ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস

সৌভিক ঘোষ

১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম হয় ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসীডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর জেলার মহুবনি গ্রামে। পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু এবং মাতা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবি। ৭ বছর বয়সে প্রথমে মা এবং পরে তার বাবার মৃত্যু হয়। তার বড়দিদি অপরুপা রায় তাকে মানুষ করার দায়িত্ব নেন।

অল্প বয়সেই অনুশীলন সমিতিতে যোগ দিয়ে বিখ্যাত বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষের নজরে আসেন। ১৫ বছর বয়স থেকেই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা সক্রিয় বিপ্লবী কাজকর্মের সাথে নিজেকে যুক্ত করেন ক্ষুদিরাম বসু।

১৯০৭ সালে বারীন্দ্রকুমার ঘোষ এবং হেমচন্দ্র কানুনগো প্যারিসে যান নিকোলাস সাফ্রান্সিক'র থেকে বোমা বানানো শিখতে।

একবছর পরে দেশে ফিরে এসে তারা সেসময়ের অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ড'কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন।

বহু পরিকল্পনার পরে সেই কাজের দায়িত্ব নেন ক্ষুদিরাম বসু এবং প্রফুল্ল চাকী। পরিকল্পনা অনুসারে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বোমা ছোঁড়াও হয়, কিন্তু তথ্য আদানপ্রদানের ত্রুটির কারনে ভুল গাড়িতে লক্ষ্যভেদ হওয়ায় সেই বোমার আঘাতে মারা যান মিসেস কেনেডি এবং তার কন্যা। ক্ষুদিরাম বসুকে পরের দিন রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশ পুলিশবাহিনী। তার কাছ থেকে ৩৭ রাউন্ড কার্তুজ এবং নগদ ৩০ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়।

আদালতে শুরু হয় বিচার। ইতিহাসে সেই মামলা মুজফফরপুর ষড়যন্ত্র মামলা নামে প্রখ্যাত। মামলার রায়ে ক্ষুদিরাম বসুর মৃত্যুদণ্ডের হুকুম হয়।

১৯০৮ সালের ১১ই অগাস্ট অর্থাৎ আজকের দিনে তার ফাঁসি হয়।

অকুতোভয় এই বিপ্লবীর হাসিমুখে ফাঁসীর দড়ি গলায় পরার কথা আজও ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে এক কিংবদন্তী।

ওনাকে উত্তেজিত করে বোমা ছুঁড়তে রাজি করানো হয় নি। স্বেচ্ছায় নিজের বিচারবুদ্ধি প্রয়োগ করেই উনি বোমা ছোঁড়ায় মত দিয়েছিলেন। বোমা যদি আসল উদ্দেশ্যও সাধিত করতো তাহলেও যে ধরা পড়লে ফাঁসি হবে তা উনি নিজেও জানতেন, অন্যরাও জানতেন। নিশ্চিত মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকা সত্বেও সশস্ত্র বিপ্লবীর কর্তব্য পালনে তার পা কাঁপেনি।

এটাই হল সেই বিপ্লবী উত্তরাধিকারের সারাংশ।

ঠিক এই কারণেই এনাদের ভয় পেত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ।

ক্ষুদিরাম বসু পরাক্রমী শাসকের বুকে ত্রাস জাগিয়ে তোলার নাম…

ফাঁসির মঞ্চে শেষ ইচ্ছা হিসাবে সবাইকে ভালো বোমা বানানোর কৌশল শিখিয়ে দিতে চাওয়া হিম্মতেরই আরেক নাম।

মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পাওয়া বেইমানেরা যে ঐতিহ্যের ছিটেফোঁটাও পায়নি, কোনোদিন পাবে না।

শেয়ার করুন

উত্তর দিন