Site icon CPI(M)

Terrible danger forecast : Amiya Patra

২৮ এপ্রিল ২০২০

সারা দুনিয়া লকডাউনে স্তব্ধ। গুজব ও করোনা আতঙ্কে দিশাহারা কোটি কোটি মানুষ। বিশ্বজুড়ে এই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে যুদ্ধকালীন তৎপরতা চলছে। এ যুদ্ধে সরকারের ভুমিকা মূখ্য হলেও সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া এই লড়াই সফল হতে পারেনা। জনগণের সহযোগিতায় খামতি নেই। প্রদীপ জ্বালিয়ে বা থালা বাজিয়ে তারা বুঝিয়ে দিয়েছেন এ লড়াইয়ে তারা আছেন। সরকারের সাথে, সরকারের পাশেই আছেন। যারা হুজুগে মাতেন নি তারাও সরকারের সাথে আছেন। এই সংকটে সাথে থাকাটাই দস্তুর। এটা এক বিপজ্জনক ভাইরাসের বিরুদ্ধে মানব প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই- এ লড়াই একা একা লড়া যায়না। ভাষা, জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায়, দল, মত, পথ নির্বিশেষে সবাই সমানভাবে বিপদগ্রস্থ।


রাজনৈতিক সংকীর্নতা এ লড়াইকে দূর্বল এমনকি অর্থহীন করে। যদিও মিডিয়ার প্রচারে মানুষ এটাই দেখছেন এই বিপর্যস্ত পরিস্থিতিতে লড়ে যাচ্ছেন একজনই। এমনকি তার সাথে তার মন্ত্রীসভার সহকর্মীবন্ধুদেরও সচরাচর দেখা যাচ্ছেনা। কেন এমন ছবি দেখা যাচ্ছে? সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা খরচ করে আপনাকে দেখানো হচ্ছে, তাই দেখছেন। বোঝা কঠিন এটা বিশ্বজোড়া বিপদের বিরুদ্ধে আমাদের বাঁচার লড়াই না মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষয়িষ্ণু ইমেজ পুণনির্মানের প্রজেক্ট। আগে খবরের ফাঁকে ফাঁকে বিজ্ঞাপন দেখা যেত এখন বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ব্যক্তিস্তুতি এবং কদাচিৎ খবর প্রচারিত হয়। সে খবরের কোন মাথামুণ্ডু নেই।


সেদিন জানিয়েছিলেন, যে রাজ্যে ৫৮ টি কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছে, যথেষ্ট সংখ্যায় ভেন্টিলেটারও আমাদের রাজ্যে আছে। গতকাল রাজ্যবাসী কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে সরকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে। তাই করোনা পজিটিভ রোগী যাদের আলাদা ঘর আছে, তারা বাড়িতেই আইসোলেশনে থাকবেন। লাখ লাখ রোগীর দায়িত্ব সরকার নিতে পারবেনা। তাহলে সেই ৬৮ কোভিড হাসপাতালের কি হল? করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কখনো ৭ তো পরমুহুর্তে ৩, কখনো ১৫ তো পরেরদিন(১৮+৩৯) ৫৭ এই লুকোচুরি ছাড়া কোন কাজ যুদ্ধকালীন তৎপরতায় হচ্ছে?


আমরা সবে নদীতে নেমেছি, মাঝ দরিয়ার গভীরতা বা ঘুর্নির বিপদ এখনও দেখিনি। সরকারের থেকে আরও দায়িত্বশীল ভুমিকা আমরা প্রত্যাশা করি।



আমরা সাথে আছি। রিলিফে আছি, রক্তদানে আছি, লকডাউনে আছি, মানুষের দাবিতে পথে আছি, সরকারের উদাসীনতা, উপেক্ষার প্রতিবাদেও আছি। পরিতাপের বিষয় হল- এই সংক্রমণ প্রতিরোধের সংগ্রামে সকলের অংশগ্রহণের পরিবেশ অন্তত এরাজ্যে নেই।



