শমীক লাহিড়ী
১৯, ৩৫, ৪৮, ৫২ – রাষ্ট্রের কাছে এগুলো কয়েকটা সংখ্যা মাত্র।
মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ১৯ জন, এটা শুনে নির্বাচন কমিশনারও গোঁফে তা’ দিয়ে বলছেন, ‘হুজুর’ যা বলেছেন তাই – সংখ্যা ১৯। ভাইপো আবার বলছে ৩৫। পুলিশের খাতায় ৪৮টা লাশ, আদালত বলছে গুণে হিসাব দাও। আর সংবাদমাধ্যম বলছে ৫২।
মুখ্যমন্ত্রীর মতে ছোট্ট ঘটনা – ২ লাখ টাকা করে দিয়ে দিলেই ল্যাটা চুকে যাবে। চোলাই খেয়ে মরলেও ২লাখ, বোমা বাঁধতে গিয়ে মারা গেলেও ২ লাখ। ‘লাশ’ পিছু ওনার রেট বাঁধা আছে। আগে এক সময়ে মহিলাদের ইজ্জত লুটেরও রেট বেঁধে দিয়েছিলেন এই মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।
একেই বলে লুটেরা পুঁজির রাষ্ট্র
যাদের কাছে মানুষগুলো লাশের সংখ্যা মাত্র, তারাই রাষ্ট্র। এটাই দখল করে রেখেছে ‘লুটেরা পুঁজি’র (Cromy Capitalist) দালালরা। এদের নির্দেশেই পঞ্চায়েত থেকে নবান্নের টাকা লুট হয়। এদের নির্দেশেই ব্যাঙ্ক-বীমা-রেল-বিমান-বন্দর-জল-জঙ্গল সব লুট ক’রে, লুটেরা পুঁজির মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই লুট চালাতে ক্ষমতা চাই। সেই ক্ষমতার আধার হ’লো পঞ্চায়েত, পৌরসভা, রাজ্য-কেন্দ্রীয় সরকার, বিচার ব্যবস্থা, আমলা-পুলিশ-মিলিটারি, সংবাদমাধ্যম সহ নানান অংশ। তাই এগুলো দখলে রাখতে হবে। এদের মধ্যে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাঁদের বিরুদ্ধে কুৎসিত প্রচার-হামলা-মিথ্যা মামলা-আক্রমণ চালাও।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ যদি এই ক্ষমতা ওদের হাতে তুলে দিতে না চায়, তাহলে হয় মতামত অর্থ দিয়ে কিনে নাও, না পারলে গায়ের জোরে ছিনিয়ে নাও। সংবাদমাধ্যমকে কিনে নিয়ে, একতরফা বা মিথ্যা প্রচার চালিয়ে মানুষের কাছে সত্য গোপন করে রাখো। মানুষের মন পাল্টে দাও। যদি এতে সব কাজ না হয়, তাহলে রাস্তা - ভোট লুট। এই লুট করতে গিয়ে ৫২/৫৬, এমনকি ১০০টা লাশ পাওয়া যেতেই পারে। ভোটে জিততে হবে, যে কোনও মূল্যেই। তাই সংবাদমাধ্যমে নাটকের প্লট সাজানোর জন্যই বিজেপি’র কুৎসিত পরিকল্পনায় পুলওয়ামায় ৭৮জন সিআরপিএফ জওয়ানকে শহীদ বানানো হয়েছিল, যুদ্ধ জিগির তৈরির জন্য।
লাশের রাজনীতি
ওদের ভোট লুটের পরিকল্পনায় মরছে কারা? এই ৫২ জনের পরিচয় কি? কেউ কি তৃণমূলী মন্ত্রী/এমএলএ/সাংসদ/নেতা বা মুখ্যমন্ত্রীর ভাই-ভাইপোদের মতো ধনী? ৭৮ জন শহীদ জওয়ানদের কেউ কি বিজেপি’র মন্ত্রী/এমএলএ/সাংসদ/নেতা বা শাহ-গডকরীর ছেলে-মেয়ের মতো দু’হাতে টাকা কামায়? লুটবে ওরা, লুটের মাল ভাগ হবে আদানি-আম্বানীদের মধ্যে। ভাগের প্রসাদ পাবে নেতা-মন্ত্রী-আমলা-পুলিশের বড় কর্তা-সংবাদমাধ্যমের মালিকরা। কিছু পুরস্কার হয়তো পায় এদেরই আরও কিছু আমচে-চামচে’র দল। কিন্তু গরীব মানুষ শুধুই লাশ হয়।
