দিল্লির দগ্ধ গোকুলপুরী, মৌজপুর, ভজনপুর, জাফরাবাদের যন্ত্রণার শরিক হয়েছে এদিনের প্রতিবাদ মিছিল। ধর্মের নামে আগুন জ্বালানোর রাজনীতির বিরুদ্ধে, গণহত্যার নায়কদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গোটা মিছিলই ছিল সজাগ, আগুয়ান ব্যারিকেড। সেই এন্টালি থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ এবং আরএসএস-বিজেপি নেতাদের প্রত্যক্ষ পরিকল্পনায় জ্বলছে উত্তর পূর্ব দিল্লি। হিন্দুত্বের নামে যারা আগুন লাগাচ্ছে, প্রাণ কাড়ছে নিরপরাধ মানুষের, তাদের পাশেই আছে দিল্লি পুলিশ। দুই দশক আগের গুজরাট গণহত্যার চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি দিল্লিতে। দোষী বিজেপি নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে মিছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগেরও দাবি জানিয়েছে মিছিল।
‘কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, পরবেশ ভার্মাদের গ্রেপ্তার করো’— এন্টালি থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত মিছিলে উঠেছে আওয়াজ। বিজেপি বিরোধিতার নামে দিল্লির গণহত্যা নিয়ে নীরব মমতা ব্যানার্জির বিজেপি’র সখ্য নিয়ে সরব হয়েছে মিছিল। গোটা দেশ জানে কারা আগুন লাগাচ্ছে দিল্লিতে, জানেন না কেবল মমতা! বিজেপি আর বিজেপি’র দোসর তৃণমূলের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে মিছিল।
এন্টালি মার্কেট থেকে পার্ক সার্কাস পর্যন্ত মিছিলে পা মিলিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম, বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা কমিটির সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, সিপিআই নেতা প্রবীর দেব, তাপস ভট্টাচার্য, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা আশিস চক্রবর্তী, জয়হিন্দ সিং, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা শিবনাথ সিনহা, শৈবাল চ্যাটার্জি। মিছিলে ছিলেন এআইডিব্লিউএ রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ, মহিলা নেত্রী মিনতি ঘোষ, সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি, সিপিআই(এম) নেতা নিরঞ্জন চ্যাটার্জি সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
মিছিল শেষে পার্ক সার্কাসে সংক্ষিপ্ত সভায় মহম্মদ সেলিম বলেন, দিল্লি যখন জ্বলছে সেই সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কোনও কথা নেই, উনি ভুবনেশ্বর গিয়েছেন দিল্লি গণহত্যার মূল মাথা অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করতে। অমিত শাহকে শহীদ মিনারে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছেন মমতা, সম্প্রীতির শহর কলকাতায় অমিত শাহের মতো দাঙ্গাবাজের ঠাঁই নেই। মোদীকে যেমন গোটা শহর ‘গো ব্যাক’ বলেছিল, একই ভাবে অমিত শাহকেও ‘গো ব্যাক’ বলবে কলকাতা। আমাদের দাবি, অবিলম্বে অমিত শাহকে পদত্যাগ করতে হবে। তিনদিন ধরে উত্তর পূর্ব দিল্লি জ্বলছে, পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে দেখেছে। গুজরাট গণহত্যার সময় মুখ্যমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন মোদী আর শাহ আজ প্রধানমন্ত্রী আর দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে তাঁরা গুজরাট গণহত্যাকে ফিরিয়ে আনতে চাইছে দিল্লিতে। সেলামপুর, জাফরাবাদ, গোকুলপুরী, মৌজপুরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে আরএসএস-বিজেপি’র দাঙ্গাবাজদের ইট পাথর ছুঁড়তে বলেছে, আগুন লাগানোয় মদত জুগিয়েছে।
সেলিম বলেন, আদালত পর্যন্ত দিল্লি পুলিশকে ভর্ৎসনা করে বলেছে কেন কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর, পরবেশ ভার্মাদের মতো নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দিল্লি বিধানসভার নির্বাচনের সময় থেকেই যে হুমকি উসকানি দেওয়া হয়েছে, নির্বাচন কমিশনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ২৯জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারালেন, গরিব অটোচালক থেকে সবজি বিক্রেতা হিংসার শিকার। ধর্মের নামে আবেগ আর ঘৃণাকে উসকে যখন আগুন লাগে, মানবতা তখন খতম হয়, তাই চলছে দিল্লিতে। একই সঙ্গে উসকানি দিয়েছে মোদীর লেজুড় মিডিয়া, প্রাইম টাইমে চলেছে পরিকল্পিত হিংসা ছড়ানো। অন্ধকারের মধ্যে আশার আলো হচ্ছে দিল্লিতে পড়শির পাশে দাঁড়াচ্ছেন পড়শি। মুসলিম মহল্লায় পাহারা দিচ্ছেন হিন্দু ভাইরা, এই পথেই আটকাতে হবে আগুন। সরকার আর পুলিশের ভরসায় দেশ বাঁচবে না, পাশের মানুষের হাত ধরে থাকার ভরসাতেই পিছু হটবে দাঙ্গাবাজরা।
শেয়ার করুন