কেন ও কীভাবে আমরা লড়তে পারি - সে বিষয়ে কিছু প্রস্তাব

মানবেশ চৌধুরি

দেশের বড় বুর্জোয়ারা এবং তার চৌকিদার মোদি-শাহের সরকার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদ বিজেপকে সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে।সর্বোপরি এই সরকারের মূল এজেণ্ডা – হিন্দুত্ববাদী একটা কূপমণ্ডুক রাষ্ট্র কায়েম করা  – সেই কাজের অনুবর্তিতায় চলছে ওদের সব অপকাণ্ডগুলি।

বিদেশী রাঘব বোয়াল বুর্জোয়াদের সঙ্গে খুব মিতালী  আরএসএস –বিজপি মোদি-শাহের সরকারের। ট্রাম্প, এর্দোগান, নেতানিয়াহু, বলসোনারোর সঙ্গে কী গদগদ বন্ধু্ত্ব!

এখানে একটা কথা বলে রাখলে ভালো হবে। যে আর এস এস   ফ্যাসিবাদ বিষয়ে ইতালি ও হিটলারের কাছ থেকে মদত নেয়, তারা তো এদেশে সেই ফ্যাসিবাদ কায়েম করার জন্যই তা করে – নাকি! তাদেরই শতাধিক শাখার মধ্যে বিজেপি অন্যতম, যারা এখন শাসকের ভূমিকায়।

বছর দুয়েক আগে বলসোনারোর  বিদায় হয়েছে ব্রাজিলের জনগণের রায়ে। লুলা ডি সিলভা এসেছেন। প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের আগ্রাসনের প্রশ্নে তুরস্কের এর্দোগান মার্কিনী কথায় সায় দিচ্ছেন না। নৈরাজ্যের মধ্যে  ইতিবাচকতা এগুলি।

 এরকমই আমাদের রাজ্যে মমতা-অভিষেকের সরকার গঠিত হয়েছে, মূলত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদতে। রবার্ট ব্লেক, ন্যান্সি পাওয়েল, হিলারি ক্লিন্টন, সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির মদতপুষ্ট হরেক রকম এন জি ও, বুদ্ধিজীবীদের একাংশের কদর্যতা থেকে জাত এই সরকার।

রুশতেম গ্যালিউলিনের লেখা ‘দ্য সি আই এ ইন এশিয়াঃ কভার্ট অপারেশন এগেনস্ট ইন্ডিয়া এণ্ড আফগানিস্তান’ নামে একটা বইয়ে  তৃণমূল দলের সৃষ্টি রহস্য’র কিছু  কথা লেখা আছে।

আমাদের ‘পার্টি  কর্মসূচীতে’ ও ২০১৬ সালে  আমাদের রাজ্য প্লেনামে  এই দুটি দল সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তা তুলে ধরলে সুবিধা হবে ।

১৯৯৮ সালের ৫-১১ অক্টোবর কলকাতায় পার্টির ষোড়শ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। ঐ কংগ্রেসে দীর্ঘ আলোচনার পরে বলা হয় – “’সংঘ পরিবার নিয়ন্ত্রিত বিজেপি নেতৃত্বাধীন এন ডি এ সরকার গঠন  নিছক একটি বুর্জোয়া দলের পরিবর্তে অপর একটি বুর্জোয়া জোটের ক্ষমতাসীন হওয়ার মতো মামুলি বিষয় নয়। সে জন্য পার্টি ক্ষমতাসীন সাম্প্রদায়িক জোটের শক্তিগুলির বিরুদ্ধে লড়াইকে প্রধান কাজ হিসাবে গ্রহণ করে।”

তার ২বছর পর ২০০০ সালের ২০শে অক্টোবর থেকে ২৩শে অক্টোবর তিরুবনন্তপুরমে পার্টির বিশেষ সম্মেলনে, ১৯৬৪ সালের পার্টি কর্মসূচীকে যখন সমসাময়িক করা হয়, তখন এই কর্মসূচীতে বিজেপি’র স্বরূপ ব্যখ্যা করা হয়। পার্টি কর্মসূচীর ৭.১৪ তে বলা হয়েছে –

