ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)’র পলিট ব্যুরো নিম্নলিখিত বিবৃতি দিয়েছেঃ
ভারতের জনগন যে তিন সপ্তাহব্যাপি লকডাউনকে কার্যকরী করলেন সেই লকডাউনের সময়সীমা আজ শেষ হচ্ছে। এই তিন সপ্তাহব্যাপি দীর্ঘ উৎপত্তি হওয়া সমস্যাগুলির নিরসনে এবং এক বিরাট সংখ্যার গরীব-প্রান্তিক মানুষ এবং পরিযায়ী শ্রমিকদের স্বার্থে পর্যাপ্ত ত্রানের ব্যাবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে যথার্থ পদক্ষেপের প্রত্যাশায় রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
লকডাউনের দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের জনগণের জন্য ৭টি কাজের নির্দেশনামা দিয়েছেন। যদিও এই সময়কালে সরকারের পক্ষ থেকে কোনও নির্দিষ্ট ব্যাবস্থা গ্রহনের বিষয়ে উচ্চবাচ্য করেন নি তিনি।
তিন সপ্তাহব্যাপি লকডাউনের অভিজ্ঞতা দেশের জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের ক্ষেত্রে ক্ষুধার জন্য হাহাকার এবং নিরাপদ আশ্রয়ের অপর্যাপ্ত অবস্থার সাক্ষি থেকেছে। এই সময়ে অবিলম্বে পীড়িতদের জন্য খাদ্যশস্যের সর্বজনীন বিলি-বণ্টন ব্যাবস্থা চালু করা এবং নৈতিক বাধ্যবাধকতার কারনেই আয়করের আওতার বাইরে রয়েছেন এমন মানুষদের হাতে ৭৫০০ টাকা নগদ পৌঁছে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী ছিল। অনাহারে যেন কারোর মৃত্যু না হয় তা নিশ্চিত করার দায় ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের।
ইতিমধ্যে সরকারি আর্থিক ঘোষণায় যে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার সংস্থান দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প। এই ঘোষিত অর্থের পরিমাণ দেশের জিডিপি’র ১%’র চেয়েও কম। মহামারীর ধাক্কা মোকাবিলা করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর তুলনায় অনেক বেশি অর্থব্যায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতেও এই লক্ষ্যে অন্তত জিডিপি’র ৫% অবধি ব্যয় করা উচিত হত। মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছে দেবার যে সরকারি ঘোষণা হয়েছিল সেটুকুও অনেক জায়গাতেই কার্যকরী হয়নি।
কোভিড মহামারীর মোকাবিলায় রাজ্যগুলি লড়াইয়ের একেবারে সামনের সারিতে রয়েছে। তাদের আর্থিক সংস্থান যোগানোর প্রয়োজন রয়েছে। কোটি কোটি মানুষের জন্য খাদ্য এবং ত্রান শিবির পরিচালনার কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে রাজ্যগুলিকে অর্থসাহায্য বন্টনের কাজে অনেক বেশি উদার মানসিকতার প্রয়োজন। রাজ্যগুলির ঋণ গ্রহনের ঊর্ধ্বসীমা আরও বাড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর তরফে আহ্বান জানানো হয়েছে কোন কর্মচারী যেন ছাঁটাই’র কবলে না পড়েন। কিন্তু যেভাবে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাজ হারানোর বহু খবর আসছে তাতে শুধুমাত্র এইধরনের নিরীহ আবেদনে কোন কাজ হবে না। কাজ হারানো অথবা বেতনে কাটছাঁটের ক্ষেত্রে আগামী তিনমাসের জন্য যথাযথ আর্থিক সহযোগিতার সংস্থান করতে হবে।
দেশে এখন চাষ-আবাদের মরসুম। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী C2+৫০% সহায়ক মুল্যেই ফসল আহরনের ব্যাবস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন দিক থেকে এমএনরেগা প্রকল্পের অন্তর্গত কোন কাজ হচ্ছে না বলে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। এই প্রকল্পে নথিভুক্ত সকলকেই তাদের প্রাপ্য মজুরি দিতে হবে।
মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং ছড়িয়ে পড়া থেকে রুখে দিতে লকডাউনের সময়কালকে ব্যাবহার করে আরও বিস্তৃতভাবে সংক্রমণের সনাক্তকরন পরীক্ষার ব্যাবস্থা করতে হবে। এখনও অবধি দেশে সংক্রমণ সনাক্তকরন পরীক্ষার হার খুবই কম, সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে কম পরীক্ষা করা দেশগুলির সাথেই আমাদের অবস্থান।
অপর্যাপ্ত মজুতের কারনে যথাযথ সুরক্ষা পোশাক (PPE) না পাওয়ার ফলে যেভাবে বহু চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা এই মহামারীর সংক্রমণের কবলে পড়েছেন তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এই ক্ষেত্রে এই তিন সপ্তাহে কোন কার্যকরী ব্যাবস্থা নেওয়া হলনা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সংক্রমণ সনাক্তকরন পরীক্ষা এবং পর্যাপ্ত পরিমানে সুরক্ষা পোশাক (PPE) দুয়েরই ব্যাবস্থা করতে হবে।
এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে প্রধানমন্ত্রী মানুষের মধ্যে সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্রতর করার লক্ষ্যে সংগঠিত অপপ্রয়াসগুলীর সম্পর্কে কোন নিন্দা করলেন না। জনগণের ঐক্য বিনষ্ট করতে এধরণের ঘটনার প্রতিরোধ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। জনগণের মধ্যে সার্বিক ঐক্য বজায় থাকলে তবেই কোভিড-১৯’র বিরুদ্ধে লড়াইতে আমরা জিতব।
প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে সারা দেশে পরিস্থিতির বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দেওয়া হতে পারে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্য কার্যকরী পরিবহনের ব্যাবস্থা করতেই হবে।
সিপিআই(এম)’র পলিটব্যুরোর পক্ষ থেকে উল্লিখিত সবকটি বিষয়েই অবিলম্বে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে।
শেয়ার করুন