প্রাককথন
সূর্যেন্দু বিকাশ করমহাপাত্র বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা ও বি ডি নাগ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা করেছিলেন। তাই তাঁকে মেঘনাদ সাহার ছাত্র বলে বিবেচনা করলে ভুল হয় না।
১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে সূর্যেন্দুবিকাশের লেখা ‘মেঘনাদ সাহা – জীবন ও সাধনা’ বইটি প্রকাশিত হয়। প্রকাশক শ্রীভূমি পাবলিশিং কোম্পানি। বর্তমান নিবন্ধটি সে বই থেকেই সংগৃহীত।
মেঘনাদ সাহার জন্মদিবস উপলক্ষে এমন একটি নিবন্ধকে বেঁচে নেওয়ার প্রেক্ষিত শুধু তাঁর বিজ্ঞানসাধনার উৎকর্ষ আলোচনা নয়। আজকের পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে প্রাকৃতিক ভারসাম্যের গুরুতর বদল ঘটছে। ঋতু পরিবর্তনের অভিঘাতে প্রতি বছর বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন এরাজ্যের এক বিরাট অংশের সাধারণ মানুষ। রাজ্য সরকার একেক সময় একেক যুক্তি হাজির করে নিজেদের কর্তব্য, দায় এড়িয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। এমন অবস্থায় বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী কিভাবে দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করেন সেই প্রসঙ্গই আমরা মনে রাখতে চেয়েছি। একইসাথে তুলে ধরতে চেয়েছি কিভাবে বিজ্ঞানীদের সদ্ভাবনা শাসকের অঙ্গুলিহেলনে তলিয়ে যায়। সেই ধারাবাহিকতা দেশের স্বাধীনতার সময় যেমন ছিল, আজও তারই অনুশীলন চলছে।
আজকের প্রজন্মের আরও একবার জেনে রাখা উচিত বিজ্ঞানীরা আকাশ থেকে পড়েন না, তারা গড়ে ওঠেন। নিজের দেশ, নিজের দেশবাসীদের প্রতি তাদের ভালবাসা অন্যান্য বিশিষ্টদের তুলনায় কিছু কম না, মেঘনাদ সাহা এমনই একজন।
তাকে স্মরণ করার মধ্যে এটুকু অনুভব উপলব্ধি করতেই হয়।
নিবন্ধটি প্রকাশ করার সময় সন-তারিখ ও সংখ্যার বেলায় আমরা বাংলা হরফ ব্যবহার করেছি, বাকি অংশে মূল প্রবন্ধের বানানবিধিই অবিকৃত রাখা হয়েছে।
সূর্যেন্দুবিকাশ করমহাপাত্র
বোম্বে সায়েন্স কংগ্রেস অধিবেশনের মূল সভাপতির ভাষণের এক অংশে সাহা নদী বিজ্ঞান গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেছিলেন। নদী ও বন্ধ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে তাঁর আগ্রহের কারণ মনে হয় তাঁর নিজের গ্রাম বছরে প্রায় চার মাস জলে ডুবে থাকত। সাহা ঠাট্টাচ্ছলে প্রায়ই মন্তব্য করতেন যে, সে অঞ্চলে মানুষ হাঁটতে শেখার আগে সাঁতার শিখতো। নদী ও বন্ধ্যা সম্পর্কে তাঁর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা প্রথম দেখা যায় ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দে। তখন দামোদর উপত্যকার নিম্নাঞ্চল বর্ধমান বিভাগের অভূতপূর্ব বন্ধায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, বহু শস্যহানি ঘটেছিল, এমনকি গ্রামগুলির ভিতরও যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছিল। সাহা তখন এম.এসসি. ক্লাসের ছাত্র এবং তিনি বন্যাত্রাণে তারকেশ্বর এবং উলুবেড়িয়া অঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবক-রূপে সক্রিয় অংশ নেন। এইখানেই দামোদর নদী সমস্যায় তাঁর আগ্রহের সূত্রপাত।
তখন দামোদরের বন্যা প্রতিরোধের উপায় নির্ধারণ করার জন্য বর্ধমানের মহারাজার নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ অধিবাসীর স্বাক্ষরিত একটি স্মারকলিপি বাংলা সরকারের কাছে দাখিল করা হয়। তদানীন্তন গভর্নর রোনাল্ডসে বিশেষ আগ্রহ নিয়ে গ্লাস ও সবেরওয়াল এই দুজন ইঞ্জিনীয়ারকে দিয়ে ১৯১৮-১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে দামোদরের বন্যার কারণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত চার খণ্ডের একটি দীর্ঘ রিপোর্ট তৈরি করান। কিন্তু এই রিপোর্ট সরকারী ফাইলে চাপা পড়ে যায়।
