"শুধু কলকাতা কেন্দ্রিক নয়, গ্রাম ও মফস্বলেও সমান গুরুত্ব দিন" -- শমীক লাহিড়ী

২২ মার্চ ২০২০

*আবেদন* বিশেষজ্ঞদের কথা থেকে যা বোঝা যাচ্ছে -

*আগামী ৭/১০ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।*

১. এই সময়ে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ রাখতেই হবে।

২. একান্ত বেরোতে হলে, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে এবং বাড়ি ফিরেই হাত-পা ধুয়ে নিতে হবে সময় নিয়ে ভালো করে ঘষে সাবান দিয়ে।

৩. ঘর এবং বাড়ির চারপাশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

৪. যেখানে-সেখানে থুতু-কাফ ফেলবেন না। পান-গুটকা-খৈনি খেয়ে থুতু ফেলবেন না। এটা অপরাধ। এই প্রশ্নে প্রশাসনকে কঠোর হতেই হবে।

৫. জ্বর সর্দ্দি কাশি হলে সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।

৬. গুজব বা আতঙ্ক ছড়াবেন না, কান দেবেন না।

৭. বিদেশ বা বাইরের রাজ্য থেকে কেউ আসলে উত্তেজনা না ছড়িয়ে তিনি যাতে স্থানীয় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তার দেখান (শরীর খারাপ না হলেও) সেই পরামর্শ দিন।

৮. বস্তি-ঘন বসতিপূর্ণ পাড়াগুলোকে পরিস্কার রাখুন। স্থানীয় প্রশাসন যাতে প্রতিদিন ব্লিচিং পাউডার ছড়ায়, সেই আবেদন প্রশাসনকে জানান।

৯. সব রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধভাবে সচেতনতা ছাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে যাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী সব মানুষ চলেন। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে এগিয়ে আসুন।

*কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন*

১. বিদেশ থেকে এই ভাইরাস আসছে এটা স্পষ্ট। অনেক দেরী হয়ে গেছে, এখনই বিদেশ থেকে মানুষের আসা বন্ধ হোক।

২. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা তৈরী করা আবশ্যিক। এই সময়ে দেশের শ্রমজীবী মানুষের পরিবারের আর্থিক ও খাবারের দায়ভার নিক সরকার। এর জন্য এখনই তৈরী করা হোক বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ।

৩. পর্যাপ্ত ওষুধ, মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থায়ী হাসপাতাল ও কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র তৈরী করুক রাজ্য সরকারগুলির সাথে যৌথভাবে।

৪. ১৪/১৬ ঘন্টার বা একদিনের লড়াই এটা নয়, বেশ অনেকদিন লাগবে এই সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই-এ। এ সম্পর্কে ভুল বার্তা দেওয়া হবে আত্মহত্যার সামিল। দেশের নেতা-মন্ত্রীদের বিজ্ঞানকেই ভরসা করে এই কাজ করতে হবে।

*রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন*

১. অবিলম্বে শহর গ্রাম সর্বত্র আশা, স্বাস্থ্য কর্মী, আই.সি.ডি.এস সহ সব কমিউনিটি ওয়ার্কারদের নামিয়ে বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে অন্য রাজ্য থেকে আগতদের চিহ্নিত করা এবং অন্যান্যদের সচেতন করার কাজ শুরু করা হোক। অনেক দেরী হয়ে গেছে।

২. গ্রাম-শহরের সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডাক্তারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হোক। অনেক জায়গায় পাওয়া যাচ্ছে না। জেলা হাসপাতালগুলোতে এই অসুখে আক্রান্তদের এবং সন্দেহজনক রুগীদের পরীক্ষা ও চিকিৎসার পরিকাঠামো অবিলম্বে তৈরী করা দরকার। ইতিমধ্যেই অনেক দেরী হয়ে গেছে।

৩. গ্রামে ও মফস্বল শহরের বাসস্থানের এলাকাগুলো জঞ্জালমুক্ত রাখা ও পর্যাপ্ত ব্লিচিং পাউডার নিয়মিত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। পঞ্চায়েত ও পৌরসভা গুলি এই বিষয়ে যাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হোক। এই কাজ এখনও শুরু হয়নি পূর্ণদ্যোমে।

৪. রাজ্য সরকার গণ পরিবহন ব্যবস্থার চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ আনুক যাতে মানুষের মধ্যে স্থানগত দূরত্ব বজায় রাখা যায়।

৫. কলকারখানা বন্ধ হলে সব শ্রমিকদের মজুরী দেওয়ার দায়িত্ব নিক রাজ্য সরকার। অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণের প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক। কারণ এই সব মানুষদের কোনও রোজগার এই সময়ে থাকবে না।

৬. শুধু বিপিএল কার্ড হোল্ডার দের নয়, সব RSKY 2 রেশন কার্ড হোল্ডারদের জন্যও বিনামূল্যে খাদ্যের ব্যবস্থা করা হোক।

৮. পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকে আগতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সীমান্তেই করার ব্যবস্থা করা হোক এবং দূরপাল্লার ট্রেণে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হাওড়া, শিয়ালদহ, কলকাতা, সাঁতরাগাছি ইত্যাদি স্টেশনে করা হোক।

*যুদ্ধটা শুধু কলকাতা বাঁচানোর জন্য নয়, গ্রাম মফস্বল শহরেও সমান গুরুত্ব দিয়েই কাজ করতে হবে। এখনও কাজের বেশীরভাগটাই দুঃখজনকভাবে সীমাবদ্ধ আছে কলকাতা শহরে। আসুন সবাই সামিল হই এই যুদ্ধে।*
শেয়ার করুন

উত্তর দিন