পলিট ব্যুরো প্রেস কমিউনিকে
তারিখঃ রবিবার, ১৪ নভেম্বর,২০২১
১৩-১৪ নভেম্বর, ২০২১ নয়া দিল্লিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরোর সভা হয়েছে৷ পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি জারি করেছে:
দাম কমানোর নামে কেন্দ্রীয় সরকার কার্যত জনগনের সাথে উপহাস করেছে
প্রতি লিটার পেট্রোলের জন্য কেন্দ্রীয় শুল্ক কমানো হয়েছে ৫টাকা। ডিজেলের জন্য শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে প্রতি লিটারে ১০ টাকা। পেট্রোলিয়ামজাত সামগ্রীর মূল্যে ক্রমবর্ধমান দামের বোঝা বইতে হচ্ছে দেশের জনগণকে।
পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের মূল্যে এই হ্রাস সম্পর্কে মনে রাখতে হবে যে কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোলে লিটার প্রতি ৩৩টাকা এবং ডিজেলে লিটার প্রতি ৩২ টাকা শুল্ক আদায় করে।
কেন্দ্রীয় সরকার শুল্ক বাবদ সেই আয় থেকেই সামান্য কিছু হ্রাস করেছে যার আদায় রাজ্যগুলির সাথে যৌথ তালিকাভুক্ত। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার এখনও অতিরিক্ত বিশেষ শুল্ক (সারচার্জ) আদায় করে চলেছে যার পরিমাণ ৭৪,৩৫০ কোটি টাকা; এবং অতিরিক্ত শুল্ক (সেস) বাবদ আদায়ের পরিমাণ ১,৯৮,০০০ কোটি টাকা। এছাড়াও অন্যান্য সেস এবং সারচার্জের পরিমাণ ১৫,১৫০ কোটি টাকার। সব মিলিয়ে মোট ২.৮৭ লক্ষ কোটি টাকার শুল্ক আদায় করছে কেন্দ্রীয় সরকার এবং এই আদায়ে রাজ্যগুলির কোনও প্রাপ্য নেই।
পলিট ব্যুরো দাবি জানাচ্ছে মূল্যবৃদ্ধির চাপ থেকে জনগণকে কিছুটা হলেও কার্যকরী স্বস্তি দিতে এই অতিরিক্ত সেস এবং সারচার্জগুলি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
ধান সংগ্রহ
কেন্দ্রীয় গোডাউনগুলি পূর্ণ রয়েছে এই যুক্তিতে নির্দিষ্ট রাজ্যগুলি থেকে এমএসপি (ন্যুনতম সহায়ক মূল্য)-র দামে ধান না কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, পলিট ব্যুরো এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করছে। গোডাউনে রাখা খাদ্যশস্য পচে নষ্ট হবার পূর্বেই গরীব জনতাদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করতে হবে।
নয়া তিন কৃষি আইন বাতিল এবং সমস্ত উৎপাদিত ফসল এমএসপিতে বিক্রির আইনি অধিকারের দাবিতে এক বছর ধরে ঐতিহাসিক সংগ্রামে যখন দেশের কৃষকরা ব্যস্ত ঠিক সেই সময়েই এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পলিট ব্যুরো দাবি করছে যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের এমএসপি-তেই সমস্ত ফসল সংগ্রহ করে।
সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা বন্ধ করতে হবে
সারা দেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে, এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠীগুলি এধরনের অপরাধ সংগঠিত করতে সাহস পাচ্ছে, একথা স্পষ্ট। আক্রান্তদের রক্ষা করার পরিবর্তে প্রশাসন তাদেরকেই দানবীয় আইনে গ্রেফতার করছে, শাস্তি পাচ্ছে তারাই এমন আক্রমনের ঘটনায় যারা লক্ষ্য। সম্প্রতি আসাম এবং ত্রিপুরায় রাজ্য প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় সমবেত আক্রমনের ঘটে। এই ঘটনায় সঠিক খবর প্রকাশ করেছেন যারা তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে UAPA- ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে, অসংখ্য "এনকাউন্টার" সহ বিশেষ করে মুসলমানদের লক্ষ্য করে NSA-এর দুর্ব্যাবভার কার্যত সাধারন ঘটনায় পরিণত হয়েছে। নামায পড়ার মৌলিক অধিকারটুকুও খর্ব করা হচ্ছে। সম্প্রতি এনসিআর, গুরগাঁও-তে এমন ঘটনার কথা উদাহরনস্বরূপ মনে রাখতে হবে।