১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যায় কলকাতা থেকে দার্জিলিং বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যাত্রাণের সরকারী প্রচেষ্টার অভাব থাকায় সায়েন্স কলেজ থেকে প্রফুল্লচন্দ্র উত্তরবঙ্গের বন্যাত্রাণ কমিটি গঠন করে ত্রাণকার্যে আত্মনিয়োগ করেন। সাহা এবং অন্যান্য গবেষকেরা গবেষণা ছেড়ে প্রফুল্লচন্দ্রের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। সুভাষচন্দ্র বন্যার্ত অঞ্চলে ত্রাণকার্যে এই কমিটির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। সাহা ছিলেন কমিটির প্রচারকার্যে ও সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত ছিলেন সরবরাহ ব্যবস্থার ভারপ্রাপ্ত। প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে সুভাষচন্দ্র মেঘনাদ সাহার পরিচিত হলেও, এই ত্রাণকার্যের মাধ্যমে সেই পরিচিতি সুদৃঢ় হয়। অবশ্য ১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দে ‘সায়েন্স এন্ড কালচার’, প্রথম প্রকাশিত হলে, সাহা তার একটি কপি সুভাষচন্দ্রকে পাঠান। সুভাষচন্দ্র পত্রিকাটি দেখে আতি গঠনের কিছু সমস্তা নিয়ে তাঁর মন্তব্য পাঠিয়েছিলেন-ঐ পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছিল।
উত্তরবঙ্গ বন্যাত্রাণে প্রফুল্লচন্দ্রের জনপ্রিয়তার জন্য ও কমিটির সুশৃঙ্খল পরিচালনায় একটি বিশাল ও মহৎ ত্রাণকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।
ঐ সময় সাহা মডার্ন রিভিউ পত্রিকায় উত্তরবঙ্গের বন্যা ও তার প্রতিকার সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লেখেন। ঐ বছর প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের সত্তরতম জন্মবার্ষিকী স্মারকগ্রন্থে সাহা বঙ্গে হাইড্রোলিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার আবশ্যকতা সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এরকম গবেষণাগারে বন্যা, সেচ ও নদীর নাব্যতা ও জল শক্তি সম্পর্কে সব সমস্যার গবেষণা সম্ভব হবে। তাঁর মতে এই গবেষণাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত হলে ভাল হয়। বার্লিন, ভিয়েনা ও আমেরিকার অনুরূপ গবেষণাগারের মডেলে এই গবেষণাগার গড়ে তুলতে হবে। সাহার ধারণা ও প্রস্তাবের আংশিক রূপায়ণ হল এর প্রায় এক দশক পরে হরিণঘাটার বেঙ্গল রিভার রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।
উত্তরবঙ্গের বন্যা প্রবন্ধে তিনি বলেন, ‘বাংলার বন্যা সমস্যা নিরাকরণে নদী সম্পর্কীয় গবেষণার কথা অনেক বিশেষজ্ঞ বলে গেছেন। ভারত সরকারের প্রধান ইঞ্জিনীয়ার এফ. স্প্রিং ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে হাইড্রোলিক গবেষণার সপক্ষে অভিমত দেন। তিনি গঙ্গায় সারা ব্রিজ-সহ অনেক সেতুর নির্মাতা’।
‘বাংলা নদীবহুল দেশ, তার উন্নতি ও স্বাস্থ্য বড় নদী ও তাদের শাখা নদীর উপর নির্ভর করে। অতীতের নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ভয়াবহ পরিণতি আমাদের অজানা নয়। পনের শতকে বাংলার একদা রাজধানী গৌড় গঙ্গার গতিপথ পরিবর্তনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সম্মুখীন হওয়ায় পরিত্যক্ত নগরী হয়ে যায়।
