Site icon CPI(M)

The Struggle, The Call

Brigade 2025 Cover IV Amal Halder

অমল হালদার

২০ এপ্রিল শ্রমজীবী মানুষদের আহ্বানে ব্রিগেড সমাবেশ। প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে কল-কারখানা গ্রামে গঞ্জে ও শহরের বস্তি এলাকায় প্রচার শুরু হয়ে গেছে। মাটি যেভাবে তেতে উঠেছে তাতে একদিনের এই তাপ কোনোভাবেই গ্রাহ্যের মধ্যেই আসবে না। কয়েক লক্ষ মানুষ যে সমাবেশে আসছেন তা ইতিমধ্যেই টের পাওয়া যাচ্ছে। সংগঠনগুলির যৌথ কনভেনশন, দেওয়াল লিখন, প্রচারপত্র বিলি, গ্রুপ বৈঠক, পথসভার প্রস্তুতি ইত্যাদি কাজগুলি সম্পন্ন করতে সকল অংশের কর্মী বাহিনী অংশগ্রহণ করেছেন। শ্রমজীবীদের এই ঐতিহাসিক সভার সাক্ষী থাকতে চান সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষও। প্রতিটি বুথকে ব্রিগেড করার মতো চেহারা যাতে দেওয়া যায় সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।

সারাদেশে মানুষের কষ্ট প্রতিদিনই বাড়ছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খেটে খাওয়া মানুষ কিভাবে আগামী দিনে বেঁচে থাকবে সেটাই সব অংশের মানুষের উপলব্ধিতে আসছে না। জীবনের এই সত্যটা যাতে বুঝতে না পারে তার জন্য একটা ধূম্রজাল তৈরির চেষ্টা চলছেই। কেন্দ্রের বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনা, মার্কিন রাষ্ট্রপতি পদে পুনরায় ট্রাম্প আসার পর আমাদের দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব, হাতে পায়ে শিকল বেঁধে আমেরিকা থেকে ফেরত পাঠানো— এগুলির সঙ্গে বহু বিষয় আছে যা নিয়ে আমাদের বড় বড় প্রচার মাধ্যম কোনও আলোচনা করে না। প্রতিদিন টিভি চ্যানেলে অপ্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু নিয়ে তিক্ত তর্ক বিতর্ক দেখিয়ে আমাদের মনোযোগ সরিয়ে নিচ্ছে। বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আসলে কর্পোরেটদের এই মিডিয়া জনসাধারণের আলোচনার পরিসরকে হাইজ্যাক করে ফেলেছে। এই কারণেই চিন্তা, চেতনা মননশীলতা ও সচেতনতার জন্য বড় বড় টিভির প্রতি দৃষ্টি সরিয়ে ক্রমশ অনলাইন পডকাস্টের মতন মাধ্যমগুলির দিকে মানুষ ঝুঁকছেন। জাতপাত, ধর্মীয় ভাবাবেগ তৈরি করে কেউ কেউ আবার মুখোশের আড়ালে এমনভাবে বিষয়গুলি উপস্থাপিত করে তাতে অনেকের মনে হয় দেশে আর কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কিছু মানুষ তো আছেন সংসার জীবনের সমস্ত যন্ত্রণা ভুলে জাতপাত, ধর্মীয় বিভাজন নিয়ে নানা হুঙ্কার, কিছু ভুল তথ্য শুনে বছরের পর বছর তাদের তৈরি ফাঁদে পা গলাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হলো, এইভাবে কি বাঁচা যাবে? অতঃপর সন্তান বা ভবিষ্যৎ বংশধররা কিভাবে জীবনটা কাটাবেন সে সম্পর্কে আমার আপনারও দায় আছে। প্রতিদিন মাঠে ময়দানে কলকারখানায় যে লড়াইগুলো হচ্ছে তার সঙ্গে আপনার স্বার্থ গভীরভাবে যুক্ত। লড়াইয়ের মধ্যে আরও গভীর আত্মবিশ্বাস তৈরি করার জন্যই তো শ্রমজীবীদের এই বিশাল সমাবেশ।

