সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ২৭শে সেপ্টেম্বর ভারত বন্ধের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে - জরুরি পরিষেবা যেমন অ্যাম্বুলেন্স, হাসপাতাল, চিকিৎসা পরিষেবা, দমকল ইত্যাদি ছাড় দেওয়া হবে - বন্ধ শান্তিপূর্ণ হবে।
হরিয়ানা সরকার কৃষকদের আন্দোলনকে দমন করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে-এটা বাস্তব যে কৃষকরা মহাসড়কে বিক্ষোভ করছে, কারণ পুলিশ অন্যত্র ব্যারিকেড লাগিয়েছে।
কৃষক আন্দোলনকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন স্থানে ব্যাপকতর সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চলছে।
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা সোমবার, ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে ভারত বন্ধের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে, এবং সংযুক্ত সংগঠনগুলিকে সমাজের সকল শ্রেণীর কাছে কৃষকদের সাথে হাত মিলানোর জন্য আহ্বান জানাতে বলেছে, এবং আগে থেকেই বন্ধের প্রচার করতে বলেছে যাতে জনসাধারণের অসুবিধা হ্রাস পায়।বন্ধ শান্তিপূর্ণ এবং স্বেচ্ছাধীন হবে, এবং বন্ধের আওতা থেকে থেকে জরুরী পরিষেবাগুলিকে ছাড় দেওয়া হবে।২৭ তারিখ সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। উক্ত দিনের প্রধান ব্যানার বা বিষয়গুলি হবে "কৃষক বিরোধী মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ভারত বন্ধ", "মোদি মান্ডি বন্ধ নিয়ে এসেছে, কৃষকরা ভারত বন্ধ করেছে" ইত্যাদি। ২৭ তারিখের এই ধর্মঘট কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অফিস, বাজার, দোকান ও কারখানা, স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন এবং ব্যক্তিগত পরিবহন, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানসমূহ বন্ধ করতে চাইবে।
বারবার চরম কৃষক বিরোধী আচরণ প্রদর্শন করার পর, হরিয়ানার বিজেপি-জেজেপি সরকার কৃষকদের ঐতিহাসিক আন্দোলনকে দমন করার জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করছে।শোনা যায়, হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং কর্ণালের ঘটনা সহ কৃষকদের বিক্ষোভ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করেছিলেন।এসকেএম-এর বক্তব্য এটাই যে বিজেপি যদি কৃষকদের লাগাতার এবং তীব্রতর বিক্ষোভের বিষয়ে উদ্বিগ্ন হয়, তাহলে তাদের আন্দোলনের ন্যায্য দাবিগুলি পূরণ করে সমাধান করা উচিত।সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জারি করা নোটিশের জবাবে হরিয়ানা সরকার অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র) রাজীব অরোরার নেতৃত্বে এবং রাজ্যের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে।২০সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের নির্ধারিত শুনানির আগে সোনিপাত জেলার জেলাশাসক ১৯সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে এসকেএম নেতাদের সঙ্গে মুরথলে একটি বৈঠক ডেকেছিলেন।এসকেএম আবারও বলেছে যে তাদের ইচ্ছানুসারে বা অঙ্গুলীহেলনে লক্ষ লক্ষ কৃষক দিল্লির সীমানায় বিক্ষোভ করছে এমনটা নয়, কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকসহ বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশ তাদের সীমান্তে থাকতে বাধ্য করেছে।খুব কষ্টের সাথে কৃষকরা মহাসড়কে ভারী বৃষ্টি এবং বন্যা, প্রবল গ্রীষ্ম এবং কনকনে শীতকালের মধ্যে বসবাস করছে।কৃষকদের জন্য, তাদের বর্তমান সংগ্রাম তাদের জীবিকা, মৌলিক উৎপাদনশীল সম্পদ এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষার বিষয়।আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ৬০০-এরও বেশি কৃষক শহীদ হয়েছেন।সরকারের অনড় এবং অনমনীয় মনোভাবই, কৃষকদের সীমান্তে প্রতিবাদ করতে বাধ্য করেছে।
