Kerala Alternative

জিএসটি চাপাবে না কেরালা সরকার

ওয়েবডেস্ক প্রতিবেদন

খুচরো বিক্রিতে জিএসটি চাপাবে না কেরালার এলডিএফ সরকার।  

গত সোমবার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের জিএসটি কাউন্সিল খুচরো বিক্রি হয় এমন বহুবিধ সামগ্রীতে জিএসটি লাগু করেছে। ছোট দোকানে ব্র্যান্ড নেম ছাড়াই বিক্রি হওয়া বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী যেমন ডাল, আটা, ময়দা সহ দই কিংবা লস্যি জাতীয় পানীয় সেই তালিকায় রয়েছে।

৫% হারে জিএসটি ১২% হারে জিএসটি ১৮% হারে জিএসটি
দই, ছাঁচ, লস্যিসোলার ওয়াটার হিটারছাপার খরচ
পনিরনারকেলের জলজাত সামগ্রীএলইডি আলো
মুড়িচামড়ার দ্রব্যছুরি, কাঁটাচামচ, চামচ
ওটসম্যাপ, চার্টডিপ টিউব অয়েল, সাব মার্সিবল পাম্প
দানাশস্য, ডাল, আটাঅ্যাটলাসটেট্রা প্যাক, ডেয়ারির কাজের যন্ত্রপাতি
৫০০০ টাকার বেশি হোটেলের ভাড়াট্রাক এবং অন্যান্য পরিবহণ খরচব্যাংক চেকের চার্জ, ইলেক্ট্রনিক বর্জ্য  
অডিওগ্রামের যন্ত্রপাতিবায়ো মেডিক্যাল বর্জ্য নিরোধক প্রযুক্তিযাবতীয় পরিবহণ, শ্মশান সহ যাবতীয় চুল্লি

ভারতে গত এপ্রিল মাসে মূল্যবৃদ্ধির সূচক বেড়ে ৭.৭৯ শতাংশে পৌঁছয়। সেই অবস্থা কিছুটা শুধরে মে মাসে ৭.০৪ শতাংশে নেমে এসেছে। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া নির্ধারিত বিপদসীমা যদিও ৬ শতাংশ। এই অবস্থায় খুচরো সামগ্রীতে জিএসটি চাপালে পরিস্থিতি আরও দুর্বিষহ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন জানিয়েছেন- ‘জিএসটি কাউন্সিলের সদস্যরা সকলেই নির্বাচিত, দেশে মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা যথেষ্ট ওয়াকিবহাল’।

নির্মলার অর্থনীতির মূলকথা ‘এভরিথিং ইজ ওয়ার্থ হোয়াট ইটস পারচেজার উইল পে ফর ইট’ মানে আমরা যে দামে কোন জিনিস কিনতে বাধ্য সেটাই তার ন্যায্য দাম! এত গেল আদানি, আম্বানিদের মত একচেটিয়া কর্পোরেটদের ভাল হোক ভেবে নেওয়া সরকারী সিদ্ধান্তের কথা। যারা খেটে রোজগার করা পয়সার বিনিময়ে আবশ্যকীয় পণ্য খরিদে বাধ্য হন সেই ক্রেতাদের স্বার্থের কি হবে?

ঠিক এখানেই কেরালা সরকারের বিকল্প অর্থনীতি- জনস্বার্থের রাজনীতি। গতকালই কেরালা বিধানসভায় আলোচনার সময় রাজ্যের অর্থমন্ত্রী কে এন বালাগোপাল জানিয়ে দিয়েছেন খুচরো বিক্রিতে জিএসটি চাপাবে না কেরালা সরকার। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রের সরকারের সাথে মতপার্থক্য হলে সেই বিষয়ে আলোচনা চলবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