সারা দেশে শ্রমিকদের জীবনে নেমে আসেছে এক গভীর অন্ধকার। শ্রমকোড বাতিল না হলে শ্রমিকরা বাঁচবে না। ছাঁটাই, কাজের ঘণ্টা বাড়ানো, ন্যূনতম মজুরির উপর আঘাত, সামাজিক প্রকল্প ছাঁটাই সহ একাধিক সমস্যায় দেশের শ্রমিক শ্রেণি জর্জরিত। বাউণ্ডুলে ছেলের মতো দেশের সমস্ত রাষ্ট্রয়াত্ত শিল্প জলের দরে বেচে দেওয়া হচ্ছে। মোদীজি আম্বানি আদানি সহ অন্যান্য কর্পোরেট সংস্থার জন্য বিপুল পরিমাণ ঋণ মকুব করছেন। অথচ গরিব মধ্যবিত্ত মানুষের ঋণ মকুবের জন্য দাবি উঠলে ওদের গায়ে জ্বালা ধরে। জিনিসপত্রের দাম হুহু করে বাড়ছে, দ্রুত কমছে টাকার দাম। বাজারে ৫০০ টাকা নিয়ে গেলে বাড়ি ফিরে আসার পয়সা থাকে না। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, নগরে গিগ ওয়ার্কারদের সংখ্যা বাড়ছে। বেকারত্বের জ্বালায় কঠোর পরিশ্রমী কিছু যুবক সারাদিন-রাত ছুটে বেড়াচ্ছেন, কিন্তু এদের কতটুকু আয় হয়? আসলে সংসার প্রতিপালনের জন্য এই কাজ করতে বাধ্য করছে। শিক্ষিত এই যুবকদের কাজের কোনও নিরাপত্তা নেই, অবসরকালীন ভাতা নেই। শোষণের মাত্রা যে পর্যায়ে গেছে, ভাবলেও গা শিউরে ওঠে। শহরের মধ্যে বস্তিবাসীদের সকলকেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কার্যত বেঁচে থাকতে হয়। তাদের বসবাসের অধিকার সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে খেতমজুরের কাজ দ্রুতহারে কমছে। কৃষিতে পুঁজি বিনিয়োগ বাড়ছে, স্বাভাবিকভাবে মাঠে কাজ কমছে। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। চুরি করল তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি, এখন সাজা খাটছে গ্রামের গরিবরা। কেন্দ্রীয় সরকার চোরদের ধরতে কোনও উদ্যোগ না নিয়ে ১০০ দিনের কাজের টাকাটাই বন্ধ করে দিল। কি নির্লজ্জ এদের ভূমিকা! রাজ্য সরকার এই নিয়ে অনেক হম্বিতম্বি করে জানালো আমরাই কাজের ব্যবস্থা করব, সে গুড়ে বালি। সবই হচ্ছে কাগজে কলমে, যতটুকু পাচ্ছে ওদের কিছু তাঁবেদার। কিছু কাজ না পেয়ে দলে দলে পাড়ি দিচ্ছে ভিন রাজ্যে। কিছু গ্রামের সংখ্যালঘু এলাকায় দেখা যাচ্ছে মানুষের অভাব এত বাড়ছে যে নবম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির প্রথম হওয়া ছাত্রটাও শ্রমিক হিসাবে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বামফ্রন্টের আমলে ভূমিহীনদের জন্য পাট্টা, বর্গা রেকর্ড যা দিয়ে আজও কিছু মানুষ বেঁচে আছে, সেই পাট্টা রেকর্ড রাতারাতি বদলে ফেলা হচ্ছে। এইসব পাট্টা জমি পুরানো জোতদারদের কবলে চলে যাচ্ছে। স্পষ্টত রাজ্য সরকারের বদান্যতায় এইসব চলছে। এই বিষয়গুলি বেশি প্রচারে আনতে হবে।

