪%, ওয়ারেন্ট বাফেট- 5.4%, লরি পেগ- ৩.৬%, জেফ বেজস- ৩.২%, বিল গেটস- ১.২%, স্টিম বামার- ২%;

সবথেকে লক্ষ্যণীয় উন্নতি অবশ্যই ইলন মাস্কের। তাঁর টেসলার শেয়ার এই ক’দিনে বেড়েছে ৩৯%, ফলে তাঁর সম্পদ বেড়েছে ৭০০০ কোটি ডলার। এর ভিত্তিতে তাঁর মোট সম্পদ ৩১,৪০০ কোটি ডলার। মাস্ক ট্যুইটার কিনেছিলেন ৪৪০০ কোটি ডলার দিয়ে। সম্পদ বৃদ্ধিতে এটা আগেই ছাপিয়ে গেছে। এখনো পড়ে আছে ইলন মাস্কের ১৭টি এজেন্সির নামে ১০০টিরও বেশি বরাত। তার মধ্যে একা ‘স্পেস এক্স’ -এর প্রায় কয়েকশো কোটি ডলারের চুক্তি হতে বাকি আছে। এই ক’দিনে শতাংশ বিচারে সম্পদ বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় নাম লরি এলিসন। বৃদ্ধি ৯০০০ কোটি ডলার। বলা যায় মোট বৃদ্ধিতে ইনিই প্রথম স্থানে। ভাবুন, পৃথিবীতে অন্তত ৩৭টি দেশ আছে, যাদের প্রত্যেকের জাতীয় আয় ইলন মাস্কের বর্ধিত সম্পদের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু এই লোকেরা কারা? এরা সবাই ক্রোনি ক্যাপিটালের লোক। শাসকদলের পিছনে অর্থ বিনিয়োগ করে, আর তারপর তাকে বাড়িয়ে আরো তুলে আনে। আমেরিকার রাজনৈতিক অর্থনীতিতে এটাই এখন শেষ এবং আসল কথা। যবে থেকে পুঁজিপতিদের রাজনৈতিক কার্যকলাপে দান করা ও অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তবে থেকেই যাত্রা শুরু হয়েছে ক্রোনি ক্যাপিটালের। তাই যেই জিতুক, চূড়ান্তভাবে আমেরিকায় জেতে ক্রোনি ক্যাপিটালই। ক্রোনি ক্যাপিটাল – দোস্তি পুঁজি। দোস্তি ভালো কথা, দোস্তিতে থাকে বন্ধুত্ব। একে বলতে পারেন সাঙাৎ পুঁজি। সাঙাৎ অর্থাৎ লুটেরাদের ভাগাভাগিকে ঘিরে বন্ধুত্ব।

সুত্রঃ CNBC, CBS নিউজ, নিউইয়র্ক টাইমস

এই সাঙাৎ পুঁজি কিন্তু জোর ঠেঙ্গানি খেয়েছে শ্রীলঙ্কায়। শ্রীলঙ্কায় বিরাজমান বুর্জোয়া দলগুলি সবাই সাঙাৎ পুঁজিতে আকন্ঠ ডুবে গিয়েছিল। ফলে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (২০২৪) চূড়ান্ত দফায় প্রায় ৫৬% ভোট পেয়ে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার জোটের জাতীয় বিমুক্তি পেরামুনা দলের অনুঢ়া কুমার দিশানায়ক জিতেছেন। জাতীয় বিমুক্তি পেরামুনা দলটি একটি ঘোষিত মার্কসবাদী দল। অথচ মাত্র চার বছর আগে দলটি পেয়েছিল মাত্র ৩% ভোট। পরবর্তী সময়ে ২২৫ টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার ১৫৯টি আসন পেয়ে দুই তৃতীয়াংশ আসন জয়লাভ করেছে। বিগত সংসদে তার আসন সংখ্যা ছিল মাত্র ৩; অপরদিকে রাজাপক্ষের দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরামুনা পেয়েছে মাত্র তিনটি আসন। বিগত সংসদে তার আসন সংখ্যা ছিল ১৪৫টি। বিগত সংসদে থাকা প্রধান বিরোধীপক্ষ দল সামাগি জন বালওয়েগ্য পেয়েছে ৪০টি আসন।

পুঁজির উদারীকরণের যুগে এমন বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল সম্ভবত একটিও নেই, যারা এখনো উচ্ছিষ্টভোগী হয়নি। তাই সমস্ত গণআন্দোলনে জনজীবনের অন্যান্য দাবিগুলির পাশাপাশি যদি সাঙাৎ পুঁজি ও তার উচ্ছিষ্টভোগী বুর্জোয়া দলগুলির স্বরূপ স্পষ্টভাবে জনজীবনের কষ্টের সঙ্গে সাযুজ্য ও সঙ্গতিপূর্ণভাবে তুলে ধরা যায়, তাহলে উগ্র দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল দলগুলো যারা প্রকারান্তরে উচ্ছিষ্টভোগীই, তারা তাদের বাক্‌জালে জনগণকে বিমোহিত করতে ব্যর্থ হবে এবং স্বাভাবিকভাবে বামপন্থা বেড়ে ওঠার জন্য তার সামনে বড় পরিসর দেখতে পাবে। আর তেমনটা না হলে আমেরিকার মতই অন্যান্য দেশের জনগণও একবার হাতির দোলায় (রিপাবলিকান পার্টি) আরেকবার গাধার দোলায় (ডেমোক্রেটিক পার্টি) দুলতে থাকবেন।

শেয়ার করুন