খুচরো বিক্রিতে জিএসটি প্রয়োগ হলে কি প্রভাব পড়বে? দেশজুড়ে স্থানীয় উৎপাদকরা বিভিন্ন সমবায়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন, প্যাকেজিং এবং বিপণনের কাজ করে। এতে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে যেমন ভরসাযোগ্য কর্মসংস্থান হয়, গরীব পরিবারগুলি নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর জোরও পায়। সেই পণ্যই ছোট-বড় দোকানে খুচরো সামগ্রী হিসাবে বিক্রি হয়। গুণমান এবং দাম উভয়তই বৃহৎ কর্পোরেট সংস্থাগুলির উৎপাদিত পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় অন্তত স্থানীয়স্তরে এধরনের সামগ্রী যথেষ্ট সফলও। রপ্তানি এবং পরিবহণের খরচ বহন করতে পারে না বলে বড় বাজার ধরতে পারে না এরা। জিএসটি চাপিয়ে দিলে এইসব পণ্যের দাম বাড়বে, বিক্রি কমবে।

কেরালার কুদুম্বশ্রী প্রকল্পের পরিসর

দেশে এখন শুধু মূল্যবৃদ্ধি চলছে এমন না, একইসাথে বেকারির হারও সর্বোচ্চ। নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরিতে সরকারের ভূমিকা রয়েছে। নানা ফিকিরে কর আদায় ছাড়াও একটা দেশের সরকারের যে আরও কিছু জরুরী কাজ থাকে একথা অর্থশাস্ত্রের পাঠ্যসূচিতে থাকলেও নির্মলা সিতারামন সেইসব হয়ত ভুলেই গেছেন।   

তাই বারে বারে মনে রাখতে হবে এলডিএফ সরকারের ভূমিকা। সাংবিধানিক পরিসরের সীমাবদ্ধতা সত্বেও জনস্বার্থে বিকল্প নীতির একের পরে এক নজির। করোনা মহামারী মোকাবিলা থেকে শুরু করে আজকের ‘জিএসটি অ্যাপার্টহেইড’ অবধি। নিজেদের রাজ্যে ব্র্যান্ড বাণিজ্যের বাইরে থাকা খুচরো সামগ্রী বিক্রিতে কেরালার সরকার জিএসটি চাপাবে না। সুরক্ষিত থাকবে কেরলের ‘কুদুম্বশ্রী’ প্রকল্পে কর্মরত পরিবারগুলি, সুরক্ষিত থাকবে বিরাট হাঁ করে সবকিছুকেই গিলতে চাওয়া একচেটিয়া কর্পোরেটদের সামনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় রোজগারের সুযোগ। এই প্রসঙ্গেই মনে রাখতে হবে মেয়েদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নে ‘কুদুম্বশ্রী’ সারা দেশে সবচেয়ে বড় সংগঠন। বাংলা তর্জমায় ‘কুদুম্বশ্রী’ মানে হবে পারিবারিক সমৃদ্ধি।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ইতিমধ্যেই খুচরো পণ্যে জিএসটি প্রয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখেছেনঃ

দেশের সরকার যখন ক্ষুদ্র উৎপাদকের কথা, বিরাট পুঁজির মুখোমুখি তাদের লড়াইয়ের কথা ভাবছে না ঠিক তখনই একটা রাজ্যের সরকার কিই না করতে পারে- সেই ইতিহাসই লিখছে এলডিএফ সরকার।  

আমাদের রাজ্যেও একটি সরকার রয়েছে। মানুষের কথা তারাও কথায় কথায় প্রচারে আনেন। একই পরিস্থিতিতে তাদের পরিকল্পনা কি? পশ্চিমবঙ্গের সমবায়, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির কি হবে? কেরালা শুধুই নির্মম জিএসটি’র বিরোধিতা করছে এমন না, তাদের রাজ্যে বিধায়কভাতাও অন্যদের তুলনায় অনেক কম। আমাদের বাংলায় অবশ্য যাবতীয় পরিবর্তনের অভিজ্ঞতায় এরাজ্যের মানুষ হাড়েমজ্জায় বুঝেছেন- All farewells should be sudden, when forever।  

ওয়েবডেস্কের পক্ষেঃ সৌভিক ঘোষ


শেয়ার করুন

উত্তর দিন