মনোনয়ন পত্র জমা করার সময়েই ৯ জনের মৃত্যূ। আরও কিছু লাশ গায়েব করতে হয়েছে, কারণ সেসব লোকদের বোমা মারা, গুলি করার জন্য বাইরে থেকে ভাড়া করে আনা হয়েছিল তৃণমূলের তরফে। কোথাকার দুষ্কৃতিদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বোমা বাঁধা বা ছোঁড়ার জন্য বা গুলি চালানোর জন্য, তা ফাঁস হ’লে ‘বোমা স্পেশালিস্ট শওকত মার্কা’ তৃনমূলী এমএলএ/এমপি/মন্ত্রী/নেতা মায় ভাইপো পর্যন্ত আপাত অস্বস্তিবোধ করতে পারে। তাই দিদির পার্টির হয়ে ভাড়াটে বাহিনী হিসাবে মনোনয়ন পত্র-ভোট-ব্যালট লুট করতে গিয়ে যারা লাশ হয়ে গেল, তাদের সবার হিসাব দেখানো মুস্কিল।
শহরের বাহিনী গেছে গ্রামে, দুর্গাপুরের বাহিনী হয়ত গেছে বাঁকুড়া বা রাণীগঞ্জে, মিনাখাঁর বাহিনী বসিরহাট, ক্যানিং-এর বাহিনী ভাঙড় বা শিলিগুড়ির বাহিনী হয়তবা জলপাইগুড়ির কোনও গ্রামে। এত পরিকল্পিতভাবে যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো ও কাজে লাগানো হ’তো, তাহলে আজ লাশ গুনতে হ’তো না কাউকেই। যারা মরলো বোমা-বন্দুক চালাতে গিয়ে, তাদের কয়েকজনের পরিচয় শুধুই ‘গায়েব লাশ’। যার ভাই বা সন্তান বা স্বামী ‘গায়েব লাশ’ হয়ে গেল, তারা ছেড়ে দেবে নাকি? তাই ‘বোমারু শওকত’-দের মুখ্যমন্ত্রী জেড ক্যাটগরীর নিরাপত্তা দেন। এরকম শত শত ‘বোমারু শওকত’ মার্কা পুঁথি দিয়েই গাঁথা মালাতেই সজ্জিত মমতা ব্যানার্জীর দল।
ওদের গণতন্ত্র
বিরোধীরা মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারবে না – এটাই ওদের গণতন্ত্র। তাই বোমারু বাহিনী তৈরি করো। বন্দুকবাজদের জড়ো করো। দেখতে পাচ্ছে বোমা পড়ছে শিলাবৃষ্টির মতো, গুলি চলছে বৃষ্টির ছাঁটের মতো - তার মাঝে সিপিআই(এম)এর মিছিল ক’রে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কি দরকার ছিল!! তাই তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলিতে ২০-২২ বছরের তরুণ কমরেড মনসুর আলম নিহত হ’লেও, দোষ সিপিআই(এম) দলেরই। কারণ তারা মিছিল করে মনোনয়ন জমা করতে যাচ্ছিল। এই ছিল পুলিশের প্রাথমিক বয়ানের সারাংশ, আর তারই প্রতিধ্বনি ছিল কিছু সংবাদমাধ্যমে। ‘বোমারু শওকতে’র বাহিনী বোমা-গুলি চালিয়ে মনোনয়ন জমা নেওয়ার সময় ভাঙড়ে বিডিও দপ্তর ঘিরে রেখে দিলো। প্রাথমিকভাবে বিডিও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজমান, এটা মেনে নিয়েই সিপিআই(এম) ও আইএসএফ-এর ১০১ জন প্রার্থীর মনোনয়ন জমাও নিলেন। কিন্তু সন্ধ্যায় কমিশনার সাহেব গোঁফে তা দিয়ে ঘোষনা করলেন - ওগুলো বাতিল। এরাও লুটেরা পুঁজি নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রেরই হাতিয়ার।
দোস্তি-কুস্তির যুগলবন্দী
এই নির্বাচন কমিশনারকে প্রথমে বাতিল করলেও, কার নির্দেশে ডিগবাজি খেয়ে রাজ্যপাল মশাই তড়িঘড়ি একেই আবার কমিশনার নিয়োগ করলেন? রাজ্যপাল তো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশেই কাজ করে থাকেন। তাহলে কি অমিত শাহ-এর নির্দেশেই এই কাজ করলেন রাজ্যপাল? আর তারপর নাটক শুরু করলেন বিজেপি’র এই অপকর্ম ধামাচাপা দিতে। কি পরিশ্রমটাই না করতে হ’লো বেচারাকে – এই প্রচন্ড গরমে কোট-প্যান্ট ঝুলিয়ে কোচবিহার থেকে ক্যানিং ঘোরা কি চাট্টিখানি কাজ! ইনিও লুটেরা পুঁজির একজন সেবাদাস রাষ্ট্রেরই একজন সাংবিধানিক প্রতিনিধি হ’লেও।
