জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও সঙ্ঘের অপপ্রচার

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

আগামী বছরই, জনসংখ্যায় চীনকে ছাপিয়ে যাবে ভারত! শুনিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ।

নিশ্চিতভাবেই সঙ্ঘ পরিবারের নেতারা সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে এক অলীক আতঙ্কের গল্প শোনাতে শুরু করবেন। সাক্ষী মহারাজরা হিন্দুদের অন্তত চারটি করে সন্তান উৎপাদন করতে বলবেন। সাধ্বী প্রাচীরা মনে করিয়ে দেবেন কীভাবে ‘প্রত্যেক মুসলমান মহিলা ৪০টি করে সারমেয়ের জন্ম দিয়ে চলেছে’। সবচেয়ে বড় কথা, এখন তাঁদের মাথার ওপর নরেন্দ্র মোদী, যিনি ২০০২-এর গণহত্যার পর তৈরি হওয়া মুসলমান শরণার্থী শিবিরগুলোকে ‘সন্তান উৎপাদনের কারখানা’ বলেছিলেন।

প্রকৃত তথ্য বলছে, মাথাপিছু হিন্দু ও মুসলিম মহিলাদের মধ্যে শিশুসন্তানের ব্যবধানের হার এক-ও নয়। ০.৪২। হিন্দুদের ক্ষেত্রে মহিলাপিছু ১.৯৪। মুসলিমদের ক্ষেত্রে ২.৩৬।

কোনও বেসরকারি সমীক্ষা নয়। এই তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে)-র সাম্প্রতিকতম প্রতিবেদন। নিজের জীবনে একজন মহিলা যত সন্তানের জন্ম দেন, তারই গড় হল 'ফার্টিলিটি রেট'। কেন্দ্রীয় সমীক্ষা অনুযায়ী, সার্বিকভাবে ২০১৯-২১ সালে ভারতে 'ফার্টিলিটি রেট' কমে দাঁড়িয়েছে দুই শতাংশে। যা ২০১৫-১৬ সালে ছিল ২.২। ১৯৯২-৯৩ সালে ছিল ৩.৪। ধর্মের নিরিখে সবচেয়ে বেশি কমেছে মুসলিমদের মধ্যে। এবং, গত দু'দশকে তেমনই ঘটনা ঘটেছে ভারতে। ১৯৯২ সালে হিন্দু মহিলাদের তুলনায় মুসলিম মহিলাদের গড়ে ১.১টি সন্তান বেশি ছিল। ২০২১ সালে ব্যবধান কমে হয়েছে ০.৪২।

প্রবণতা স্পষ্ট: ১৯৯১-৯২ থেকে ফার্টিলিটির হার মুসলিমদের মধ্যে কমেছে ৪৬.৫ শতাংশ। যেখানে হিন্দুদের মধ্যে কমেছে ৪১.২ শতাংশ।

অতীতের তুলনায় ভারতীয় মহিলাদের সন্তানসংখ্যা কমছে। এরই সঙ্গে সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে শিক্ষার হারের সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে। যেসব মায়েরা স্কুলশিক্ষা পাননি তাঁদের ক্ষেত্রে ফার্টিলিটির হার ২.৮২ শতাংশ। যাঁরা ১২-বছর, বা তার বেশি শিক্ষাঙ্গনে ছিলেন, তাঁদের মধ্যে এই হার ১.৭৮ শতাংশ। মুসলিম মহিলাদের মধ্যে (১৫-৪৯ বয়সি) স্কুলশিক্ষা পাননি ৩১.৪ শতাংশ। ৪৪ শতাংশ সাত বছরের বেশি সময় শিক্ষাঙ্গনে ছিলেন। হিন্দুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা যথাক্রমে ২৭.৬ শতাংশ ও ৫৩ শতাংশ।

সমীক্ষা অনুযায়ী হিন্দু পরিবার ৮১.৯ শতাংশ। মুসলিম পরিবার ১২.৪ শতাংশ। খ্রিস্টান ২.৮ শতাংশ। অথচ, হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে ক্রমাগত প্রচার চলছে দেশে হিন্দুদের জনসংখ্যার হার কমছে, বাড়ছে মুসলিমদের হার। ‘হিন্দু খতরে মে হ্যায়’-এর অন্যতম উপাদান এই প্রচার যে কতোটা অসত্য, সমীক্ষায় তা প্রমাণিত।

ছবিঃ সোশ্যাল মিডিয়া


শেয়ার করুন

উত্তর দিন