সৌভিক ঘোষ
‘আমি চাই আমার করের টাকা দেশের উন্নয়নে ব্যয় হোক’ – যাকে পাতায় পাতায় চলা বলে সেইভাবে দেখলে এমন কথায় খুব একটা দোষের কিছু মেলে না। কিন্তু পাতা ছাড়াও গাছে ডাল বলে কিছু ব্যপার থাকেই। চলার পথ কি হলে ভালো হয় সেই সম্পর্কে নিজেদের ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করার সামর্থ্য যাদের নেই তারা ডালের উপরেই চলতে বাধ্য হন। সে ডালে কাঁটাই থাকুক আর পলকাই হোক ও নিয়ে ভাবলে তাদের চলাই (পড়ুন বাঁচাই) হয় না। আর তাই গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের সার কথাটি আজও বেশিরভাগের মতামতের প্রতি একনিষ্ঠ। দক্ষিণপন্থা কোনোদিনই ‘বেশিরভাগ’কে মানুষ বলে মেনে নিতে চায় না, নানা ফিকিরে তাদের যেটুকু যা অধিকার রয়েছে সেটুকু কেড়ে নেওয়াই তাদের রাজনীতি। সুযোগ পেলে তারা সেই কেড়ে নেওয়াটা সোজাসুজি সেনাবাহিনী পাঠিয়েই করত কিন্তু সমস্যা হল তাতে ‘বেশিরভাগ’ একজোট হয়ে পড়ে। তখন আবার যুদ্ধ বাধলে যারা ‘বেশিরভাগ’ না তাদেরই হারতে হয়- বিজ্ঞানের নিয়মটা সেরকমই। তাই দক্ষিণপন্থা পর্বত হওয়ার বাসনা ত্যাগ করে মূষিকের চেহারা নেয়- ধান্দার ধনতন্ত্র কথাটি বুঝতে অসুবিধা হলে এই উদাহরণটি মনে রাখা যায়। সেই মূষিক পর্বত প্রসব করতে গেলে যা হয়, আরএসএস-বিজেপি’র শাসনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংকট তেমনই চেহারা নিচ্ছে।
ভারতীয় কর ব্যবস্থায় দেশের সরকার সাধারণভাবে দুধরণের কর আদায় করে। প্রথমটি প্রত্যক্ষ (ডাইরেক্ট ট্যাক্স), দ্বিতীয়টি অপ্রত্যক্ষ (ইন্ডাইরেক্ট)। আয়ের একটি ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারিত হয়, তার উপরে রোজগার হলে আয়কর দিতে হয়। ২০২০-২১ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের দেশে আয়কর দেওয়া মানুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪০৭ জন। মোদী সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে জনগণনা বলে এদেশে আর কিছু হয় না তাই জাতিসংঘের হিসাব ধার করেই বলতে হচ্ছে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামনের ঐ বক্তৃতার সময় দেশে ১৩৮ কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করছিলেন। তাহলে সোজা হিসাব কি? ১৩৮’র মধ্যে ৮। আজকাল নাকি কম জেনেই বুক বেশি ফোলে! দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছাতির মাপ অবধি ভোট জিততে কার্যকর বিজ্ঞাপন বলেই হয়ত এমন হয়। তাই ধরে নেওয়া যাক ১৩৮’র মধ্যে ৮-টুকুর জোরেই মালব্য অ্যান্ড কোম্পানি বাজারে নতুন চুটকি ছেড়েছেন। সেই চুটকির প্রথম অংশটি দিয়েই এই প্রতিবেদন শুরু হয়েছে। চুটকি দুই লাইনে শেষ হলেই নাকি বেশি কাজে দেয়- মালব্য’ মশায়দের বড় বড় ‘হ্যাজ’ আর লোকে খাচ্ছে না। তাই শেষ লাইনে লেখা ‘আমি চাইনা আমার পয়সায় খয়রাতি হোক’। যুদ্ধক্ষেত্রে ধর্মপুত্রের নান্যঃ পন্থা আর কি!