এবার লুটেরা পুঁজির প্রসাদ প্রাপক, স্তাবক সংবাদমাধ্যম কোমর বেঁধে নেমে পড়লো। ২টো গুরুদায়িত্ব ওদের ঘাড়ে এসে পড়লো –
১) তৃণমূল-বিজেপি এই দুই দলের প্রচারের ঝড়ে বাম ও সহযোগীদের ধামাচাপা দাও,
২) রাজ্যপাল তথা বিজেপি’ই লড়ছে, ইনিই বাংলার ধর্ষিতা গণতন্ত্রে একমাত্র মানুষের ‘মসীহা’। তাই সব তৃনমূল বিরোধীরা জড়ো হও বিজেপি’র কোলে। বিজেপি’র মরা গাঙে জোয়ার আনার গুরুদায়িত্বের জোয়াল বয়ে বেড়াতে লাগলেন রাজ্যপাল আর বাজারী সংবাদমাধ্যম। পঞ্চায়েতে লুট, ১০০ দিনের মজুরি লুট, গরীবের ঘর বানাবার টাকা লুট, রাস্তা-পুকুর-খাল সংস্কারের টাকা লুট সব ভুলিয়ে দাও – কোটপ্যান্টওয়ালা বিজেপি আর তৃণমূলের সাজানো চিত্রনাট্যের কোন্দলে।
কর্পোরেট পরিচালিত ভোট
কিন্তু আজকের দিনের লুটেরা পুঁজি শুধু তৃণমূল বা বিজেপি’র ওপর ভরসা করেনা। তারা নির্বাচনটাকে কর্পোরেট ধাঁচে ঢেলে সাজিয়ে ফেলেছে। তাই Indian PAC (I-PAC), APCO International, Political Analytics India (PA-I), Niranjan – Political Strategist, Chanakya Promoter ইত্যাদি কর্পোরেট কোম্পানীরাই লুটেরা পুঁজির প্রতিনিধি রাজনৈতিক দলগুলোর হ’য়ে নির্বাচনের সমগ্র কাজ পরিচালনা করে। এরা যেমন উচ্চশিক্ষিত ডেটা বিশ্লেষক, পরিসংখ্যানবিদ, সাহিত্যিক, গায়ক, বিজ্ঞাপন এজেন্সিকে ভাড়া করে, তেমনি ‘বোমারু শওকত মার্কা’ লোকদের মূল্যও এদের কাছে অপরিসীম।
সংবাদমাধ্যম, আমলা, পুলিশ আধিকারিক, থানা, বিডিও অফিস - এদের সবাইকে ‘ম্যানেজ’ করে এরাই। প্রার্থী তালিকার সিংহভাগ তৈরি করে এরাই। এরাই সমীক্ষা চালিয়ে ঠিক করে নেয় কোন বুথে স্বাভাবিকভাবে ভোট করতে দেওয়া যাবে, আর কোন কোন বুথ লুট করতে হবে। কোন বুথে পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোট করানো বা লুট চালানো গেলনা, তাহলে গণনা কেন্দ্র লুট করাতে হবে, সেটাও এরাই ঠিক করে দেয়। সেই অনুযায়ী আমলা-শামলা-পুলিশ-সংবাদমাধ্যম-দুর্বৃত্ত যে যার ভুমিকা পালন করতে থাকে। বিনিময়ে মোটা খাম পৌঁছে যায়। ভালো কাজ করতে পারলে ইনসেন্টিভের খামও পৌঁছে যায়। এই জন্যই এবারের ভোটে, ভোটকর্মীদের এই প্রথম ক্যাশে তাদের প্রাপ্য ভাতা দিলো কমিশন। প্রতি নির্বাচনেই নির্বাচন কমিশন ভাতার টাকা ব্যাঙ্ক একাউন্টে পাঠায়, এবার কেন ক্যাশে? যাতে সর্বসমক্ষে আই-প্যাকের খাম পৌঁছে দিতে অসুবিধা না হয়, ওদের নিজস্ব লোকদের কাছে, তাই এই ব্যবস্থা। তবে বেশিরভাগ ভোটকর্মীদেরই যে খাম দিয়ে কিনতে পারেনি ওরা, সেটাও স্পষ্ট।
মুখোশহীন নির্লজ্জ বাজারী সংবাদমাধ্যম