“...বিভেদকামী ও সাম্প্রদায়িক মঞ্চের ভারতীয় জনতা পার্টি একটি প্রতিক্রিয়াশীল দল। তাদের প্রতিক্রিয়াশীল মর্মবস্তুর ভিত্তি হলো অন্যান্য ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণা, অসহিষ্ণুতা এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী জাত্যভিমান। বিজেপি কোন সাধারণ বুর্জোয়া দল নয় কেননা ফ্যাসিস্ত ধাঁচের রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ তাদের পরিচালনা করে, আধিপত্য করে। বিজেপি ক্ষমতায় আসায় রাষ্ট্রক্ষমতা ও রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন সংস্থায় প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে আর এস এস। হিন্দুত্ব মতাদর্শ পুনরুত্থানবাদকে মদত দেয়,  হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভারতের মিশ্র সংস্কৃতিকে প্রত্যাখ্যান করে। হিন্দুত্বের মতাদর্শ সাম্প্রদায়িকতাকে মদত দেয় এবং পরিণতিতে সংখ্যালঘুর মৌলবাদের বিকাশেও সাহায্য করে। আমাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ধর্মনিরপেক্ষ  ভিত্তির ক্ষেত্রে এর গুরুতর প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং বাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে তা গুরুতর বিপদ। সেই সঙ্গে বৃহৎ বাণিজ্য ও জমিদারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদ বিজেপকে সর্বাত্মক সমর্থন দিচ্ছে।“

৫.৭ ও ৫.৮ ধারাকে উপরোক্ত ধারার সঙ্গে মিলিয়ে পড়লে আমরা সঙ্ঘ পরিবারের উত্থানের প্রেক্ষাপটকে ভালোভাবে বুঝে নিতে পারবো।

আমাদের পার্টির রাজ্য সাংগঠনিক প্লেনাম, যা ২০১৬ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর-১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে বিস্তৃতভাবে তৃণমূল দলটির রাজনৈতিক সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে ৮নং পয়েন্টে, তার প্রথম কয়েকটি লাইন -   ‘’তৃণমূল কংগ্রেস ভারতে এমন এক ব্যতিক্রমী আঞ্চলিক দল, রাজ্যে ক্ষমতায় এসে যারা একতরফা ফ্যাসিস্তসুলভ সন্ত্রাসের পদ্ধতিতে নজিরবিহীন শাসন পরিচলনা করছে। আন্তর্জাতিক কি জাতীয় স্তরে দক্ষিণপন্থী, নয়া-ফ্যাসিবাদী, মৌলবাদী শক্তি ও দলগুলি সাম্রাজ্যবাদী নয়া উদারনীতির অনুগামী। তৃণমূল কংগ্রেসও ব্যতিক্রম নয়। সরকারকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে রাজ্যের শাসক দল উপভোক্তা তৈরি করে সাময়িকভাবে হলেও, তাদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়। এছাড়া তারা বামপন্থী বুলি আওড়ে জনমোহিনী স্লোগান ও মিথ্যা বাগাড়ম্বর–সর্বস্ব উত্তুঙ্গ প্রচারের আশ্রয় নেয়। সমাজের নিকৃষ্ট সমাজবিরোধীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত এই দল, দেশের প্রতিক্রিয়াশীল ও কর্পোরেট শক্তির মদতপুষ্ট এবং রাজ্যে কায়েমী স্বার্থের মুখ্য রাজনৈতিক প্রতিনিধি; বর্তমানে ধান্দার (crony) ধনতন্ত্রের সৃষ্ট রাজনীতির উগ্ররূপ। গ্রাম ও শহরে গজিয়ে ওঠা নব্য ধনী এবং তাদের পোষ্য লুম্পেনবাহিনী এদের অন্যতম শ্রেণিভিত্তি। উগ্র বামবিরোধিতার জন্যই এরা সাম্রাজ্যবাদের মদত পায়। রাজ্যের আঞ্চলিক বুর্জোয়ারা বৃহৎ না হলেও এরা বৃহৎ বুর্জোয়াশ্রেণির নয়া-উয়াদারবাদী আর্থিক নীতি ও ব্যবস্থার অনুগামী। তৃণমূল কংগ্রেস এই অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। শাসক দল তার ‘এক নেত্রী, এক দল’ স্লোগান কার্যকর করতে প্রশাসন ও সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রকে তার দ্বিধাহীন আনুগত্যের মধ্যে নিয়ে আসতে সব ধরনের স্বৈরাচারী পন্থা অনুসরণ করে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চরম সুবিধাবাদী অবস্থান থেকেই এরা বিভেদপন্থা ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকে মদত দেয়। ফ্যাসিস্ত সুলভ সন্ত্রাসকে ব্যবহার করে এরা পশ্চিমবঙ্গকে প্রতিবাদশূণ্য ও বিরোধীশূন্য করার চেষ্টা করছে। আদালত, নির্বাচন কমিশনসহ সংবিধান স্বীকৃত রীতিনীতি ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলিকে আক্রমণ ও অগ্রাহ্য করা এই দলের ফ্যাসিস্তসুলভ কার্যকলাপেরই অঙ্গ।………..।”

