২৭ মার্চ ২০২২ (রবিবার)
২৮-২৯ মার্চ দেশব্যাপী ধর্মঘট। বর্তমান দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই ধর্মঘটের গুরুত্ব অপরিসীম। একদিকে নয়া উদার আর্থিক নীতির প্রভাবে আক্রান্ত দেশের সাধারণ শ্রমজীবি মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, ছাত্র-যুব সহ দেশের সব অংশের মানুষ, অন্যদিকে আক্রান্ত সংবিধানের সবকটি স্তম্ভ। শ্রমিকশ্রেণীর ডাকা এই ধর্মঘটকে ইতিমধ্যেই কৃষক, খেতমজুর, মহিলা, ছাত্র, যুব সহ নানা সংগঠন সমর্থন জানিয়েছে। দেশের সব থেকে বৃহৎ গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল যুব সংগঠন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন ও অন্যান্য বামপন্থী যুব সংগঠনগুলি আমরা প্রত্যক্ষভাবে রাস্তায় থেকে এই ধর্মঘটকে সফল করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ এই সময়ে সমগ্র দেশজুড়ে আক্রান্ত যুবসমাজ।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর চলছে। অথচ দেশের যুবদের সামনে এখনও সবথেকে বড় সমস্যা হল কাজ না পাওয়া। কেন্দ্রে ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই সমস্যা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। এই সময়ে আমাদের দেশে বেকারত্বের হার ১২.২ শতাংশ। স্বাধীনতার পর এরকম ভয়াবহ অবস্থা দেশে কখনো হয়নি। নতুন কাজ পাওয়া তো দূরের কথা, যারা কাজ করেন তাদের কাজ চলে যাচ্ছে। শ্রমিকের অধিকার, কর্মচারীর অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে এই সময়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের দপ্তরগুলি মিলিয়ে দেশে প্রায় ১০ লক্ষ শূণ্যপদ রয়েছে। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের সরকার শূণ্যপদে নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শুধুমাত্র ভারতীয় রেলে সাড়ে তিন লক্ষ শূণ্যপদ আছে। কোথাও কাজ নেই, নিয়োগ নেই। এক অদ্ভুদ অন্ধকারে নিমগ্ন দেশের যুব সমাজ।
দেশে শিক্ষিত যুবসমাজের অবস্থা একটু আলোচনা করা প্রয়োজন। CMIE এর রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের দেশে প্রতি বছর যত ছেলেমেয়ে ¯স্নাতকোত্তর হয় তার মধ্যে ৬৮.২২ শতাংশ কোনো কাজ পায় না। সেই রিপোর্টেই বলছে সরকারি বেসরকারি কলেজ মিলে প্রতিবছর দেশে ১৫ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ার তৈরী হয় কিন্তু তার মধ্যে ৯ লক্ষ অর্থাৎ ৬০ শতাংশ কোনো কাজ পায় না। ২০১৪ সালের পর থেকে দেশে এই অবস্থা। অন্যদিকে আমাদের রাজ্যেও শিক্ষিত যুবদের জন্য কাজের জায়গা প্রায় বন্ধ।
আবার সাধারণ গরীব ছেলেমেয়েদেরও কাজের কোনো সুযোগ নেই। মনরেগা প্রকল্পে প্রতিদিন কাজের পরিধি কমছে। ২০১৪ সালের পর প্রতিটি কেন্দ্রীয় বাজেটে এই প্রকল্পে ব্যাপকভাবে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। যুবদের দীর্ঘদিনের দাবী ১০০ দিনের কাজ বাড়িয়ে ২০০ দিন করতে হবে। মজুরি বাড়াতে হবে এবং ব্যক্তি পিছু কাজ দিতে হবে। যা এই ধর্মঘটের অন্যতম দাবী।
কোভিড প্যান্ডেমিকের সময় বেকারত্বের যন্ত্রনা আমরা দেখেছি। দেশে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষ কাজ না পেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকের রক্তে ভিজে গেছে দেশের মাটি। দেশের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া শাসকের তীব্র শোষণে আক্রান্ত সবাই, আক্রান্ত যুবরাও।
তাই লড়াই-ই একমাত্র পথ। এ লড়াই দেশ বাঁচানোর। দেশ মানে দেশের সাধারণ মানুষ। এ লড়াই আপনার আমার তাই ২৮-২৯ মার্চ শ্রমিক কৃষক মহিলা ছাত্র ও অন্যান্যদের সাথে যুবরাও থাকবে ঝান্ডা নিয়ে, দৃঢ়তা নিয়ে। এগিয়ে যাবে বুক চিতিয়ে।
আসুন দেশ বাঁচানোর এই লড়াই এ ২৮-২৯ মার্চ স্তব্ধ করে দিই রাষ্ট্রের চাকা। এ লড়াই আগামী সুন্দর সকালের জন্য।