সুদীপ্ত বোস
করোনার মত বিশ্বব্যাপী মহামারীর ঘটনায় তথ্য ধামাচাপা দেওয়া বা মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা ভুয়ো খবর প্রচার করা খুবই গুরুতর অপরাধ এবং তা শাস্তিযোগ্য…
কিন্তু এটা কি কেবলই সংবাদ মাধ্যমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? সরকার যদি তথ্য লুকোয়, ভ্রান্ত তথ্য দেয়, তবে?
গণশক্তি কে মামলার হুমকি, এফ আই আর'র ভয় দেখিয়ে আপনার রাজনৈতিক তৃপ্তি মিলতে পারে, করোনা মোকাবিলার লড়াইয়ে তাতে কোনো লাভ হবে না…
গণশক্তি মিথ্যা, ভুয়ো খবরের সংক্রমণ ছড়ানোর কাগজ নয়..
আপনিও জানেন ভালো করেই.. ন বছর ধরে সরকারী বিজ্ঞাপন বন্ধ রেখেছেন হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও! তাতে কি হয়েছে? আত্মসমর্পণ? কমিউনিস্টরা ঘৃণা করে এই শব্দটিকে…সংকোচের বিহ্বলতা আমাদের জন্য নয়…
গণশক্তি মৃতের সংখ্যা যা লিখেছে অর্থাৎ মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৩০ জন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হয়ছে, তা দায়িত্ব নিয়েই লিখেছে……যদি দেখা হয় আদালতে, তবে সেখানে আরো স্পষ্ট হবে…..
রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের করোনা সম্পর্কিত বুলেটিন ও তথ্যের মধ্যে কেন বিস্তর ফারাক, তার দায় গণশক্তির নয়।
গত ৩১ মার্চ রাত আটটায় সরকারি বুলেটিনে জানানো হলো রাজ্যে হোম কোয়ারান্টিনে থাকা মানুষের সংখ্যা দেড় লক্ষ। গণশক্তি সহ অন্য সংবাদমাধ্যম সেই তথ্য প্রকাশ করল। এরপর রাত এগারোটা নাগাদ ফের আরেকটি বুলেটিন প্রকাশ করল সরকার, যা এর আগে কখনও হয়নি, তাতে সংখ্যা দাঁড়ালো ৫৪ হাজারে। কেন? পরের দিন স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জানানো হলো মুদ্রণ প্রমাদ!!!
অথচ যাচাই না করে তথ্য প্রকাশের অভিযোগে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে সংবাদমাধ্যমকে!
তার পরের দিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে জানালেন, মৃতের সংখ্যা ছয় নয়, তিন হবে। সেদিন বলেছিলেন, ‘এখনও পর্যন্ত (বিকাল পাঁচটা) রাজ্যে মারা গেছেন তিনজন। তার মধ্যে আবার একজন নিউমোনিয়ায় মারা গেছেন, আরেকজন কিডনি ফেইলিওর। মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজের নামে দেখাচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনার সংখ্যা। এটা ঠিক নয়’। যদিও সেই দুপুর পর্যন্ত সরকারি ভাবেই স্বাস্থ্য ভবনের তরফে পাওয়া খবরে জানা গিয়েছিল মৃতের সংখ্যা ছয়।
এর ঠিক ২৪ ঘণ্টা পরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজ্যেরই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটির সদস্যরা। বিশেষজ্ঞ কমিটির তরফে চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় বিকাল সাড়ে চারটে নাগাদ জানান, ‘করোনা আক্রান্ত হয়ে আগে মারা গিয়েছিলেন তিনজন। গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। ফলে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা সাত’।
তার ঠিক দেড় ঘণ্টা বাদে ফের সাংবাদিক বৈঠক। এবার রাজ্যের মুখ্যসচিব। তিনি বললেন, ‘এর আগে বিশেষজ্ঞ কমিটি আপনাদের করোনা সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে গেছে। সেই সম্পর্কেই কিছু জানাতে আমরা এসেছি। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গোটা রাজ্যে সাত। যদিও সরকারের কাছে তথ্য করোনায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। বাকি চারটি যে মৃত্যু হয়েছে তা করোনার জন্য হয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই’!
তাহলে কারা ভ্রান্তি তৈরি করছে? দায় কার?
গণশক্তি বুধবার পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা তিরিশ লিখেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মৃত ব্যক্তির লালারসের নমুনা করোনা পজিটিভ এসেছে। কোনও ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরে, কোনও ক্ষেত্রে মৃত্যুর আগে। অনেক ক্ষেত্রে করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে আসায় চিকিৎসকরা গণহারে কোয়ারান্টিনে গেছেন। গণশক্তির উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই করোনা মৃত্যু সম্পর্কিত বিধি মেনেই শেষকৃত্য হয়েছে, দেহ পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। আর এখানেই তৈরি হয়েছে ধাঁধা। সরকার কো-মরবিডিটির তত্ত্ব বলছে। ফলে করোনা পজিটিভ রোগীর মৃত্যু হলেও ডেথ সার্টিফিকেট তা লেখা থাকছে না…
উনি হুমকি দিয়েছেন, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইন প্রয়োগ , মামলা, জেলে পোরার হুমকি শুনিয়েছেন… তথ্য চাপতে সুপ্রিম কোর্টে বিজেপি সরকারের তরফে হলফনামা এবং পরবর্তীতে সেই মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ কে ব্যবহার করেই গণশক্তি কে হুমকি চিঠি!! তথ্য চাপতে ও দুই সরকারের চিন্তার ঐক্য!
তবে হ্যাঁ গণশক্তি কে আটকে রেখে, জেলে পুরে করোনা ঠেকানো যাবে না!
এটা পঞ্চায়েতের মনোনয়ন না যে বিডিও অফিস ঘিরে আটকে দিলাম নমিনেশন, এটা প্যান্ডেমিক !
রাজ্যের ন কোটি মানুষ………
গনশক্তি পত্রিকা