তাই বিশেষ করে আমাদের দেশে,  আমাদের রাজ্যে  ১২-১৪ বছর যাবত   চলছে জনগণকে ফতুর করার, লুট করার, চুরি করার, ডাকাতি করার  ধারাবাহিক জঘন্য কাণ্ড-কারকারখানা। প্রশাসন ও আরক্ষাবাহিনী এদের দলদাস।  কালাকানুনের মধ্যবর্তিতায়  মজদুরদের করা হচ্ছে ছাঁটাই, নতুন নিয়োগ বন্ধ করা হয়েছে, গ্রাম-শহর ছেড়ে যাওয়া পরিযায়ীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাদের কম পয়সা দিয়ে করিয়ে নেওয়া হচ্ছে হরেক কিসিমের কাজ, গ্রামগুলো হয়ে গিয়েছে যুবক শূন্য। ক্ষুধা –বুভুক্ষায় দেশ গিয়েছে ছেয়ে।

স্বাধীনতা পরবর্তীকালের সর্ব বৃহৎ কৃষক আন্দোলনে দিশাহারা মোদিকে পরাজিত হতে হয়েছিল। কিন্তু আবার শয়তানি শুরু হয়েছে। সব থেকে বড় শয়তানি কৃষককে ফসলের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করা। কৃষক আত্মহত্যা চলছে তো চলছেই।  বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। তুলে দেবার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে রেশন ব্যবস্থাকে, বিদ্যুতের দাম বেড়েই চলেছে, বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওষুধ-পত্রের দাম।  চলছে যুব জীবনকে কর্ম সংস্থানহীন করে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র, ছাত্রদের পড়াশুনার সরকারি ব্যবস্থাকে লাটে উঠিয়ে, যেটুকু আছে তার জন্য  নিয়ে আসা হয়েছে বিজ্ঞান ও মানবিকতা বিরোধী পাঠক্রম। সরকারি প্রকল্পগুলিতে চলছে অর্থ ছাঁটাই। মানুষের জীবন দুর্বিষহ। নারীদের সঙ্গে চলছে ব্যাভিচার, করা হচ্ছে তাদের হত্যা। ভয়ংকরভাবে চলছে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের দাপট। আলোচ্য দুটি সরকার যেন পাল্লা দিয়ে চালাচ্ছে এসব জঘন্য কাণ্ডকারখানা।

এসব নিয়ে মিডিয়ায় কোন চর্চা নেই। কারণ বেশিরভাগ মিডিয়া হাউসও চলছে ঐ স্বদেশী-বিদেশী বৃহৎপুঁজির টাকাতেই। তারাই মিথ্যা প্রচার করে। তারাই বাইনারি তৈরি করার অপপ্রয়াস চালায়।

 পুঁজিপতিদের টাকায় চলে সরকার। সাম্প্রতিক ইলেকটোরাল বণ্ডের রহস্য ফাঁস হওয়ায় সব পরিস্কার হয়ে গিয়েছে। দেশ বা এরাজ্যের সরকার – পুঁজিপতিদের ক্রীতদাস । ঐ সব লুটের টাকায় আর বণ্ডের টাকার একটা অংশ দিয়েই  ইলেকশনগুলির সময় চলে মদ-মাংসের অঢেল আয়োজন, চলে কোটি কোটি টাকার খেলা। বাকি অংশ নেতাদের গোপন কুঠুরিতে জমা হয়। আগেই আমাদের এসব জানা ছিল। এখন জলবৎ তরলং ভাবে তা  প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে।

এর বাইরেও অনেক ঘটনা ঘটেছে, ঘটছে প্রতিনিয়ত যা যা, সেসবও আমাদের পাঠকরা জানছেন প্রতিনিয়ত। বাহুল্য বোধে তাই এখানেই এ প্রসঙ্গ শেষ করা গেলো।

পুঁজ মেশানো পচা রক্ত সড়ক থেকে উপসড়ক, উপসড়ক থেকে গলিপথ, গলিপথ থেকে দেশের আর রাজ্যের আনাচে কানাছে ছড়িয়ে পরেছে। মানুষ আর তিষ্ঠোতে পারছে না। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাদের।

মানুষ নতুন দিশা খুঁজছিলেন। প্রতিদিনের লড়াইয়ের ফলে, অনেকে দিশা পেয়েও গিয়েছেন। তাই ভালোর দিকে, শুভ ও কল্যাণের দিকে পরিবর্তনের বিষয়গুলো এখন বিরাজ করছে বলাই যায়। পরিবর্তনেচ্ছু গরিষ্ঠ মানুষের ইচ্ছাটাকে মর্যদা দিয়ে কাজ-কর্ম করার দায়িত্ব কাদের? যারা সাম্যব্রতী তাদের, যারা প্রগতির পথিক তাদের।