প্রধানমন্ত্রী দেশে-বিদেশে বলে বেড়াচ্ছেন ভারতে নাকি পাঁচ হাজার বছর ধরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকে রয়েছে। বিজেপি’র অজস্র স্লোগানের মধ্যে অন্যতম একটি হল ‘ওয়ান নেশন’। আসলে অনেকেই ভুলে যান, ফুটো মস্তানের ছিদ্রান্বেষণ চলে না। যাদের চিন্তার পরিসর ধর্মীয় গোঁড়ামিতে সীমাবদ্ধ তারা রাষ্ট্রের প্রাপ্য কর মেটানোর পরেও সেই টাকায় ‘ব্যাক্তিগত সম্পত্তির পবিত্র অধিকার’টুকু ভুলতে পারেন না- সেটাই স্বাভাবিক। ব্যাপার হল আইটি সেলের কেরামতিতে এসব ছাইপাঁশও আজকাল অর্থশাস্ত্রের বিষয় বলে গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনিতেই অর্থশাস্ত্রীদের বাজারে বদনাম তারা কোনও বিষয়ে সহমত হতে পারেন না, তার উপরে মধ্যবিত্তের আবেগ খুঁচিয়ে দেওয়া গেলে লোকে দুদিনেই ভুলে যায় ভারতের দক্ষিণভাগের সবকটা রাজ্যেই বিজেপি ভোটে হেরেছে।
আসলে ব্যক্তিগত সম্পত্তির বৃদ্ধি একটা পর্যায়ে পৌঁছালে মাথায় নেশা চড়ে বসে- সেই নেশা ভাবতে শেখায় এই যে এতো কিছুর আমি মালিক তার কৃতিত্ব শুধুই আমার। অন্যদের যে কিছুই নেই তার কারণ তারা আমার মত (বা আমাদের মতো) বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী নয়। ভোট জিততে বিজেপি’র মূল কৌশল মানুষের মধ্যে যতদূর সম্ভব ভাগাভাগি করে দেওয়া। ধর্মের নামে, জাতির নামে, বর্ণ অথবা সম্প্রদায়ের নামে। তাতেও কাজ না হলে অজ্ঞানতার ফাঁকি ব্যবহার করেই ভেদনীতি প্রযোজ্য হয়। আধিপত্যবাদী শাসক ভাবনার জগতেও দখলদারি কায়েম করতে চায়। লুকাচ একেই ডেস্ট্র্যাকশন অফ রিজন বলেছিলেন। জনসাধারণের মধ্যে অর্থনীতি জানা-বোঝার ঝোঁক কম, তারই সুযোগ নিয়ে এমন বক্তব্য চারিয়ে দেওয়া হয়।
ভারতের বেশিরভাগ মানুষ কর দেন না এমন বোকা বোকা কথাটি হিন্দি সিনেমার এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী কবছর আগেই প্রকাশ্যে (মানে ট্যুইটে) বলে ফেলেছিলেন। তখন দেশের রিজার্ভ ব্যংকের গভর্নর ছিলেন রঘুরাম রাজন। রাজন সাহেব তার জবাবে মনে করিয়ে দেন বাজারে কেনা বেচা সমস্ত পন্যেই কর আদায় হয়। এই ঘটনার পরে রঘুরাম রাজন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়ে বিদেশে চলে যান, সেই অভিনেত্রীও অভিনয় ব্যাতিত অন্য সব বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মালব্য অ্যান্ড কোম্পানি বরাবরই মরা সাহেবের কোট গায়ে চাপিয়ে সাদা চামড়ার অহংকার দেখায়, তাই তারা অমন কথাকেই আরেকবার বাজারে ছেড়েছেন। ভারতের প্রত্যক্ষ করদাতাদের সংখ্যা সাধারণভাবে পাঁচ কি ছয় শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এরাই নাকি বলছেন ভারতে বাদবাকি সবার জন্য সরকারী তহবিল থেকে খয়রাতি বন্ধ হোক। খয়রাতি মানে ঠিক কি বোঝানো হচ্ছে? জনকল্যানে রাষ্ট্রকে যে সমস্ত দায় স্বীকার করতে হয় তার সবই নাকি পয়সা নষ্ট।
খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ে দেশের সরকারকে ন্যুনতম দায়িত্ব পালন করতে হয়। যারা বেঁচে থাকতে জরুরী সামগ্রীটুকু বাজারদর অনুযায়ী খরিদ করতে পারেন না তাদের জন্য সরকারী বন্দোবস্ত করা হয়। একেই ভর্তুকি বলে। মোদী সরকার প্রথম থেকেই ভর্তুকি কমিয়ে দিতে সক্রিয়। জেনে রাখা ভালো এই মুহূর্তে ভারতের গরীব জনগণকে প্রতি মাসে নগদ একুশ হাজার টাকা দিতে গেলে মোদী সরকারের বছরে ২৮.৮০ লক্ষ কোটি টাকার সংস্থান প্রয়োজন। অতি ধনী, ধনীদের উপরে ৭০’র দশকে প্রযোজ্য হারে বাড়তি কর (প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্স) চাপিয়েই এই টাকাটুকু আদায় করা যায়, অথচ ২০২১ সালে কর্পোরেট কর আদায় হয়েছে মাত্র ৭.