গত একশো বছরে এই যে ম্যালেরিয়া-কালাজ্বরে গ্রামকে-গ্রাম উজাড় হয় তার পিছনে নদীর মতিপথ পরিবর্তন একটি বড় কারণ হতে পারে। ১৭৬৮-১৮২৫ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তনে আত্রেয়ী ও করতোয়ার অববাহিকায় জলপাইগুড়ি, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। মধ্য বাংলা মোগলযুগে ও ব্রিটিশ শাসনের প্রথম যুগে স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য খ্যাত ছিল। বালির চাপে, রেললাইন ও সেতুর জন্য ভাগীরথী ও জলঙ্গীর স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় সেই মধ্য বাংলাও এখন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের শিকার। দামোদর ও তার শাখা নদীগুলির স্রোত একই কারণে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় ১৮৫০ খ্রীষ্টাব্দের পর পশ্চিমবঙ্গও ম্যালোরিয়ার শিকার হয়েছে।
সমাজের হিতার্থে এখন বিজ্ঞানের প্রয়োগ সব দেশেই সম্ভব হচ্ছে, কিন্তু এদেশে নদী নিয়ন্ত্রণের এই সমস্যা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে আলোচনা হচ্ছে না’।
এই সমস্যার আলোচনার জন্য হাইড্রোলিক গবেষণাগার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের কথা তিনি বার বার বলেছেন।
১৯৩৮ খ্রীষ্টাব্দে ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের সভাপতির ভাষণে সাহা ভারতের নদী সমস্যার উল্লেখ করেন। অতীতে বন্যার ফলে যে পাটলিপুত্র আজ ধ্বংস হয়েছে, বদ্বীপ অঞ্চলের নগরী যে ক্রমশঃ মাটির নিচে বসে যায় এসব তথ্য বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন। কলকাতার এরকম ভবিষ্যৎ নিয়েও তিনি তাঁর এই ভাষণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
১৯৪৩ শ্রীষ্টাব্দের জুলাই দামোদরের বন্যা ১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দের বন্যার ভয়াবহতার তুলনায় অর্ধেক হলেও বহু গ্রাম ছয় সাত ফুট জলের নিচে চলে যায়, রেল লাইন বিধ্বস্ত হয়, কলকাতা সারা ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
এখন তাই আবার বন্যা সমস্যা নিয়ে চিন্তা ভাবনা দেখা যায়। এই সমস্যার সমাধানে জনমত জাগ্রত করা ও সরকারকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে সাহা বলিষ্ঠ ভূমিকা নেন। ফলে বাংলা সরকার বর্ধমান মহারাজার সভাপতিত্বে দামোদর বন্ধ্যা অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। সাহা বন্যা সমস্যার প্রতিরোধে বিশেষ পরামর্শ দানের জন্য কমিটির সদস্য থাকেন।
১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে গ্লান ও সবেরওয়ালের দামোদরের বন্যা সংক্রান্ত চার খণ্ড রিপোর্টের সরকারী ফাইলে কোন হদিশ পাওয়া গেল না। অবশেষে একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী এঞ্জিনীয়ারের কাছে তাঁর ব্যক্তিগত কপিটি কোন ক্রমে সংগ্রহ করা হল।
সব কিছু পর্যালোচনা করে কমিটি সুপারিশ করেন যে, উপকূলভাগে কংক্রীটের বাঁধ দিতে হবে- অনুমিত ব্যয় হবে ছয় কোটি টাকা। দুই, উপকূলভাগে সেচের পরিকল্পনায় তিন কোটি টাকা খরচ হবে। ভূমি সংরক্ষণের জন্য বনাঞ্চল তৈরি ও অন্যান্য সমস্যার প্রতিকার কল্পে ত্রিশ লক্ষ টাকা প্রয়োজন হবে।
সরকার এই সুপারিশ গ্রহণ করে তা কার্যকরী করার জন্য একজন সরকারী এঞ্জিনীয়ার নিয়োগ করেন। সাহা টেনেসী ভ্যালী অথরিটির (TVA) মত একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে দামোদর ভ্যালী কর্পোরেশন গঠনের পরামর্শ দেন। সায়েন্স এণ্ড কালচারে ১৯৪৪ খ্রীষ্টাব্দে জুলাই তাঁর Planning for the Damodar Valley নিবন্ধ (কমলেশ রায়-সহ) ভারতের নদী পরিকল্পনার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য অবদান। TVA সংক্রান্ত কাজকর্ম ও প্রযুক্তিতত্ত্ব সম্পর্কে তাঁর প্রগাঢ় জ্ঞান ছিল। প্রবন্ধে, বক্তৃতায় তিনি এ প্রসঙ্গ নিয়ে বার বার আলোচনা করেছেন।