নির্বাচনের দিন যখন অবাধে ভোট লুট চলছে, সাধারণ ভোটার সহ বিরোধী দলের প্রার্থী-এজেন্টদের রক্ত ঝরছে, তখন হঠাৎই টিভি ব্যস্ত হয়ে পড়লো রাজ্যপাল নিজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোট দেখতে, এই খবর দেখাতে। যে কোনও সাধারণ মানুষই জানেন, রাজ্যপালের ভোটের দিন রাস্তায় চরে বেড়াবার কোনও সাংবিধানিক অধিকারই নেই। তবুও তাঁকে রাজ্যের তৃণমূল সরকার গাড়ি-পুলিশ-পাইলটকার সব দিয়ে ঘুরতে পাঠালো কেন? কেন্দ্রীয় সরকার যখন কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠাতে ইচ্ছাকৃতভাবে গড়িমসি করছে, তখন তিনি ঐ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কেন দিল্লি গিয়ে দরবার না করে, এদিক ওদিক প্রেসের লোক নিয়ে দৌড়ে বেড়ালেন? রাজ্যের মানুষকে রক্ষা করার ইচ্ছে তাঁর ছিলনা, উদ্দেশ্য ছিল বিজেপির হ'য়ে বাজার গরম করা। এর সাথে সংবাদমাধ্যমগুলি গাড়ির তেল পুড়িয়ে লাইন লাগিয়ে ঘুরলো কেন?
উদ্দেশ্য -
১) শেষ বাজারেও যাতে ভোটারের পছন্দকে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখা যায়,
আর
২) ভোট লুটের চেহারা ধামাচাপা দেওয়া। একদিকে বিজেপি’র প্রতিনিধি রাজ্যপাল আর অন্যদিকে টাকা তছরূপের অভিযোগে মমতার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হ’য়ে জেলখাটা আসামী তৃণমূলের মুখপাত্র – টিভির পর্দা জুড়ে তখন শুধুই এদের ভাষনবাজি। এভাবেই লুটেরা পুঁজি নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের পিঠে ছুরি মারা হয়।
শেষ অবলম্বন, গণনা লুট
বোমা-বন্দুক-পুলিশ-দুর্বৃত্ত-আমলা-নির্বাচন কমিশন-সংবাদমাধ্যম সবাইকে এক পঙতিতে বসিয়ে ভোটে জালিয়াতি, জালিয়াতির ভোট করেও যখন বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলিকে ঠেকানো গেলনা, তখন ‘গণতন্ত্রের কাঁথায় আগুন লাগানো’ ছাড়া তৃণমূলের ‘ভোট ঠিকাদার’ আই-প্যাকের আর কিছুই করার ছিলনা। তাই গণনাকেন্দ্র লুটের পরিকল্পনা। তৃণমূলের নগ্নতাকে কিছুটা ঢাকার জন্য আবার নেমে পড়লেন রাজ্যপাল, সেই জেলখাটা আসামী আর সংবাদমাধ্যম। যখন মেরেপিটে পুলিশ-দুর্বৃত্ত যৌথ বাহিনী বের করে দিচ্ছে বিরোধী দলের প্রার্থী-কাউন্টিং এজেন্টদের, তখন টিভি নেমে পড়লো এক কুৎসিত মিথ্যাচারে। এক জনজাতিভুক্ত দরিদ্র মহিলা, যিনি সিপিআই(এম) দলের হ’য়ে এত কিছুর বিরুদ্ধে লড়ে জিতেছেন, তিনি নাকি জিতেই তৃণমূলের ঘাস খেতে নেমে পড়েছেন। অথচ আসল সত্যটা সবাই জানে - শাসক পিশাচের দল ঐ মহিলার বাচ্চাকে অপহরণ করে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ঐ কথা বলাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের কেউ ঐ মহিলার বাচ্চাকে উদ্ধার কেন করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন না তুলে, গণনাকেন্দ্রের লুটপাটের খবর থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্যই এই জঘন্যতম ষড়যন্ত্রে সামিল হ’লো।