এসকেএম ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে "প্রকল্প কর্মীদের" সর্বভারতীয় ধর্মঘটে সক্রিয় সমর্থন প্রদান করে, যা অঙ্গনওয়াড়ি,আশা,MDM, NCLP,SSA,NHM কর্মীদের অংশগ্রহণের সাক্ষী হবে।এই কর্মীরা শ্রমিক হিসাবে তাদের পরিষেবাগুলি নিয়মিত করার দাবি করছে, সর্বনিম্ন মজুরির বিধানের পাশাপাশি, সরকারি সংস্থা এবং পরিষেবার বেসরকারিকরণ বন্ধ করা এবং চারটি লেবার কোড প্রত্যাহারের দাবিও করছে।এসকেএম স্বীকৃতি দেয় যে এই প্রকল্প কর্মীরা দেশের এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুষ্টি, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শৈশবকালীন যত্ন এবং শিক্ষার মৌলিক সেবা প্রদান করে, যারা প্রধানত নারী, তারা শোষিত হচ্ছে এবং এমনকি ন্যূনতম জীবনধারণের উপযুক্ত স্তরের ভাতাও পায় না।এই কর্মীরা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোভিড মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রথম সারিতে ছিলেন।এসকেএম এই লক্ষ লক্ষ শ্রমিককে শুভেচ্ছা জানায়, এবং ২৪শে সেপ্টেম্বর তাদের ঐতিহাসিক সর্বভারতীয় ধর্মঘটের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে।
দেখা যাচ্ছে যে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার কৃষকদের আন্দোলন সমগ্র রাজ্যে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠায় আরও ঘাবড়ে যাচ্ছে।কৃষকদের আন্দোলন মোকাবিলায় উত্তরপ্রদেশের বিজেপি-এর পরিকল্পিত কিষাণ সম্মেলন রাজ্যের কৃষকদের বোকা বানাতে পারবে না, তারা বুঝতে পেরেছে যে বিজেপি মূলগত ভাবে কৃষক বিরোধী।মোদী সরকার কর্তৃক চাপানো তিনটি কালা কানুন প্রত্যাহারের জন্য এবং সমস্ত কৃষকদের জন্য গ্যারান্টিযুক্ত পারিশ্রমিকের এমএসপি নিশ্চিত করার জন্য উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা আরও বেশি সংখ্যায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে।
বিভিন্ন রাজ্যে, বিদ্যমান আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে এবং ২৭ শে সেপ্টেম্বরের ভারত বন্ধে একটি দুর্দান্ত সাফল্য অর্জনের জন্য কৃষকরা ব্যাপকভাবে সংঘটিত হচ্ছে।রাজস্থানের সিকারে, সারা ভারত কৃষক সভার নেতৃত্বে,১৬ তারিখ কৃষকদের একটি বিশাল সমাবেশ,"রোষ প্রদর্শন",হয়েছিল।এদিকে,মহারাষ্ট্রের নন্দুরবারে শুরু হওয়া শ্বেতকারী সম্ভাদ যাত্রা ধুলি জেলার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর ১৭ তারিখ নাসিকের মুলারে পৌঁছেছে।
২০ সেপ্টেম্বর বন্ধের পরিকল্পনার জন্য মুম্বাইতে একটি রাজ্য স্তরের প্রস্তুতি সভা রয়েছে।একই দিনে,উত্তর প্রদেশের সীতাপুরে কিষাণ মজদুর মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হবে।২২ শে সেপ্টেম্বর,উত্তরাখণ্ডের রুরকির লাক্সারে একটি কিষাণ মহাপঞ্চায়ত রয়েছে।
২২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে, কৃষকরা টিকরি এবং সিংঘুর প্রতিবাদ স্থানে ৫দিনের কাবাডি লীগ টুর্নামেন্ট করবে।প্রতিযোগীতায় বিভিন্ন রাজ্যের দলগুলি অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, নগদ পুরস্কার দেওয়ার হবে।
১৭ তারিখ, সমাজ সংস্কারক এবং "দ্রাবিড় আন্দোলনের জনক" পেরিয়ার ইভি রামসামীর জন্মবার্ষিকী দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কর্মসূচির মাধ্যমে পালন করা হয়েছে।তাঁর আত্মসম্মান আন্দোলন এবং জাত ও পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর সফল সামাজিক ন্যায় সংগ্রাম বর্তমান প্রজন্মের ভারতীয়দের জন্যও গভীর অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।
বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি এবং সহযোগী দলগুলির নেতাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।১৬তারিখ পাঞ্জাবের জলন্ধরে বিজেপি নেতা এইচএস কাহলন এমনই একটি প্রতিবাদের মুখোমুখি হন। হরিয়াণার পাণিপতে জেজেপি-এর নেতা অজয় চৌতালাকে কৃষকদের বিশাল সমাবেশ কালো পতাকা দেখিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানায়।বেশ কয়েকজন কৃষককে পুলিশ আটক করে পরে ছেড়ে দেয়।
বিবৃতি প্রদান করেছেন - বলবীর সিং রাজেওয়াল,ড.দর্শন পাল,গুরনাম সিং চারুনি,হান্নান মোল্লা,জগজিৎ সিং ডাল্লেওয়াল,যোগিন্দর সিং উগ্রাহান,শিবকুমার শর্মা 'কক্কাজি',যুধবীর সিং,যোগেন্দ্র যাদবSamyukta Kisan Morcha Email: samyuktkisanmorcha@gmail.com
শেয়ার করুন