যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মানুষের কষ্ট লাঘবে পাশে দাঁড়াতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে
কোভিড-১৯ সংক্রমণজনিত মহামারি নিয়ন্ত্রণ করতে দেশ ২১ দিন ব্যাপী লকডাউনের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে কয়েকদিনেই অনেক সমস্যা তীব্র আকারে প্রকাশ পেয়েছে যার জরুরি সমাধান প্রয়োজন।এই ধরণের সমস্যা যে আসবে তা বোঝা গেলেও লকডাউন ঘোষণার সময় এর সুরাহার কথা জানানো হয় নি।
১.কোটি কোটি মানুষ তাদের জীবিকার উৎস হারিয়েছে। এই হঠাৎ লকডাউন ঘোষণার ফলে নগরকেন্দ্রগুলি থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের যাত্রা মানুষের জীবিকা কতটা মাত্রায় অস্থায়ী ও ভঙ্গুর তা প্রকট হয় উঠেছে। বামপন্থীদের দাবি, অবিলম্বে ক্ষুধা ও অপুষ্টি বৃদ্ধি রোধ করতে হবে।কোভিড-১৯ মহামারি মানুষকে সেই দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। সমস্ত জনধন এ্যাকাউন্ট গ্রাহক, বিপিএল তালিকা ভুক্ত এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের প্রতিশ্রুত ৫০০০টাকা অবিলম্বে দিতে হবে।গোটা দেশে খাদ্যভান্ডারে মজুত থাকা ৭.৫ কোটি টন খাদ্যশস্য রেশন কার্ড থাকা না থাকার ওপরে নির্ভর না করে সব পরিযায়ী শ্রমিক এবং গরিবদের মধ্যে পরিবার পিছু ৩৫ কেজি হিসাবে কেন্দ্রকে অবিলম্বে বন্টন করতে হবে।পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশাপাশি যাঁরা এইসময়ে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যাতায়াত করেছেন তাঁদের জন্য উপযুক্ত স্বাস্থ্যসুরক্ষা স্থাপন করা উচিত। কার্যকর এবং স্বাস্থ্যবিধিসম্মত কোয়ারান্টাইন ব্যবস্থা দেশের সব জায়গায় স্থাপন করতে হবে। পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর পুলিশের বর্বরতা বন্ধ করতে হবে এবং যারা এই ধরনের আদেশ পুলিশকে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সমস্ত নগরাঞ্চলে, বিশেষত শহুরে বস্তিগুলিতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং খাদ্য সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি । ক্ষুধা, অনাহার এবং কোভিড-১৯ এর গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতে এই বিষয়গুলি অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
এখন চাষের মরসুম। আমাদের খাদ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় এই খাদ্য শস্য যাতে অপচয় না হয় সেজন্য কৃষকদের র্সবাত্মক সাহা্য্য করা দরকার।অভাবী বিক্রি প্রতিরোধে ফুড কর্পোরেশানকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে এই ফসল কিনে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া উচিৎ।
২.রাজ্যগুলিকে বহু কাজই এখন নিজদের উদ্যোগে রূপায়ন করতে হবে। রাজ্য সরকারগুলি ইতিমধ্যে মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছে এবং তারা এই কাজগুলি করার মতো অবস্থানে থাকবে না। কেন্দ্রকে আবশ্যিকভাবেই রাজ্যগুলিকে উদারভাবে আর্থিক সহায়তা করতে হবে।রাজ্যগুলোর ঋণ নেওযার ঊর্দ্ধসীমা বাড়িয়ে দিতে হবে। কেন্দ্রের ভূমিকার উপরেই নির্ভর করছে কোটি কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা।
৩.লকডাউনের কিছু দিন কাটতেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও এবং ওষুধের ঘাটতির খবর পাওয়া যাচ্ছে।রাজ্যগুলিতে প্রয়োজনীয় পণ্যবাহী ট্রাকগুলির চলাচল সম্পর্কে কোনও স্পষ্টতা নেই।এটি অবশ্যই জরুরি ভিত্তিতে ঠিক করতে হবে এবং মানুষের সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন অবশ্যই পূরণ করতে হবে।
৪.সাহসীকতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছ থেকে পিপিই এবং ওষুধের অভাব সংক্রান্ত বহু সঙ্গত অভিযোগ রয়েছে।এগুলো অবিলম্বে সরবরাহ করা প্রয়োজন। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবিলম্বে ভেন্টিলেটার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। এই কাজ কেন্দ্রের সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে।
কিন্তু এই সময়ে জীবনের ঝুঁকি আছে এমন অন্যান্য রোগেদের চিকিৎসাও উপেক্ষা করা যাবে না। কিছু প্রতিবেদন অনুসারে এখনও অবধি কমপক্ষে ৪৩ জন এইরকম মুমূর্ষু রোগী মারা গেছেন।
৫. এই মহামারিটি ছড়িয়ে পড়ছে এমন গোষ্ঠীগুলি সনাক্ত করতে, সেই অঞ্চলগুলিকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং জনগণের সঠিক চিকিৎসা করার জন্য এই লকডাউনের সময়কালে কোভিড-১৯ সংক্রমণের আরো বিস্তৃতভাবে পরীক্ষা করা উচিত। আইসিএমআর একটি রাপিড টেস্টিং কিটকে অনুমোদন দিয়েছে। সারা দেশেই এই কিটের মাধ্যমে পরীক্ষা চালু করতে হবে। এখন ভারতে পরীক্ষার হার বিশ্বের মধ্যে সর্মনিম্ন। দক্ষিণ কোরিয়ার ২৪১ ভাগের ১ভাগ।
৬. তবলিঘি জামাতের পক্ষ থেকে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার ফলে দিল্লিতে ধর্মীয় সমাবেশ নিয়ে ভয়ানক সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রচার চলছে। এই মহামারীকে রুখে দিতে সব ভারতবাসীর একসাথে মিলে লড়াইকে এধরনের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক প্রচার দুর্বল করবে। আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতার পরিবেশ বজায় রাখতে পদক্ষেপ নিতে হবে। এই কাজে বিজ্ঞানচেতনার প্রচার করে সবধরনের মিথ্যপ্রচারকে পরাস্ত করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইতে সবাইকে একসাথে উদ্দিপ্ত করা।
উল্লিখিত বিষয়গুলিতে মনোযোগ না দিয়ে বারংবার প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শুধু মানুষের সংহতির আহবানে কোন ফল হবে না।
সমস্ত বাম দলগুলি একসাথে কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে এই আবেদন রাখছে যাতে অতি দ্রুত জনকল্যাণের জন্য গুরুত্বপুর্ন পদক্ষেপ গুলী গ্রহণ করা হয় এবং কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই শক্তিশালী হয়।
সীতারাম ইয়েচুরি, সাধারণ সম্পাদক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী)
ডি রাজা, সাধারণ সম্পাদক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি
দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)-লিবারেশান
দেবব্রত বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক, সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লক
মনোজ ভট্টাচার্য, বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী পার্টি
শেয়ার করুন
One comment