PB Statement

পলিট ব্যুরোর বিবৃতি

২৮ ডিসেম্বর,বুধবার,২০২২

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী)-এর পলিট ব্যুরো ২৭-২৮ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বৈঠক করে নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে:

অর্থনীতি: পলিট ব্যুরো ভারতীয় অর্থনীতিতে গভীর মন্দা পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সরকারের সমস্ত প্রচার এবং দাবি সত্ত্বেও, ভারতের উৎপাদক ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ বাড়ছে না। অক্টোবরে শিল্প উৎপাদনে ৪% গভীর সংকোচন হয়েছে ,এই নিয়ে ৩ মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটল। বছরভিত্তিক তুলনামূলক উৎপাদনের তথ্য দেখাচ্ছে উল্লেখযোগ্য ৫.৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অক্টোবরে শিল্প উৎপাদনের সূচক (IIP) দাঁড়িয়েছে ১২৯.৬,২০২১-এর সেপ্টেম্বর থেকে এটা সর্বনিম্ন। টেকসই ভোক্তা পণ্যের উৎপাদন ১৫.৩ শতাংশ এবং অ-টেকসই ভোক্তা পণ্য উৎপাদন ১৩.৪ শতাংশ কমেছে।এটি মানুষের ক্রয় ক্ষমতার ক্রমাগত হ্রাসের ইঙ্গিত।

ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব: বেকারত্বের হার বাড়ছে। আরও খারাপ বিষয় হল , শ্রমজীবীদের অংশগ্রহণের হার এবং কর্মসংস্থানের হারের পতনও সমানতালে চলছে।নভেম্বরে ৮ শতাংশের তুলনায় ডিসেম্বরে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৮ শতাংশে। শহরে বেকারত্বের হার ৯.৬ শতাংশ হয়েছে যেখানে গ্রামীণ বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৭.৮ শতাংশ।

মূল্যবৃদ্ধি: মূদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির হার অব্যাহত। মানুষের জীবনযাত্রার উপর আরো দুর্দশা চাপাচ্ছে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি।

পলিট ব্যুরো কর্মসংস্থানমুখী পরিকাঠামোর ক্ষেত্রগুলিতে ব্যাপক হারে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবি করে, এটা ছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে না।

খাদ্য নিরাপত্তা আইনের(FSA) সাথে PMGKAY-এর একত্রীকরণ: ২০২৩ সালের জন্য আমাদের দেশের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মানুষের জন্য ২০১৩ সালের খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে 'বিনামূল্যে' রেশন একটি স্বীকৃতি যে দেশের ক্ষুধার আতঙ্ক অন্যথায় কাটিয়ে উঠতে পারা সম্ভব নয়। ভারতে ক্ষুধাকে "খুব গুরুতর" হিসাবে বর্ণনা করে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্সের রিপোর্ট মোদী সরকারের সোচ্চার অস্বীকার সত্ত্বেও বাস্তব।

৮১.৩৫ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে ৫ কেজি খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হবে, কিন্তু তারা এখন ভর্তুকিযুক্ত ৩ টাকা/কেজি চাল, ২ টাকা/কেজি গম, ১ টাকা/কেজি শস্য এই হিসাবে ৫ কেজি খাদ্যশস্য থেকে বঞ্চিত হবে যা FSA এর অধীনে বিদ্যমান ছিল।ফলস্বরূপ, ৫ কেজি ভর্তুকিযুক্ত খাদ্যশস্যের জন্য, পুষ্টির মাত্রা বজায় রাখার জন্য যা অত্যাবশ্যকীয়, জনগণকে খোলা বাজারে যেতে হবে যেখানে গম প্রায় ৩০ টাকা/কেজি এবং চাল ৪০ টাকা/কেজি বিক্রি হচ্ছে। এটি বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রামরত কোটি কোটি ঘরের জন্য একটি নিষ্ঠুর আঘাত হবে।

পলিট ব্যুরো দাবি করে যে PMGKAY-এর অধীনে বিনামূল্যে ৫ কেজি এবং FSA-এর অধীনে ভর্তুকিযুক্ত হারে ৫ কেজি খাদ্যশস্য প্রদান উভয়ই অব্যাহত রাখা উচিত।

