পলিট ব্যুরোর সভা
তারিখঃ সোমবার, ১১ই অক্টোবর – ২০২১
৯ এবং ১০ই অক্টবর,২০২১ দিল্লীতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরোর সভা হয়। পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি জারী করেছে।
লখিমপুর খেরির নৃশংস হত্যাকান্ড
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির ছেলে আশীষ মিশ্রই কৃষক গণহত্যায় প্রধান অভিযুক্ত। সুপ্রিম কোর্ট অসন্তোষ প্রকাশের পাঁচ দিন পর শেষ পর্যন্ত তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এই বর্বর নৃশংসতায় যুক্ত থাকার কারনে মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করতে হবে। এই ঘটনায় চারজন কৃষক এবং একজন সাংবাদিকসহ আটজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি মন্ত্রী থাকাকালীন ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব না।
এই ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবেই এই নৃশংসতা চালানো হয়েছে। ঐসব ভিডিও ফুটেজ থেকে প্রধান অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে।
সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরো দাবী জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রকে অবিলম্বে বরখাস্ত এবং আশিস মিশ্রর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাচ্ছে।
জরুরী ভিত্তিতে টিকাকরণের গতি তীব্র করতে হবে
সকল প্রোপাগান্ডা এবং প্রচার সত্ত্বেও, আমাদের দেশে মাত্র ১৮.৯ শতাংশ মানুষই এখনও অবধি সম্পূর্ণরূপে টিকা পেয়েছে। ৪৮.৭ শতাংশ মানুষ কেবলমাত্র প্রথম ডোজ পেয়েছেন। বছরের শেষ নাগাদ সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া হবে বলে দেশের শীর্ষ আদালতের সামনে কেন্দ্রীয় সরকার আশ্বাস জ্ঞাপন করা সত্বেও এই অবস্থা জারী রয়েছে। বর্তমানে যে গতিতে টিকাকরন চলছে তাতে সার্বিক টিকাকরনের লক্ষ্য পূরণ করা কার্যত অসম্ভব।
সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরো দাবি জানাচ্ছে, অবিলম্বে টিকাকরণ অভিযান জোরদার করা হোক। উৎসবের মরসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে, টিকাকরণের কম গতি মহামারীর দীর্ঘায়িত প্রভাব বিস্তারের পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
অসহনীয় মূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে হবে
টানা ছয় দিন পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে। গত দশ মাসে পেট্রোল - ডিজেলের ২০ টাকারও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশে পেট্রলের গড় দাম লিটার প্রতি প্রায় ১১০টাকা এবং ডিজেলের দাম ১০০টাকা প্রতি লিটার। এই মূল্যবৃদ্ধি দেশের জনগণের এক বিশাল অংশের জীবিকা নষ্ট করে দিচ্ছে।
সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির সর্পিল আক্রমনের পাশাপাশি এহেন মূল্যবৃদ্ধি গতি বাড়িয়েছে। পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। রান্নার তেল, সবজি এবং ফল, দুধ ইত্যাদি সবই অতি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। ২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ২০৫ টাকাএবং দেশের অনেক জায়গাতেই একটি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ১০০০টাকারও বেশি। ক্রেতা মূল্য সূচক (Consumer Price Index) ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মহামারী, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, আয়ের সুযোগ হ্রাস এবং দারিদ্র্যের কারণে বহু মানুষ ইতিমধ্যেই দুর্দশার শিকার হয়ে ঋণে জর্জরিত হচ্ছেন। এই মূল্যবৃদ্ধিতে তারা আরও বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরোর দাবি, পেট্রোলিয়াম পণ্যের কেন্দ্রীয় আবগারি শুল্ক অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকার ৩.৬১ লক্ষ কোটি টাকার বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করেছে।
এয়ার ইন্ডিয়া বিক্রির নিন্দা জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলে দেশের জাতীয় সম্পদের নিরলস লুট অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় পতাকার বাহক সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াকে টাটাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে। মোদি সরকার কর্তৃক এই বিক্রি টাটাদের বিনামূল্যে উপহার দেওয়ার সমতুল্য। টাটারা এই বিক্রির সূত্রে ১৫৩০০ কোটি টাকার ঋণের দায় নেবে, বোঝাই যাচ্ছে পরবর্তীকালে সেই ঋণ সম্পর্কে নতুন সিদ্ধান্ত হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে কেবলমাত্র ২৭০০ কোটি টাকা নগদ দিয়েই এয়ার ইন্ডিয়ার ৪৬২৬২ কোটি টাকা মূল্যের বিপুল সম্পদের মালিক হল টাটা গোষ্ঠী। অবশিষ্ট ঋণের ৪৬,২৬২ কোটি টাকার দায় বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার, যার অর্থ এই ঋণ পরিশোধের ভার জনগণের উপরে চাপানো হবে।
সুতরাং একে কেবল জাতীয় সম্পদের লুট বলাই যথেষ্ট নয়। একটি প্রামান্য সরকারি সংস্থা যা একইসাথে দেশের জাতীয় বিমান সংস্থাও তাকে টাটাদের ইচ্ছাপূরণের জন্য বিক্রি করে দেওয়া হল অথচ দেশের জনগণকে এই বিক্রির জন্য বোঝা বইতে হবে।
সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরো ভারতের সম্পদে এহেন লুটের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিবাদের আহ্বান রাখছে।
জম্মু ও কাশ্মীরে পরিস্থিতি
সাম্প্রতিক কাশ্মীর উপত্যকায় নিরীহ মানুষকে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরো। দ্য পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লারেশন (পিএজিডি) বলেছে, "এই হত্যাকাণ্ডগুলি কাশ্মীরে এমন ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে যা ৯০’এর দশকের শুরুর দিক থেকে আর দেখা যায় নি "।
জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা থেকে সরিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করতে এবং কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ দমনের অজুহাত দেখিয়ে সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা এবং ৩৫(ক) ধারা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। কার্যত দিল্লী এবং জম্মু-কাশ্মীর দুই জায়গাতেই নাগরিকদের বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে এবং দুজায়গাতেই কেন্দ্রের শাসন থাকা সত্বেও ভয়াবহ হিংসার ঘটনা ঘটেছে। অত্যন্ত জঘন্য কায়দায় এই দুই জায়গাতেই অধিবাসীদের মধ্যে বেছে বেছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিশানা করে জনসাধারনের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করা হয়েছে।
জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী যতই “দিল কি দুরি, দিল্লী কি দুরি” বলে স্লোগান তুলুন না কেন এখনো অবধি সেই স্লোগান কার্যত এক ফাঁকা আওয়াজই থেকে গেছে। লাগাতার গ্রেপ্তার এবং সরকারী বলপ্রয়োগের অতিরিক্ত ব্যাবহার এর কোনটাই সমস্যার সমাধানে প্রকৃত উপায় নয়। জম্মু – কাশ্মীর উপত্যকায় শান্তি ফেরাতে জনগণের আস্থা অর্জনই একমাত্র পথ।
সিপিআই(এম)-র ২৩তম পার্টি কংগ্রেস
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে কেরালার কান্নুরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া পার্টির ২৩তম কংগ্রেসকে সামনে রেখে রাজ্য সম্মেলনগুলি শুরু হয়েছে। দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের রাজ্য ইউনিটগুলি সফলভাবে তাদের সম্মেলন শেষ করেছে এবং সর্বভারতীয় কংগ্রেসের জন্য প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেছে। অন্যান্য রাজ্য সম্মেলনগুলির সময়সুচি নির্ধারিত হয়েছে।