১৯ লক্ষ কোটি টাকা। দেশের সংগঠিত ক্ষেত্রে নেট অ্যাডেড ভ্যালুতে মজুরির অংশ কমছে, মুনাফা ক্রমশ বাড়ছে। অর্থাৎ ভারতে পুঁজিবাদী কর্পোরেট ব্যবস্থা যত দিন যাচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীদের সংখ্যা কমিয়ে বাকিদের উপরে বাড়তি কাজের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে (অর্থাৎ উৎপাদন খরচ কমিয়ে) মুনাফা বাড়িয়ে নেওয়ার পন্থা নিয়েছে। এই পথ পুঁজিবাদের ইতিহাসে চিরায়ত কৌশল। আমাদের দুর্ভাগ্য, অতীতে ইউরোপের মাটিতে যেসকল কুকীর্তির জোরে পুঁজিবাদ আজ আন্তর্জাতিক লগ্নী-পূঁজির জামা গায়ে গলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, সেইসব পুরানো কৌশলই আমাদের দেশে নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা বলে চিহ্নিত করছে মোদী সরকার।
২০২২ সালে গ্লোবাল ইনইক্যুয়ালিটি রিপোর্টে প্রকাশের সাথেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টামণ্ডলী ‘স্টেট অফ ইনইক্যুয়ালিটি ইন ইন্ডিয়া’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেশের অবস্থা বিবেচনা করে গরীব দেশবাসীদের জন্য রাজকোষ নিরপেক্ষ সর্বজনীন ন্যুনতম রোজগার (ফিস্ক্যালি নিউট্রাল ইউনিভার্সাল বেসিক ইনকাম) প্রকল্প চালু করার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কমিটি। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ভারতে শ্রমজীবী মানুষের সবচাইতে বড় অংশই (৪৫.৭৮%) স্বনিযুক্তি অথবা অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। এদের ক্ষেত্রে ন্যুনতম রোজগার সংক্রান্ত আইন নেই, সমীক্ষায় উঠে এসেছে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরতদের গড় রোজগার মাসিক দশ হাজার টাকাও নয়। এই একই সময়ে দশ শতাংশ ধনীদের মোট সম্পত্তির পরিমাণ দেশের মোট সম্পদের তিন ভাগের একভাগ। শাস্ত্রীয় পরিভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় সম্পদ অর্থাৎ পূঁজির কেন্দ্রীভবন (কনসেন্ট্রেশন অফ ক্যাপিটাল)। এই লুট শুরু হয়েছে নয়া-উদারবাদের শুরু থেকেই, আজকের ভারতে উৎকট অসাম্য সেই লুটেরই ফল ভোগ করছে। দুর্দশা, বেকারি এবং মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ করতেই সর্বজনীন ন্যুনতম রোজগার প্রকল্পের সুপারিশ করা হয়েছে।
২০১৭’র ইকোনমিক সার্ভে’তে প্রথমবার সর্বজনীন ন্যুনতম রোজগার প্রকল্পের কথা বলা হয়েছিল। তখন আইএমএফ’র তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয় জনকল্যাণে (পেট্রোপণ্য এবং খাদ্যসামগ্রী) যাবতীয় ভর্তুকি খারিজ করে দিয়ে ন্যুনতম রোজগার প্রকল্প প্রণীত হোক। দেখা যাক ভারতের বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন প্রকল্পের প্রভাব কেমন হতে পারে।
আমাদের দেশে গম একটি অন্যতম খাদ্যশস্য, ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে সেই জন্যই উৎপাদিত গমের সরকারী মজুত রাখতে হয় যাতে গণবণ্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিলি করা যায়। শেষ কয়েকবছর ধরেই কেন্দ্রীয় খাদ্য মজুতভাণ্ডারে গমের পরিমাণ কমানো হয়েছে, গত বছর মজুতের পরিমাণ ছিল ৪৩.৩৪ মিলিয়ন টন; এবছর সেই লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়ে হয়েছে ১৯.৫ মিলিয়ন টন। অর্থাৎ মোদী সরকার একদিকে সরাসরি ক্যাশ ট্র্যান্সফারের মাধ্যমে জনকল্যানের কথা বলে আরেকদিকে গরীব মানুষকেই ক্রমাগত সরকারী প্রকল্পের বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। এই অবস্থায় আইএমএফ’র সুপারিশ মেনে যাবতীয় ভর্তুকি বাতিল করে দিয়ে সর্বজনীন ন্যুনতম রোজগার প্রকল্পের অর্থ দেশের জনসাধারণের অর্জিত অধিকারগুলিকেই সরাসরি অস্বীকার করা। ১৯৯১ থেকে ২০১৯ অবধি সময়কালে গড় বেকারির হার ৫ থেকে ৫.