কমিউনিস্ট পার্টি মজদুর শ্রেণীর পার্টি। মজদুর ভাই-বোন থেকে খেতের মজুর, কৃষক, মহিলা, ছাত্র-যুব, কর্মচারী, ছোট দোকানদার, সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে যারা কাজ করেন - তাদের ক্রান্তিকারী বিপ্লবী মন নিয়ে কাজ করতে হয়। আমাদের রাজ্য স্তরে এবং জেলাগুলিতে যাঁরা দৈনন্দিন এই কাজগুলি করে থাকেন, তাঁদেরও কাজকর্মের একটা ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। একটা যুগ-সন্ধিকালের চেতনা নিয়ে কাজ-কর্ম করছেন অনেকেই। যে দায়িত্ববোধ ও চেতনা নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ তৈরি হয়েছে, যদি সমস্ত কর্মীর মধ্যে তা দ্রুত সঞ্চারিত হয়, তবে দেশ ও রাজ্যটার ক্লেদাক্ত পরিবেশ যে পরিবর্তিত হবেই – সে কথা জোর দিয়ে বলা যায়।

নির্বাচন একটা যুদ্ধ। কমিউনিস্টদের কাছে শ্রেণী যুদ্ধ। কিন্তু এই নির্বাচনে, শত্রু যখন ফ্যাসিবাদীরা, তখন বিপ্লবী শক্তির পাশে মধ্যবিত্ত, সজ্জন, ভালোমানুষদের জড়ো করার দায়িত্ব নিতে হয় কমিউনিস্টদেরকেই। দুনিয়ার ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয়।

সোজা কথায় শ্রেণির মানুষ বলতে বোঝায় গরিব মানুষ। আমাদের কৃষক নেতা প্রয়াত কমরেড শিবেন চৌধুরি বোঝাতেন, লাট্টু ঘোরানোর একটা উদাহরণ দিয়ে। লাট্টুটার গায়ের ছোট ছোট গর্তগুলোর মধ্যে লেত্তি পেঁচাতে হয়। তারপর মাটিতে ছুঁড়ে দিলে লেত্তিটা খেলুড়ের হাতে চলে আসে। আর লাট্টুটা বনবন করে ঘুরতে থাকে। বনবন করে ঘোরে কিসের ওপরে? লোহার একটা ছুঁচলো আলের ওপরে। সেটাই আসল শক্তি। কিন্তু লাট্টুর চার পাশে গোল করে কাঠ থাকার জন্যই তো লাট্টুটা লাট্টুর আকৃতি নেয়। তাই ঐ শ্রেণির মানুষ, গরিব মানুষের পাশে অন্যান্য বঞ্চিত, ক্ষুব্ধ, বিরক্ত, মুক্তমনা, সুশীল মানুষের সমাবেশ ঘটাতে হয়।

এটা ঠিকই নির্বাচনের সময় প্রগতিবাদী সংগঠনগুলির লেজের দিকে যাঁরা থাকেন, দিনাতিদিনের কাজকর্মে যাঁরা যুক্ত থাকতে পারেন না, তাঁদের মধ্যেও একটা উদ্বেলতা ও কর্মসূচীগুলোতে যোগ দেবার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এবং সেভাবেই তারাঁ কাজে কর্মে যুক্ত হন। মূল কারিগর পার্টি যদি সম্যকভাবে সক্রিয়  হয়, তবে এই কর্মীবৃন্দও তদনুপাতে সচল হন।

বোঝাই যাচ্ছে, নেতাদের এখন অনেক কাজ। শরীর খারাপ হবে, জ্বর-সর্দি, পেটের ব্যামো হবে। বিমানদা – বিমান বসু, আমাদের জেলার কর্মীদের একবার বলেছিলেন – এসব হতেই হবে। না হলে কি কাজটা আপনি করলেন! কিন্তু দেখবেন, যখন মিছিল বেরিয়েছে- জিতেছে জিতেছে বামফ্রন্ট জিতেছে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে চরাচর, তখন নিমেষেই ঐ ছোটখাটো অসুখগুলো পালিয়ে গিয়েছে।

অতএব, অবিরাম পরিশ্রমসাধ্য কাজের মধ্যে আমাদের কর্মীদের থাকতেই হবে। পোস্টার লাগানো, দেওয়াল লেখা, মিটিং, মিছিল, পথ সভা, জনসভা, রাস্তায় রাস্তায় পদযাত্রা – সবই চলবে। এবং সেগুলিকে বড় মাপের ও বড় মানেরও করতে হবে। মানুষের চোখের সামনে দৃশ্যমান করার জন্য এই সব কাজের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু মূল কাজ – গ্রাম-গঞ্জ-মহল্লা-শহর-শহরতলির প্রতিটি বাড়িতে যাওয়া। এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলা, আলোচনা করা, বৈঠক করা।

  ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া
শেয়ার করুন

উত্তর দিন