১৯৯১ সালের পর তিন দশকে কৃষি সঙ্কটের সঙ্গে মিশে গেছে কৃষির সাথে যুক্ত একটা বৃহত্তর সমাজ। বেকারি, জল-স্বাস্থ্য, শিক্ষার সঙ্কট, পরিযায়ী শ্রমিক সঙ্কট সহ অনেক কিছু। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা। জাতীয় অপরাধ ব্যুরোর গণনাপদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণ গলদের মধ্যেও দেখা গেছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ৪ লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গে এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। এই রাজ্যে মাত্র একটি জেলাতেই ২২১ জন কৃষক এক বছরে আত্মহত্যা করেন। সেই তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। আসলে কৃষিতে সঙ্কটের চেহারা প্রতিদিনই ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে। একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কয়েক বৎসর আগেও বলতেন, এই রাজ্যের কৃষকদের আয় নাকি তিন গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে আয়ের ঠেলায় কৃষক নিজের জমিতে চাষ করা ধীরে ধীরে ছেড়ে দিচ্ছেন। আমন, বোরো সব ক্ষেত্রেই জমি চাষ করছেন গ্রামের কিছু পরিশ্রমী শ্রমজীবী মানুষ। চার পাঁচ বস্তা ধানের বিনিময়ে প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে চাষ করছেন। ঝুঁকি বলা হচ্ছে এই কারণে, কোনোরকম প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে তার কপালে এক পয়সাও জোটে না। সমস্ত ফসল নষ্ট হবার পর ছেলে ভোলানোর জন্য যে টাকাটা দেয় সরকার, সেটাও জমির মালিক পায়। প্রকৃত চাষি চোখের জল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে। এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। এই ধরনের শ্রমজীবীদের আত্মহত্যাও কম নেই।

তৃণমূল সরকারের আমলে উৎপাদন খরচ ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে কিন্তু ফসলের দাম নেই। বিশাল ঢক্কানিনাদ করে ধানের দাম প্রত্যেক বৎসর সরকার ঘোষণা করে, কিন্তু প্রকৃত চাষিরা তা পায় না। এ বছরই ২৩২০ টাকা কুইন্টাল প্রতি ধানের দাম ঘোষিত হলো, কিন্তু চাষি পেল ২০০০ টাকা বা তারও কম। আসলে তৃণমূল আশ্রিত ফোড়েরাজ তৈরি হয়েছে, এরাই কম পয়সায় ধান বিক্রি করতে বাধ্য করে। এক কুইন্টাল ধান বিক্রির জন্য কাগজপত্র তার উপরে ঢলতা বা বোলন, মিলের সময় নির্ধারণ সব কিছুই ঘটে ফোড়েদের বাড়বাড়ন্তের স্বার্থে। এবার আলু অবস্থা খুবই খারাপ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আলুর অনেকটাই নষ্ট হলো। দু’দিন আগে বাঁকুড়ার জয়পুর, কোতলপুর সহ বিভিন্ন আলু এলাকায় শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। শুধু আলু নয় পান, ফুল সহ সবজি চাষ মেদিনীপুরের বহু জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। সংযুক্ত কিষান মোর্চার আহ্বানে ২৮ মার্চ আলুর দাম ১৩০০ টাকা কুইন্টালের দাবিতে রাস্তা অবরোধ হলো, এবারই দেখা গেল বহু চাষি এই অবরোধে অংশ নিয়েছেন। এই আন্দোলন সত্ত্বেও সরকার কুইন্টাল প্রতি ৯০০ টাকার বেশি দিতে রাজি নয়। সরকার এই ধরনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে খুবই অভ্যস্ত, কারণ ৯০০ টাকাতেও আলু কেনার জন্য এখনো তাদের দেখা যাচ্ছে না। আলু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হিমঘরে ঢুকছে বটে, কি হবে ভবিষ্যৎ বলা যাচ্ছে না। পশ্চিমবাংলার পাট চাষ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিগত বৎসরে চাষিদের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে। এক কুইন্টাল পাট উৎপাদনে নয় হাজার টাকা খরচ হয়, সেখানে বিক্রি হয়েছে ৩৭০০ থেকে ৪০০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল। কে করবে পাট চাষ? এর ফলে চটকলগুলিতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এই সময়ে সবজির দাম অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছেন। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যা টো, বেগুন কয়েকদিন আগে কার্যত দু’টাকা-তিনটাকায় বিক্রি হয়েছে। একে সবজি চাষিরা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসল নষ্ট হলে এক পয়সাও পান না, তার উপর অগ্নিমূল্য সার, বীজ, কীটনাশক সংগ্রহ করে ফসল তোলার পর দাম না পেলে কি অবস্থা হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