২০২১ সালের প্রথম নয় মাসে সারা দেশে খ্রিস্টানদের উপর ৩০০টি হামলার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ সর্বত্র এই ধরনের আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে৷ এমনকি দায়ের করা এফআইআরগুলিকেও আমল দেওয়া হচ্ছে না। আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই দলিত ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের। একাধিক গির্জায় ভাঙচুর চলেছে।
সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধে পার্টির সমস্ত ইউনিটকেই একটি নির্দিষ্ট দিনে প্রতিবাদ দিবস পালন করার আহ্বান জানিয়েছে পলিট ব্যুরো। এইসব হামলার ঘটনায় আমাদের দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য বিপন্ন হয় এবং সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলীকেও লঙ্ঘন করা হয়।
বিএসএফ আওতাধীন এলাকার প্রসার প্রত্যাহার করতে হবে
পূর্ববর্তী ১৫ কিলোমিটারের নিয়ম বদলে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) এখতিয়ারকে পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামের আন্তর্জাতিক সীমানার ভিতরদিকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্তে কার্যত দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলির সংবিধান স্বীকৃত অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপের নীতি নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনোরকম পরামর্শ না করেই কেন্দ্রীয় সরকার কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর এখতিয়ার বাড়ানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুলিশের কাজ এবং আইন-শৃঙ্খলা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলির আওতাধীন বিষয় এবং এহেন সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সেই নীতিকেই লঙ্ঘন করা হয় যা দেশের সংবিধানের এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।
রাফালে দুর্নীতি
ফ্রান্সের তদন্তমূলক জার্নাল মিডিয়াপার্ট ভারতে রাফালে বিমান কেনাবেচায় মধ্যস্বত্বভোগীদের কমিশন নেবার নতুন প্রমাণসহ ( বিমান কেনাবেচায় দাসল্ট এভিয়েশন আর্থিকভাবে যথেষ্ট লাভবান হয়েছে তা স্পস্ত করেছে তারা) এই ঘটনায় সম্পর্কযুক্ত নথিসমূহ প্রকাশ করার পরেও, কেন্দ্রীয় সরকার এই কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে অস্বীকার করছে।
রাফালে চুক্তিতে জড়িত উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতে সরকারের এহেন প্রচেষ্টা নিন্দনীয়। এই বিমান কেনাবেচায় অন্যান্য দেশের সরকারগুলি কোনো না কোনোভাবে তদন্তের নির্দেশ দিলেও মোদি সরকার এই ঘটনায় তদন্ত করতে অস্বীকার করেছে এবং সেই সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট পরিস্থতি ক্রমশ আরও জটিল হচ্ছে।
পলিট ব্যুরো দাবি জানাচ্ছে, রাফালে বিমান কেনাবেচার বিষয়ে একটি উচ্চ স্তরের স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত।
কৃষকসংগঠনসমুহ এবং কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির আহ্বানকে সমর্থনের আহ্বান
আগামী ২৬শে নভেম্বর দিল্লির সীমান্তে জোরদার জমায়েত সহ দেহের সমস্ত রাজ্যের রাজধানীতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পরিচালনার দ্বারা ঐতিহাসিক কৃষক সংগ্রামের প্রথম বার্ষিকী পালন সম্পর্কে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার সিদ্ধান্তের প্রতি সিপিআই(এম)-এর পলিট ব্যুরো নিজের সংহতি ও সমর্থন প্রসারিত করেছে।
নয়া শ্রমআইন বাতিল এবং অন্যান্য দাবিসহ বেসরকারীকরণের মাধ্যমে দেশের সম্পদ লুটের বিরুদ্ধে ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর ঐতিহাসিক ধর্মঘটের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের আহ্বানের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে পলিট ব্যুরো।