তদানীন্তন ভাইসরয়ের ক্যাবিনেট সদন্ত আম্বেদকরের সঙ্গেও এ নিয়ে তিনি বার বার আলোচনা করেছেন। আম্বেদকরের আগ্রহে ভারত সরকার অবশেষে DVC গঠনের প্রস্তাব নেন ও ডি. এল. মজুমদারকে TVA-র গঠন প্রণালী জেনে আসার জন্য সেখানে পাঠানো হয়। মজুমদার পরে এই গঠন প্রণালীর খসড়া তৈরি করলে ভারত সরকার তা অনুমোদন করেন।
সাহার চেষ্টায় টেনেসী ভ্যালীর বিশেষজ্ঞ ভুরদুইনকে দামোদর ভ্যালীর পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরির ভার দেওয়া হয়। তাঁর রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দে DVC-র কাজ আরম্ভ হয়।
ভুরদুইনের রিপোর্টের সুপারিশে সাহার Planning of Damodar Valley প্রবন্ধের কোন স্বীকৃতি না থাকলেও এ দুয়ের মিল লক্ষ্য করা যায়।
সাহা এই অবস্থায় থেমে থাকেন নি। নদীর বহুমুখী বিকাশ পরিকল্পনার ভিত্তিতে দামোদর পরিকল্পনায় জলবিদ্যুৎ, জলসেচ প্রভৃতি অন্তর্ভুক্তির কথাও তিনি বলেছেন। প্রায় একশো বছর আগে বিখ্যাত ব্রিটিশ এঞ্জিনীয়ার আর্থার কটন মহানদীর হীরাকুঁদ বাঁধের সম্ভাবনা ভেবেছিলেন। ভারত সরকারের সেন্ট্রাল ওয়াটার পাওয়ার এন্ড ইনল্যান্ড নেভিগেশন কমিশন নদী সমস্যা পর্যালোচনার জন্য গঠিত হওয়ায় তাঁরা হীরাকুদ বাঁধের সুপারিশ করেন। ১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দে ১৫ মার্চ তৎকালীন গভর্নর হর্থন লিউইস এই প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ক্ষমতা হস্তান্তরের পর ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল ১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে পুনরায় এই প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। পরিকল্পনায় যে অনেক গলদ ছিল তা বিশিষ্ট এঞ্জিনীয়ারেরা স্বীকার করেছেন। আসলে খুব তাড়াহুড়া করে, পরিকল্পনাটি রচিত হয়েছিল। দামোদর ভ্যালী ও হীরাকুঁদ বাঁধের ত্রুটী নিয়ে অনেক কথাই উঠেছে। তৎসহ ভাক্রা-নাঙ্গাল প্রকল্পের ত্রুটাও প্রশ্নাতীত নয়। তিনটি সরকারী অনুসন্ধান কমিটি এত পর্যালোচনা করেছেন।
১৯৪৭ খ্রীষ্টাব্দে সাহা সায়েন্স এন্ড কালচারের জুলাই সংখ্যার সম্পাদকীয় Multipurpose Development of Indian Rivers প্রবন্ধে এ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন। বিশেষজ্ঞেরা এই প্রবন্ধের নির্দেশ গ্রহণ করে লাভবান হতে পারতেন। কিন্তু তা করা হয়নি। এই প্রবন্ধের উপসংহারে তিনি বলেছেন যে, ‘যে কোন প্রকল্প রূপায়ণে নিম্নোক্ত ধাপগুলি অনুসরণ করা প্রয়োজন।
১. জল, খনিজ, মৃত্তিকা, উদ্ভিদ প্রভৃতি উৎসের ও ভূভাগের নিজস্ব চরিত্রের মাপ-জোখ প্রথমেই করা প্রয়োজন।
২. পরিকল্পনা হবে বহুমুখী যাতে শক্তি, নৌ-চলাচল, সেচ, ভূমি- সদ্ব্যবহার, ব্যারোধ প্রভৃতির একসঙ্গে দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে।
৩. ডিজাইন (পরিকল্পনা কাগজে কলমে এঁকে নিতে হবে)।
৪. নির্মাণকার্য: নির্মাণকার্যের সমান্তরালে গবেষণার সুযোগ থাকবে যাতে সর্বোত্তম নির্মাণকার্য সম্ভব হয়।
৪. সদ্ব্যবহার: সমগ্র উপত্যকার বিকাশের মধ্য দিয়ে পরিকল্পনার সর্বোচ্চ সুফল আশা করা যায়।
সাহা পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার পর নদীপ্রকল্পের ভুল ত্রুটি নির্দেশ করে বক্তব্য রেখেছেন। ভারত সরকারের কাছে স্মারকপত্র দিয়ে বলেছেন যে DVC গঠনের বিল প্রণয়নের সময় কর্পোরেশনের সদস্য নির্বাচনে নিতান্তই ভাবপ্রবণতার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। তিনি সদস্য নির্বাচনে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গী প্রয়োগের সুনিদিষ্ট প্রস্তাব দেন। সরকার সেই সব প্রস্তাবে আমল দেন নি।
ওয়েবডেস্কের পক্ষে প্রাককথন- সৌভিক ঘোষ