Theft in the guise of peace

সরিৎ মজুমদার

২৫ মার্চ, মার্কিন সেনাবাহিনী সিরিয়ার সম্পদ-সমৃদ্ধ জাজিরা অঞ্চল থেকে মার্কিনীদের দখলদারীতে থাকা ইরাকে তাদের ঘাঁটিতে শত শত টন চুরি করা সিরিয়ান তেল বোঝাই কমপক্ষে ৮০টি জ্বালানী ট্যাঙ্কার পাচার করে।

সানা (SANA) বা সিরিয়ান আরব নিউজ এজেন্সি-এর খবর অনুসারে – মার্কিন দখলদারি বাহিনীর সাথে যুক্ত ১৪৮টি গাড়ির একটি কনভয় সিরিয়ার ভূখণ্ড থেকে অবৈধ আল-ওয়ালিদ সীমান্ত দিয়ে রওনা হয়েছিল। এই কনভয়ের মধ্যে চুরি যাওয়া অপরিশোধিত তেল পরিবহনের জন্য ৮০টি ট্যাঙ্কার এবং ৬০ টি রেফ্রিজারেটর বহনকারী যান এবং বহু ট্রাক ছিল। এইগুলিকে নিয়ে যাওযার জন্য ছিল মার্কিনীদের আটটি সামরিক সাঁজোয়া যান। উত্তর ইরাকের আল-ইয়ারুবিয়া এলাকার স্থানীয় সূত্রগুলো সানাকে এই তথ্য জানায়।

ছবি : গুগল

ওয়াশিংটনের এই সাম্প্রতিক তেল চুরির অভিযানটি ঘটেছে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার কনোকো এবং আল-ওমর তেলক্ষেত্রে তাদের দখলে থাকা ঘাঁটিগুলিতে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলার কিছুক্ষণ পরেই। এই দুটি মার্কিন দখলে থাকা ঘাঁটিতে আক্রমণ ঘটেছিল শুক্রবার দেইর এজোর গভর্নরেটে মার্কিন বিমান হামলার প্রতিশোধ হিসেবে। দেইর এজোরে মার্কিন হামলায় বেশ কয়েকজন সিরিয়ান মারা গিয়েছিল। যদিও কনোকো বা আল-ওমরে এই হামলার দায় কোন গোষ্ঠীই স্বীকার করেনি।

শুক্রবার কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকে শুরু করা বিমান হামলার বিষয়ে মন্তব্য করে – মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেন বলেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র , “আমাদের জনগণকে রক্ষা করার জন্য জোরপূর্বক কাজ করতে প্রস্তুত” এবং তিনি আরো বলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “ইরানের সাথে সংঘাত চায় না।”

শনিবারের তেল চুরি অভিযানটি , ৬ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ায় বিধ্বংসী ভূমিকম্পের পর থেকে,তৃতীয়বারের মতো মার্কিন সৈন্যদের সিরিয়ার সম্পদ লুঠ করার ঘটনা। মার্কিন-ন্যাটো বাহিনী যুদ্ধবিদ্ধস্ত, ভূমিকম্পে প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই দেশের শেষ বিন্দু অবধি প্রাকৃতিক সম্পদকেও শুষে নিতে বদ্ধপরিকর।

ওয়াশিংটন সিরিয়ায় প্রায় ৯০০ সৈন্যের বাহিনী রেখে দিয়েছে, এই বাহিনী মুখ্যত আল-তানফ ঘাঁটি এবং সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে বিভক্ত। এই মার্কিন দখলদারি আন্তর্জাতিক আইনের চোখে বেআইনি কারণ এর কোন সরকারি অনুমোদন নেই।

ছবি : গুগল

যদিও মার্কিন সৈন্যরা – সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) এর যোদ্ধাদের সাথে – প্রাথমিকভাবে আইএসআইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অজুহাতে সিরিয়ার বিশাল অংশ দখল করেছিল, আইএসআইএস ব্যাপকভাবে পরাজিত হওয়ার পরে দখলের মার্কিনী যুক্তি রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে যায়। ২০১৯ সালে করা কুখ্যাত মন্তব্যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন: “আমরা (সিরিয়ার) তেল নিয়ন্ত্রণে রাখছি। আমাদের কাছে তেল আছে। এই তেল নিরাপদ। আমরা কেবল তেলের জন্য সৈন্যদের রেখেছি।”

‘দ্য ক্রেডল’ – এর একটি তদন্ত অনুসারে, মার্কিন যুদ্ধবিমান বা হেলিকপ্টার সহ কনভয়গুলিতে প্রতি সপ্তাহে কয়েক ডজন ট্যাঙ্কার ইরাক এবং সিরিয়ার মধ্যে অবৈধ ক্রসিং দিয়ে যাতায়াত করে।এই অঞ্চলের মেষপালকরা এই দাবিগুলিকে সমর্থন করে বলেছে যে সিরিয়ার তেল ইরাকি কুর্দিস্তান অঞ্চলের (আই কে আর) রাজধানী ইরবিলের আল-হারির সামরিক অঞ্চলে পরিবহন করা হয়, এটি পশ্চিমী দেশগুলো এবং ইসরায়েলি গুপ্তচর সংস্থাগুলির “ঘাঁটি” হিসাবে পরিচিত।

গত বছরের আগস্টে, সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রক দাবি করেছিল যে ২০১১ সালে সিরিয়া সঙ্কটের শুরু থেকে মার্কিন হস্তক্ষেপ ও দখলদারির ফলে দেশের তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ক্ষতির পরিমাণ $ ১০৭ বিলিয়ন। এটা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ। মানসম্পদের যে ক্ষতি ন্যাটো-মার্কিন জোটের আক্রমণের ও দখলদারির জন্য হয়েছে তার হিসাব মেলা ভার।

প্রসঙ্গত বলা প্রয়োজন যে, বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠীর মতে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৫,০৩,০৬৪ থেকে ৬,১৩,৫০৭ এর মধ্যে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে, রাষ্ট্রসংঘ বলেছিল যে মার্চ ২০১১ থেকে মার্চ ২০২১-এর মধ্যে সংঘাতে কমপক্ষে ৩,৫০,২০৯জনের মৃত্যু নথিভুক্ত হয়েছে। তবে তারা সতর্ক করেছে যে সংখ্যাটি এর থেকে অনেক বেশী বলেই তাদের আশঙ্কা ! দুঃখের বিষয়, এই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশে যে ভয়াবহ ভূমিকম্প আছড়ে পরেছিল সাম্প্রতিক কালে তাতেও অন্তত ১০হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

ভূমিকম্পে রক্ষা পাওয়া সিরিয়ান শিশু, ছবি : গুগল

সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বিশ্ব বিখ্যাত সাংবাদিক জন পিলজারের এই ধরণের ঘটনাগুলো দেখেই মন্তব্য করেছিলেন যে, চুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বৈশিষ্ট্য। সিরিয়া থেকে তেল চুরি। ভেনেজুয়েলা থেকে সোনা চুরি। আফগানিস্তান থেকে ব্যাংক সম্পদ চুরি। মেক্সিকো, কিউবা, যুগোস্লাভিয়া, দিয়েগো গার্সিয়া সহ গোটা বিশ্বের আরও অনেক জায়গার থেকে এলাকা চুরি করেছে। মার্কিনীরা চুরি করেছে কোটি কোটি মানুষের সার্বভৌমত্ব।

Spread the word

Leave a Reply