তারিখঃ রবিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২১
১৭ এবং ১৮ ডিসেম্বর নয়া দিল্লীতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরো সভা হয়েছে। পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি জারী করেছেঃ
কোভিড মহামারীঃ ওমিক্রন সংক্রমনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে
ওমিক্রন সংক্রমনের ঘটনা বাড়তে থাকায় নতুন করে মহামারী সংক্রান্ত বিপদ সৃষ্টি হচ্ছে। চলতি বছর শেষের আগেই দেশের সকল পূর্ণবয়স্কদের টিকা দেবার ঘোষণা সত্বেও ১৮ই ডিসেম্বর অবধি মাত্র ৩৯ শতাংশ নাগরিকই টিকার দুটি ডোজ পেয়েছেন।
দেশে নতুন করে জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে অবিলম্বে টিকাকরন কর্মসূচির গতি বাড়াতে হবে।
মহিলাদের বিবাহের বয়স বৃদ্ধি করা প্রসঙ্গে
ভারতে মহিলাদের বিবাহযোগ্য বয়সকে ১৮ বছর থেকে বাড়িয়ে ২১ বছর করার জন্য বিজেপি সরকারের প্রস্তাবিত বিল সমর্থন করছে না সিপিআই(এম)। এই জাতীয় বিলের জন্য সরকার যেসকল কারণ উত্থাপন করেছে তা আদৌ বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই খসড়া বিল সম্পর্কে আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা দরকার, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যথাযথ মতবিনিময়ের জন্য সংসদের সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে এই বিল পাঠানো উচিত।
১৮ বছর বয়সী মহিলারা আইনত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। বিবাহের উদ্দেশ্যে, তাকে কিশোর হিসাবে বিবেচনা করা স্ব-বিরোধী এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ককে নিজের পছন্দমতো সঙ্গী বাছাই করার ব্যক্তিগত অধিকার এতে লঙ্ঘিত হয়। এহেন প্রস্তাবে একজন মহিলাকে তার নিজের জীবনের পথ নির্ধারণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে।
ন্যূনতম বয়স ১৮ হওয়া সত্বেও সরকারী তথ্যে স্পষ্ট ২০১৭ সালে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেই মহিলাদের বিবাহের গড় বয়স ২২.১ বছর। তাই এই ধরনের আইন অপ্রয়োজনীয়। যদি এই বিল স্বাস্থ্যের বিবেচনায় হয়, যেমনটা সরকার দাবি করছে, তাহলে যা প্রয়োজন তা হল মায়েদের ও শিশুমৃত্যু রোধে পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মহিলাদের বিবাহের বয়স বাড়ানো কোনো সমাধান নয়।
লখিমপুর খেরিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত বিশেষ তদন্ত দলের দায়ের করা এফআইআর-এ বলা হয়েছে "এই মৃত্যুর জন্য দায়ী পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র"। এ ঘটনায় নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন আটজন। প্রধান অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে। তার বিরুদ্ধে গনঅসন্তোষ সত্ত্বেও, প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে নিজের মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করেননি।
অবিলম্বে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র’কে বরখাস্ত করার দাবী জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।
সফল ব্যাঙ্ক ধর্মঘট
১৬ এবং ১৭ ডিসেম্বরে সারা দেশে সফল ধর্মঘটের জন্য প্রায় ১০ লক্ষ ব্যাঙ্ক কর্মচারী এবং অফিসারদের অভিনন্দন জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো৷ এই ধর্মঘটে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ব্যাপক সমর্থন দিয়েছে এবং জনগণের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে রাখা দেশের জনগণের সারাজীবনের সঞ্চয়কে কেন্দ্রীয় সরকারের আড়ালে থাকা ধান্দাবাজদের লুটপাটের জন্য তুলে দেওয়ার চক্রান্ত তুলে ধরেছে ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলি, তাই এমন সমর্থন পাওয়া গেছে। মোদী সরকারের আমলে জনসাধারণের সঞ্চিত অর্থকে পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করে বড়লোকদের জন্য ১০.৭ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ বাতিল করা হয়েছে।
এভাবে সরকারী ব্যাঙ্কগুলিকে বিপদে ফেলে, ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণের অজুহাত হিসাবে তাকেই ব্যবহার করতে চাইছে মোদী সরকার৷ এতে দেশ ও জনগণের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হবে।
ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরন সংক্রান্ত সমস্ত পরিকল্পনা অবিলম্বে খারিজ করার দাবী জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
নভেম্বর মাসে পাইকারি মূল্য সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪.২ শতাংশ, যা গত ত্রিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাইকারি বাজারে জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৩৯.৮১ শতাংশ; খাদ্য ও জ্বালানির দাম গত বারো বছরে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। এতে মানুষের দুর্দশা আরও বাড়ছে।
এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে পার্টির সকল ইউনিটকেই সক্রিয় হতে আহ্বান জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।
বেকারত্ব
২০২১ সালের শুধু নভেম্বর মাসেই, ৬৮ লক্ষ বেতনপ্রাপ্ত শ্রমিক নিজেদের কাজ হারিয়েছেন। বিগত ১৭-সপ্তাহে শহরাঞ্চলে বেকারত্বের সূচক সর্বোচ্চ হয়েছে এবং সামগ্রিক বেকারত্ব শেষ ৯-সপ্তাহে সর্বোচ্চ অবস্থায় পোঁছে গেছে।
মুদ্রাস্ফীতির গতিও একই সাথে বাড়ছে যার সম্মিলিত প্রভাবে জনগণের উপর আরও বেশি দুর্দশা চেপে বসছে এবং দেশের অর্থনীতিতে চাহিদার ক্রমসংকোচনে আগামিদিনে মন্দার সংকটকে গভীরতর করে তুলছে।
মানুষের কাছে সরাসরি অর্থ পৌঁছে দিতে হবে, অবিলম্বে আয়কর সীমার বাইরে থাকা প্রত্যেক পরিবারকে প্রতি মাসে ৭৫০০ টাকা দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অধীনস্থ সংস্থায় পর্যবসিত করা প্রসঙ্গে
ভারতের নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক সংস্থা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনায় যারা একমাত্র কর্তৃপক্ষ। এই দায়িত্ব পালনের জন্যই নির্বাচন কমিশনকে দেশ পরিচালনার কার্যনির্বাহী সংস্থা (সরকার) থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকতে হবে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং আরও দুই নির্বাচন কমিশনারকে যেভাবে তলব করা হয়েছে তা সংবিধান এবং আইন লঙ্ঘনের চরম উদাহরণ। মোদি সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও নিরপেক্ষতার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছে পলিট ব্যুরো। মোদী সরকারকে দেশের নির্বাচন সংক্রান্ত সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।
২৩তম পার্টি কংগ্রেস প্রসঙ্গে
পার্টির ২৩তম কংগ্রেসের জন্য খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদন পলিট ব্যুরোর আলোচনায় চূড়ান্ত হয়েছে। ২০২২ সালের ৭-৯ই জানুয়ারি, হায়দ্রাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এই খসড়া প্রতিবেদন পেশ করা হবে।
* ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর থেকে প্রকাশিত বিবৃতি