এই সংক্রমণের ব্যপ্তি এবং তা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপের ফল বিশ্বের সব দেশে একরকম নয়। আমাদের দেশেও বিভিন্ন রাজ্যে এই সংক্রমণ প্রতিরোধের অভিজ্ঞতায় ভিন্নতা আছে। এর অন্যতম কারণ সরকারের নীতি,দৃষ্টিভঙ্গি এবং উদ্যোগের তারতম্য। আমাদের রাজ্যে নমুনা পরীক্ষা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন, ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী দের সংক্রমণ সর্বোচ্চ। ভাইরাস সংক্রমণের তথ্যের স্বচ্ছতা নেই। নীরব সংক্রমণের বিপদ থেকে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও জনগণকে যুক্ত করে একটি সুসমন্বিত ও সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রশ্নে সরকারের কোন সদিচ্ছা নেই। আমরা একা নই, আমরা মিলিতভাবে লড়ছি, আমাদের সংগে সরকার আছে যে সরকার খাদ্য, চিকিৎসা, সুরক্ষার সব দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে – এই ইতিবাচক মনোভাব জনগণের মধ্যে গড়ে ওঠেনি।
সরকারের কাজ, তার ভাবমুর্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এই মানসিকতা গড়ে তুলতে পারে। যেটা কেরালায় সম্ভব হয়েছে সেটা এ রাজ্যে কার্যকর না হওয়ার কারণ অনুধাবন করতে হবে। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে প্রতিটি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছেন, সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রতিটি সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে জনগণ ও প্রশাসনকে সাথে নিয়ে দিবারাত্রি কাজ করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কখনো বাজারে গোল্লা আঁকছেন বা ঝাটা সেনিটাইজ করার ডেমো দিচ্ছেন এবং জনগণের টাকায় বিজ্ঞাপনের আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছেন। মিডিয়া ভাইরাসের পিঠে চড়ে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা করার চেষ্টার ফল মর্মান্তিক হতে পারে । আসন্ন বিপদের দিনগুলি গভীর দুশ্চিন্তার বিষয়।



রাজ্যে কাজ নেই, অন্য রাজ্যের তুলনায় মজুরি কম কিম্বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে , জীবন জীবিকা বিপন্ন তাই কমবেশি প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ভিন রাজ্যে কাজ করে বেঁচে আছেন। এদের সামনে এছাড়া অন্য কোন বিকল্প ছিলনা । এদের এই মুহূর্তের চাহিদা ১০০০ টাকার ‘স্নেহেরপরশ’ নয়, এরা নিজ ভুমে ফিরতে চায়। এই দুর্গত মানুষজন রাজ্য সরকারের সদর্থক ভুমিকা দেখতে চায়। তাছাড়া ‘পরশ’ কতটা কার্যকর হবে সেটা ‘প্রচেষ্টা’-র হাল দেখলেই বোঝা যায়। কে ভাবছে এই শ্রমজীবী মানুষের যন্ত্রণা বা দূর্ভোগ লাঘবের কথা? বামপন্থীরা লকডাউনের শুরু থেকেই এদের খাদ্য, আশ্রয়, চিকিৎসা এবং নিজ নিজ বাড়িতে ফেরার ব্যবস্থার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট দাবি জানিয়ে আসছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? তিনি এখন মকফাইটে ব্যস্ত। নবান্ন বনাম রাজভবন কে কত পাতার চিঠি লিখতে পারেন- এই অনুশীলনীতে কার উপকার হচ্ছে ? ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এই চিঠি উপাখ্যান কি গতি সঞ্চার করছে? এটা কি খুনশুটি করার উপযুক্ত সময়? এক্ষেত্রে উভয়ের স্বার্থ হল- প্রচারের আলোয় থাকা এবং আসল সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানো।



মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন রাজ্যে রেশন নিয়ে কেমন কাড়াকাড়ি চলছে। ব্লকের ডিস্ট্রিবিউটারের থেকে কোথাও ৩০ কুইন্টাল কোথাও ৫০ কুইন্টাল চাল জোরপূর্বক টি এম সি-র মাস্তান বাহিনী দখল নিয়ে অনুপ্রেরণার মোড়কে দলীয়ভাবে বিলি করছে। ফলে এম আর ডিলার তার প্রাপ্য রেশন সামগ্রী অনেকক্ষেত্রেই পাচ্ছেন না। স্বভাবতই গ্রাহকদের প্রাপ্যে কোপ পরছে। খাদ্য সচিবকে সরিয়ে দিলে কি চুরি বন্ধ হবে? দূর্নীতি যথারীতি চলছেই। তৃণমূল থাকবে আর দূর্নীতি থাকবে না এমনটা কি সম্ভব? যাদের রেশনকার্ড নেই তাদের কুপন সব দলীয় কর্মীদের পকেটে ঘুরছে। মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন রাজ্যের বেশিরভাগ পঞ্চায়েত গুণ্ডামি করে দখল করা হয়েছে। এরা কেউ প্রকৃত অর্থে জনপ্রতিনিধি নয়। এদের থেকে নিরপেক্ষতা বা দায়বদ্ধতা আশা করা যায়না। মানুষের ক্ষুধার অন্ন নিয়ে এই লুটপাট বন্ধ করা সরকারের কাজ, মিডিয়া এবং পুলিশ বেষ্টনীসহ বাজার গরম করা কাজ নয়। নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম তরতর করে বেড়ে চলেছে। লাগামহীন কালোবাজারির কবলে সাধারণ মানুষ। বাড়ছে মজুতদারি। সরকারের কোন ভূমিকা নেই।


সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার হাল কি দাঁড়িয়েছে সেটাও মুখ্যমন্ত্রী আমার,আপনার থেকে ভালোই জানেন। করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী ছাড়াও অন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মীদের গ্লাভস, মাস্ক, পিপিই অপর্যাপ্ত, প্রতিদিন বিক্ষোভ, আসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে। উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়া এরা কিভাবে কাজ করবে? স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা তুলানায় পশ্চিমবাংলায় বেশি। এদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব থাকলে সামনের ভয়ঙ্কর দিনে কি পরিনতি হবে? তিন-সপ্তাহ আগের ঘটনা।


ইতালিতে করোনা ভাইরাসের ছোবলে মৃত্যু মিছিল চলছে। হাসপাতালে বেড সংকুলান হচ্ছেনা। চাহিদার তুলনায় ভেন্টিলেটর যথেষ্টই কম। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীর দের পক্ষে এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর বিচারে বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ইতালি অন্যতম। পরস্থিতির চাপে সরকার,স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেসামাল। তাই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হল বয়স্ক এবং সংকটাপন্নদের ভর্তি করা হবেনা। ওদের প্রায় বিনা চিকিৎসায় মরতে হয়েছে। অতিমারি এরকমই অমানবিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।
সরকারের খেয়াল রাখা উচিত মহামারির গতি অতিমারির দিকে। এখন সংক্রমণের আতঙ্ক দেখছি। যত দিন যাবে সংক্রমণ ও অনাহার- দুই বিপদই তীব্র হবে। সে বিপদের মোকাবিলা ক্লাবে টাকা ঢেলে বা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করে সম্ভব হবে না।



আমাদের চিকিৎসক,স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, প্রশাসনিক আধিকারিকদের দক্ষতার উপর রাজ্যবাসীর ভরসা আছে। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দরকার। রাজ্যের শাসক দল সেই প্রয়াসে প্রধান বাধা। মাননীয় মূখ্যমন্ত্রীর সামনে দুটি পথ খোলা- সংকীর্ন রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে সকলকে নিয়ে চলার চেষ্টা করুন নতুবা কিছুদিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে যান। আপনারও বিশ্রাম হবে , রাজ্যটাও বাঁচবে।



ছবি: Google Image

শেয়ার করুন