কি করছে কাশ্মীর...

২০১৯ সালের ৫ই অগাস্ট কেন্দ্রীয় সরকার জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্য হিসাবে বিশেষ অবস্থান ও অধিকার রদ করেছে এবং ৩৫ক ধারায় সহায়ক বিধানটিকেও বাতিল করেছে। এর মধ্যে দিয়ে ভারতে ২৯টি রাজ্যের বদলে বর্তমানে ২৮টি রাজ্য হয়েছে এবং জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখকে দুটি পৃথক কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর হবে বিধানসভা যুক্ত কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল এবং কারগিল সহ লাদাখ হবে বিধানসভা বিহীন। ভারতে এই প্রথম কোন রাজ্যের সীমানা বা অধিকার পরিবর্তন সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হল সেই রাজ্যের আইনসভার সাথে কোনরকম আলোচনা ছাড়াই। এই প্রক্রিয়া সরাসরি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপরে আঘাত এবং সংবিধানের উল্লঙ্ঘন। সংবিধানের ৩নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যের আইনসভার মতামত ব্যাতিরেকে রাজ্যের বিভাজন সম্ভব নয়। সীমানা পুনর্বিন্যাসের সমান্তরাল পরিকল্পনা রুপায়নই হল মোদী সরকারের উদ্দেশ্য। নির্বাচনী ক্ষেত্রগুলির অ-মুসলিম এলাকাগুলিকে বেশি গুরুত্তপূর্ণ করে রাজ্যগুলির জনসংখ্যাগত উপাদানের পরিবর্তন করাই লক্ষ্য। সংবিধানের ৩৫ক ধারা রদ করার মাধ্যমে কোন এলাকার স্থায়ী বসিন্দার স্বীকৃতি বাতিল করার ফলে সহজেই এই হেরফের করা যেতে পারে। গোটা জম্মু ও কাশ্মীর এখন বন্দি, ১০ লক্ষের বেশি টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ – কার্যত জম্মু ও কাশ্মীরকে একটি দখলীকৃত এলাকা হিসাবে ব্যাবহার করা হচ্ছে। সরকার বন্দুকের নলের মুখে বা জবরদস্তি করে কখনো জাতীয় সংহতি আদায় করা যায়না। রাষ্ট্রের এধরণের আচরণের জন্য আগামী দিনে দেশের মানুষকে চরম মূল্য দিতে হবে। কাশ্মীরের ভারতে অন্তর্ভুক্তির ইতিহাস মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কাশ্মীরি জনগন তাদের নিজস্ব পরিচিতি ও জীবনযাত্রার ধরন যা কাশ্মীরিয়ত হিসাবেই পরিচিত তা রক্ষা করতে পারবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে, এই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছিল গণপরিষদ সংবিধানে যুক্ত ৩৭০ ধারা । ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে এই ৩৭০ ধারা থেকেই ৩৫ক ধারা ক্ষমতা লাভ করে যার মাধ্যমে আইনসভা স্থায়ী বাসিন্দা নির্ধারণের মাপকাঠি স্থির করার অধিকার দেয়। এই ধারা অপসারন করা হল এমন সময়ে যখন সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি নিয়ে শুনানি চলছে। একটি মুসলমান নিবিড় রাজ্যের জনবিন্যাস পরিবর্তনের জন্য বিজেপি’র ব্যাগ্রতা এধরণের পদক্ষেপে স্পষ্ট হয়েছে। কাশ্মীরে এখন সবাই জমি কিনতে পারবে বলে বিজেপি’র প্রচার সেই উদেশ্যেই। সংবিধানের ৩নং ধারায় বলা আছে, ‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্চছেদ্য অংশ এবং তাই থাকবে’। একইভাবে নিজের পছন্দ অনুযায়ী ধর্মচর্চার অধিকার সহ ভারতীয় সংবিধানের সব স্বাধীনতা কাশ্মীরের সংবিধানেও অন্তর্ভুক্ত। বাস্তবে এই ধরনের বিশেষ সুযোগ দেওয়া রয়েছে কাশ্মীর ছাড়াও মহারাস্ট্র, গুজরাট, অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, হিমাচল প্রদেশ, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখন্ড, গোয়া এবং কর্নাটকে। অথচ এইসব জায়গায় বিজেপি বিশেষ অধিকার রদ বা বিলোপ নিয়ে চুপ রয়েছে আরেকদিকে জম্মুতে বিজেপির নেতারা দাবী করেছেন সেখানকার জমি যাতে বহিরাগতরা না কিনতে পারে সেই বিশেষ সুরক্ষা বজায় রাখতে হবে। আরএসএস এবং বিজেপি’র ভাষ্য অনুযায়ী, ধর্মীয় বিন্যাসের জন্যই কাশ্মীর উপত্যকায় বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের এত উপদ্রব। অন্তর্নিহিত মুসলিম- বিরোধী মনোভাব থেকে তারা কাশ্মীরের মানুষের যে কোনও গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার তীব্র বিরোধী। ৩৭০ ধারা বিলোপের পক্ষে তাদের সওয়ালের আসল কথা হল নিরাপত্তাবাহিনী এবং রাষ্ট্রীয় ব্যাবস্থাপনা দিয়ে উপত্যকার মানুষকে পুরোপুরি দাবিয়ে রাখা। সিপিআই(এম) এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে দায়বদ্ধ। পার্টি স্পষ্ট করে জানাতে চায় এই পদক্ষেপগুলি ভারতের ঐক্য এবং স্বার্থের বিরোধী। ভারতের সংবিধানের মূল্যবোধের প্রতি আস্থা রয়েছে এমন সবাইকে এখনই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের পাশে ঐক্যবদ্ধ দাঁড়িয়ে রাজ্যে গনতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সোচ্চার হবার এটাই সময়।
শেয়ার করুন

উত্তর দিন