ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিতি বিবৃতি দিয়েছেঃ
জুলাই মাসের ৬ তারিখে ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন অনলাইনে পরীক্ষা সংক্রান্ত যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এবং একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়ে এবিষয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো তার বিরোধিতা জানাচ্ছে। এই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সারা দেশে অতিমারি এবং লকডাউনের কারনে যেখানে যেখানে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় সেই সব ক্ষেত্রেই একই অভিন্ন উপায়ে অনলাইন কিংবা ওপেন বুক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সারা দেশে মাত্র ৩৬ শতাংশ জায়গায় ইন্টারনেট ব্যাবহারের সুযোগ রয়েছে। সারা দেশের একটি বিরাট অংশের ছাত্র-ছাত্রীদেরই অনলাইনে ক্লাসে যুক্ত হবার সুযোগ নেই, আরও বিশেষ করে সেইসব ছাত্র-ছাত্রী যারা দুঃস্থ পরিবার থেকে পড়াশোনা করতে আসেন কিংবা বহু দূরবর্তী এলাকায় বসবাস করেন। ইউজিসি’র জারি করা এই বিজ্ঞপ্তি যথেষ্ট পক্ষপাতদুষ্ট এবং সেই কারনেই একে মেনে নেওয়া যায় না।
শিক্ষার প্রসঙ্গ দেশের সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্ত বিষয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় পঠন-পাঠন, শিক্ষন প্রনালী এবং পরীক্ষা ব্যাবস্থার ক্ষেত্রে সেইসব রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতি অনুসারে রাজ্য সরকার, রাজ্যের কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো ব্যাবহার করতে হয় তখন ইউজিসি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই একটি অভিন্ন পড়াশোনার পদ্ধতি ও পরীক্ষাবিধির নির্দেশিকা জারি করতে পারে না। এই প্রসঙ্গে শিক্ষনপ্রনালীর সাথে যুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং বিশেষ করে যাদের ভবিষ্যৎ এর উপরে নির্ভর করছে সেই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধিদের সাথেও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
সারা দেশেই বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা রাজ্যে অনেকগুলি অ্যাফিলিয়েশন প্রাপ্ত কলেজ রয়েছে। বহু ছাত্র-ছাত্রীই সংক্রমণের সময়ে বিধিনিষেধের কারনে অনলাইন পঠনপাঠন কিংবা অনলাইন পরীক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন কারন তারা নানা বাস্তব কারনে ইন্টারনেট ব্যাবহার করতে অপারগ।
এভাবে দেশের শিক্ষাব্যাবস্থাকে ডিজিটাল পরিকাঠামোর নামে ভেঙ্গে দেওয়া মেনে নেওয়া যায় না। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী, যাদের ভবিষ্যতের জন্য পাঠক্রমের শেষ পরীক্ষার ব্যাবস্থা করা এবং ডিগ্রী দেওয়ার বাস্তব প্রয়োজন রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিগত সেমেস্টারের ফলাফল অনুসারে এবছর ফাইনাল পরীক্ষা এবং ডিগ্রী প্রদানের জন্য মূল্যায়ন করা যেতেই পারে।
কর্তৃপক্ষের এহেন অসংবেদনশীল আচরণ এবং নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীরা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এবং মানসিক উৎকণ্ঠার শিকার হচ্ছেন। অনলাইন পরীক্ষা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা তাদের আরও পীড়িত করবে। ইতিমধ্যেই অনলাইন পঠনপাঠনের সাথে যুক্ত হতে না পারার হতাশা থেকে আত্মহত্যার মতো দুঃখজনক কয়েকটি ঘটনার কথা সামনে এসেছে।
এই পরিস্থিতিতে সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরো দাবী জানাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের ডিগ্রী দেওয়ার কাজে তাদের বিগত সেমেস্টারের ফলাফলের ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করা হোক।
শেয়ার করুন