১০ ডিসেম্বর,২০২৩,রবিবার
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-এর পলিট ব্যুরো ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে:
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচন
তিনটি হিন্দিভাষী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে স্পষ্ট জয় পেয়েছে বিজেপি।
যদিও কংগ্রেস দল তার ২০১৮ সালের ভোটের ভাগ কমবেশি ধরে রাখতে পেরেছে, তবুও তারা রাজস্থান এবং ছত্তিশগড়ে সরকার হারিয়েছে। তিনটি রাজ্যেই বিজেপির ভোটের হার বেড়েছে।
তিনটি রাজ্যেই মূল হিন্দুত্ববাদী ভোটকে একীভূত করা হয়েছে। মিডিয়ার বৃহৎ অংশের উপর বিজেপির নিয়ন্ত্রণ, বিপুল অর্থের ক্ষমতা এবং জাতিগত বিভাজনের অভিসন্ধীমূলক ব্যবহার বিজেপিকে সফল হতে অবদান রেখেছে।
কংগ্রেস দল তেলঙ্গানায় দুই মেয়াদের টিআরএস/বিআরএস সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে একটি নির্ণায়ক বিজয় অর্জন করেছে। বিজেপি অবশ্য সেখানে তাদের অবস্থানের উন্নতি করেছে।
এই ফলাফলগুলি স্পষ্টভাবে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক শক্তিগুলির জনগণের জীবিকা, গণতান্ত্রিক অধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতা এবং ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র রক্ষায় তাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়।
মিগজাউম ঘূর্ণীঝড়
পলিট ব্যুরো তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্র প্রদেশে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের ব্যাপক ক্ষতির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর প্রভাবে তামিলনাড়ুতে ২৪ জন এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। কোটি কোটি টাকার সম্পদ ছাড়াও হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। প্লাবিত এলাকায় জল না কমায় জনজীবন এখনও বিপর্যস্ত।
কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অন্তর্বর্তীকালীন আর্থিক সাহায্য প্রদান করেনি। পুনর্বাসন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য কেন্দ্রকে ঔদার্যের সাথে এগিয়ে আসতে হবে।
প্যালেস্তিনীয়দের গণহত্যা
গাজা এবং ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইস্রায়েলী হামলায় এখনও পর্যন্ত ১৭,০০০ এর বেশি প্যালেস্তিনীয়দের প্রাণহানি ঘটেছে যার মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। ইস্রায়েল দ্বারা প্যালেস্তিনীয়দের এই ধরনের জাতিগত নিধনের অবিলম্বে অবসান এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক দাবি উঠেছে।
অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত ইস্রায়েলি পণবন্দীদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রায় সর্বসম্মত প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে গত ৮ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেয়। পলিট ব্যুরো এর তীব্র নিন্দা করছে।
পলিট ব্যুরো পুনরায় দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করছে যে বিশ্বের দরবারে মোদি সরকারকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দাবি জানাতে হবে।
আইপিসি, সিআরপিসি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইন প্রতিস্থাপনের বিলগুলি একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠাতে হবে
মোদি সরকার বিদ্যমান ভারতীয় দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের প্রতিস্থাপনের জন্য তিনটি বিল এনেছে এবং সেগুলিকে সংসদের মাধ্যমে পাশ করিয়ে দিতে চাইছে এবং অযথা তাড়াহুড়ো করে এগুলি কার্যকর করতে চাইছে। এই খসড়া বিলগুলিতে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে যা গণতান্ত্রিক অধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক পরিণতি ঘটাবে।
এই বিলগুলিকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করার জন্য লোকসভা এবং রাজ্যসভার একটি যৌথ সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠাতে হবে এবং সেগুলি এই পর্যালোচনার পরেই কেবল প্রণীত হতে পারে।
অবিলম্বে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন করতে হবে
সীমানা পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়েছে; চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং রাজ্যে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের দাবি করা হচ্ছে , পলিট ব্যুরো ২০১৮ সাল থেকে স্থগিত থাকা জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচন অবিলম্বে আয়োজনের দাবি জানায়।
পরিবর্তে, লোকসভা সম্প্রতি কাশ্মীর পুনর্গঠন আইন সংশোধন করে দুটি বিল পাস করেছে সুপ্রীম কোর্টে যার বিরোধীতা করা হয়েছে। এই সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রীম কোর্ট আগামী ১১ ডিসেম্বর রায় দান করবে। সুপ্রীম কোর্টের রায়ের জন্য অপেক্ষা করার পরিবর্তে, খুব তাড়াহুড়ো করে, আইনটি সংশোধন করা হয়েছে যা গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়িক উভয় রীতিনীতিরই গুরুতর লঙ্ঘন। উপরন্তু, এই সংশোধনীগুলি উপ রাজ্যপাল দ্বারা নির্বাচিত বিধানসভায় মনোনয়নের সংস্থানও দিয়েছে। এটা অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক। এই জাতীয় যেকোন মনোনয়ন অবশ্যই নির্বাচিত আইনসভার দ্বারা করা উচিত এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত কোন অনির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা নয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভা
আগামী ২৮-৩০ জানুয়ারি ,২০২৪ এ তিরুবনন্তপুরমে সিপিআিই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সভা ডাকা হয়েছে।