our family aleida

We were just a normal family!

ছবির ডানদিকে সিগার হাতে আমার বাবা। তার চিরসঙ্গী ও কমিউনিস্ট বিপ্লবী ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে কথা বলছেন। ছবিটি এমন ভাবে তোলা, দেখলে মনে হবে বাবা আমার মুখের কাছে সিগারটি ধরে আছেন, যদিও আসল ঘটনা তা নয়। বাবা কখনোই আমার সামনে ধূমপান করতেন না। এই ছবিটি কখন তোলা হয়েছিল তা আমার মনে নেই, কে তুলেছিলেন তাও মনে নেই। আমি তখন অনেক ছোট। সে সময় আমার বছরতিনেক বয়স হবে। আমার জন্ম ১৯৬০ সালের নভেম্বরে। আমাকে তখন থেকেই বলা হতো ছবিটি ১৯৬৪ সালে হাভানা শহরের প্লাজা দে লা রেভলিউসিয়নে তোলা।

ছবিতে ওটা আমি! বাবা চে গুয়েভারা আর ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে আলেইদা গুয়েভারা, হাভানা, ১৯৬৪

আমি, চে ও আমার মায়ের চার সন্তানের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড়। পাপিকে (আলেইদা তাঁর বাবা চে গুয়েভারাকে ‘পাপি’ বলে ডাকতেন ) সারা পৃথিবী চেনে একজন আর্জেন্টিনিও বিপ্লবী হিসাবে, একজন গেরিলা নেতা ও কিউবা বিপ্লবের মাথা হিসাবে। তবে আমাদের পরিবার ছিল খুবই সাধারণ। আমি তাঁর সন্তান হয়েও নিজেকে কখনও বিশেষ কেউ ভাবিনি। বরং নিজেকে বিশেষ কেউ মনে হয়েছে সেই দু’জনের সন্তান হয়ে, যারা একে অপরকে অসম্ভব ভালোবাসতেন।

সন্তান হিসাবে আমরা পাপি কে খুব কম দিন পেয়েছি। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বলিভিয়াতে যখন তাঁকে হত্যা করা হয়, তখন আমার বয়স মাত্র ছয় বছর। মা আমাদের জীবনের মূল্যবোধ তৈরি করেন। পাপি মারা যাবার দীর্ঘদিন পরেও মা তাঁকে আমাদের মনে সর্বদা জীবিত রেখেছিলেন। মা তাঁর নাম নিয়ে আমাদের বকাবকি করা বা ভয় দেখানো, এসব কখনও করেননি। আমাদের কাছে পাপি সব সময়ই ভালো মানুষ।

আমরা কখনও কোনো বিশেষ সুবিধা পাই সেটা আমার বাবা পছন্দ করতেন না। মা’ও সেই পথ অনুসরণ করেছিলেন। চার শিশু সন্তান নিয়ে মা বিধবা হওয়ার ফলে বাবার বন্ধুরা সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। বাবার মতো স্নেহ তাঁরা দেখাতে না পারলেও বিভিন্ন জিনিস দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তবে মা তাদের সে কাজ করতে দেন নি। তিনি আমাদের বলেছিলেন- ‘সবসময় নিজের পা মাটিতে শক্ত করে রাখবে, যা নিজেরা আয় করো নি তা যেতে দাও।’ এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল।

আমরা অনেক কঠিন সময় কাটিয়েছি। আমার কিশোর বয়সে মা নিজের পুরানো ব্লাউস কেটে তা দিয়ে ভাইদের পাজামা বানিয়ে দিতেন। তবে আমরা খুশি ছিলাম, খেলতাম, হাসতাম। আমাদের এলাকার আর পাঁচজন কিউবান শিশুর মতোই আমরা বড় হয়েছি।

আমি ফিদেলের খুব কাছের ছিলাম। তার সাথে সাচ্ছন্দ বোধ করতাম। আমার খুব ভালো ভাবে মনে আছে – আমি তাকে ‘মি তিও’ বলে ডাকতাম, অর্থাৎ ‘আমার কাকা’। আমি তাঁর জীবনের শেষ দিন অব্দি তাঁর সাথে সম্পর্ক রেখেছিলাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলে হাসতাম, হালকা লাগতো। আমার বাবা আর ফিদেল সব সময় আনন্দে থাকতেন, মজা করতেন। দুজনে দুজনের প্রতি সম্মান ছিল, দুজনেই দুজনকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।

পাপি মারা যাওয়ার খবর আমাদের মানে সন্তানদের ফিদেল’ই দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মা সেই গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। তবে ফিদেল আমাদের বলেছিলেন পাপি একটি চিঠি লিখে গেছেন, তাতে বলা আছে কোনোদিন যদি তিনি যুদ্ধে মারা যান, আমরা যেন তার জন্য না কাঁদি। যখন একজন মানুষ জীবনে নিজের লক্ষ্যপূরণের উদ্দেশ্যে এগোতে গিয়ে মারা যান, তার জন্য কাঁদার প্রয়োজন পড়ে না।

চিঠিতে লেখা ছিল – ‘যখন তোমরা এই চিঠি দেখবে, জানবে আমি আর তোমাদের সাথে নেই।’ আমি কাঁদতে থাকি। চিঠিটা খুবই ছোট ছিল। তবে তার শেষের শব্দগুলি ছিল: ‘বাবার তরফ থেকে একটা বিরাট চুম্বন রইলো।’ আমি বুঝলাম আমার বাবা আর নেই।

আমি তাও হাভানাতেই থাকি, একজন শিশু-চিকিৎসক হিসাবে কাজ করি। আমি কিউবার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। আমার কি মানবিকতার প্রতি আশা আছে? আমাদের কারোর কাছেই কোনো জাদুকাঠি নেই। তবে আমরা যদি একটা অন্যরকম পৃথিবী দেখতে চাই, তাহলে সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। এটা কবে আকাশ থেকে নেমে আসবে ভেবে আমরা বসে থাকতে পারি না। আমাদের ভবিষ্যতের জাল বোনার দায়িত্ব আমাদেরই।

সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান

ভাষান্তর: কৃষ্ণায়ন ঘোষ

Spread the word

Leave a Reply