ভারতের অর্থনীতির এমনিতেই নড়বড়ে অবস্থা। অর্থনীতি পরিচালনায় ভ্রান্ত ও আত্মঘাতী পদক্ষেপের ফলে বিকাশের হার ক্রমাগত নামছে। বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাজারে অর্থনৈতিক সক্রিয়তা কমে যাওয়ায় পণ্য পরিষেবায় আদান-প্রদান গুরুতরভাবে ব্যাহত হচ্ছে। চীন থেকে কাঁচামাল এবং পণ্য আসা কার্যত বন্ধ হয়ে যাবার ফলে ভারত সহ বহু দেশের শিল্পে উৎপাদন এবং বাজারে কেনাবেচা যথেষ্ট হ্রাস পেয়ে গেছে। এই অবস্থায় যদি ভারতে করোনা ভাইরাসের আক্রমণ ছড়ায়, তাহলে অর্থনীতি কার্যত অচল হয়ে যাবে। এমনিতেই মানুষের রুজি-রোজগার সীমিত, সঞ্চয় কম, এরপর যদি বাজারে ধস নামে তাহলে সাধারণ মানুষের বিপন্নতার সীমা-পরিসীমা থাকবে না। তাছাড়া মনে রাখতে হবে, চীন বা ইউরোপের দেশ, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর যেভাবে করোনা মোকাবিলায় সক্ষম, ভারত তার ধারে কাছেও নেই।
জনবহুল তুলনামুলকভাবে দরিদ্র এই দেশে ভাইরাস ছড়াতে পারে ঝড়ের গতিতে। অপরাপর দেশে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভারতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত শুধু নয়, সেইসব দেশে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ ভারতের তুলনায় অনেক বেশি। মাথাপিছু স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় এবং মাথাপিছু উন্নত স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সুযোগ ভারতে অনেক কম। তাই বড় আকারে আক্রমণ হলে তা সামলানো অসম্ভব হয়ে যাবে। এমন এক অবস্থায় যখন সবচেয়ে জরুরি অগ্রাধিকারের বিষয় হবার কথা করোনা মোকাবিলা ব্যাপক প্রাক-প্রস্তুতি এবং জনসচেতনতা গড়ে তোলা, তখন সরকার ডুবে আছে মনুবাদী হিন্দুত্বের অন্ধ কূপে। অজ্ঞানতা আর অবচেতনার দাপটে গোমল আর গোমূত্র হয়ে উঠছে করোনা মোকাবিলায় অস্ত্র রূপে। ধর্মান্ধতার এই ঘোর দুর্দিনের সময় ভারতের জনগণের সামনে অসহায়তাই একমাত্র ভবিতব্য হয়ে উঠছে।
প্রথমদিকে চরম গাফিলতি সত্ত্বেও চীন শেষ পর্যন্ত সফলভাবে এর মোকাবিলা করেছে। তার জন্য ‘হু’ চীনের প্রশংসাও করেছে। অবশ্য প্রাণ হারিয়েছে তিন সহস্রাধিক মানুষ। দশদিনের মধ্যে সুবিশাল হাসপাতাল বানিয়েছে। রাতারাতি হোটেল ও সরকারি ভবনকে হাসপাতালে রূপান্তরিত করেছে, যার নজির বিশ্বে কোথাও নেই। দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর এবং ইউরোপের দেশগুলি নিজেদের মতো করে মোকাবিলা করছে। এই সমস্ত দেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী মোকাবিলার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি এখনই নিয়ে রাখা জরুরি।
এটাও মনে রাখা দরকার, বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হলে চিকিৎসার পরিকাঠামো ভারতে নেই। রাতারাতি নতুন পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষমতাও সীমিত। তাছাড়া আর্থিক সামর্থ্যও কম। এই অবস্থায় সর্বাধিক জোর দিতে হবে সচেতনতা বৃদ্ধির দিকে। সর্বস্তরের নাগরিকদের বোঝাতে হবে, কি করলে বা কিভাবে চললে রোগাক্রান্ত হবার আশঙ্কা কমবে। এ কাজে যুদ্ধকালীন তৎপরতা নিয়ে ঝাঁপাতে হবে সরকারকে। মনে রাখতে হবে আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে, পরে হিন্দুত্ব, ক্ষমতা দখল ইত্যাদি নিয়ে ভাবলেও চলবে।
শেয়ার করুন