আসলে এই রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গের কৃষি উৎপাদন তলানিতে পৌঁছে যাচ্ছে। বামফ্রন্টের শেষ সময়ে, ২০১০-১১ সালে গোটা দেশে মোট ধান উৎপাদনের ১৪ শতাংশের মতো পশ্চিমবঙ্গে হতো । ২০২৩-২৪ সালে তা নেমে এসেছে ১২ শতাংশের নিচে। আসলে জাতীয় কৃষিক্ষেত্রের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কৃষিক্ষেত্রের বৃদ্ধির হার দীর্ঘ সময় ধরে কম থাকার ফলে সর্বভারতীয় স্তরে মোট কৃষি উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গের অবদান কমতে থেকেছে। মনে রাখা দরকার, বামফ্রন্ট আমলে পশ্চিমবঙ্গ ধান, চাল এবং শাকসবজি উৎপাদনে দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ থেকে উত্তর প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার পর দেশের মধ্যে তৃতীয় স্থানে চলে এসেছে আমাদের রাজ্য। পাঞ্জাব আমাদের রাজ্যের তুলনায় খারিফ মরশুমে বেশি ধান উৎপাদন করেছে, অর্থাৎ ১ নম্বর থেকে ৪ নম্বরে যেতে বেশি দেরি নেই। ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রেও লাগাতার পিছু হটছে। সর্বভারতীয় স্তরে ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ ২০১৪-১৫ সালেও ছিল ৫ শতাংশের বেশি ২০২৪ সালে তা কমে ৩.২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। শাকসবজি উৎপাদনেও অন্য রাজ্য এগিয়ে।

আসলে ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পে কৃষককে কিছু টাকা দিলে কৃষির উন্নতি হয় না। উন্নত বীজ, ভেজালমুক্ত সার, বিদ্যুৎ সহ উৎপাদনের উপকরণ সস্তায় পাওয়ায় জন্য সরকারের নজর দেওয়া, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে ফোড়েরাজ খতম করা, কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা সহ এই ব্যবস্থাগুলি ক্রমশ কৃষিক্ষেত্র থেকে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে অন্নদাতা কৃষকদের যন্ত্রণা প্রতিদিনই বাড়ছে। ফলে অন্যান্য অংশের মানুষের যন্ত্রণাও বাড়ছে। আমাদের রাজ্যে প্রধান খাদ্যশস্য ধানের উৎপাদন যদি এইভাবে কমতে শুরু করে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে একদিন তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব থেকে এই রাজ্যে চাল আমদানি না হলে ভাতের হাঁড়ি চড়বে না। এই ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হলে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। ধান ও সবজির মতো দুধ ও মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির গতিও শ্লথ হয়ে গেছে। ২০১১ সালের পর সেচ ব্যবস্থার অন্তর্গত কৃষি জমির পরিমাণ সারা ভারতের নিরিখে কার্যত কমেছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ভারতের সেচ ব্যবস্থার অন্তর্গত মোট কৃষি জমিতে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ ২০১৩-১৪ সালে ছিল ৪.৬ শতাংশ ২০২২-২৩ সালে তা কমে হয়েছে ৩.৯ শতাংশ। ক্ষুদ্র সেচের অগ্রগতিও থমকে গেছে। এরপর যদি প্রিপেড স্মার্ট মিটার চালু হয় শ্যালো, সাবমারসিবল চালানো কঠিন হবে। তখন আর এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হবে।

