২৪ মার্চ ২০২২, বৃহস্পতিবার
আগামী ২৮ - ২৯ মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটের আহ্বান জানিয়েছেন সারা দেশের ট্রেড ইউনিয়নগুলি, সংযুক্ত কিষান মোর্চা সারা দেশে গ্রামীণ হরতালকে সর্মথন করে ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছেন , ধর্মঘট সফল করার জন্য সারা রাজ্যের কৃষক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে লাগাতার প্রচারাভিযান চলছে। প্রায় প্রতিটি ব্লকে শ্রমিক, কৃষক, ক্ষেতমজুর সহ অন্যান্য সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে, ২১,২২,২৩,২৪ মার্চ জেলায় জেলায় আইন অমান্য কর্মসূচি চলছে, ধর্মঘটের ১২ দফা দাবিকে সামনে রেখে চলছে অজস্র পথসভা, স্কোয়াড ও মিছিল।
দেশের একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ জীবন-জীবিকার প্রশ্নে মারাত্মক সংকটের মুখে। হরতালের দাবির জন্য এই আওয়াজ ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। দেশের জনগনকে বাঁচাও, দেশকে বাঁচাও। শ্রমিকদের জীবনে শ্রমকোড, ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেওয়া, কাজ ঘন্টা বাড়ানো, নূন্যতম মজুরি বিলোপ, মালিকের খুশি মতো ছাঁটাই ইত্যাদি বিষয়গুলি দেশের সমস্ত শ্রমজীবী মানুষের জীবনে এক বিপদ নেমে আসবে। শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষকদের জীবনেও নেমে আসছে মৃত্যু ঘন্টা। ফসলের দাম অনিয়ন্ত্রিত, কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধিসহ একাধিক সমস্যায় কৃষকরা জর্জরিত। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে পরপর দুবার ফসল নষ্ট হয়েছে, ফলে কৃষকরা দাবি করে ধানের ক্ষেত্রে ১৫ হাজার টাকা, আলুর ক্ষেত্রে ২০ হাজার টাকা সরকারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রাজ্য সরকার এই বিষয়ে কর্ণপাত করেননি। প্রচণ্ড সংকটের মুখে বর্তমান একটি উল্লেখযোগ্য অংশের কৃষক জমিগুলিকে ঠিকা প্রথায় চাষ করাতে বাধ্য হয়েছেন। এ বছর বোরো চাষ প্রায় অর্দ্ধেকে নেমে এসেছে। ক্ষেতমজুরদের কাজ নেই, কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি আসার পর ক্রমশ তা আরও কমেছে। ধর্মঘটে দাবি তোলা হচ্ছে ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০টাকা মজুরি দিতে হবে। একদিকে জিনিস পত্রের দাম দ্রুতহারে বাড়ছে আগামী দিনে আরও বাড়বে।
এ অবস্থায় রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়ে কর্পোরেট গৌতম আদানি একটা বড়ো অংশের রাইস মিল কিনে নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০টি রাইসমিল বিক্রি হয়ে গেছে। এরফলে আগামী দিনে ছোট ও মাঝারি রাইসমিলগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। আদানিরা প্রথম কয়েক বছর একটু বেশি দাম দিয়ে ধান কিনবেন। ছোট - মাঝারিরা প্রতিযোগিতায় বাজার থেকে হটে যাবে। যখন একচেটিয়া কারবার শুরু করবে তখন চাষী যেমন ধানের দাম পাবেনা তেমনি চালের দাম হু হু করে বাড়বে যা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। স্বাভাবিক ভাবে দেশের কৃষক সুখে নেই, এই অবস্থা চলতে শুরু করলে অন্নদাতা কৃষক যদি ফসল ফলাতে অনিচ্ছুক হন তাহলে গুরুতর বিপদ সামনে আসবে তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিভিন্ন জেলায় সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন, এই স্থানীয় সমস্যাগুলোকে যুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে এই রাজ্যেও বিরাট কৃষক আন্দোলন। তাই ধর্মঘট করেই কোন বিশ্রাম নয়, আরও বড়ো আন্দোলনের প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।