৫ শতাংশের মাঝে বেড়েছে কমেছে। করোনা সংক্রমণ জনিত মহামারীর প্রভাবে এবং তার মোকাবিলার নামে আকস্মিক লকডাউন ঘোষণায় ভারতের বেকারির হার আরও বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৮.১০ শতাংশ। এই একই সময়কালে উৎপাদনে শ্রমশক্তির অংশ কমেছে নিয়মিত, ২০২১ সালের হিসাবে সেই অংশগ্রহণ নেমে এসেছে ৪০ শতাংশে - ১৯৯১ সালে যা ছিল ৫৮ শতাংশেরও বেশি। বুনিয়াদি অর্থনীতিতে যাকে প্রোডাকশন পসিবিলিটি ফ্রন্টিয়ার বলে, সেই লেখচিত্র থেকে ছাত্রছাত্রীরা যা শেখে সেসবই ভুল প্রমান করে দিচ্ছে আজকের ভারত।
দুটি বিষয় স্পষ্ট, প্রথমটি হল ভারতে ক্রমবর্ধমান বেকারত্মের কারণ আর শুধু অ-শিক্ষা নয় (সংশ্লিষ্ট সময়কালে শিক্ষিত, কর্মক্ষম বেকার সম্পর্কে সরকারী প্রতিবেদনেই তার প্রমান পাওয়া যাবে)। এই কর্মহীনতার প্রধান কারণ ক্রমবর্ধমান মুনাফা (সুপার প্রফিট) নির্ভর আন্তর্জাতিক লগ্নী পুঁজি নিয়ন্ত্রিত নয়া-উদারবাদ। নয়া-উদারবাদ কাজের সুযোগ কিছুতেই বাড়ায় না (বিনিয়োগ এলেই কর্মসংস্থান বাড়বে বলে প্রচার করে এফআইআই’র রাস্তা পরিস্কার করা হয়), বরং জনজীবনকে আরও দুর্দশার দিকে পৌঁছে দেয়। বর্ধিত বেকারত্ম বাজারে চাহিদার ঘাটতি তৈরি করে, এর জবাবে পুঁজিবাদ মূল্যবৃদ্ধি ঘটায়। ফলে বেকারি ও মূল্যবৃদ্ধি একে অন্যকে চক্রাকার পথে বাড়িয়েই চলে। যোগান বাড়িয়ে চাহিদার ঘাটতি জনিত সমস্যার সমাধান হয় না। এমন চলতে থাকলে এক নৈরাজ্যের পরিস্থিতি গড়ে ওঠে যার মোকাবিলায় একমাত্র সঠিক পদক্ষেপ পরিকাঠামো (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন ইত্যাদি) খাতে সরকারী ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি সহ যাবতীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর দাম নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ সেইসবকিছুকেই সরকারী গণবণ্টনের আওতাধীন করা। প্রয়োজনে বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিলি করতে হয়। দ্বিতীয়টি হল পূঁজির সাথে শ্রমশক্তির বাড়তে থাকা দ্বন্দ্ব। ব্যবস্থা যখন বাজার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং নীতি হল নয়া-উদারবাদ তখন পুঁজি বিনিয়োগের উদ্দেশ্য একমাত্র মুনাফা, উৎপাদন নয়। এরই কারনেই লকডাউনের সময় উৎপাদন না করেও (যখন কাজ হারানোর জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন) বিরাট মুনাফা করেছে দেশের কর্পোরেটরা। শেয়ার বাজার কোন দেশেরই অর্থনীতির হকিকত দেখাবে না, যা দেখায় তা কণামাত্র উৎপাদন না করেও বিপুল মুনাফা করে নেওয়ার খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই বিপুল মুনাফা নিশ্চিত করতেই সরকারী নীতিতে এমনসব পরিবর্তন করা হয় যাতে জনসাধারণ নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য ব্যংকে টাকা জমা না রেখে বাজারের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বিনিয়োগে বাধ্য হন। সেই বিপুল বিনিয়োগে বাজার ফুলে ওঠে, প্রচার চলে সুদিন সমাগত। একটা নির্দিষ্ট সময় এলে স্বাভাবিক কারনেই এহেন উন্নয়নের বুদবুদ ফেটে গেলে জনসাধারণ ‘রক্ত জল করা পয়সা কোথায় গেল’ খুঁজতে থাকেন এবং পুঁজি নিজের ডিভিডেন্ড পকেটে পুরে উধাও হয়ে যায়। আমাদের দেশের রিজার্ভ ব্যাংক সরকারী ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজেদের স্বতন্ত্র অবস্থানে কিছুটা দৃঢ় রয়েছে বলেই শ্রীলঙ্কার মতো এদেশের মানুষকে ২৫০টাকায় একটি পাঁউরুটি কিনতে হয়নি। ব্যংকের সুদ, পেনশন, গ্র্যাচ্যুইটি, এলআইসি সহ সংবিধানসম্মত শ্রমআইন অবধি যাবতীয় সুরক্ষাকবচ তুলে দিতে মোদী সরকারের ব্যাগ্র মনোভাবের কারণ বুঝতে খুব পণ্ডিত কিছু হতে হয় না।