ডাকাতির ভোটকে আড়াল করার জন্যই এখন আবার সবুজ ঝড়ের গল্প ফাঁদছে সংবাদমাধ্যম। আবার নিরপেক্ষতার ছদ্মবেশ নিয়ে কেউ কেউ বলছে বলছে – এমনিতেই তো তৃণমূল জিততো, এসবের কি দরকার ছিল!! এটাই হ’লো লুটেরা পুঁজি নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে ‘গণতন্ত্র’ বজায় রাখার স্টাইল।
আজব ভোট ও ফল
রাজ্যে ৩,৩১৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩,২২৯টি আসন, ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯,৭৩০টি আসন এবং ২০টি জেলা পরিষদের ৯২৮টি আসনে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ৮ই জুলাই পঞ্চায়েত নির্বাচন যেভাবেই হোক, হ’লো। ১১ই জুলাই যেমনই হোক, একটা ফলাফলও ঘোষিত হ’লো। তবে নির্বাচন শেষ হয়েছে কিনা, একথা স্বয়ং নির্বাচন কমিশনারও হলফ করে বলতে পারছেন না। যে ফল ঘোষিত হয়েছে, তাও কি চূড়ান্ত? এটা জয়ী-পরাজিত কোনও প্রার্থীই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। এমন আজব নির্বাচন ভূ-ভারতে কেউ কোনোদিন দেখেছেন - নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেও আবার আদালতের নির্দেশে ফের নির্বাচন হতেই থাকছে, অথবা জয়ের সার্টিফিকেট নিয়ে যাওয়া প্রার্থীদের নোটিশ ধরানো হচ্ছে যে, তাঁর জয় চূড়ান্ত নয়!
রোখা গেলনা লালঝান্ডাদের
মনোনয়ন লুট, ভোট লুট, ব্যালট লুট, ব্যালটবাক্স লুট, বিরোধীদের পেছনে পুলিশ-দুর্বৃত্ত-আমলা লেলিয়ে হামলা করা, অর্থের বন্যা, সংবাদমাধ্যমের কুৎসিত ভুমিকা - এত কিছু করেও কি তৃণমূল বিজেপি বিরোধী বামপন্থী ও সহযোগী দলগুলোকে আটকানো গেল? ভোট ডাকাতির পরেও এদের ভোট বাড়লো ১০-১১%-রও বেশী, লুটেরা পুঁজির প্রিয় দল বিজেপি’র ভোট কমেছে ১৫-১৬%। এখন তাই প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে ঝাঁপাতে চাইছে লুটেরা পুঁজির সেবাদাস তৃণমূল আর প্রসাদপ্রাপক পুলিশ-আমলা-সংবাদমাধ্যম।
খেলা ঘুরছে
তবে এবারের নির্বাচনে কয়েকটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে গেছে, যা বিগত ১২ বছরে দেখা যায়নি –
১) শাসক তৃণমুলের ভিত ভীষনভাবেই নড়ে গেছে,
২) তৃণমূলের ভাড়াটে মস্তান বাহিনী মানুষের প্রতিরোধের সামনে বহু জায়গায় লেজ গুটিয়ে চম্পট দিয়েছে,
৩) ফলে মধ্যরাতে পুলিশ নামিয়ে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে অসংখ্য বিরোধীদের গ্রেপ্তার করতে হয়েছে,
৪) এত ডাকাতির পরেও বাম ও সহযোগীদের ভোট বেড়েছে, তৃণমূলের ভোট কমেছে, বিজেপি’র ভোট তো হুড়মুড় ক’রে নেমেছে,
৫) নিরপেক্ষতার মুখোশ পরা দালাল সংবাদমাধ্যমের আসল চরিত্র ক্রমশ পরিষ্কার হ’য়ে যাচ্ছে মানুষের কাছে।
আর শেষ অবধি
৬) অর্থ দিয়ে সব মানুষকে কেনা যায়না।
মিশন ২০২৪ ও ২০২৬
২০২৩-এ স্বৈরাচারী-লুটেরাদের ভিত নড়ে গেছে, ২০২৪-এ হবে দুর্নীতির চূড়ামনি পিসি-ভাইপোর রক্ষাকর্তা বিজেপিকে হটানোর লড়াই। তারপর ২০২৬-এ স্বৈরাচারী-লুটেরাদের অট্টালিকা ধুলিস্যাৎ করার লড়াই হবে। দম রাখতে হবে ৩টে বছর - একযুগের অন্ধকার কাটিয়ে নতুন সুর্যোদয়ের জন্য।