Logo oF Communism

আগামী দিনে সকল গনতান্ত্রিক শক্তিকেই কৃষক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হতে হবে: পিপলস ডেমোক্র্যাসির সম্পাদকীয়

কৃষি আইন সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

তারিখঃ বুধবার - ১৩ জানুয়ারি, ২০২১

একটি অবাস্তব ধারণাপ্রসূত নির্দেশ

তিনটি নয়া কৃষি আইন এবং সেই আইনসমূহ বাতিল করার দাবিতে কৃষকদের আন্দোলন সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট একেবারেই অবাস্তব ধারণাপ্রসূত এবং একপেশে নির্দেশ জারি করেছে।

পরবর্তী নির্দেশ জারী না করা অবধি বিচারপতি এস এ বোবদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের ডিভিশন বেঞ্চ নয়া তিন কৃষি আইন প্রনয়ন স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে এমন নির্দেশের ফলে জনমানসে কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। বাস্তবে সুপ্রিম কোর্টের এই হস্তক্ষেপ নয়া কৃষি আইন সম্পর্কে আগামিদিনে কোনরকম শুনানির কথা বলেনি কিংবা আন্দোলনরত কৃষকদের দাবিসনদ শোনার প্রতি কোন আগ্রহ দেখায় নি। এই নির্দেশে আগামী দুই মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে রিপোর্ট জমা দেবে এমন একটি ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’ তৈরি করার কথা বলা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টে সংশ্লিষ্ট সমস্যা সম্পর্কে আবেদনকারীরা কেউই কোন কমিটির দাবী জানান নি। এই বিষয়ে সরকারের সাথে আলোচনার সময় আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতিনিধিরা এমন কমিটির প্রস্তাবে কৃষকদের আপত্তির কথাও ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিশেষজ্ঞ কমিটিতে যে চারজন নির্বাচিত হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই প্রকাশ্যে কৃষি আইনগুলি সমর্থনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। এদের মধ্যে অশোক গুলাটি কৃষিক্ষেত্রে নয়া উদারবাদি অর্থনীতির সমর্থনে সামনের সারির প্রচারক। এতেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে এধরনের কমিটিতে সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সরকারের কথামতো চলেছে। কমিটিতে কৃষকদের প্রতিনিধি হিসাবে যাদের নেওয়া হয়েছে তারাও নয়া কৃষি আইনের সমর্থক। কৃষকদের প্রতিনিধি কারা হবেন সেই নিয়ে আন্দোলনরত কৃষকদের সাথে কোন আলোচনা করার প্রয়োজন অনুভব করেনি কোর্ট।

বোঝাই যায়, কমিটি কি ধরণের রিপোর্ট জমা দেবে তা অনেকটাই পূর্বনির্ধারিত। এমন ধারণা করেই নেওয়া চলে, দুমাস পরে এই কমিটি তাদের রিপোর্টে সুপারিশ হিসাবে যা কিছু বলবে কোর্ট সেই সুপারিশগুলি মেনে নেবে এবং তখনই কৃষি আইন প্রনয়ণে স্থগিতাদেশ উঠে যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের শেষে বলা হয়েছে, “ আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রুদ্ধ করতে চাই না, কিন্তু এটা বলাই চলে বর্তমানে নয়া কৃষি আইন প্রনয়নে কোর্টের তরফে স্থগিতাদেশটি কৃষকদের আন্দোলনের একটি সাফল্য। এতে কৃষকরা উৎসাহিত হবেন এবং আন্দোলনরত কৃষকরা নিজেদের এবং অন্যদের জীবন জীবিকার স্বার্থে পুনরায় নিজেদের কাজে ফিরতে পারবেন।

অর্থাৎ কৃষকদের আন্দোলন মুলতবি রেখে ঘরে ফিরে যাওয়া উচিত - কোর্টের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হল। এমনকি কোর্টে শুনানি চলাকালীন অ্যাটর্নি জেনারেলের তরফে কৃষকদের আন্দোলনে খালিস্তানিদের প্রভাব রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। তার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোর্ট নির্দেশ দেয় এই সংক্রান্ত তথ্য প্রমাণ জমা সংগ্রহ করে জমা দিতে।

কোর্টের এমন নির্দেশের সুবাদে সরকারের পক্ষে আইন বাতিলের আন্দোলন থামিয়ে দিতে কৃষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে “দেশবিরোধী খালিস্তানি প্রভাব সক্রিয়” – এই ছুতোয় নির্যাতন, নিপীড়ন নামিয়ে আনার সুযোগ তৈরি হল।  

আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে অনড় থেকে কৃষকেরা অত্যন্ত সঠিকভাবেই সুপ্রিম কোর্টের “বিশেষজ্ঞ কমিটি”-কে নাকচ করে দিয়েছেন। আগামী দিনগুলি সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে, সেই লড়াইতে সংহতি জানাতে সকল গনতান্ত্রিক শক্তিকেই নিজেদের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে যুক্ত হতে হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন