২৬জুন,২০২৩,সোমবার
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর পলিট ব্যুরো ২৪-২৫ জুন নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে:
পাটনা মিটিং
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতেশ কুমারের আমন্ত্রণে ২৩শে জুন পাটনায় ১৫টি বিরোধী দল বৈঠক করেছিল। সিপিআই(এম) আমাদের প্রজাতন্ত্রের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক চরিত্র এবং গণতান্ত্রিক অধিকার , নাগরিক স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকারের বিষয়ে জনগণকে আমাদের সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত গ্যারান্টিগুলিকে রক্ষা করার জন্য বিরোধী দলগুলির মধ্যে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে।
এই সভায় সিপিআই(এম) প্রস্তাব দিয়েছে যে বিরোধী দলগুলিকে অবশ্যই জাতীয়স্তরের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সর্বভারতীয় প্রচারাভিযান চালাতে হবে এবং জনগণের জীবন-জীবিকার দ্রুত অবনতির বিষয়ে যৌথভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচী গ্রহণ করতে হবে।আসন্ন ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিরোধীদের ভোট বিভাজন থেকে বিজেপি'র সুবিধা পাওয়া কমাতে বিরোধী দলগুলির মধ্যে প্রতিটি রাজ্যের স্তরে আলোচনা অবশ্যই শুরু করতে হবে।
মণিপুর
পলিট ব্যুরো মণিপুরে জাতিগত হিংসা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে । গত ৩ মে থেকে শুরু হওয়ার ৭ সপ্তাহ পরেও এই পরিস্থিতি একটানা অব্যাহত রয়েছে।
বিজেপি'র "ডাবল ইঞ্জিন" সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করতেও রাজি নন প্রধানমন্ত্রী মোদি! হিংসা শুরু হওয়ার ২৬ দিন পর ২৯ মে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরও সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকের কোনও ফল হয়নি কারণ মোদি সরকার রাজ্যে বীরেন সিং নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে বরখাস্ত করতে অস্বীকার করেছিল।এই জটিল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার নিজেদের অযোগ্যতা প্রমাণ করেছে।
পলিট ব্যুরো অবিলম্বে এই লাগাতার হিংসা বন্ধ এবং স্বাভাবিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদির মার্কিন সফর
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী মোদির সরকারী রাষ্ট্রীয় সফর ভারতের মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অধস্তন ছোট অংশীদার হিসাবে অবস্থানকেই আরও পাকাপোক্ত করেছে। আগের বড় সামরিক এবং প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলির পরেই এই সফরে জিই-এফ ৪১৪ জেট ইঞ্জিনের যৌথ উৎপাদনের মতো প্রতিরক্ষা চুক্তিগুলি ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার' হিসাবে স্থাপন করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বিশ্বব্যাপী আধিপত্যকে শক্তিশালী করার এবং চীনকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযানের জন্য ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এবং সামরিক অংশীদার হিসাবে দেখে। বিডেন প্রশাসন মোদি সরকারের অধীনে ভারতে মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের বিষয়গুলি উত্থাপন করতে অস্বীকার করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে এমনকি যখন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাও এই বিষয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছে।মার্কিন কংগ্রেসের ৭৫ জন সদস্য মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে মোদি সরকারের খতিয়ান নিয়ে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন।
অভিন্ন দেওয়ানী বিধি
অভিন্ন দেওয়ানী বিধি-এর বিষয়ে আবারও আলোচনা শুরু করেছে আইন কমিশন।সর্বশেষ আইন কমিশন একই ধরনের আলোচনা করেছিল এবং ২০১৮ সালে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল যে "এই পর্যায়ে অভিন্ন দেওয়ানী বিধি প্রয়োজনীয় বা কাম্য নয়"।সিপিআই(এম) এই অবস্থানকেই সমর্থন করে ।
সমতার সাথে অভিন্নতাকে এক করা যায় না। সিপিআই(এম) সব সম্প্রদায়ের মহিলাদের জন্য সমান অধিকারের দাবিকেই প্রাধান্য দেয়।এইসব সম্প্রদায়ের সমস্ত নারী-পুরুষের সক্রিয় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য ব্যক্তিগত বা প্রথাগত আইনের সংস্কারের মাধ্যমেই এই সমতার দিকে সর্বোত্তমভাবে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।
জনগণের অর্থ লুটকে বৈধতা দেওয়া
পলিট ব্যুরো ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের দ্বারা জনগণের সঞ্চয় লুণ্ঠনকে বৈধ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সার্কুলার প্রত্যাহারের দাবি করেছে। এরা বিপুল ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়েছে এবং পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও পরিশোধ করতে অস্বীকার করেছে।আরবিআই সার্কুলার এই ধরনের খেলাপিদের ব্যাঙ্কগুলির সাথে একটি আপস নিষ্পত্তির জন্য যেতে অনুমতি দিয়েছে।এ ধরনের ব্যক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং ব্যাংক ঋণের পুরোটাই আদায় করতে হবে।
রাজ্যগুলিতে চাল সরবরাহ পুনরায় শুরু করতে হবে
অত্যন্ত স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মোদি সরকার ভারতের ফুড কর্পোরেশনকে রাজ্য সরকারগুলির কাছে চাল বিক্রি না করার নির্দেশ দিয়েছে।এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হল অ-বিজেপি সরকারগুলিকে তাদের রাজ্যগুলির জনগণকে ত্রাণ প্রদানের আশ্বাস পূরণে বাধা দেওয়া।
প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার প্রকল্প বাতিল করতে হবে
বিদ্যুৎ গ্রাহকদের জন্য প্রি-পেইড ব্যবস্থা সহ স্মার্ট মিটার প্রকল্পটি মোদি সরকার বাস্তবায়ন করছে। অনেক রাজ্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে বাধ্য হয়েছে এবং এর ফলে সরকার বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছে এবং সর্বাধিক লাভের জন্য ব্যক্তিগত কর্পোরেটদের কাছে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। এরফলে দরিদ্র ও কৃষকদের ওপর অসহনীয় বোঝা চাপবে। অবিলম্বে এই প্রকল্প বাতিল করতে হবে।
আসামের বিধানসভা ক্ষেত্রের সীমানা পুনর্নিধারণ
পলিট ব্যুরো ২০০১ সালের আদমশুমারির উপর ভিত্তি করে, ২০২৩ সালে আসামের বিধানসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা নির্ধারণের বিরোধিতা করে।স্পষ্টতই, ক্ষমতাসীন বিজেপির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণ ও তা এগিয়ে নেওয়ার জন্য সীমানা নির্ধারণের জন্য আলাদা কমিশন গঠন না করেই নির্বাচন কমিশন এই কাজ করেছে।
কুস্তিগীরদের প্রতিবাদ
মোদি সরকার এবং বিজেপির সমর্থক যৌন হয়রানির মামলায় অভিযুক্তদের নির্লজ্জের মত আড়াল করা ও রক্ষা করা হচ্ছে। মহিলা কুস্তিগীরদের ওপর যৌন হয়রানির প্রাথমিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সরকার তাদের সাংসদকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।সরকার কোন নিয়মের তোয়াক্কাই করেনি। পকসো-এর অধীনে অভিযোগ সহ মামলার তদন্তকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করছে যাতে অভিযুক্ত সময় পায় অভিযোগকারিণীকে তার বিবৃতি প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়ার জন্য।যৌন হয়রানির শিকার অপ্রাপ্তবয়স্কদের অভিযোগের সব ক্ষেত্রেই এর গুরুতর প্রভাব রয়েছে ৷ সিপিআই(এম) অবিলম্বে অভিযুক্ত সাংসদকে গ্রেপ্তারের দাবি পুনরায় করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত ভোট
এইটাই এখন রীতি হয়ে উঠেছে যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের অধীনে নির্বাচন মানেই বড় আকারের হিংসা এবং সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটবে।এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে মনসুর আলম নামক একজন তরুণ সিপিআই(এম) কর্মী সহ ১০ জন ইতিমধ্যেই প্রাণ হারিয়েছেন। ।
এত হিংসা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ গণতন্ত্রের এই হত্যাকাণ্ডকে প্রতিহত করছে এবং জনগণের পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠায় সাহসিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসছে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নজিরবিহীন সন্ত্রাসের কারণে ৩৪ শতাংশ আসনেই তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল। এই নির্বাচনে, এই ধরনের সন্ত্রাসকে প্রতিহত করে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলি প্রায় ২/৩ ভাগ কমে গেছে।
এনএফএইচএস সমীক্ষা থেকে বিকলাঙ্গতার প্রশ্ন বাদ দেওয়া
পলিট ব্যুরো জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা-৬ থেকে বিকলাঙ্গতা সম্পর্কিত প্রশ্নগুলি বাদ দেওয়ার বিষয়টিতে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।এমনকি আগের রাউন্ডে উত্থাপিত প্রশ্নগুলি ত্রুটিপূর্ণ ছিল, কিন্তু সেগুলিকে সম্পূর্ণরূপে বাদ দেওয়া একটি পিছিয়ে যাওয়া পদক্ষেপ। পলিট ব্যুরো এনএফএইচএস-৬-এ বিকলাঙ্গতা সম্পর্কিত প্রশ্ন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভা
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠক হবে ৪,৫ এবং ৬ আগস্ট ২০২৩ তারিখে নয়াদিল্লিতে ৷