রাজ্যের কৃষি ব্যবস্থা যখন বিপন্ন তখন গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো কেন্দ্রীয় সরকার নতুন কৃষি আইন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সংযুক্ত কিষান মোর্চা বলেছে কৃষি বিপণনের নতুন জাতীয় কাঠামো হচ্ছে প্রত্যাখ্যাত ও বাতিল হওয়া তিন কালা কৃষি আইনের একটি বিপজ্জনক সংস্করণ। মোদী সরকার একটা বড় পরীক্ষার সামনে রাজ্যগুলোকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে কারণ, বিধানসভাগুলিকে এই নয়া বিপণন নীতি প্রত্যাখ্যান করতে হবে। রাজ্যের কৃষক দরদি নমুনা তখন বোঝা যাবে। এই আইনের ফলে রাজ্যের উৎপাদন, বিপণন সবই যাবে কর্পোরেটের হাতে। এই আইন কার্যকর হলে ৩ ভাগের ২ ভাগ কৃষক উৎপাদন ব্যবস্থা থেকে ছিটকে পড়বেন। ১৪০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এই কৃষক নিজের জমিতেই তখন কৃষিমজুর হিসাবে গতর খাটবেন, চাষ করবে কর্পোরেট বাহিনী। নতুন আইনে কৃষি পণ্যের পাইকারি বাজার ও সমস্ত গ্রামীণ হাটগুলিকে কর্পোরেট পরিচালনা করবে। বলা হচ্ছে এইগুলি চলবে পিপিপি মডেলে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পিপিপি মডেলের পরিণতি আমরা দেখছি, এরপর কৃষি ক্ষেত্রে তা হলে কী পরিণতি হবে, তা এখন থেকেই ভাবতে হবে।

দেশের রাষ্ট্রয়ত্ত কারখানা বিক্রি, শ্রমিকদের জন্য সর্বনাশা শ্রমকোড, রেগায় ২০০ দিন কাজ, ৬০০ টাকা মজুরি, আবাস যোজনার প্রকৃত প্রাপকদের বাড়ি, বস্তিবাসীদের বাসস্থানের অধিকার, কৃষকের ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্য, মহিলা নিরাপত্তা, আর জি করের ঘটনার ন্যায্য বিচার ইত্যাদি দাবি নিয়ে প্রতিদিনই এই রাজ্যে চলছে আন্দোলন। কথায় আছে পেটের জ্বালা বড় জ্বালা, এটাকে ভুলিয়ে দিতেই পাতা হচ্ছে নানা ফাঁদ। আপনার যা ধর্ম তা পালন করুন। কিন্তু ভণ্ডামি হলো ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে জীবনের সব সমস্যা ভুলিয়ে দেবার অবিরাম প্রয়াস। এরসাথে আপনাকে ভুলতে হবে নদী ভাঙন, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি। প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসলে বিদ্যুতের দাম আরও বাড়বে তা ভুলতে হবে, জিনিসপত্রের দাম, আপনার পাট্টা, বর্গা রেকর্ড কেড়ে নেওয়াটাও ভুলতে হবে। বন জঙ্গল সাফ করে পরিবেশ ধ্বংস আপনাকে ভুলতে হবে। কৃষিতে নিয়মিত ক্ষতি, সন্তানের লেখাপড়া, চাকরি, মেয়ের নিরাপত্তা এসবই ভুলতে হবে – না, এইভাবে বাঁচা সম্ভব নয়। তাই বাঁচার জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে। এই আন্দোলন কয়েকজন শ্রমিক, কৃষক বা খেতমজুরদের আন্দোলন নয়— এই দাবিগুলি সকল মানুষের। আপনার এই গর্জন ওদের হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দেবে। বাধ্য করতে হবে শাসকদের পিছু হটতে, রক্ষা করতে কৃষি ও কৃষককে। তাই চলুন ২০ এপ্রিল বিকাল ৩ টায় ব্রিগেড সমাবেশে।

শেয়ার করুন