সাম্প্রদায়িক মেরুকরণকে তীক্ষ্ণ করা হচ্ছে: ক্ষমতাসীন দলের একজন সাংসদ মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক, অপরাধমূলক হামলার হুমকি দিয়েছে যা সম্পূর্ণ নিন্দনীয়। আশ্চর্যের বিষয়, কর্তৃপক্ষ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ফৌজদারি মামলা নথিভুক্ত করার পরিবর্তে বলেছে যে তারা এই ভাষণের বিরুদ্ধে একটি 'অভিযোগ' এলে তবে এই বিষয়ে ভূমিকা নেবে।যারা এই ধরনের বিষাক্ত ঘৃণা, হিংসা এবং সন্ত্রাস ছড়ায় তাদের জন্য এটি প্রকাশ্য পৃষ্ঠপোষকতা এবং সুরক্ষাপ্রদান ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুসলমান শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিপজ্জনকভাবে তীব্র ঘৃণার খবর বাড়ছে। খ্রিস্টান সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনাও বাড়ছে।

মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপস (এমএএনএফ) নামে মুসলমান শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি এবং ফেলোশিপের প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে।সরকার সংসদকে জানিয়েছে যে অন্যান্য বিভিন্ন স্কলারশিপ স্কিমের সাথে MANF মিলিয়ে দেওয়ার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা স্পষ্টতই ভুল। মুসলমান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন রাজ্যে ওবিসি হিসাবে বিবেচনা করা হয় না।এই বৃত্তি প্রকল্প, পুনরায় চালু করা আবশ্যক।

বিচারব্যবস্থা: মোদি সরকার বিচার বিভাগীয় নিয়োগ এবং বদলিতে সরকারের পক্ষে প্রভাব বাড়ানোর প্রচেষ্টা জোরদার করেছে যার ফলে বিচার বিভাগ এবং নির্বাহী বিভাগ, কলেজিয়াম সিস্টেম এবং ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের (এনজেএসি) মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে যা সুপ্রিম কোর্ট দ্বারা বাতিল করা হয়েছিল।

সিপিআই(এম) দৃঢ়ভাবে বিচার বিভাগীয় নিয়োগের উপর নির্বাহী নিয়ন্ত্রণের জন্য মোদী সরকারের সমস্ত প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে এবং প্রতিহত করতে দায়বদ্ধ । বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে আপসহীনভাবে সমুন্নত রাখতে হবে।

ভীমা কোরেগাঁও বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে : ১ জানুয়ারি, ২০১৮-এ ভীমা কোরেগাঁও-তে জাতিগত হিংসার তদন্তকারী একজন প্রবীন পুলিশ অফিসার শপথ নিয়ে স্বীকার করেছেন যে পুনে শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে আয়োজিত এলগার পরিষদের অনুষ্ঠানের ঐ হিংসার ঘটনায় কোনও ভূমিকা ছিল না।

এই প্রেক্ষিতে, এর সাথে জড়িত সকল ইউএপিএ বন্দীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

সমবায় বিল: যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আক্রমণ: সিপিআই(এম) মাল্টি স্টেট কো-অপারেটিভ সোসাইটিস অ্যামেন্ডমেন্ট বিল ২০২২ কে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং রাজ্যগুলির অধিকারের উপর আক্রমণ হিসাবে মনে করে এবং তীব্র বিরোধিতা করে। সমবায় রাজ্যের বিষয়। এই প্রস্তাবিত বিলটি রাজ্যের আইন অনুসারে কাজ করে এমন সমবায় সমিতিগুলির উপর কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার একটি জঘন্য প্রচেষ্টা।এই বিল সমবায় সমিতিকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি নির্বাচিত রাজ্য সরকারগুলির অধিকারকে ক্ষুন্ন করে এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপর আক্রমণ।

ত্রিপুরা: ত্রিপুরায় রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ক্ষমতাসীন বিজেপি, সিপিআই(এম) এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে তার হিংস্র আক্রমণ জোরদার করেছে ৷

সিপিআই(এম), অন্যান্য বাম দল এবং কংগ্রেস দল যৌথভাবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং বিজেপি সরকারের অত্যাচারী, স্বৈরশাসনে ধ্বংস হওয়া প্রকৃত আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে।

বিধানসভা নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা আটকানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সক্রিয় ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুরোপুরি পুনরুদ্ধার হওয়া প্রয়োজন ।

কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং : সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আগামী ২৮-৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ কলকাতায় হবে।


শেয়ার করুন

উত্তর দিন